হঠাৎ করেই যে ছেলেটা দ্বীন মানতে চায় তাকে একসাথে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়। লাইফ স্টাইল, ফ্রেন্ড সার্কেল, এমনকি যাকে সে একসময় পছন্দ করত কিংবা ভালোবাসত তাকেও। অনেকসময় এমন হয় যে মেয়েটাকে সে পছন্দ করত তাকে দ্বীনের পথে আনতে গিয়ে শয়তানের ফাঁদে পড়ে সে নিজেই উল্টো বেদ্বীনি হয়ে বসে থাকে। মানুষ তার অতীতের প্রতি দুর্বল। বিশেষ করে সে অতীত যদি প্রায়ই চোখের সামনে এসে পড়ে তাহলে তো অবস্থা আরো ভয়াবহ হয়।

বহুদিন পর হঠাৎ দেখায় সে ভুলে যায় সূরা নূরে যে দৃষ্টি সংযত করতে বলা হয়েছে। শয়তান পুরানো দিনগুলো অনেক সুন্দর করে সামনে তুলে আনে। চেষ্টা করে আবার তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলার। সন্দেহ নেই, এমনটা হয় মূলত অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার অভাবে। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ) বলেন,

“যদি কোনো হৃদয় আল্লাহকেই ভালোবাসে আর তাঁর কাছেই নিজেকে নিবেদিত করে, তবে সেটা অন্য কারো প্রেমে পড়ার কথা চিন্তাও করবে না, প্রেমে পড়া তো পরের কথা। তাই কারো মন যখন প্রেমে পড়ে সেটা হয় আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার অভাবেই। ইউসুফ (আ) আল্লাহকে ভালোবেসেছিলেন আর তাঁর প্রতি নিবেদিত ছিলেন বলেই তিনি প্রেমের ফাঁদে পড়েননি। আল্লাহ তা’আলা বলেন (সূরা ইউসুফ ১২:২৪), ‘আমি তার থেকে অনিষ্ট ও অশ্লীলতা দূর করে দিয়েছি। সে ছিল বিশুদ্ধ মনের একজন’।” (মাজমু ফতোয়া, ১০/১৩৫)

মেয়েটার ব্যাপারে মনে খচখচানি শুরু হলে অধিকাংশ ছেলে হতাশ হয়ে পড়ে। চুরি করে হয়তো তার প্রোফাইলে ঢুকে, পুরানো ছবি দেখে আর তারপর অনুশোচনায় ভোগে। দুনিয়ার সব মেয়ে থেকে বেঁচে থাকলেও এর থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব হয় না। শাইখ জাওয়াদ বলেন,

“দুনিয়ার সব মেয়ে থেকে একজন পুরুষ বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু একজন নারী থাকতে পারে, যে তার হৃদয়ে খুব গোপনে জায়গা করে নেয়।” (সুলাইমান আল উবাইদি, ১/৬১)

আবার কখনো এসব কিছু না করেও হঠাৎ শুধু একদিনের একপলক দেখাতেই দ্বীনি জযবা চুরমার হয়ে যায়। সে সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। নিজেকে গোনাহগার মনে করে। এদের সান্ত্বনা দিয়ে ইবনুল কায়্যিম (রহ) লিখেছেন,

“যদি ভালোবাসা এমন কারণে হয় যেটা হারাম নয় তাহলে তার কোনো দোষ নেই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন ব্যক্তির কথা যে তার স্ত্রী কিংবা দাসী থেকে আলাদা হয়ে গেছে। কিন্তু ভালোবাসা তো থেকে যায়, তা তাকে ছেড়ে চলে যায় না। এমনটা হলে তার কোনো দোষ নেই। একইভাবে, হঠাৎ যদি দৃষ্টি পড়ে যায় আর সে তার চোখ সরিয়ে ফেলে, তখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভালোবাসা তার হৃদয়ে জায়গা করে নেয়। তবে অবশ্যই তাকে এ অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।” (রাওদাতুল মুহিব্বিন, ১/১৪৭)

নিজের সাথে এ যুদ্ধের কথা কেউ না জানলেও আল্লাহ জানেন। তাই তিনি এর জন্যে পুরস্কারের ব্যবস্থাও রেখেছেন। ইবনে তাইমিয়া (রহ) বলেন,

“কেউ যদি প্রেমের কারণে ফিতনায় পরে, কিন্তু ধৈর্য ধরে আর নিজেকে পবিত্র রাখে, তবে তাকওয়ার কারণে আল্লাহ্‌ তা’আলা তাকে পুরস্কৃত করবেন।” [মাজমু ফতওয়া ১০/১৩৩]

তিনি সেখানে কুরআনের এ আয়াতটি নিয়ে এসেছেন—

“যে আল্লাহ্‌কে ভয় করে আর ধৈর্য ধরে, আল্লাহ এমন ভালো মানুষদের প্রতিদান নষ্ট করেন না।” [সূরা ইউসুফ ১২:৯০]

আল্লাহ তা’আলা যেন এ সকল ভাইদের ত্যাগগুলোকে কবুল করেন। অন্তরের কষ্টগুলো যেন দূর করে দেন। তাদেরকে এর জন্যে দুনিয়াতে উত্তম জীবনসঙ্গিনী ও আখিরাতে জান্নাত দান করেন। রাসূল (সা) বলেছেন,

“আল্লাহর জন্য তুমি কিছু ত্যাগ করবে আর আল্লাহ তোমাকে এর চেয়ে উত্তম কিছু প্রতিদান হিসেবে দিবেন না এমনটা কখনোই হবে না।” (শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নংঃ ৫৩৬৪)