শরীর মন দুইটাই প্রচণ্ড রকম খারাপ। আজ সকালে বাসায় আসলাম। বাড়ির সবাই গ্রামে বিয়ের দাওয়াতে গেছে, বাসায় ঢুকতে গিয়েই মনটা খারাপ হয়ে গেল! বাসায় চোর ঢুকেছে, সব তছনছ! যাক, আল্লাহ যাই করেন ভালোর জন্যই করেন।

বাসার পাশেই সাইবার ক্যাফে, আমার অনেক দিনের আড্ডার স্থল! সেখানে গেলাম নেট ব্রাউজ করতে। নেট ব্রাউজ করছি! পাশের পিসিতে এক হিজাবি তরুণী, পাশে এক তরুণ! কোন খারাপ ধারণাই আসেনি, আর যাই হোক কমপ্লিট হিজাবি!! কিন্তু কিছুক্ষণ পর এই দুই অমানুষ রুচিহীনতার সর্বনিম্ন লেভেলে পৌঁছে “এমন কিছু!!” জঘন্য কাজ শুরু করল আমার বোধশক্তি হঠাৎ লোপ পেয়ে গেল। ব্যাপারটা এতোটাই জঘন্য ছিল এটা ভদ্রভাবে বলার কোন শব্দ আমার জানা নেই! আমার প্রচণ্ড রকম রাগ জমেছিল, ক্ষোভ জমেছিল! দাঁড়িয়ে গেলাম আর ওই হিজাবির ডেস্কের সামনে গিয়ে বললাম, “হায়রে হিজাবি! তুই একদিন কাঁদবি… ওয়াক থু ওয়াক থু ওয়াক থু! তোর জন্য লজ্জা, তোর জন্য ঘৃণা!!” কি পুস্তকি কথা মনে হচ্ছে?? এই কথাগুলো অনেকদিন থেকে আমার মনে ছিল, কোনদিন সাহস সঞ্চার করতে পারিনি বলার জন্য! দুই অমানুষ হঠাৎ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে, পাশের ডেস্কের কয়েকজন হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে! তাদের কাছে এই দুই পশুর রুচিহীনতা থেকে আমার আচরণই বেশি অস্বাভাবিক!!


জাহিলিয়াত বলে একটা টার্ম আমরা প্রায়ই ব্যবহার করি ইসলামহীন অতীত জীবনের কথা প্রসঙ্গে। হয়তো আমি ভুল হতে পারি, কিন্তু আমার মনে হয় by default পরিবার থেকে সঠিক ইসলামের আদর্শে বড় হয়েছে এরকম ছেলে মেয়ের সংখ্যা হাতে গোনা। আমি আমার পরিবার থেকে সঠিক ইসলাম তো দূরের কথা, কোন ইসলামই পাইনি। ছোটবেলা থেকে আমার কাছে কেউ ইসলামের আদর্শের কথা বলতে আসেনি। পাড়ার হুজুরদের হা করে হিন্দি সিনেমা দেখা, মোবাইলে গানের কালেকশন আর দাওয়াত খেয়ে খেয়ে গর্দান মোটা করা ইসলাম থেকে আমরা বড় হয়েছি।

জীবনের যে সময়টা আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করার কথা সেই সময়টাতে এসে আমাদের জানতে হচ্ছে, “ও আচ্ছা, ইসলাম তাহলে এই!” তাই বলতে কোন দ্বিধা নেই আমার ইসলামি জ্ঞানের দৌড় খুবই সীমিত, একেবারে প্রাথমিক পর্যায়! কিন্তু ইসলাম থেকে আমি একটা বিষয় বুঝেছি আর তা হল ইসলামের ভেতরে থেকে, এর লেভেল ধারণ করে এর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা খুবই জঘন্য একটা ব্যাপার! এটা কোন মুসলিমের বৈশিষ্ট্য নয়। আর একজন মুসলিম হিসেবে এই বিষয়গুলো সহ্য করা খুব দুরূহ, এগুলো দেখিয়ে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। ওই যে প্রথমে বললাম আমি কম জানি এটা আমার যোগ্যতার lackings, আর যেটা অন্যায় সেটা দেখিয়ে ন্যায়টা বলা আমার অধিকার, দায়িত্ব। মানুষের যোগ্যতায় হস্তক্ষেপ করা যায় কিন্তু অধিকারে হস্তক্ষেপ করা যায়না। তাই এখন যে কথাগুলো বলব সেখানে দয়া করে কেউ অধিকারের হস্তক্ষেপ করতে আসবেন না প্লিজ!

আচ্ছা এই মেয়েগুলো কী ভাবে? কী ভাবে জীবন নিয়ে? তাদের কাছে জীবনের অর্থটা কী? তাদের কাছে পর্দা কী? ইসলাম কী? প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমাদের চারপাশে মেয়েরা বেড়ে উঠছে, কোন আদর্শে বেড়ে উঠছে??

হিন্দি সিরিয়ালে তুহি মেরি জান, মে তুমহারি দেওয়ানি হু সংলাপে কল্পনার রাজ্যে সবকিছু রঙ্গিন ভাবা আতলামি, সারারাত মোবাইল ফোনে কথা বলে প্রেমের ষোলকলা পূরণ হয়ে গেছে ভাবা আর বয়ফ্রেন্ডকে বিশ্বাস করি মর্মে বিশ্বাসযোগ্যতার সার্টিফিকেট অর্জন করতে রিকশা, সি এন জি, পার্কে শরীর সওদা করে বেড়ানো। সংক্ষেপে এক আধুনিকা?? হ্যাঁ আমি জানি!! আপনার মুখ বাকিয়ে করা প্রশ্ন কী আমি জানি?? আপনি বলবেন “ছেলেরা কি ধোয়া তুলসীপাতা??” না তারা তুলসীপাতা নয়, তারা খাটাস! কিন্তু আমি এখন আপনার সাথে কথা বলছি। আপনার মাথায় কি মগজ নেই? পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'য়ালা “আকল” শব্দটা ২৭ বার ব্যাবহার করেছেন তা কি শুধুমাত্র পুরুষের জন্য, আপনার জন্য নয়? আপনি সব বোঝেন, নিজের শরীরের সম্মান কেন বোঝেন না? খাটাশ বয়ফ্রেন্ডগুলো যে আপনার শরীর ভোগের সুযোগ নেবে সেটা কেন বোঝেননা? রিকশা, সি এন জি, পার্কে, অন্ধকার রেস্টুরেন্টে কিংবা একটু সাহসী হলে চারদেয়ালের ভেতর আপনাকে কে যেতে বলেছে? সব খাটাশ ছেলেটার দোষ? আপনি কি পুতুল? আপনার কোন বোধশক্তি নেই? নিজের প্রতি সততা দেখান প্লিজ! ছেলেরা এমন ছেলেরা তেমন এটা যেমন কোন মেয়ের জন্য শুদ্ধতার মাপকাঠি নয় ঠিক তেমনি মেয়েরা এমন মেয়েরা তেমন এটা কোন ছেলের জন্যও শুদ্ধতার মাপকাঠি নয়! অন্যকে নিজের সাথে তুলনা করার প্রতিযোগিতা বাদ দেন। নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনার নিজের সম্পর্কে!

আমি আবারো বলছি এই লেখাটা নারী VS পুরুষ কোন সস্তা তর্কাতর্কি করার জন্যই নয়। মুসলিম নারীদের চোখ মেলে তাকানোর সময় পার হয়ে যাচ্ছে!


আমার বয়স এখন ২১। অনেক সময় পার করে ফেলেছি। বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা এই পর্যন্ত আমি পরিচিতি একটা মেয়েকেও দেখিনি যে proper হিজাব করে, যে পর্দার ব্যাপারে সজাগ এবং সঠিক জ্ঞান রাখে, যে ইসলামের ব্যাপারে আগ্রহী, যে মাহরাম নন মাহরাম নিয়ে সজাগ! বিশ্বাস করুন একজনও না। জাহিলিয়াতের অন্ধ গলি থেকে থেকে যতজন ছেলেকে আমি দ্বীনের রাজপথে উঠতে দেখেছি তার সিকিভাগও দেখিনি মেয়েদের বেলায়। প্রথমে মনে করতাম এটা আমার ব্যর্থতা, দেখিনি! কিন্তু বাস্তবতা সেটা নয়, আপনার চারপাশে খোঁজ নিয়ে দেখুনতো!!

আজ সবখানেই মেয়েরা আছে, তাদেরই জয়জয়কার! ঢাবিতে আমার ডিপার্টমেন্টের প্রথম মেয়ে, দ্বিতীয় মেয়ে, তৃতীয় বাদ দিয়ে চতুর্থ সেও মেয়ে। অমুক ডিপার্টমেন্টে প্রথম—মেয়ে! অমুক ডিপার্টমেন্ট—মেয়ে! মেডিক্যালে কারা বেশি চান্স পায়—মেয়েরা! বি সি এসে প্রথম—মেয়ে! কিন্তু দ্বীনের কথা আসলে, পর্দার কথা আসলে, ইসলামি অনুশাসনের কথা আসলে—আরে বাদ দাও, ওরা কম বোঝে!! Why কম বোঝে?? Why? রংচঙে সাজগোজে, বেপর্দা আঁটসাঁট পোশাক, বন্ধু আড্ডা গান, হিন্দি সিরিয়ালের ভূত, বয়ফ্রেন্ড সবই তো বোঝে… সবই বোঝে… সবই!! আর কত পাশ কাটিয়ে যাওয়া? আর কত কোন কুকাম ঘটলে নারী নির্যাতন বিরোধী স্লোগানে নারীর মুক্তি খোঁজা? এই মেয়েগুলো কি কোনদিনও কিছু বুঝতে চাইবে না?? মগজ ব্যবহার করবে না?? কিছু হলে সব সমাজের দোষ? সমাজ নারীকে পণ্য বানিয়েছে? এভাবে আর কত? মেয়েগুলো কি চোখ মেলে তাকাবে না??

যারা পর্দা করে, পর্দা সম্পর্কে জেনে বুঝে আধুনিকতার নোংরামিতে আল্লাহর দ্বীনকে অপমান করছে তাদের বিষয়টা আল্লাহ দেখেবেন ইনশা'আল্লাহ! কিন্তু যারা না জেনে বুঝে করছে আমি তাদেরকে পর্দার বিষয়টা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই! ইসলাম নারীকে তার সম্মান স্থায়ীভাবেই দিয়েছে। কিন্তু নিজের সম্মানটা আগে নিজেকে বোঝা উচিত। আর একজন নারীর সম্মানের আচ্ছাদন হল তার পর্দা। আল্লাহ বলেন…

“(হে নবী), তুমি মুমেন নারীদেরকেও বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিন্মগামি করে রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থান সমূহের হেফাজত করে, তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে না বেড়ায়, তবে তারা (শরীরের) যে অংশ(এমনিই) খোলা থাকে (তার কথা আলাদা), তারা যেন তাদের বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে, তারা যেন তাদের স্বামী, তাদের পিতা, তাদের শ্বশুর, তাদের ছেলে, তাদের স্বামীর (আগের ঘরের) ছেলে, তাদের ভাই, তাদের ভাইয়ের ছেলে, তাদের বোনের ছেলে, তাদের (সচরাচর মেলা মেশার) মহিলা, নিজেদের অধিকারভুক্ত সেবিকা দাসি, নিজেদের অধীনস্থ (এমন) পুরুষ যাদের (মহিলাদের কাছ থেকে) কোন কিছুই কামনা করার নেই, কিংবা এমন শিশু যারা এখনো মহিলাদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে কিছুই জানেনা-(এমন মানুষ ছাড়া তারা যেন) অন্য কারো সামনে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, (চলার সময়) জমিনের উপর তারা যেন এমনভাবে নিজেদের পা না রাখে যে সৌন্দর্য তারা গোপন করে রেখেছিল তা (পায়ের আওয়াজে) লোকদের কাছে জানাজানি হয়ে যায়; হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, (ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য) তোমরা সবাই আল্লাহর দরবারে তাওবা কর, আশা করা যায় তোমরা নাজাত পেয়ে যাবে।” [আন নুরঃ ৩১]

এই বিষয়ে আরেকটা আয়াত হল…“হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রী, মেয়ে ও সাধারণ মোমেন নারীদের বল, তারা যেন তাদের চাদর (থেকে কিয়দংশ) নিজেদের উপর টেনে নেয়, এতে করে তাদের চেনা সহজ হবে এবং তাদের কোনরকম উত্ত্যক্ত করা হবেনা, (জেনে রেখো), আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।” [আহযাবঃ ৫৯]

সুবাহানাল্লাহ! অসাধারণ দুইটা আয়াত। আয়াত দুইটার তাফসীর করতে গেলে দিস্তার পর দিস্তা লিখেও শেষ করা যাবেনা। আমি একদম কমন কয়েকটা বিষয় পয়েন্ট আউট করতে চাই…

১। অবনত দৃষ্টি
২। হিজাব
৩। সৌন্দর্য প্রদর্শন করে না বেড়ানো
৪। নিজের নারীত্বের আইডেন্টিটি স্পষ্ট করা হিজাবের মাধ্যমে যাতে উত্ত্যক্ত করা না হয়।
৫। ভুল ত্রুটির জন্য ক্ষমা চাওয়া।

এর পরেও এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল দুইটা আয়াতেই বলা হয়েছে ঈমানদার ও মোমেনাদের কথা। তাই একটু থমকে দাঁড়ান, চিন্তা করুন, নিজের প্রতি সততা দেখান আর ভেবে দেখুন এই পাঁচটা বিষয়ের কয়টা আপনার আছে?? যদি না থাকে এতে অস্থির হওয়ার কিছু নেই, একদিন হবে ইনশাআল্লাহ! কিন্তু নিজের বিষয়ে ঠিক না থেকে অন্যের কাছে সম্মান আশা করেন কীভাবে?? জাহেলি আধুনিকাদের কথা বাদই দিলাম আজকের হিজাবিরাও কি এর ধার দারে?? আজকের হিজাব মানেই হল একটা ছিপছিপে বোরখা আর টাইট জিন্স!

গত ঈদে গ্রামে গিয়েছিলাম ঈদ করতে। পাড়ার ছেলেরা মিলে আড্ডা দিচ্ছি। এক বাল্যবন্ধু কাপড়ের দোকানে চাকরী করে। সে বলছে, “বুঝলি আজকাল মেয়েরা সেক্সি বোরখা পরে! কি যে **** লাগে!” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম “এটা আবার কী জিনিস?” জবাবে সে সেক্সি বোরখা কী, কেন, মেয়েরা অর্ডার দেওয়ার সময় কী কী সাইজের কথা বলে এসব বলে খুব কুৎসিত কুৎসিত কিছু মন্তব্য করছে! হা করে তাকিয়ে আছি আর সেক্সি বোরকার বর্ণনায় বন্ধুদের অট্টহাসি দেখছি! বোরখাকে আমি কখনই হিজাব মনে করিনা। হিজাব অনেক পবিত্র একটা ব্যাপার, অনেক unique! কিন্তু আশংকায় পড়লাম সেক্সি বোরখাটা কী তবে সেক্সি হিজাবে রুপ নেবে??

একদিন আমার হলের পাশের হলে চা খেতে গেলাম! হঠাৎ কয়েকজন যুবক আমার পাশে বসতে বসতে তাদের চলমান আলোচনা শুরু করল এভাবে, “আরে অমুকরে দেখছস?? ক্যাম্পাসে তো একেবারে হিজাব করে আসে, মুখও দেখা যায়না, কাল দেখি গেঞ্জি পইরা নাচতেছে সেই ভিডিও ফেসবুকে আপলোড দিছে! এই হইল হিজাবি বুঝলি!!” এরপর তারা অনেক কথাই বলেছে কিছু মনে নেই মাথায় শুধু ঘুরতেছে, “এই হইল হিজাবি… বুঝলি!!” আমার ডিপার্টমেন্টের নিচে আরাবি ডিপার্টমেন্ট, এর নিচে ইসলামিক স্টাডিজ, ইসলামিক হিস্ট্রি! উঠতে নামতে এখানকার হিজাবি আপুদের বন্ধু আড্ডা গানের কেরামতি দেখলে লজ্জায় মাথা কাটা যায়। এই মেয়েগুলো কি জানে প্রতিটা দিন পবিত্র হিজাবকে অপমান করে ইসলাম বিদ্বেষী দের কাছে এরা কী বার্তা দিচ্ছে??

লজ্জা কর হে নারী, লজ্জা কর! আবু গারিব কারাগারে ফাতেমারা যখন আমেরিকান কুত্তাদের দ্বারা দিনে ৯ বার ধর্ষিত হচ্ছে তখন আধুনিকা হিজাবি সাইবার ক্যাফে, পার্কের বেঞ্চে শরীর সওদা করে বেড়াচ্ছে! পর্দা করার কারণে, আল্লাহর দ্বীন পালনের কারণে ২২ নিরপরাধ হিজাবি বোনকে যখন এদেশের পুলিশ সন্দেহের নামে হয়রানি করছে, অন্তঃসত্ত্বা বোনকে যখন টেনে হিঁচড়ে পশুর মত আচরণ করছে তখন আধুনিকা হিজাবি আমার হলের সামনে তার তিন ছেলেবন্ধুর সাথে তাস খেলছে!

আমাদের হিজাবি নারীরাও নববর্ষ আসলে গায়ে রঙ্গিন শাড়ি, ১৬ ডিসেম্বরের লাল সবুজের বাহার কিংবা ভ্যালেন্টাইন ডে তে লাল গোলাপ হাতে ছুটাছুটি করে! বিয়ে তো একবারই হবে তাই মেহেদি অনুষ্ঠান হবে না এটা আমাদের হিজাবিরাও মেনে নিতে চায়না! মেকাপ- মেহেদী নষ্ট হবে বলে মেহেদী নাইট আর বিয়ের দিন না হয় নামাজও বাদ থাকল… সে আর এমন কি!! এক ভাই বউ খুঁজতে গিয়ে আফসোস করলেন, “হিজাবিরাও এখন বিয়ের সময় টম ক্রুজ আর বিল গেটস খোঁজে!” বিয়ের পরও স্বামীর মতিগতি দেখে ডিসিশান নেওয়া যাবে। স্বামী যদি পর্দা করতে বলে তাহলে করবে আর না হলে স্বামী যদি চায় তাহলে শিলা, মুন্নি, চাম্মাক চালো দিয়ে ওয়ারড্রব ভরিয়ে ফেলব! বান্ধবীরা পরে এত ভাল লাগে, এতদিন হিজাবের জ্বালায় পরতে পারিনাই! এসব আমার গালগল্প নয়, জেনেশুনেই বলছি!


RAG DAY বিষয়টার সাথে সবাই পরিচিত। ঢাকা ভার্সিটিতে বিবিএ ফ্যাকাল্টিতে হঠাৎ করে RAG DAY উৎসব শুরু হল। আগে এসব নোংরামি চারদেয়ালের ভেতর হতো। কিন্তু জাফর ইকবালদের ভাবালুতা আদর্শে বেড়ে উঠা তরুণ তরুণী এখন আর চার দেয়ালের ভেতর থাকতে চায়না! তারা এবার “থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগতটাকে” থিউরি ব্যবহার করেছে। টি এস সি রাজু ভাস্কর্যের সামনে রাস্তা ব্লক করে “গ্যাংনাম” ধইঞ্চানাম যত বান্দরগিরি আছে সব দেখানো এই RAG DAY এর একটা অংশ। যাদের প্রথম আলো পড়ার দুর্ভাগ্য আছে তারা নিশ্চয় প্রতিদিন এসব RAG DAY এর একটা করে ছবি নিয়মিত পেয়েছেন। RAG DAY তে আপুরা নামে কাপড় ছোট করার প্রতিযোগিতায়। আরও আছে কনসার্টে উন্মাতাল ভাবালুতা! কয়দিন পর দেখি হলে আরেক উৎসব! সবার মোবাইলে, ল্যাপটপে RAG DAY এর ভিডিও! যে যত সেক্সি আপুর ‘বিশেষ’ ‘বিশেষ’ মুহূর্তের দৃশ্য ধারণ করতে পেরেছে তার তত DEMAND! অবিশ্বাস্য! জাহেলি মেয়েগুলো এসব করবে এটাই অনুমেয়! একদিন ক্লাস করে ফিরছি দেখি RAG DAY এর মাতাল উৎসবে হিজাবি আধুনিকারাও পুরুদস্তর নেকাব পরে জাহেলিদের মাঝে!! হায়, এই দুঃখ কোথায় রাখি!

আবারো লজ্জা কর হে নারী! লজ্জা কর! যখন ডঃ আফিয়া সিদ্দিকার গায়ে এক টুকরো কাপড় নেই, কুত্তাগুলো তাকে বলছে পবিত্র কুরআনের উপর দিয়ে হেঁটে গেলে তাকে কাপড় দেওয়া হবে তখন তুই নিজের শরীর বিলিয়ে বেড়াচ্ছিস! ফ্রান্সে আমার মুসলিম বোনেরা যে হিজাব পরিধান করার অপরাধে জরিমানা গুনছে সেই হিজাব পরে তুই জেমস এর কনসার্টে জেমস… জেমস… করে গলা ফাটাচ্ছিস! তুই লজ্জা কর হে নারী! তুই লজ্জা কর!


আমাদের দ্বীনি তরুণ তরুণীদেরও আজকাল “দ্বীনি রিলেশন” থাকে! একদিন সেন্ট্রাল মসজিদে নামাজ পড়তে গেছি। এখন সেন্ট্রাল মসজিদেও মেয়েদের নামাজের জায়গা করা হয়েছে! ওইদিনের ঘটনা দেখে খুব খারাপ লাগলো। মসজিদে ঢুকার সময় দেখি কয়েকটা হিজাবি বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। মূল বিষয়টা বুঝলাম নামাজ পড়ে বেরোনোর সময়! তারা তাদের দ্বীনি বয়ফ্রেন্ডের জন্য অপেক্ষা করছিল! আপনার জানু নামাজটা অন্তত পড়ল but what about you? ক্যাম্পাসে হিজাবিদের সংখ্যা কম নয়। কিন্তু নামাজের সময় তারা দিব্যি বন্ধু আড্ডা গানে ঘুরে বেড়াচ্ছে! What about your salah? নাকি আপনাদের সাতখুন মাফ??

যাক!

অনেক বেশি কথা বলে ফেলেছি। বেশিরভাগই রাগ থেকে বলা এবং এগুলো একদিনের কথা নয় একটু একটু করে জমেছে! যখন আমার কোন বন্ধু কোন হিজাবির কাজকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে হিজাবকে অপমান করেছে আমার গায়ে লেগেছে, যখনি কোন হিজাবি আমার সামনে কুকাম করেছে গায়ে লেগেছে! আমি কখনো কিছু বলার সাহস সঞ্চয় করতে পারিনি! কাকে কী বলব? তবে আজ আমি একজন নারীর সবচেয়ে সুন্দর সফলতা কোন জায়গায় সেটা আপনাদের বলতে চাই! আজ নারী এমনকি ইসলাম বোঝা নারীরাও সফলতা খোঁজে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায়, একটা ভাল চাকরী, একটা ভাল……!

ইসলামে সবচেয়ে সম্মানিত চারজন নারীর কথা আপনারা জানেন?? মনে করিয়ে দেই ১. হযরত খাদিজা (রাঃ) ২. হযরত ফাতেমা (রাঃ) ৩. হযরত আছিয়া (রাঃ) (ফেরাউনের স্ত্রী) ৪. হযরত মারিয়াম (রাঃ) (ঈসা (আঃ) এর মা)। এরা কেউ পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতা করে জয়ী হয়নি, এরা কেউ কর্পোরেট আইডল নয়, এরা কেউ মিডিয়ার প্রিয়মুখ নয়, এরা কেউ বিদ্যা বুদ্ধির বহর নয়! ভাল করে খেয়াল করে দেখুন এরা সবাই এক একজন ভাল স্ত্রী আর ভাল মা ছিলেন! ২ হাজারেরও বেশি হাদিস বর্ণনা করে, বিদ্যা বুদ্ধির বহর থেকেও, মুসলিম উম্মাহর, দ্বীনের জন্য অনেক কিছু করেও হযরত আয়েশা (রাঃ) এই চারজনে নেই। আল্লাহ সুবাহানাতা'য়ালা একজন নারীর মর্যাদা নির্ধারণ করেছেন দুইটা জায়গায় যেখানে তারা সবচেয়ে সুন্দর, মানানসই—মাতৃত্ব আর স্ত্রীত্ব!

আবার সেই সাইবার ক্যাফের হিজাবির কাছে ফিরে যাই। এতটা ঘৃণা আমার কখনো আসেনি, কারো সামনে এরকম ওয়াক থু ওয়াক থু করা যায় সেটাও আমি কোনদিন চিন্তাও করিনি, আমার সাহস খুব কম! কিন্তু ওইদিনের ঘটনা এতোটাই জঘন্য ছিল বিশ্বাস করুন আমি এরপর আমার বোনের দিকে পর্যন্ত তাকাতে পারিনি! আচ্ছা এক অপরিচিত যুবকের ঘৃণা পেয়ে মেয়েটা কি অনুতপ্ত হয়েছিল? বুঝতে পেরেছিল সে খুব জঘন্য একটা কাজ করেছে? সে কি তার হিজাবের মর্ম বুঝতে পেরেছিল? নাকি প্রতিদিনের মত অন্য কোথাও শরীর সওদা করতে গিয়েছিল! আমি জানিনা। কিন্তু আমি জানি এই মেয়েটা প্রতিদিনের মত বাড়ি ফিরেছিল! তার মা ই হয়তো দরজা খুলেছে কিন্তু সে তার মেয়ে কোথায় ছিল তার কোন কৈফিয়ত চায়নি, বাসায় তার ভাই ছিল সে কম্পিউটারে গেম খেলছে কিংবা ফেসবুক! বোনের খবর নেওয়ার সময় কই? তার বাবাও রাতে কাজ শেষে বাড়ি ফিরেছে, সবাই একসাথে রাতের খাবার খেয়েছে কিন্তু সেও জানতে চায়নি মেয়ে আজ কোথায় ছিল! হায় মুসলিম! আমরা বাবা মা, ভাই বোন সবাই একসাথেই থাকি কিন্তু একজনের খবর আরেকজন জানি না! লজ্জা লজ্জা লজ্জা! লজ্জা আমাদের সবার জন্যই!


আর কাউকে আমার কিছুই বলার নেই। আর কোনদিন নারীদের নসিহা দিতে যাবনা! এই শেষ! সবাই সুখে থাক… সুখে থাক! পথে ঘাটে, ঝোপে- ঝাড়ে শরীর সওদা করে সুখে থাক, দিনের পর দিন পর্দার আড়ালে পবিত্র হিজাবকে, নিজের আত্মসম্মানকে অপমান করে সুখে থাক, বন্ধু আড্ডা গানের বদৌলতে বন্ধুদের হাতে গণধর্ষিত হয়ে সুখে থাক, সারারাতের নিষিদ্ধ প্রণয় শেষে যার হাত ধরে বেরিয়ে এসেছিলি সেই মানুষের হাতেই ২৬ টুকরা হয়ে সুখে থাক, শিলা-মুন্নি-চাম্মাক চালো-ধুতি কাটিং কাপড়ের বাহারে সুখে থাক, হাড্ডি জড়িয়ে চামড়া নিয়ে জিরো ফিগারের সান্ত্বনায় সুখে থাক! সুখে থাক! শুধু জেনে রাখ তাকওয়া পূর্ণ ঈমান নিয়ে কোন পুরুষ তোর জন্য অপেক্ষা করবেনা, নিজের নফসকে সংযত করে অন্তরের পবিত্র ভালবাসায় কেউ তোর পবিত্রতা রক্ষা করতে আসবেনা, কোন মুমিন পুরুষ ভালবেসে কোনদিন তোর হাত ধরবেনা, বলবেনা, “এই দুনিয়ায় তুমিই আমার হুর”, আল্লাহর ভয়ে চোখের পানি ফেলা কোন পুরুষের কাঁধে মাথা রেখে তুই কোনদিন জোছনা দেখতে পারবিনা, অভিমান করতে পারবিনা, খুনসুটিতে মাততে পারবিনা! আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক! তিনি কারো সাথে অবিচার করেন না। তিনি বলেছেন……

“(জেনে রেখো) নষ্ট নারীরা হচ্ছে নষ্ট পুরুষের জন্য, নষ্ট পুরুষরা হচ্ছে নষ্ট নারীদের জন্য, (আবার) ভাল নারীরা হচ্ছে ভাল পুরুষদের জন্য, ভাল পুরুষরা হচ্ছে ভাল নারীদের জন্য, (মোনাফেক) লোকেরা (এদের সম্পর্কে) যা কিছু বলে তারা তা থেকে পাক পবিত্র; (আখিরাতে) এদের জন্যই রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রেযেক।” [আন নুরঃ ২৬]

[বিঃদ্রঃ শেষের কথাগুলো আর আয়াতটা পুরুষদের জন্যও] আমি আবারো বলছি এই লেখাটা নারী বনাম পুরুষ কোন সস্তা তর্কের জন্য নয়। আর যেসব বোন দ্বীনের পথে আছেন, যারা দ্বীন ইসলামকে সিরিয়াসলি নিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দান করবেন ইনশাআল্লাহ।

আর শেষ করার আগে দুইজন নারীর কথা বলে শেষ করতে চাই…

১। লেখায় আফিয়া সিদ্দিকার কথা বলেছি। এক রমজানে ডঃ আফিয়া তার মায়ের সাথে ফোনে কথা বলছিলেন। তার মা বললেন, “তোমার প্রতি জালেমদের অত্যাচারের কথা জেনে আমি আর সহ্য করতে পারছিনা।” আফিয়া জবাবে বললেন, “মা, আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। প্রায় প্রতি রাতেই আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে দেখি। একবার তিনি আমাকে বললেন, “তোমার মাকে দুঃখ করতে মানা কর, কারণ আল্লাহ তার জন্য আখিরাতে যা রেখেছেন সেটাই উত্তম।” আরেকটা স্বপ্নে তিনি আমাকে তার প্রিয়তমা স্ত্রী হযরত আয়েশা (রাঃ) এর কাছে নিয়ে গেলেন আর বললেন, “এই হচ্ছে আমাদের মেয়ে আফিয়া।” আল্লাহু আকবর (ভাবানুবাদ করা হয়েছে! আর আমি জানিনা এটা কতটুকু সত্য, তবে অসম্ভব নয়। একজন আমাকে নিশ্চিত করেছেন এটা ডঃ আফিয়া সিদ্দিকার ওয়েবসাইটেও আছে। দোয়া করি ইসলামের জন্য এই বোন যে অত্যাচার সহ্য করেছেন তার বিনিময়ে আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন… আমীন… ইয়া আল্লাহ… আমীন।

২। একজন নারী তার মৃত্যুর আগে আরেকজন মহিলার কাছে অছিয়ত করে গিয়েছিলেন তার জানাজা যেন রাতের অন্ধকারে হয় এবং রাতের অন্ধকারেই যেন তাকে কবর দেওয়া হয়। এর কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “পর্দা ফরজ হওয়ার পর আমি কোন পরপুরুষের সামনে যাইনি, কোন পরপুরুষও আমাকে দেখেনি! আমি চাইনা দিনের আলোতে জানাজা আর কবর হলে কাফন পরা অবস্থায় কোন পরপুরুষ আমার শরীরের গঠন দেখে ফেলুক।” আল্লাহু আকবর! এই মহীয়সী নারীর নাম হযরত ফাতেমা (রাঃ)। আমাদের মুসলিমদের ঘরে ঘরে ফাতেমারা জন্ম গ্রহণ কুরুক…আমীন।

আর এই লেখায় সত্যিকার অর্থে দ্বীনের পথে থাকা কোন বোন কষ্ট পেলে আমি দুঃখিত, আমাকে ক্ষমা করবেন! কিন্তু যাদের জন্য এই লেখা এটা যদি তাদের জন্য সত্য হয় তবে সেই সত্যের জন্য আমি দুঃখিত নই তা যতজনকে যত কঠিনভাবেই আঘাত করুক না কেন। আল্লাহ সবাইকে হেদায়াত দিন। আর কোনদিন যেন কোন হিজাবির জন্য কাউকে লজ্জিত না হতে হয়। আর আমাদের জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ যেন আমাদেরকে এমন কাজ থেকে বিরত রাখেন যাতে কোন হিজাবি বোনের আমাদের মুসলিম ভাই হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ না হয়। আমীন… ইয়া রব… আমীন।