লেখার শিরোনামেই বিষয়টা স্পষ্ট যে এটা প্র্যাক্তিসিং মুসলিমদের জন্য তারপরও আমি লেখার শুরুতেই পাঠককে কয়েকটা প্রশ্ন করে নিতে চাই …

১। আপনি কি বিশ্বাস করেন যে মহান আল্লাহ আপনার স্রষ্টা এবং আপনার সবকিছুই তার অধীনস্থ?

২। আপনি কি বিশ্বাস করেন যে একদিন আপনাকে তার কাছেই ফিরে যেতে হবে এবং তার প্রেরিত সুসংবাদ অনুযায়ী পুরষ্কার আর সতর্কতার বিষয় অমান্য করার শাস্তি দেওয়া হবে??

আরও কিছু প্রশ্ন করার কথা তারপরও অন্তত এই দুইটা প্রশ্নের উত্তর যদি “হ্যাঁ” হয় তাহলে পরের লাইন থেকে পড়ে যান কিন্তু উত্তর যদি “না” কিংবা “হ্যাঁ… কিন্তু না মানে ইয়ে” হয় তাহলে বলব আপনি নিজেকে যতই ভালো মুসলিম মনে করুন না কেন লেখাটা আপনার জন্য নয়, তাই পড়ার দরকার নেই!


আগামী ১৩ নভেম্বর হুমায়ূন আহমেদ এর জন্মদিন! কয়েকদিন আগে থেকেই পত্র-পত্রিকা, টিভি চ্যানেল আর ফেসবুক সট্যাটাস, ছবির আপলোডে আবেগ, স্মৃতিচারণ, শোক, আফসোসের জোয়ার দেখে একেবারে আহামরি কোন ইসলামি সত্ত্বা নিজের ভেতর না থাকলেও বলতে চাই এসবের সামনে মুসলিমদেরও একটা অবস্থান আছে। ৯০% মুসলিমের এই বাংলাদেশে আমাদের হুমায়ূন আহমেদদের জন্য আবেগের জোয়ারে ভেসে যাওয়া মুসলিমরাই বেশী! আবেগের জোয়ারে ভাসার আগে আমার practicing মুসলিম ভাইদের কিছু বার্তা দিতে চাই।জোয়ারে ভেসে খড়খুড়াও ধরতে না পেরে সব হারানোর আগে!

অনেক আগে থেকেই আমি একটা বিষয় সূক্ষ্মভাবে খেয়াল করেছি হুমায়ূন আহমেদ ইস্যু আসলেই মুসলিম ভাইদের একটা অংশের মধ্যে একটা কমন ব্যাপার চলে আসে_ হুমায়ূন আহমেদকে আস্তিক প্রমান করতে ব্যস্ততা! বিষয়টা আমার কাছে কৌতুকের মতো ঠেকে তারপরও আমি এটা নিয়ে আপনাদেরকে ইসলামের জায়গা থেকে চিন্তা করার কিছু রসদ দিতে চাই। হুমায়ূন আহমেদ আস্তিক না নাস্তিক এই তর্কটা মুলত শুরু হয় তার মৃত্যুর পর! আর এখন পর্যন্ত আমি যা দেখলাম একটা দল তাঁকে নাস্তিক প্রমান করার জন্য ২৮ মে ২০১২ তারিখে যায়যায়দিন পত্রিকায় প্রকাশিত http://www.jjdin.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=28-05-2012&type=single&pub_no=140&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&news_id=18519 এই সাক্ষাতকারটা ব্যবহার করে। আবার আরেক দল তাঁকে আস্তিক প্রমান করার জন্য১২ নভেম্বর ২০১২ তারিখে প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-07-27/news/277119 এই সাক্ষাৎকারটা ব্যবহার করে! দুইটা কাজই হাস্যকর কারন যে যুক্তিতে প্রথম আলোকে বিশ্বাস করে যায়যায়দিনকে অবিশ্বাস করে হুমায়ূন আহমেদকে আস্তিক প্রমান করা যায় সেই একই যুক্তিতে যায়যায়দিনকে বিশ্বাস করে প্রথম আলোকে অবিশ্বাস করে হুমায়ূন আহমেদকে নাস্তিক প্রমান করা যায়! আপনারা আমাকে বিশ্বাস করবেন কি করবেন না সেটা আপনাদের ব্যাপার কিন্তু সত্যটা হচ্ছে আমি উনার একটা ভিডিও সাক্ষাতকার দেখেছি যেটা তার মৃত্যুর পর একাত্তর টেলিভিশনের একটা টক শোতেও (যার উপস্থাপক ছিল আব্দুন নুর তুষার আর অথিথি ছিল শাকুর মজিদ, আনিসুল হক) জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হয়েছিল! যেখানে হুমায়ূন আহমেদ বলছেন, “কচ্ছপ হাজার বছর বাঁচলে মানুষ কেন ৭০-৮০ বছর বাঁচবে?” এরপর তিনি মানুষের অমরত্ব এর ব্যাপারে তীব্র আশাবাদ ব্যক্ত করেন! তার ভাষায় এই প্রজন্ম না হলেও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অমরত্ব পেয়ে যেতে পারে!আমি আমার জীবনে অনেক মানুষ দেখেছি যারা ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে মৃত্যুর পরের জীবনকে অস্বীকার করে কিন্তু মহাসত্য মৃত্যুকে অমরত্ব দিয়ে ঢেকে রাখতে চাই উনাকেই দেখলাম! তবে dear practicing muslims আমি স্পষ্ট করে আপনাদেরকে আল্লাহ্‌র বাণী মনে করিয়ে দিতে চাই…

“প্রতিটি প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে…” [আলে ইম্রানঃ১৮৫]

আর একজন মানুষ যদি কচ্ছপ হাজার বছর বাঁচলে মানুষ কেন ৭০-৮০ বছর বাঁচবে প্রশ্ন করে , অমরত্তের বিষয়ে তীব্র আশাবাদ ব্যক্ত করে সে কি মৃত্যুকে অস্বীকার করতে চায়না?? সে কি আল্লাহর সুস্পষ্ট বানীকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেনা?? মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানে কি আখিরাত নিয়েও প্রশ্ন তোলা নয়?? আর দেখুন আল্লাহ কি বলছে…

“এবং আমি তোমার নিকট সুস্পষ্ট আয়াত নাযিল করেছি, ফাসিকরা ছাড়া অন্য কেউ তা অস্বীকার করেনা।” [বাকারাঃ ৯৯]

আর আল্লাহর কথা অনুযায়ী কেউ ইসলামের কোন চরম সত্য নিয়ে সন্দেহ পূষন করতেও পারেনা। কারন আল্লাহ বলেছেন…

“প্রকৃত সত্য তোমার প্রতিপালকের কাছ হতেই (এসেছে), কাজেই তোমরা সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হইয়ো না।” [বাকারাঃ১৪৭]

সুবহানাল্লাহ! হুমায়ূন আহমেদ এর “কচ্ছপ হাজার বছর বাঁচে আর মানুষ বাঁচে ৭০-৮০ বছর” এই আক্ষেপের জবাব মহান আল্লাহ ১৪০০ বছর আগেই দিয়ে রেখেছেন…

“অবশ্যই তুমি তাদেরকে বেঁচে থাকার ব্যাপারে সকল মানুষ এমনকি মুশরিক অপেক্ষাও অধিক লোভী দেখতে পাবে, তাদের প্রত্যেকেই আকাঙ্ক্ষা করে থাকে যদি হাজার বছর আয়ু দেয়া হত, কিন্তু দীর্ঘায়ু তাদেরকে শাস্তি থেকে রেহাই দিতে পারবেনা, তারা যা করে,আল্লাহ তার দ্রষ্টা।” [বাকারাঃ৯৬]

এখন ইসলামের কোন চিরন্তন সত্যকে অবিশ্বাসীর মতো ব্যাখ্যার প্রেক্ষিতে কুরানের এই আয়াতগুলো দিয়ে হুমায়ূন আহমেদকে অবিশ্বাসী তাকফির করা যায় কিনা আমার জানা নেই আর গেলেও আমি সেই গুরু দায়িত্বটা নিতে চাচ্ছিনা কারন ঐ সাক্ষাতকারে একই জায়গায় বসে, একই হুমায়ূন আহমেদ একই মুখে বলছেন, “মৃত্যু নিয়ে প্রায়ই ভাবি”!! কিতা আর কইতাম! এখন এতক্ষন এত ভুজং ভাজং গাইয়া এই “মৃত্যু নিয়ে প্রায়ই ভাবি” মার্কা কথাই কি সব পার পাইয়া যাবে??


আমি প্রায়ই হুমায়ূন আহমেদকে আওলাকি, নুমান আলি খানের সাথে তুলনা করি!এই তিনজনই একটা জায়গায় অসাধারণ আর তাহল মানুষকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করতে পারার ক্ষমতা! মুহূর্তেই মানুষের মস্তিষ্ক দখল করার ক্ষমতা খুব কম মানুষের আছে! কারো কথা যখন অনেক বেশী বাস্তবিক হয়, আপনার অনেক বেশী কাছের হয় এবং প্রতি মুহূর্তেই মনে হয় সব কথা আপনাকে উদ্দেশ্য করেই বলা তখন আপনি অবশ্যই তাঁকে আপন মনে করবেন, ভালবাসবেন! আর এখানেই আমাদের practising মুসলিমদের মূল সমস্যা! আওলাকি, নুমান আলি খানকে অবশ্যই আল্লাহ্‌র জন্য ভালোবাসা যায় কিন্তু একজন হুমায়ূন আহমেদ? সুনীল? জাফর ইকবাল? হুমায়ূন আজাদ? চে? এদেরও যখন ভালবাসবেন তখন এদের কাজ, কথা, চিন্তাধারা, দর্শনও আপনাকে প্রভাবিত করবে! অবশ্যই করবে, আপনি যতই না না করুন না কেন!! এখন একটা প্রশ্ন আসতেই পারে আমি এত হুমায়ূন হুমায়ূন করছি কেন?? কারন হুমায়ূন আহমেদ আমাদের মুসলিমদের অন্তরে এক বিশাল জায়গা দখল করে আছে। তিনি তার অনেক লেখাতেই কুরানের বিভিন্ন আয়াত, ইসলামের অনেক সুক্ষ সুক্ষ ব্যাপার( যেমন বিতরের নামাজ এক রাকাতও পড়া যায়!) নিয়ে এসেছেন। আর এতে practicing মুসলিম হয়েও তার উপন্যাস, নাটক, ছবি (এমনকি ঘেঁটুপুত্র কমলাও) “দেখা যায় সমস্যা নাই” টাইপ একটা সুক্ষ সাইকোলজি কাজ করে যেখানে একই কাজের জন্য জাফর ইকবালকে তারা দুই চক্ষে দেখতে পারেনা!


আমার ভাইদের বলব আপনারা দরকার হলে তার লেখাগুলো আবার পড়েন। কুরানের আয়াত, ইসলামের বিভিন্ন ব্যাপার যেখানে এসেছে তার পাঞ্চ লাইনগুলো খেয়াল করুন। প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখবেন কিছুটা কৌতুক, ঠাট্টা আকারে ব্যাপারগুলো এসেছে! সবাই নিশ্চয় ইংরেজিতে tag question করেছেন তাই না? তার লেখাগুলোতে ইসলামের বিষয়গুলো এরকম tag question আকারে ব্যবহার করা হয়েছে!

হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল, হুমায়ূন আজাদ, রবীন্দ্রনাথ, সুনীল এদের সাহিত্য অসাধারণ এতে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু আপনাকে ভাবতে হবে এরা আপনাকে কোন পথে পরিচালিত করছে, কি শেখাচ্ছে আপনাকে! আপনার ঈমান-বিশ্বাসের জায়গাগুলোতে ভ্রম সৃষ্টি করছে এটা কি বুঝতে পারছেন?? সুরা বাকারার ২০৪ নং আয়াতটি পড়ুন…

“মানুষের মধ্যে এমন আছে পার্থিব জীবন সম্পর্কিত যার কথাবার্তা তোমাকে চমৎকৃত করে…”


আপনি একজন মুসলিম। একজন practicing মুসলিম। আপনি কখনোই এদেরকে আপনার জীবনের সঙ্গী বানাতে পারেননা! তাদেরক চমৎকৃত অসার বাক্যগুলো আপনার জীবনের আর আখিরাতের বোঝা ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করতে পারবে না! আর “আমিতো ইসলাম প্র্যাকটিস করি, জ্ঞানের ভাণ্ডার বৃদ্ধি করতে উনাদের মহান সাহিত্য থেকে ভালো কিছু পেলে সমস্যা কোথায়” এই যদি আপনার যুক্তি হয় তাহলে নিজেকে প্রশ্ন করুন ইসলাম কতটুকু জানেন আপনি? কতটুকু? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবসময় একটা দোয়া করতেন, “হে আল্লাহ! আমাকে এমন জ্ঞানার্জন হতে বিরত রাখো যে জ্ঞানে মানুষের কোন কল্যাণ নেই”। আর আপনি মহান সাহিত্যের মধ্যে ভালো খোঁজার চেষ্টায় মগ্ন! পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েই ইসলাম পালন হয়ে যায়?? কুরানের কয়টা আয়াত জানা আছে? কয়টা আয়াতের তাফসীর খুলে পড়েছেন? যতগুলো উপন্যাস- কবিতা -নাটক- ছবির গল্প জানেন ততোগুলো কি জানেন মুসলিমদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের গল্প?? অসংখ্য হুমায়ূন আহমেদদের নাম জানেন__ তাইনা?? কতজন সাহাবীর নাম জানেন? একটা গান শুনে ঠিকই মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে এটা হাবিবের গান, আরেফিন রুমির গান কিন্তু একটা হাদিস কাউকে বলতে গেলে ” এক সাহাবী বর্ণনা করেছেন”!! হুমায়ূন আহমেদদের আবেগি কাল্পনিক গল্প পড়ে চোখের পানি ফেলছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনের কষ্টের গল্পগুলো আপনাকে কতোটা ছুঁয়ে যায়?? ask… ask… ask yourself? আপনি কতটুকু মুসলিম নিজেকে প্রশ্ন করুন!


ভাই আপনাকে ভাবতে হবে! এই ফাসেকদের জন্য আবেগের জোয়ারে ভেসে যাওয়ার আগে ভাবতে হবে, তাদের স্মৃতিস্তম্ভে আপনার ভালোবাসার ফুল দেওয়ার আগে ভাবতে হবে, হিমু মেলায় হিমু হওয়ার আগে ভাবতে হবে, লিওনেল মেসির জারজ পুত্র নিয়ে আবেগে উদ্বেল হওয়ার আগে ভাবতে হবে, হুমায়ূন শোকে প্রোফাইল পিক কালো করার আগে আপনাকে ভাবতে হবে__ আপনি মুসলিম! ইসলামকে আপনি সিরিয়াসলি নিইয়েছেন! আর আল্লাহ বলেছেন…

“হে মুমিনগণ! ইসলামের মধ্যে পূর্ণভাবে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলোনা, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু” [বাকারাঃ২০৮]

শয়তানের অনেকগুলো ট্রিক্স এর একটি হল সে যখন আপনাকে সরাসরি পাপ করাতে পারবেনা সে অন্তত আপনার সময় নষ্ট করবে, প্রতিভা নষ্ট করবে! খুব সূক্ষ্মভাবে আপনাকে culture করবে ধীরে ধীরে! নিজেকে প্রশ্ন করুন ভাই আপনার যে ঈমান আজ এই ফাসেকদের অসার কথামালা, চিন্তাধারা, দর্শনে ভালোটা খুঁজে কাল কি তাদের খারাপটা সেই ভালোকে replace করবেনা?? আপনার যে ঈমান আজ হুমায়ূন আহমেদকে আস্তিক প্রমানে ব্যস্ত করছে আপনার সেই ঈমান কি কাল জাফর ইকবালের মোনাজাতরত অবস্থার ছবি দেখিয়ে তাকেও বিশ্বাসী প্রমাণে ব্যস্ত হবেনা?? হবে_ যদি আপনি আপনার ঈমানকে নিষ্পাপ না করেন, কলুষতামুক্ত না করেন!

একবার এক বলদকে বলতে শুনেছিলাম, “যে জান্নাতে মাদার তেরেসা, মহাত্মা গান্ধী যাবেনা সেই জান্নাতে আমিও যেতে চাইনা!!” আহা! তাহাদের জন্য কত ভালোবাসা!! আল্লাহ এই আবেগের জোয়ারে ভেসে যাওয়া বলদদের কি বলেছেন শোনেন…

“এরা এমন লোক যারা হেদায়াতের বিনিময়ে গোমরাহি এবং ক্ষমার বিনিময়ে শাস্তি ক্রয় করেছে, তারা আগুন সহ্য করতে কতইনা ধৈর্যশীল!” [বাকারাঃ১৭৫]


একজন মুসলিম হয়ে, বিশ্বাসী হয়ে কেন আপনার বিশ্বাসকে আরেকজনকে দিয়ে culture করতে দেবেন? কেন আপনার ইসলাম হবে দিগন্ত টিভির মতো! হাদিস, কুরআন আছে আবার ফাঁকে ফাঁকে সারিকার নাটকও আছে! হুমায়ূনের মৃত্যুর পর সব চ্যানেলে তার গৌরবোজ্জ্বল জীবন নিয়ে রিপোর্ট হচ্ছে তখন এই এক্সক্লুসিভ চ্যানেলটায় একটা রিপোর্ট দেখে খুব মজা লাগলো! রিপোর্টে তার গুনগান গাইতে গাইতে হঠাৎ শাওনের কোন একসময়য়ের একটা কথা copy.. paste করে ঢুকানো হয়েছে যেখানে শাওন বলছে, “আপনাদের স্যারও ঈদের নামাজ নিয়ে খুব excited থাকেন। ঈদের দিন সকালে তিনি তার পুত্রকে কাপড় চোপড় পরিয়ে নিজেও তৈরি হয়ে অপেক্ষায় থাকেন কখন নামাজ পরতে যাবেন!!” আমি নিশ্চিত “হুমায়ূন আহমেদ ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন” এমন কোন কথা কোথাও কেউ বললে এই ভণ্ড ইসলামিষ্টরা সেই কথা পাতালের ভেতর থাকলে সেখান থেকে খোঁজে আনতো! যেহেতু কিছু পাই নাই তারমানে তার নামাজ দোয়া ঐ প্রথম আলোর লিংকটার মতো অলৌকিক বিষয় ছিল! পাঠককে আবেগে উদ্বেলিত করার প্রয়াস!


কারো যদি মনে হয় আমি একটু বেশী করে ফেলছি বা গীবত করছি তাহলে বলব কখনোই নয়! মুসলিম হওয়া ব্যাপারটা এমন নয় যে বললাম আর হয়ে গেলাম, rather ইসলামে কিছু set of belief আছে যেগুলো মেনেই তবে মুসলিম হওয়া যাবে!এই set of belief এর কোনকিছুর ব্যাপারে ভ্রান্ত মতবাদ নিয়ে মুসলিম হওয়ার সুযোগ নেই, হুমায়ূন আহমেদদেরও না, আপনারাও না!! আর যদি বলেন “ও তো মরে গেছে, বাদ দেন! যে যার মতো থাকুক” তাহলে বলব আপনার ইসলামে সমস্যা আছে!ইসলাম যদি ব্যক্তিগত ব্যাপার হতো তাহলে আল্লাহর নবী অসংখ্য জিহাদ করে ইসলাম কায়েম করতেন না, যে যেভাবে আছে সেভাবে ছেড়ে দিতেন!”লাকুম দীনকুম ওয়ালিয়া দ্বীন” মানে এই না যে যার যা তা করবে! মানুষকে সত্যের পথে আনতে হুমায়ূন আহমেদ ইশ্যুতে আমরা অবশ্যই নাক গলাব কারন আমরা সত্য বিশ্বাসী! কাজেই হুমায়ূন আহমেদদের deluded বিশ্বাস, ভ্রান্ত চিন্তা এগুলোর বিরুদ্ধে কথা আমরা দ্বীন ইসলামকে যারা সিরিয়াসলি নিয়েছি তাদের বলতেই হবে! ইসলাম আসছে dominate করতে, নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে নয়

” তিনি তাঁর রাসুলকে হিদায়াত আর সঠিক দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন যাবতীয় দ্বীনের উপর একে বিজয়ী করার জন্য যদিও মুশরিকগন অপছন্দ করে।” [আত তাওবাঃ ৩৩]

আমাদের সমাজের হুমায়ূন আহমেদরা মানুষকে আল্লাহ্‌র দ্বীন থেকে ফিরিয়ে যে ভ্রান্ত পথে পরিচালনার দ্বীন নিয়ে আসছে তাঁর বিরুদ্ধে আমাদের কথা বলতেই হবে যদি আমরা আল্লাহ্‌র দ্বীনকে সত্যিকার অর্থেই ভালোবেসে থাকি!


শেষকথাঃ একটা পত্রিকা পড়ে খুব মজা পেলাম। দুইপাতার সাহিত্য সাময়িকী ছাপিয়েছে পুরোটাই হুমায়ূন আর সুনীলকে নিয়ে! এই দুইপাতার মাঝখানের পাতাটা কি জানেন?? ধর্মীয় পাতা! একসাথে দুইপাতা শয়তানের বিষ্ঠার শুঁকনো পাউরুটি খেতে মুসলিমদের সমস্যা হবে, গলায় আটকে যেতে পারে তাই মাঝখানে একটু ইসলামের মাখন মাখিয়ে দেওয়া হয়েছে! যা ছালা_ এবার খপ খপ করে গিল!!

আমি একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই_ আমাদের সমাজের হাজার হাজার হুমায়ূন আহমেদ ইসলামের জন্য কিছুই নয়… just nothing! ভাই! দয়া করে এদের পেছনে সময় নষ্ট করিসনা, এদের কাছে জীবনের অর্থ খুঁজিস না! এদের একটু আলো দেখে পিপীলিকার মতো মরতে যাস না! অন্ধকারে জোনাকি পোকা দেখেছিস?? খুব ঈর্ষা লাগে না?? কি ক্ষমতা এদের অন্ধকারে নিজেই আলো! কিন্তু দিনের আলো আসলে এই জোনাকি পোকাদের খুঁজেই পাওয়া যায়না! এরা অর্থহীন হয়ে যায়! ঠিক তেমনি ইসলামের আলোর সামনে আমাদের সমাজের হুমায়ূন আহমেদরাও অর্থহীন! আল্লাহ যেমন বলেছেন…

“তারি হেদায়াতের বিনিময়ে গোমরাহি ক্রয় করেছে, কিন্তু তাতে তাদের ব্যবসা লাভজনক হয়নি, আর তারা সতপথপ্রাপ্তও নয়। তাদের উদাহরণ, যেমন এমন এক ব্যক্তি আগুন জ্বালালো, তা যখন তার চারদিকে আলোকিত করল আল্লাহ তখন তাদের জ্যোতি অপসারণ করে দিলেন এবং তাদের এমন ঘন অন্ধকারে ফেলে দিলেন যে, তারা কিছুই দেখতে পায়না। তারা বধির, মূক, অন্ধঃ কাজেই তারা (হেদায়াতের দিকে) ফিরে আসবেনা।” [বাকারাঃ ১৬, ১৭, ১৮]

আরেকটা কথা স্পষ্ট করে মনে রাখবেন “হুমায়ূননামা” নিয়ে নয় নিজের “আমলনামা” নিয়ে আপনাকে যেতে হবে!হুমায়ূন আহমেদ মরে গেছে কিন্তু আপনি এখনো বেঁচে আছেন! বিচার দিনের জবাবদিহিতার বিষয়ে সতর্ক হন! আর আল্লাহ বলছেন, “অতঃপর (আল্লাহ তায়ালার অগণিত) নেয়ামত সম্পর্কে তোমাদের সেদিন জিজ্ঞেস করা হবে।” [তাকাসুরঃ ৮]

আজকে আপনি না হয় তর্কবিতর্ক করে হুমায়ূন আহমেদদের জীবনদর্শন গিলছেন কিন্তু আপনার, আমার, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম?? তারা কিছুরই ধার দারবে না! তারা গিলবে আর বিভ্রান্ত হবে! চিন্তা করুন ভাই! নিজেকে বাঁচান, আমাদের সমাজকে বাঁচান, আপনার আগামী প্রজন্মকে বাঁচান! সমাজের হুমায়ূন আহমেদদের রঙে নয় জীবন রাঙ্গুক আল্লাহর রঙে!

“(আমাদের দ্বীন) আল্লহর রঙে রঞ্জিত এবং আল্লাহর রঙ অপেক্ষা আর কার রঙ উত্তম হবে? এবং আমরা তারই ইবাদাতকারি।” [বাকারাহঃ ১৩৮]

আর লেখার শুরুতেই দুইটা প্রশ্নের হ্যাঁ উত্তর দিয়েও যদি এই লেখা পড়ে আপনার মন খুঁতখুঁত করে। হুমায়ূন আহমেদদের জন্য কোন যুক্তি যদি থাকে তাহলে আমি কুরানের মতই আপনাকে আহবান জানাচ্ছি

“…… তোমরা সত্যবাদী হলে প্রমাণ উপস্থাপন কর।” [বাকারাঃ ১১১]