উনার অপছন্দের কাজগুলো ছাড়তে পারতেসেন না। অভ্যাস আর পরিস্থিতির জালে বন্দী হয়ে দিশেহারা হয়ে গেছেন। বারবার এতো চেষ্টা করেও, ছাড়তে চেয়েও পারতেসেন না। বারবার ভুল করেই ফেলতেসেন। নিজের উপরেই নিজের ঘেন্না জমে যাচ্ছে। চেষ্টা করতে করতে বিষন্ন হয়ে যাচ্ছেন। আস্তে আস্তে নিজের উপরেই হতাশ হয়ে যাচ্ছেন। যতোই ইসলামকে আঁকড়ে ধরতে চাইছেন, আল্লাহর খুশির জন্যে বাঁচতে চাইছেন ততোই আশেপাশের মানুষগুলো আপনাকে আরো কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে আরো কঠিন করে দিচ্ছে। সাহায্য দূরে থাকুক, উল্টো আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ ছাড়তে চাওয়ার কারণে আপনাকে টিটকারী শুনতে হচ্ছে, গালমন্দ শুনতে হচ্ছে, অপমানিত হতে হচ্ছে সবখানে।

আল্লাহকে খুলে বলুন। এতো এতো আন্তরিক চেষ্টা সত্ত্বেও বারবার ব্যর্থতার কথাগুলো খুলে বলুন। নিজের অসহায়ত্বের কথাগুলো সব বলুন, স-ব। মজবুত ঈমান আর হিদায়াত চান। বলুন আপনাকে ক্ষমা করে দিতে। উনাকে সাহায্য করতে বলুন। চোখের পানি ছেড়ে দিন। হাউমাউ করে উনার অবাধ্যতা আর অপছন্দনীয় কাজ থেকে মুক্তি চান। চাইতেই থাকুন, আর চেষ্টা করতেই থাকুন। থামবেন না। হাল ছাড়বেন না। শাইত্বানকে যুদ্ধে জিতিয়ে দিবেন না। কক্ষনো না।

উনি সাহায্য করবেন। কাজগুলোকে আপনার সামনে থেকে, এমনকি জীবন থেকেই সরিয়ে নিবেন। প্রিয় আর কাছের মানুষ বলে যাদের মনে করছেন তাদেরকেও একে একে সরিয়ে নিবেন উনি। প্রথম প্রথম আপনার বুক ভেঙ্গে যাবে। একে একে সবাইকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে যাবেন। কিন্তু আস্তে আস্তে বুঝতে পারবেন, যারা প্রিয় ছিলো, যাদেরকে কাছের ভাবতেন, তারা কতো ভয়ংকর আর ক্ষতিকর ছিলো আপনার দুই জীবনের জন্যেই। আল্লাহই আপনার সামনে ধীরে ধীরে সব উম্মোচিত করবেন। আপনি উনাকে আরো বেশি বেশি চিনতে পারবেন। উনার ভালোবাসাকে অনুভব করতে পারবেন। প্রতিদিন আরো একটু বেশি করে উনার উপরে ভরসা করতে শিখবেন। লজ্জায়, অপরাধবোধে আর নিজের অজ্ঞতা-তুচ্ছতায় এতোদিনের উদ্ধত অহংকারী মাথাটা নুয়ে আসবে। কৃতজ্ঞতার নোনা জলে আপনার দু’চোখ ভেসে যাবে।

ভাববেন না। আপনার শূন্যস্থান তিনি ঠিকই প্রতিস্থাপন করে দিবেন অন্যরকম অপরিচিত সব আলোকিত মানুষ দিয়ে। এরা কোন স্বার্থে নয়, বরং এক আল্লাহর প্রতি আপনার ভালোবাসার জন্যেই আপনাকে ভালোবাসবে। আপনিও দেখবেন এদেরকে ভালোবেসে যাচ্ছেন কারণ এরা আল্লাহকে ভালোবাসে। এই ভালোবাসা অপার্থিব। অবর্ণণীয়। এটা মু’মিনদের অন্তরে আল্লাহই সৃষ্টি করে দেন। দেখবেন সালাতে এদের জন্যে আপনি নিজে নিজেই দুয়া করে যাচ্ছেন কোন স্বার্থ ছাড়াই। এটাই ভালোবাসা। একবার এর স্বাদ না পেলে বুঝানো বড় দায়।

কাজেই হাল ছাড়বেন না। আল্লাহর কাছে এই জীবন আর পরের জীবনের কল্যাণ চান। চাইতে থাকুন। আল্লাহ নিজেই আপনার জীবন থেকে অকল্যাণগুলো সরিয়ে নিবেন এক এক করে। সালাত ছাড়বেন না। মরে গেলেও না। পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে বারবার চাইতে থাকুন উনার কাছে। হারাম আর অপছন্দনীয় কাজ থেকে বাঁচার চেষ্টার করুন প্রাণেপণে, আর দু’আ করুন। করতেই থাকুন।

উনার দিকে হাঁটুন। খুব কষ্ট হয়? তাহলে এক পা এক পা করে হলেও হাঁটুন। তবুও হাঁটুন। লোকে যাই বলুক না কেনো শুনবেন না। থামবেন না। যতোই হাঁটবেন, বুঝতে পারবেন আপনার পরম করুণাময় প্রতিপালক আপনার দিকে দৌড়ে আসছেন।

উনার দিকে একটু কষ্ট করে না এগুলে, না হাঁটলে যে এই অমূল্য আর গভীরতম অনুভূতিটুকু অধরাই রয়ে যাবে।


19/12/2019, 13:47