আমরা একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকের একটা সময় অতিক্রম করছি এখন। সময়টা কঠিন যাচ্ছে। এমন কঠিন সময় হয়ত যুগে যুগেই নির্দিষ্ট বিরতি পর পর আসে। যুগের বিচার করলে আমাদের চলে না। আজ থেকে মাত্র ১০০ বছর আগে এই পৃথিবীতেই ঘটে গিয়েছিলো নারকীয় বিশ্বযুদ্ধ। হানাহানি-খাদ্যমন্দা-ক্ষমতা দখলের লড়াইতে ডুবে ছিলো সমগ্র বিশ্ব। অনেকেই অনেক অর্জন করেছে, তারপর বছর বিশ যেতে না যেতেই আবার আরো বড় ভয়ংকর সময় — সেই ক্ষমতা খাটানোর যুদ্ধে জাপানের হিরোশিমা নাগাসাকিকে বিষাক্ত করে দিয়ে লক্ষ লক্ষ প্রাণনাশ করে দিয়ে আমেরিকান জাতিগোষ্ঠী বিশ্বকে কব্জা করেছে আপন কৌশলে। অথচ তার দুইশ বছর আগেও ব্রিটিশ সূর্য ডুবতো না কোথাও। এমন আরো অজস্র চোখ দিয়ে দেখা যাবে “সময়” গুলো।

আরেকটু উপরে উঠি? যখন সভ্যতাগুলো হারিয়ে গেলো। ফারাওদের মিশর, মেগাস্থিনিস, ব্যাবিলন, ইনকা, মায়া, পাল সাম্রাজ্য, সেনদের রাজত্ব, অটোমান এম্পায়ার — অমন শত শত সভ্যতা পাওয়া যাবে হয়ত যদি হিসেব করি এই সৃষ্টির শুরু থেকে। কিন্তু তাদের অমন হিসেব করে আমাদের লাভ নেই। সভ্যতা টেকে কয়েকশত বছর। আমরা বাঁচি খুব বেশি হলে অর্ধশত বছর।

আমরা বাস করছি বিদ্যুৎ সভ্যতায়। মাত্র দু’তিনশ বছর আগে উদ্ভাবিত বিদ্যুৎ দিয়ে গত পঞ্চাশ বছরে প্রযুক্তিতে উন্নত হয়েই মাটিতে আমাদের আর পা পড়েনা। আমরা বুর্জ আল আরব বানাই, আমরা বানাই পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, মনোহারি সিয়ার্স টাওয়ার, স্ট্যাচু অব লিবার্টি, আইফেল টাওয়ার। আমরা দম্ভে আর বড়ত্বে গলা ফুলিয়ে দিই। অথচ প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা ট্রেঞ্চে যখন কয়েকটা হিমালয় ডুবে যাবে শুনি—মনে হয়না ওই উঁচু হিমালয়, আর অমন গভীর খানা-খন্দটা কে তৈরি করলো! প্রকৃতি নামের শব্দটা দিয়ে লেখকমহল চালিয়ে দেন অগভীর চিন্তার পাঠকদের মনকে বাঁকিয়ে দেবার জন্য — আমরাও সন্তুষ্ট হই।

কিন্তু অমন পিরামিড বানালেন যারা, আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘর বা পিসার হেলানো মিনার যারা বানালেন — তারা কোথায় চলে গেলেন? মরে গেলেন তো কেন আর কোন চিহ্নই রইলো না তাদের? কত বেশি দুর্বল সেই সভ্যতার এই ধারক ও বাহকদল — কতনা ক্ষণস্থায়ী এই বিপুল দম্ভযজ্ঞ, সৃষ্টিযজ্ঞ আর ক্ষমতাযজ্ঞ!

এসব সভ্যতা আসবে যাবে। একসময় আদ জাতি ছিলো, সামূদ জাতি ছিলো। দম্ভে আর জুলুমে তারা ছাড়িয়ে গিয়েছিলো সবাইকে। পৃথিবীর ইতিহাসের সবচাইতে ক্ষমতাধর জাতিকেও আল্লাহ এক মুহূর্তেই নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিলেন। কওমে লূতের মাঝে “সমকামিতা” প্রকটভাবে দেখা দিয়েছিলো, তারা শুনেনি তাদের নবীর বলা কথাগুলো — মাটিচাপা পড়ে, প্রকট শব্দে কানে তালা লেগে সমস্ত জাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিলো। পবিত্র কোরআনে এই পৃথিবী আর নভোমন্ডলসহ সমস্ত কিছুর স্রষ্টা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেই দিয়েছেন — তিনি অনেক জাতিকে সমূলে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন তাদের “কাজের জন্য”। তিনি জানিয়েছেন আমাদের মাঝে কেউ যদি তার দাসত্ব না করে, আল্লাহ তাদের সবাইকে নিশ্চিহ্ন করে সেখানে আরেকটা জাতিই সৃষ্টি করে দিতে পারেন — নিঃসন্দেহে এটা তার জন্য কোন ব্যাপারই না। কিন্তু আমরা যখন সেই কোন একটি জাতিসত্তার অংশ — তখন সেটা আমাদের জন্য “ব্যাপার”।

আমাদের জীবনের প্রতিটি দিনই আমাদের জন্য ব্যাপার। আমাদের একটা জীবন একবারের জন্যই। এই আত্মা, এই দেহ আর জীবন — একবারের জন্যই।

আমরা নিশ্চয়ই অবলীলায় ভেসে দিতে পারিনা আমাদের জীবন — আমরা অবশ্যই চাইনা একটা নিশ্চিত ভয়ংকর পরিণতি। এমন উদ্দেশ্যহীন বর্বর লোভী, জালিম আর কামুক সমাজ তৈরি করে যে জাতি—তার অংশ হওয়ায় আমাদের ভালো কাজের অ্যাকাউন্টে অনেক কিছু জমা থাকলেও — সেই পুরো ব্যাঙ্কটাই মহান অধিপতি করে দিবেন “সিলড”। তাইতো খেয়ে দেয়ে, ঘুমিয়ে, চাকুরি করে দিন অতিক্রম করার পরেও মহান সর্বশক্তিমানের দাসত্বের কতখানি আমরা প্রত্যেকে/পরিবারসহ/এই পুরো জাতি মিলে করছি তা চিন্তা করার দায় থেকে যায় সবারই।

নইলে একদম শেষে সকল প্রাপ্তিই হয়ত মাল্টিপ্লাইড হবে শূণ্য দিয়ে,

(ধনসম্পদ * প্রতিপত্তি * সম্মান * যশ * জ্ঞান) * শূণ্য = শূণ্য [ভিখিরী]

এখন চিন্তা করার বিষয় রয়ে যায় — আমরা কি হাশরের ময়দানের বিশাল প্রান্তরে ভিখিরি বেশে দাঁড়াতে চাই?

আমি চাকুরি করি একটা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে। তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক “আধুনিক প্রজন্মের” তরুণ। আমাদের কাজের ফাঁকে ফাঁকে চলে আলাপ। প্রায়ই টপিক আসে "গার্লফ্রেন্ড-বিয়ে-মেয়ে।" একদিন সহসা লম্বা চওড়া আলাপ হল—আমি শ্রোতা টাইপের। কিছু কিছু আলাপে সবার প্রবেশের ফাঁকফোকর থাকে না। তাই ওয়েস্টিন, রুচিতা বার, ভুত, রেস্তোরা, পিজা হাট, কেএফসি গুলশান ধানমন্ডির কিছু কিছু প্লেসের রঙ্গিন আলাপ চলতে থাকলে অন্য কাজে মন দিলাম। এলো বিয়ের আলাপ। প্রশ্ন আমার দিকে। কেন প্রেম করিনা — এ নিয়ে কিছুক্ষণ হাসি তামাশা।

ইদানিং ছেলে মহলে একটা কথা খুব শুনি — “লাভ ম্যারেজ মানে নিজের গার্লফ্রেন্ড, অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ মানে অন্যের গার্লফ্রেন্ড।” আমি এই প্রসঙ্গেও কথা বলিনা, শুধু স্মিত একটা হাসি উপহার দিই ওদের।

একজন অভিজ্ঞতা বলছিলেন নিজ জীবনের — কীভাবে তিনি স্কুলগামী একটা মেয়ের সাথে প্রেম করেছিলেন, কতবার চাকুরিজীবী বাবা মায়ের সেই মেয়েটির বাসাতেই শয্যাগমন করেছেন, কীভাবে মেয়েটা রিলেশন ব্রেক করে আপ রিলেশনে চলে গেলো।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় হই। তারপর একজন বলতে শুরু করলো তাদের ভার্সিটিতে (ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে) কীভাবে ক্লাসের মধ্যেও ছেলে-মেয়ে আদিম আনন্দের স্বাদ নিতো। অমন কমপক্ষে ১০-১৩টা গল্প। সত্য-মিথ্যা জানিনা, আমি স্তব্ধ হয়ে শুনি। বরফশীতল হয়ে জমে যাওয়া দেহে রক্তসঞ্চালনের চেষ্টা করতে থাকি।

আমার দিকে তাকিয়ে একজন কলিগ বলতে থাকে — “তুমি এই জেনারেশনে এমন কোন মেয়ে আশা করতে পারো না বিয়ে করতে গিয়ে, যে ইউজড না”! তার পরপরই আবার বলে “টাকা-পয়সা না থাকলে বউ বাঁধতে পারবা না, তোমাকে অনেক টাকা থাকতে হবে, নইলে বউ তোমার অফিসে থাকার সময়ে পাশের বাড়ির ছেলেটার সাথে ফোনে কথা বলবে, তারপর…।”

আমি আর সহ্য করতে পারিনি, শক্ত গলায় বলে উঠেছিলাম — “দুঃখিত আমি একমত না। এই সমাজে আমার মতন দুর্বল আত্মার একটা ছেলেও যখন এমন ভয়াবহতা থেকে মুক্ত থাকতে পারে, এমন কেউ আমার জন্য আছেই যে আমার মতন করেই আমার মতন কারো জন্য অপেক্ষা করছে। সমস্ত মেয়েদের এক করে দিলে হবেনা কেননা আমি আমার বোনদের মতন অনেক মুসলিমাহ বোনদের চিনি যারা অসম্ভব সুন্দর অন্তকরণকে ধারণ করে।”

যাদের চোখে পৃথিবী কেবলই কেনাকানা, গয়নাগাটি, সাজগোজ আর গাড়ি-বাড়ির না। তাদের কাছে এই জীবনটার একটা আলাদা অর্থ আছে। তাদের কাছে ব্র্যাডপিট-নিকোল কিডম্যান, শাহরুখ-গৌরি, প্রভা-রাজিবরা দাম্পত্য জীবনের আইকন না। তাদের কাছে আইডল হলো হলো ফাতিমা, আয়িশা, আসিয়া, খাদিজা নামের কিছু পবিত্র আত্মা।

মুসলিম যারা, তাদের আইডল তথা আদর্শ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যার জীবনে দারিদ্র ছিলো আগাগোড়া বন্ধু। আরবের ইসলামী রাষ্ট্রের এই নেতা বিয়ের অনেকগুলো বছর পরেও মোহরানা আদায় করতে না পারায় স্ত্রী আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কে নিজ বাড়িতে তুলে নেয়ার সুযোগ করতে পারেননি।

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন জরুরি ফান্ডে দান করতে কিছু জিনিস নিয়ে যাবার পর তাকে প্রশ্ন করা হলো বাড়িতে কি রেখে এসেছেন — তিনি উত্তর দিয়েছিলেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে। কারণ তার ঘর ছিলো শূণ্য! এমনই ছিলেন তারা, আর তাদের সহধর্মিনীগণ ছিলেন অমনই। কই, তারা তো বউ বাঁধতে বাড়ি-গাড়ি-ঐশ্বর্যে মুড়িয়ে রাখতেন না (যদিও তা করার সুযোগ তাদের ছিলো)।

সেই আদর্শের বলে দাস যায়িদ বিন হারিসা সন্তান পেতেন উসামা বিন যায়িদদের মতন। যাকে নবীজী (সা) মাত্র উনিশ বছর বয়েসে সেনাপতি নিযুক্ত করেছিলেন, যার নেতৃত্বে অনেক প্রবীণ সাহাবাও তাগুতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন — স্থাপন করে গেছেন অনুপম দৃষ্টান্ত। তাদের ছোটো একটা বাহিনীর কাছে প্রবল প্রতাপশালী রোমান সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনী ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিলো।

আমার আইডল তো সেই ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম, যিনি একজন অতিথি ছাড়া খেতেই বসতেন না। আমাদের আইডল হলেন আইয়ুব আলাইহিস সালাম — যিনি দীর্ঘদিন ছিলেন প্রচন্ড রোগগ্রস্ত, তবু ছিলেন প্রশান্ত আত্মায় তার রবের কৃতজ্ঞ দাস।

আমি সেই দ্বীনকেই জীবনবিধান হিসেবে মানি— যা সৃষ্টির শুরুতেও ছিলো, যা থাকবে বিশ্বজগত ধ্বংস অবধি। আমি সেই নৌকায় উঠতে পারি বা না পারি, এই দ্বীন ইসলামই বিজয়ীদের আরোহণের যান — যা নিয়ে যাবে সফলতার মঞ্জিলে।

বউ বাঁধতে টাকা কামানোর আইডিয়ায় মগ্ন থেকে, ক্রমাগত অন্যের সাথে নিজেকে বড় করার টেক্কা দিতে দিতে, নিজেকে খুউল আর ইয়ো স্মার্ট বানানোর নেশাময়তায় ইনভলভ করতে শেখায়না আমার এই দ্বীন। আমাদের, আমাদের সমস্ত ভালোবাসা আল্লাহর জন্যই। সেই ভালোবাসায় সিক্ত আমি যেখানেই যাই, জীবনের প্রয়োজন সামলে ঘরে ফিরে যাবো প্রিয়জনের কাছে — আবেগ আর ভালোবাসা ভাগাভাগি করতে।

আমরা বিয়ের আয়োজনে কেবল আল্লাহর স্মরণে একটা দোয়া করতে উন্মুখ থাকি — যেন আমাদের নতুন এই বন্ধন তাঁর দাসত্বের জন্যই হয়। যেন দুজনের এই বন্ধন পৃথিবীর জীবন ছাপিয়ে কবর, হাশর, পুলসিরাত, মীযান পেরিয়ে জান্নাতেও অটুট থাকে। যেন দু’জন এই নতুন ভালোবাসার গ্ল্যামার নিয়ে থাকি অনন্তকাল, যেমন ছিলেন আমাদের আইডলেরা।

আমরা জানি আমাদের ভালোবাসা নশ্বর নয় — আমাদের ভালোবাসা হলো আল্লাহর প্রতি আমাদের ভালোবাসার আলোকে উদ্ভাসিত। আমাদের বিশ্বাসের কমতি হবেনা কখনই। আমাদের সম্মানের ঘাটতি হবেনা কখনই। আমরা সবসময় নিজেদের শোধরাতে শিখি। তাই আমাদের ভুল বুঝাবুঝি রবে না বেশিক্ষণ। আমাদের মৃত্যুবধি আমরা নিজেদের উন্নত করি আত্মিকভাবে।

আমরা কখনই হারিয়ে যাইনা সময়ের নষ্টদের দখলে যাওয়া প্রচারণার কাছে, আমরা কখনই হারিয়ে যাইনা প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতায় মোহাচ্ছন্ন হওয়া গাফেলদের উঁচু উঁচু অট্টালিকা মতন অহংকার দেখে। আমরা জানি, আমরা মানুষকে, মানবতার জন্য নিজেদের বিলাই লোক দেখাতে না — কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি পাবার আশায়। আমরা খুব ভালো করে জানি, আমাদের প্রতিটি মুহূর্তের কাজ ও মনের চিন্তা-অনুভূতিরা রেকর্ডিং হচ্ছে — যার কিছুই গোপন থাকবে না, তা থেকে রক্ষা পাবো না আমরা কেউই। মরুর বুকে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন জাতিকে আলোয় উদ্ভাসিত করেছিলো যেই দ্বীনের পূর্ণাবয়ব আমরা সেই সে দ্বীনের অনুসারী।

মুশরিক সর্দার আবু জাহলের ছেলে ইকরিমা জীবনভোর মুসলিমদের বিরোধিতা করেছিলেন, হিন্দ বিনতে উতবা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় চাচা হামজা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে হত্যার পর কলিজা চিবিয়েছিলেন। অথচ পরে তারা যখন অনুতপ্ত হয়ে তারা নবীজীর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন — পেয়েছিলেন, হয়েছিলেন রাদিয়াল্লাহু আনহুম, আনহুমা। আর দ্বীনকে গ্রহণ করে নেয়ার পর তাদের জীবন ও চরিত্রও ছিলো অন্যরকম সুন্দর। এই উদার ভালোবাসাময় সুন্দরতম দ্বীন ইসলাম হলো আমাদের আদর্শ! এই সুন্দরতম জীবনবিধান আমাদের সম্পদ।

আমাদের সামনে স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো, রাস্তার বিলবোর্ডগুলো, পত্রিকা-ম্যাগাজিনগুলো যতই হতাশা প্রচার করুন না কেন, প্রাচুর্যের নেশায় চুর হয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীরা যতই ভয়াবহ সমাজ তৈরি করুক না কেন, আত্মিক মুক্তির জ্ঞানে মূর্খ শাসকদল আমাদের যতই শোষণ করে ছিবড়ে করে দিক না কেন, আমরা জানি আমাদের অন্তরের আলোতেই আমরা মুছে দেবো এই অন্ধকারের নোংরামি, কদর্যতা। আমাদের কর্মের আলোতে, অন্তরের ভালোবাসায় সিক্ত হবে অভাবীরা, মজলুমেরা, মানবতা। রূপালী আর সোনালী পর্দার প্রচারণায় পণ্য হওয়া থেকে মুক্তি পেয়ে সম্মানিত হবেন আমাদের মা-বোনেরা এই দ্বীনেই স্পর্শেই। আমরা তো হতাশ নই! আমরা নোংরা মনের লোকের নোংরা কথায় দুঃখের সাগরে ভেসে হতাশ হয়ে “আনইউজড” মেয়ে খুঁজতে প্রেম করার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়িনা। আমরা প্রতিদিন সালাতের পরে, ইবাদাতের পরে হাত দুটি তুলে দোয়া করি,

“রাব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াযিনা ওয়া যুররিয়্যাতিনা ক্কুররাতা আ’ইয়ুনিন ওয়া জা’আলনা লিল মুত্তাক্কিনা ইমামা”

যার অর্থঃ “হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ কর।” [২৫:৭৪]

আমরা জানি, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সমস্ত দোয়া কবুল করেন এবং দোয়ায় ভাগ্য ফিরায়। তাইতো এই ভয়ংকর সময়েও আমরা স্বপ্ন দেখি সুন্দরের, প্রশান্ত আত্মার। এই স্বপ্ন কোন ক্ষুদ্র স্বপ্ন নয়—স্বপ্নের সুতোর এই প্রান্তে মালা গাঁথছি যখন, অন্য প্রান্তেও তখন আমাদের হয়ে মালা গেঁথে যাচ্ছে জান্নাতে, যেখানে শান্তিই শান্তি। আমাদের কাজই তো তৈরি করে দেয় আমাদের ভবিষ্যত, যে ভবিষ্যত অনন্ত কালের। যা সুন্দর কর্মের মানুষদের জন্য অনন্ত সুন্দর, অনন্ত শান্তির, সুখস্বপ্নের!