একটা হর্ন স্পীকার(মাইক) ১১০-১৩০ডেসিবেল সাঊন্ড তৈরী করে। এটা যখন একটা ঘনবসতিপূর্ন আবাসিক এলাকায় লাগানো হয় এবং কয়েক ঘন্টা ধরে কারো জানালার কাছে বাজতে থাকে, তাতে সুস্থ মানুষের অসুস্থ হয়ে পড়ার কথা । আমরা এতটা অনুভুতিহীন হয়ে পড়ছি কেন? নবীজির সুন্নাহ আর হাদিস থেকে এভাবে ইসলাম প্রচারের শিক্ষা দেয়া হয়েছে কোথাও?


কনসার্ট আর অন্য শব্দ দূষনেও মানুষের একি কষ্ট হয়, মানুষ বিরক্ত হয়।কিন্তু একটা অনৈসলামিক কাজ মানুষকে কষ্ট দেয় বলে একটা ইসলামী কাজও মানুষকে কষ্ট দিয়ে করা যাবে? ওয়াজ মাহফিল একটি দ্বীনি দাওয়াহ। এর প্রতি মানুষ কেন বিরক্ত হবে যেখানে ইসলামের দাওয়াহ মূলনীতি স্পষ্ট করে দেয়া আছে। এই পোস্টে আমাদেরকে নাস্তিক বলে বসলেন কেউ কেউ। আল্লাহ তা'লা আমাদের মাফ করুন।

শায়খুল ইসলাম আল্লামা তকী উসমানী তাঁর 'জিকির ও ফিকির'- নামক বইয়ে লিখেছেন - শ্রোতাদের জন্য যথেষ্ট,প্যান্ডেলের বাহিরে এর চেয়ে বেশি পরিমান মাইকের আওয়াজ দেওয়া জায়েজ নয়।

আল্লামা ইউসুফ লুধিয়ানভী (রহ) তাঁর 'আপকে মাসাইল আওর উনকা হল'-নামক প্রসিদ্ধ গ্রন্থে লিখেছেন-

শহরের তন্দ্রাচ্ছন্ন অসুস্থ,দুধের শিশু পরীক্ষার
প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, কাজে নিমগ্ন ব্যক্তিকে জোর
করে ওয়াজ শুনানোর অনুমতি শরীয়ত দেয়না।

সুতরাং ওয়াজের নামে মাইকের যে বাড়াবাড়ি এ ব্যপারে এন্তেজামিয়া কমিটিকে অবশ্যই দায়বদ্ধ থাকতে হবে।


রাজনৈতিক সভা, বিনোদন অনুষ্ঠান, বানিজ্যিক প্রচারণা এবং ধর্মীয় ওয়াজ-আলোচনার সাউন্ড মূল অনুষ্ঠানস্থলে সীমাবদ্ধ রাখাই যৌক্তিক। অনুষ্ঠানস্থলের বাহিরে মাইক লাগিয়ে অন্যদের শুনতে বাধ্য করা অন্যায় এবং অযৌক্তিক।

ওয়াজ মাহফিলে প্যান্ডেলের বাহিরের মাইক বড়জোর রাত ১০টা পর্যন্ত চালু থাকতে পারে। এরপর শুধু প্যান্ডেলের ভেতরের সাউন্ডবক্স ব্যবহার করা উচিত।

কারণ, গভীর রাত পর্যন্ত বাহিরের মাইক ব্যবহারের কারণে অন্য ধর্মের অনুসারী কিংবা ঘুমন্ত মানুষ, শিশু, অসুস্থ লোক এবং বিশেষ করে পিএসসি ও জে এস সিসহ অন্যান্য পরিক্ষার্থী; এমনকি মাহফিলের আশপাশের মানুষদের জরুরী প্রয়োজনে মোবাইলে কথাবার্তা বলাও দুরূহ হয়ে যায়। কারো ক্ষতি করে, কাউকে কষ্ট দিয়ে এভাবে ইসলাম প্রচার কোনো ভাবেই ইসলামে অনুমোদিত নয়। এমন অযৌক্তিক কাজে বহু সাধারণ মানুষ বরং ইসলামের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হবেন; বরং হচ্ছেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাসজিদে ই‘তিকাফ কালে সাহাবীদেরকে উচ্চস্বরে ক্বিরাআত পড়তে শুনে পর্দা সরিয়ে বললেনঃ জেনে রাখো! তোমাদের প্রত্যেকেই স্বীয় রব্বের সাথে চুপিসারে আলাপে রত আছো। কাজেই তোমরা পরস্পরকে কষ্ট দিও না এবং পরস্পরের সামনে ক্বিরাআতে বা সলাতে আওয়ায উঁচু করো না। (সুনান আবূ দাঊদ, সালাত অধ্যায়, হাদীস নং ১৩৩২)

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন- তুমি প্রতি জুমু‘আহয় লোকেদের হাদীস শোনাবে। যদি এতে তুমি ক্লান্ত না হও তবে সপ্তাহে দু’ বার। আরও অধিক করতে চাও তবে তিনবার। আরও অধিক নাসীহাত করে এ কুরআনের প্রতি মানুষের মনে বিরক্তি সৃষ্টি করো না। লোকেরা তাদের কথাবার্তায় ব্যস্ত থাকা অবস্থায় তুমি তাদের কাছে এসে তাদের নির্দেশ দেবে- আমি যেন এমন হালাতে তোমাকে না পাই। কারণ এতে তাদের কথায় বিঘ্ন সৃষ্টি হবে এবং তারা বিরক্ত হবে। বরং তুমি এ সময় নীরব থাকবে। যদি তারা আগ্রহ নিয়ে তোমাকে নাসীহাত দিতে বলে তাহলে তুমি তাদের নাসীহাত দেবে। (বুখারী, অধ্যায় দুয়াসমূহ, হাদীস নং ৬৩৩৭) ---শায়েখ আহমাদুল্লাহ'র ওয়াল থেকে নেয়া