[ক]

তখন আমার বিয়ের কথা-বার্তা চলছিল। আমার কুরআন টিচার আমাকে বললেন, প্রতিদিন অন্তত ১০০ বার করে যেন সুরাহ ফুরকানের ৭৪ নং আয়াতটা পড়ি। আমি দিনরাত সেই দুয়া জপে যাচ্ছি, তাই দুয়াটা ভালোভাবে জানার জন্যে এটা নিয়ে একটু পড়াশোনা করতে ইচ্ছা হলো। I was mind-blown by what I discovered! As always, Quran never fails to do that.

দুয়াটার প্লেইন ট্রান্সলেশান টা এরকম। খুব সুন্দর অর্থ -

"Our Lord, grant us from among our spouses and offspring the coolness of our eyes and make us the leader for the righteous."

"হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান করুন এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শ হিসেবে কবুল করে নিন"

এখানে আল্লাহর কাছে আমরা চাইছি আল্লাহ যেন আমাদের পার্টনারদের কে এবং আমাদের সন্তানদের কে আমাদের জন্যে "চক্ষু শীতলতাকারী" বানিয়ে দেন।

আমাদেরকে এমন স্বামী-স্ত্রী দান করুন যেন তাদের দিকে তাকালেই আমাদের চোখ, মন এবং অন্তর শান্তিতে ঠান্তা হয়ে যায়।

এটার context হচ্ছে, আরবের মরুভূমিতে প্রায়ই বালুর ঝড় হতো। সেই ঝড়ের মধ্যে পড়লে সবচেয়ে কষ্ট হতো যখন চোখে বালু ঢুকে যেত! চোখে প্রচন্ড ব্যথা, আর মরুভূমির গরম বালু লেগে চোখ গরম হয়ে যেত। এ অবস্থা থেকে বাঁচার জন্যে এমন কিছু লাগবে যেটা চোখ শীতল করে দিতে পারে।

এই idiom টাই আল্লাহ সুবহানাতা'য়ালা অসম্ভব সুন্দর ভাবে এই দুয়ার সাথে মিশিয়ে দিয়েছেন। স্বামী স্ত্রীরা একজন আরেক জনের জন্যে এমনভাবে mental, physical and spiritual support এর উৎস হবে যে, দুনিয়ার সমস্ত ঝড়-ঝাপটার মধ্যে দিয়ে আমরা যখন যেতে থাকবো, আমাদের চোখ-মন যখন ক্লান্ত হয়ে যাবে, তখন আমাদের spouse রাই আমাদেরকে ঠান্তা করবে, তারাই জীবনের সমস্ত ঝামেলার মধ্যেও আমাদের জন্যে "চক্ষু শীতলতা কারী" হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে তারা একজন আরেকজনের ঢাল হবে এবং তাদের বিবাহিত জীবনের প্রতিটা স্টেপ এভাবে আল্লাহর ইবাদাত হিসেবে গণ্য হবে।

দুয়ার ২য় পার্ট টা আরো insightful - শুধু একজন আরেকজনকে enjoy করাটাই বিয়ের শেষ না, আল্লাহ তায়ালা যেন এমন নেক সন্তান পৃথিবীতে রেখে যাবার তাওফিক দেন - যে দুনিয়াতে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করবে এবং আখিরাতে বাবা-মার জন্যে মুক্তির কারণ হবে. "Make us the leader for the righteous" - আমাদেরকে আমাদের বাচ্চাদের জন্যে এমন লিডার হবার তাওফিক দিন, যেন আমরা কবরের নিচে মিশে যাবার পরও আমাদের সন্তান-রা আমাদের জন্যে দুয়া করতে থাকে এবং সেই দুয়া আমাদের জান্নাতে দাখিল হবার উসীলাহ হিসেবে কবুল হয়। আমিন ইয়া রাব্বুল আলামিন।

পরিবার Strong মানে পুরা একটা সমাজ strong! ফ্যামিলি সোসাইটির হচ্ছে প্রথম ইউনিট। এজন্যেই শয়তান সবচেয়ে বেশি খুশি হয় যখন স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া, বিরোধ/বিচ্ছেদ ঘটে। একটা ফ্যামিলি ভেঙে দিতে পারলে, আস্তে আস্তে পুরা সোসাইটি ভেঙে যাবে। আল্লাহর দ্বীন শিখার প্রথম স্কুল হচ্ছে - ফ্যামিলি - আমাদের আব্বু-আম্মু। ফ্যামিলিকে যদি ফাউন্ডেশান থেকে দুর্বল করে দেওয়া যায়, সেখানে দ্বীন শিক্ষা তো দূরে, সন্তানরা moral standard টাই ধরে রাখতে হিমশিম খাবে।

বিয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্যে একটা বিশেষ রহমত। খুশির Occasion! কত আনন্দ চারপাশে! কোন পার্লারে সাজবো, কয় দফা অনুষ্ঠান, কোথায় শপিং করবো, কত খরচ করবো - এসবের মাঝে ফুরকানের ৭৪ নং আয়াত যেন আমরা ভুলে না যাই! বাচ্চাদেরকে দুনিয়াতে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানিয়ে আখিরাতের জন্যে তাকে ফকির করে যেন বড় না করি!

আপনার ফ্যামিলিতে অশান্তি? বিয়ে হচ্ছে না? সন্তান নিয়ে দুশ্চিন্তা? ফুরকানের ৭৪ নং আয়াত পড়ুন, বুঝুন, আমল করুন! আল্লাহ আপনার চোখের শীতলতাকারী ফিরিয়ে দিবেন। আল্লাহ কখনো তার বান্দাকে ফিরিয়ে দেন না। এখন যিলহজ মাসের দশ দিন চলছে - দুআ এবং আমল বাড়ানোর এখনই সুবর্ণ সুযোগ!

আল্লাহ তা'য়ালা আমার কুরআন টিচারকে উত্তম প্রতিদান দিক। আমাকে আমার আব্বু আম্মুর জন্যে সাদাকায়ে জারিয়াহ হিসেবে কবুল করে নেক। আমাদের পরিবার গুলোকে আমাদের জন্যে "চক্ষু শীতলকারী" করে দিক। আমিন।

[খ]

ভার্সিটি থেকে পাশ করে বের হবার পরের কয়েক মাস বা আরো পরিষ্কার করে বলতে, একটা চাকরি জুটাবার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত একজন ছেলের কেমন সময় পার হয় একমাত্র সেই ছেলেটা জানে আর জানেন তার অন্তর্যামী সৃষ্টিকর্তা। শুনতে কটু লাগলেও এটা সত্য সেই মুহুর্তে তার মানসিক অবস্থা স্বয়ং জন্মদাতা পিতা কিংবা গর্ভধারিণী মা ও বোঝার সামর্থ্য রাখেন না।

চাকরি পেতে হবে। সংসারের হাল ধরার জন্য / হায়ার স্টাডির জন্য / ছোট বোনের বিয়ে দেবার জন্য কিংবা কারোর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দেবার নিয়ত আছে সেখানে অন্যদের বিয়ের প্রস্তাব আসছে তাই বিয়ের তাড়া উদ্দেশ্য বা বাবার ঋণের সাপোর্ট দিতে একেক জনের প্রয়োজনীয়তার হেতু একেক হলেও মুল থিম সবারই এক যে একটা চাকরির খুব প্রয়োজন।

এমনকি যেই ছেলে ধনীর ঘরের দুলাল, যার কোন অভাব নেই তারও একটা চাকরির দরকার হয় কারন এই সময় নিজের হাত খরচের জন্য বাপের কাছে হাত পাতাটা খুব অস্বস্তিকর ব্যাপার।

মা বাবা হয়ত মুখ ফোটে বলেন না তবুও তারা মনে মনে বিরক্ত হতে থাকে ছেলেটা একটা চাকরি পাচ্ছেনা কেন! আশা করতে থাকে অমুকের ছেলের মত আমার ছেলেটাও যদি সংসারের হাল ধরত!!

আর আশেপাশের মানুষের জ্বালা তো আছেই, সুযোগ পেলেই বাবা মা কে জিজ্ঞাসা করবে, আপনার ছেলে পাশ করে বের হলো না? তো কোথায় ঢুকল?
এদের প্রশ্ন দেখে মনে হয় চাকরির দুনিয়া এতটাই সোজা, পাশ করার পরের দিনই ঢুকে যেতে হবে কোথাও। সব যেন রেডি আছে।

এই সময় গুলো খুব মেপে চলে একজন ছেলে। একা একা থাকার চেষ্টা করে। বাইরেও বের হয় কম, চাকরি টাকরি পাইলা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে অপছন্দ করে সে। নিজেকে বোঝা লাগে।

নিজেই ভাবতে থাকে, হয়ত কোনদিনই সে কোন চাকুরী পাবেনা। সে মনে মনে ভাবতে থাকে ২ বছর পর কী সে কোথাও চাকরিরত থাকবে? নাকি এমন বেকারই থেকে যাবে? অনেক রকম উলটো পালটা চিন্তা মাথায় ভর করে।

বন্ধুদের মধ্যে কারোর চাকরি হয়ে গেলে হতাশা টা আরো বেড়ে যায়, বন্ধুর প্রাপ্তিতে খুশি হবার পাশাপাশি নিজের জন্যও হতাশ লাগে।

এই সময় তাই বাবা মা এর একটূ বুঝা উচিত সন্তানকে, তাকে সাপোর্ট, সান্তনা দেওয়া উচিত আর উচিত মন থেকে বেশি বেশি দুয়া করা। কাছের মানুষ সাপোর্ট দিলে যেকোন কঠিন মুহুর্তও পার করে দেওয়া যায়।

কারোর অবস্থায় চিরকাল খারাপ থাকেনা। যার আগে প্রয়োজন আল্লাহ তাকে আগে দেন, আমার বন্ধু সার্কেলের মধ্যে সবার আগে যার চাকরি হয়েছিল তার ছিল সব থেকে বেশী প্রয়োজন, অনেকটা না খেয়ে দিন পার করতে হতো তাকে। মূলত আল্লাহ সবার জন্য ভেবে রাখেন। আর আল্লাহ তো কোন না কোনভাবে পরীক্ষা করবেনই, পরীক্ষার পিরিয়ড যত লম্বা, ফলাফল ততই সুমিষ্ট।

---

একটু নিজের কথা শেয়ার করি।

বর্তমানে যে চাকরি করি তা আমার জীবনের চতুর্থ চাকরি। পাশ করে বের হবার ৬ মাসের মাথায় এটা পেয়েছিলাম। আসলে পেয়েছি বললে ভুল হবে, বরং আল্লাহই পাওয়াইছিলেন।

এর আগে এই ছয়মাসে আগের তিন চাকরির মেয়াদ ছিল যথাক্রমে তিন ঘন্টা, ছয় ঘন্টা ও একদিন। একটা প্রাইভেট পাওয়ার প্ল্যান্ট (তিন ঘন্টা), সিমেন্স (ছয় ঘন্টা) এবং আর এফ এল (১ দিন)। বিভিন্ন কারণে মন টেকেনি, করিনি।

আর তারও আগে একটা ভালো সফটওয়ার কোম্পানির রিটেন আর কোডিং এ টেকলেও ভাইভায় কথা শুনিয়ে বাদ দিয়েছিল শুধুমাত্র লো সিজিপি এর কারনে। যাইহোক সবই ছিল আমার ক্যারিয়ার নিয়ে আল্লাহ তায়ালা'র পরিকল্পনার অংশ। জীবনের সব থেকে অন্ধকার মুহুর্ত গুলোই আলোর দ্বার খুলে দেয়।

তো বর্তমান চাকরির রিক্রুটমেন্ট এর সময় অনেক জনের মধ্যে থেকে শর্টলিস্ট করা হয়েছিল মাত্র পাচজন কে। ম্যাসেজ এলো ফোনে। রিস্ক নিয়ে তৃতীয় চাকরি মাত্র একদিনের মাথায় ছেড়ে দিয়ে ভাইভা দিতে গেলাম। এটা আমার জন্য অনেক বড় রিস্ক ছিল, কারন সত্য বলতে বিয়ের তাড়া ছিল আমার।

তো সেখানে নিবে মাত্র একজন। প্রায় মিনিট পয়তাল্লিশ ভাইভা+শর্ট রিটেন হলো। পরীক্ষা দিলাম মোটামুটি, তবে নিজের কাছে অসন্তোষজনক।

আর এখানে একটা নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান কিংবা স্ট্রং রেফারেন্স ছাড়া চাকরি পাওয়াও মুশকিল, একটা সময় অসম্ভবও ছিল।

আমি ছাড়া বাকীদের স্ট্রং রেফারেন্স ছিল, একটা নির্দিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রীও ছিল।

তবুও ভাইভা বোর্ড থেকে বের হয়ে চোখ বন্ধ করে দুয়া করেছিলাম (যা এই অধমের একমাত্র হাতিয়ার),

"আল্লাহ ! আমি পরীক্ষা খুব ভালো দেইনি তবে চেষ্টা করেছি, আমার 'অমুক' প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রীও নাই আর কোন রেফারেন্সও নাই। সিজিপিও দরিদ্র। তবে তুমি আছো আর রেফারেন্স হিসেবে তুমিই যথেষ্ট। "

চারদিন পর কল পেলাম একজন সিলেক্ট হয়েছে আর আমি। সেজদায় পড়ে গিয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ উচ্চবিত্ত লাইফ লিড না করলেও আল্লাহ অভাব মুক্ত রেখেছেন, স্বচ্ছল রেখেছেন। কোন অপূর্ণতা রাখেন নি মাশাআল্লাহ।

---

ছোট ভাইরা যারা সদ্য পাশ করে বের হয়েছ আর চাকরি পাচ্ছোনা বলে হতাশ, হতাশ হয়োনা, এই সময়টা এমনই। সবারই এই সময় টা যায়, আবার কেটেও যায়। তোমাদেরও কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ গ্যারান্টি। কয়েকমাস পর, এই সময়ের কথা মনে হলে মনে হবে জাস্ট একটা দুঃস্বপ্ন ছিল, কেটে গেছে। সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে একদিন ইনশাআল্লাহ। স্বান্তনা না, এটাই বাস্তবতা। চাকরি পাবার আগের দিনও অনেকে জানেনা, যে আগামীকাল সে একটা চাকরি পাবে, তাই প্রতিটা দিনই সম্ভাবনাময়। আজকের অবস্থায় চিরস্থায়ী নয়।

আর ভাই মানুষ বলবেই, তুমি প্রাইভেট/সরকারী/মাল্টিন্যশনাল বা বিসিএস যেটাতি ঢুকো কোনটাতেই তারা সন্তুষ্ট হবেনা। তাই মানুষ কী বলছে টোটালি গুনবানা।

ওরা উতসাহ দিতে না জানলেও ডিমোটিভেট করতে খুব ভালোভাবেই জানে।

খুব ধৈর্য্য রাখো, আল্লাহ তায়ালা'র উপর ভরসা করো, উনার কাছে চাইতে থাকো ধৈর্য্য ও সালাতের মাধ্যমে-এভবেই তিনি শিখিয়েছেন, যে চাইতে জানে সেই পায়।

মা বাবা কে দিয়ে দুয়া করাও (এই দুয়া বিফলে যায় না), বড় ভাইরা যারা বিভিন্ন অবস্থানে আছে যোগাযোগ রাখো আর নিজে চেষ্টা করতে থাকো। বিডিজবস, লিংকডইন, এভারজব, ফেইসবুকে চাকরির গ্রুপ সবগুলোর সান্নিধ্যে থাকো, কোম্পানির ওয়েবসাইট গুলোতে একাউন্ট খুলে রাখো মোদ্দ কথা নিজের সব রকম প্রস্তুতি রেখে অতঃপর পুরোটাই আল্লাহ এর উপর ছেড়ে দাও, উনাকেই অভিভাবক হিসেবে গ্রহন করো।

প্রতিদিন লাখ লাখ গ্রাজুয়েট বের হচ্ছে সবাই কী চাকরি পায় ? এই চিন্তা করে হতাশ হয়োনা, বরং অতীত ফিরে তাকালে তোমার নিজের জীবন তোমাকে এমন অনেক উদাহরনই দিবে, যে জীবনে অনেক ক্ষেত্রেই শতজনের মধ্যে আল্লাহ তোমাকে চুজ করেছিলেন।

[গ]

বিয়ের আগে বোনকে তার ভাইয়ের কিছু নাসিহাঃ

- একটা ছেলের মাঝে কী খুঁজবি? কী চাইবি? মানুষ সাধারণত যা খোঁজে যা চায় তা চাইবি না! মানুষ চায় ওয়েল স্ট্যাব্লিশ ছেলে, নিজেদের বাড়ি থাকবে, আর ভাল বেতনের চাকুরী থাকবে।অনেক সময় এই দুইটা পেলেই হয়, ছেলের শিক্ষাগত যোগ্যতা আর দেখেনা। কিন্তু আমাদের কে তো জানতে হবে, আমরা দুনিয়ার জন্য বেঁচে থাকিনা, আমরা বাঁচি আখিরাতের জন্য। তো তুই দুনিয়ার বাড়ি দিয়ে কি করবি? সবার আগে দ্বীন দেখবি। দ্বীন বলতে শুধু নামাজ কালাম পড়ে একটু দাড়ি রাখে, কিছু ওয়াজ শুনে এমন দ্বীন না, একদম হক্বের পথে আছে এমন দ্বীন, ঈমান নিয়ে চিন্তিত এমন দ্বীন, সব সময় কুফুরি/শিরকি থেকে মুক্ত থাকতে চায় এমন দ্বীন।

দেখ, ছেলের হাতে ক্ষমতা থাকে, সে অভিভাবক, সে পরিবারকে যেভাবে চালাতে চাইবে, সেটা অন্যায় হলেও পরিবারের মানুষ সেভাবে চলতে বাধ্য হয়, না চললে অশান্তি হয়, তাই পাত্র/পাত্রী নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে মেয়ের দ্বীনদারিতা থেকে ছেলের দ্বীনদারিতা বেশি প্রয়োজন। যদি একজন বেদ্বীন ছেলের সাথে একজন দ্বীনি মেয়ের বিয়ে হয়, সেই মেয়ের জন্য খুব কঠিন হয় দ্বীন পালন করা, ইনফেক্ট সেই মেয়েই দিন দিন বেদ্বীন হতে থাকে, এমনকি তাদের বাচ্চাদেরকেও বেদ্বীনের উপর বড় করা হয়। আর যদি বেদ্বীন মেয়ে হয় আর স্বামী দ্বীনদার তবে মেয়েও দ্বীনদার হয়ে যাবে স্বামীর হুকুম তামিল করতে করতে। কিংবা তাদের বাচ্চারা দ্বীনের পথে যাবে।

তাই একটা দ্বীনি বংশের জন্য সবচেয়ে জরুরী হচ্ছে একজন সৎ তাকওয়াপূর্ণ দ্বীনদার ছেলে।

ছেলে যদি দ্বীনদার হয় তবে পরবর্তীতে ছেলের মাঝে বখিলি আছে কিনা তা দেখবি। একটা হচ্ছে ইনকাম কম তাই হিসাব করে খরচ করে, এটা ঠিক আছে। কিন্তু আরেকটা হচ্ছে প্রচুর ইনকাম কিন্তু পরিবার কে কষ্টে রেখে সে টাকা জমায়। এমন পুরুষদের সংসার করা অনেক কঠিন। শুধু কঠিন না, বরং ছেলের শুধুমাত্র বখিলির কারণেই অনেক সংসার ভাংগে। সব সময় অন্যের উপর চাপিয়ে নিজে বেঁচে চলা, ঘরের দরকারি জিনিস, খাবার না কেনা, ঘরের মহিলাদের হাতে খরচ করতে কিছুই না দেওয়া।এইসব চরম অপমানজনক ও অশান্তির কাজ। বখিল ছেলেদের সংসার কখনো শান্তির হয়না। ছেলেদের খুব হাত খোলা হতে হয়। জমিয়ে রেখে লাভ কি? রিজিকের মালিকের উপর আস্থা কম? মা, বাবা, বউ আর বাচ্চা, ৪ টা উত্তম জায়গা সাদাকা করার জন্য।আমার পরে এরা শান্তিতে থাকবে এই ভেবে জমাবো? না, আমি আমার চোখেই দেখতে চাই এরা যে শান্তিতে আছে।

দ্বীন যদি থাকে তাহলে সে ছেলের মাঝে উত্তম আখলাক থাকে, আর যদি উত্তম আখলাক থাকে তাহলে তার মাঝে বখিলিপনা থাকেনা। দ্বীন থাকলে সেই ছেলের মাঝে সবর থাকে, হিকমা থাকে, সর্বাবস্থা মানিয়ে নেওয়ার মত মানসিকতা থাকবে ইন শা আল্লাহ।

এই দুইটার সাথে আরেকটা সবচেয়ে জরুরী হচ্ছে সেই ছেলে তার মা বোনের প্রতি কেমন সেটা লক্ষ্য করা। মা বোনের প্রতি যদি খেয়ালি হয় তাহলে বুঝবি তোর নসিবে অনেক ভাল একজন পাত্র জুটেছে। আমাদের মায়েরা তার স্বামীর থেকেও বেশি নির্ভরশীল তার ছেলে সন্তানের উপর। মা এরজন্যই তিনবার। আর বোনদের জন্য বিয়ের আগে এমনকি পরেও ভাইদের মত আপন আর কেউ হয়না। যে ছেলে মায়ের তিন গুনা হক আর বোনদেরকে ঐ ভাবে আদরযত্ন করতো যেভাবে সে নিজের মেয়েদের করতো, তাহলে এমন ছেলের কাছেই যাবি।

এর বাহিরে আর কিছুই খুঁজবিনা। যদি পেয়ে যাস তো তোর তাকদির। আর যদি না পাস তাও সেটা তোর তাকদির। কিন্তু এই তিনটা যদি পাস তুই আসলেই খোশনসিব।

এবার শোন বিয়ের পরের জন্য কিছু নাসিহাঃ

বিয়ের পর তোদের সম্পর্কটা যেমনই হোক, খুব ভালবাসার বা খুব খারাপ কখনো কারো সাথে শেয়ার করবিনা। বিশেষ করে নিজের মা এবং বোন, শাশুড়ি আর ননদ/ননাস। তোর জামাই তোকে কী দিয়েছে, কোথায় ঘুরতে নিয়েছে, কী খাইয়েছে, কী কী বলেছে কিচ্ছু বলবিনা। মেয়েরা এইসব নিজের বোনদের, কাজিনদের, বান্ধুবিদের বলতে অনেক পছন্দ করে, আমার জামাই অনেক ভাল, বা অনেক আদরযত্ন করে এই বিষয় টা সবাইকে জানাতে তাদের ভাল লাগে, অথচ এটাই তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। আজকে তুই বলবি তোর জামাই তোকে এই এই সুন্দর ভালবাসার কথা গুলো বলেছে, দেখবি আগামীকাল থেকেই আর সেসব কথা বলছেনা। তখন যেয়ে মেয়েরা শুরু করে অভিমান, আপনি আমাকে আগে এভাবে বলতেন, এভাবে ভালবাসতেন, আর এখন পাত্তা দেন না।

আসলে স্বামীর দোষ না। মেয়েদের আসল শত্রু হচ্ছে তার ভালবাসার কাছের মেয়েগুলো। তারা শত্রু না, তারা পছন্দের মানুষ, অথচ তাদেরই বদ নজর লেগে যায়, হিংসা লেগে যায়, তাদের মনের কোনো এক কোণায় এই ভাবনা জেগে উঠে “আমারোও এমন সুখ হোক,কিংবা তোমার এই সুখটা নষ্ট হয়ে যাক।”

বিশ্বাস কর আর নাই কর, কোনো মা যদি তার দাম্পত্য জীবনে অসুখী হয়, আর তার মেয়ে যদি সুখি হয়, তবে মেয়ের সুখের কথা শুনে তার ভিতরেও চিন চিন করে উঠে। সে বদনজর বা হাসাদ দিবেনা। কিন্তু সেটা অটোমেটিক আসবেই।

একটা সময় তোর আর তোর জামাইর মাঝে আগের মত ভালবাসা থাকবেনা। কিন্তু মানুষ ভাববে যে আগের মতই ভালবাসা আছে, নিয়মিত তাদের হাসাদ গুলো তোর উপর আসতে থাকবে আর দিন দিন তোর সংসারে অশান্তি হবে। একটা সময় তুই অনেক অশান্তিতে থাকবি অথচ মান বাঁচাইতে সবার সামনে সুখে থাকার মিথ্যা ভান করতে হবে। আর তাতেও মানুষের বদ নজর আর হাসাদ আসতেই থাকবে।

বল এখন, নিজেকে জাহির করা ভাল লাগে বেশি, নাকি বাস্তবে সুখে থাকা ভাল লাগে?

তোর জামাইকেও একই কথা গুলো বলে দিবি। যেন কাউকে ভেতরকার কাহিনী না বলে।

যদি কেউ বার বার জিগেস করে, বিশেষ করে মা বোন ননদ এরাই করে, তবে বলবি আলহামদুলিল্লাহ্‌ আপনাদের সবার দুয়ায় অনেক ভাল আছি। ভালবাসা আর সমস্যা দুইটা মিলেই একটা সংসার হয়। দুইটাই আছে আলহামদুলিল্লাহ্‌। দুয়া করবেন যেন সব মানিয়ে দুনিয়া আখিরাত দুইখানেই ভাল থাকতে পারি।

খবরদার ভুলেও বুঝাবিনা তুই অনেক সুখে আছিস। কিছুটা ঝামেলায় আছিস এমনটা বোঝালে বরং তাদের মনে একটা তৃপ্তি আসবে, যে তৃপ্তি থেকে নজর বা হাসাদ কোনোটাই আসবেনা ইন শা আল্লাহ।

আর শুন, তোর এই ভাই সবসময় আছে। কোনো সমস্যা? নিজে সামলাবি। না পারলে তখন আমাকে বলবি।

আমি ছেলেকে নিজের ঘরে রেখে এরপর দেখেছি, সারাদিন সাথে করে নিয়ে ঘুরে ঘুরে অনেক খুটিয়ে দেখেছি। আমার যতগুলো নজর আছে সবগুলো দিয়ে দেখেছি। বাপের নজর, ভাইয়ের নজর, স্বামীর নজর, ছেলের নজর, এমনকি একটা মেয়ে কি চায় জামাইর কাছে সেই নজরেও দেখেছি।

- আচ্ছা
- তো রাজি তুই এই বিয়েতে ???
- (নিরবতা) .....
- আল্লাহুম্মা বারিক লাকি।

[ঘ]

Umamah bint Al-Haarith Ash-Shaybany gave her daughter this advice on her wedding night:

"O my daughter, if it were deemed unnecessary to give you this advice because of good manners and noble descent, then it would have been unnecessary for you, because you possess these qualities.

However, it is a reminder for the heedless (or forgetful) and a useful tool for the intelligent (wise).

O my daughter, if a woman were able to do without a husband by virtue of her parent’s wealth and their great need for her, then you of all people would be most able to do without a husband, but women were created for men just as men were created for women.

O my daughter, you are about to leave the home in which you grew up, where you first learned to walk, to go to a place you do not know, to a companion with whom you are unfamiliar.
He has become, by his authority (and right) over you, an overseer and a king.

So be a [female] slave to him and he will be a willing [male] slave to you.

My dear daughter, take from me ten qualities and they will be for you an asset and a reminder:

The first and second of them are: Be content in his company, and listen to and obey him, for contentment brings peace of mind, and listening to and obeying one’s husband pleases Allah.

The third and fourth of them are: make sure that you smell good and look good, safeguard where his eyes land and safeguard what his nose smells, so that his eyes never see anything ugly from you and his nose never smells any repugnant odor (i.e., he should never witness anything but a pleasant smell from you). Kohl is the best make-up (beautification) and water (i.e., good hygiene) is better than the rarest perfume.

The fifth and the sixth of them are: safeguard his meal times and keep tranquil his sleep times; for the heat of hunger is infuriating and deprivation of sleep is irritating.

The seventh and eighth of them are: safeguard his home and his money and take good care of him, his relatives, and take care of his children. Safeguarding his wealth is a sign of good judgement and taking care of his children and servants (or employees) and relatives is a sign of good management.

The ninth and tenth of them are: never disclose any of his secrets, and never disobey any of his orders. For if you disclose any of his secrets you will never feel safe from his possible betrayal, and if you disobey him, his heart will be filled with hatred towards you and he will resent you.

Beware of displaying joy when he is upset and do not show sorrow or sadness when he is happy. The former is irresponsibility which shows lack of judgement and the latter is antagonistic which will make him unhappy.

The more you honor him, the more veneration he will have for you; the more you are in (mutual) agreement with him (in all that is permissible and good), the more he will enjoy your companionship and conversation."

[The Advice of Umāmah bint al-Hārith to her daughter Umm Iyyās when she was being sent off to her husband on the Night of her Marriage. Source: Bulūgh al-Arb by al-Alūsī 2/19]

[ঙ]

ভবিষ্যৎ সঙ্গী নিয়ে ফ্যান্টাসি!

আমাদের কিছু ভাই আছে, যারা বিয়ের আগে হবু স্ত্রীকে নিয়ে ফ্যান্টাসিতে থাকে, নিজের পছন্দ মতো তাঁকে সাজায়, কতো রং বিরংগের স্বপ্ন আঁকে।

দ্বিনী ভাইদের স্বপ্ন গুলো এরকম,

সে হবে খাদিজা রাদিআল্লাহু আনহা"র মতো।

• একসাথে তাহাজ্জুদ পড়বে!
• একসাথে রোজা রাখবে।
• স্ত্রীর থেকে দীন শিখবে।
• তাহাজ্জুদের সময় মুখে পানি ছিটিয়ে ঘুম থেকে তুলে দেবে।
• নামাজ পড়তে দেরি করলে শাসন করবে।
• আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা"র মতো কুমারী হবে।

আরও কতকিছু । কিন্তু বাস্তবতা বড় কঠিন ভাই আমার।

এগুলো চাওয়া দোষের কিছু না, তাহলে কেন আমি এগুলো নিয়ে কথা বলছি?

এ প্রশ্নের উত্তর সরাসরি দিতে চাচ্ছি না। কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরছি, উত্তর পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।

১) নাইম ভাই, বিয়ের আগে আমাদের বলাবলি করত, আমার স্ত্রী এরকম হবে, তাঁর মধ্যে এই এই গুন গুলো চাই-ই চাই।
আল্লার ইচ্ছায় কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁর বিয়ে হয়, কিন্তু সমস্যা ছিল, তিনি হাদিসে বর্ণিত যেরকম খাদিজা রাযিয়াল্লাহু আনহা" চেয়েছিলেন সে ওরকম ছিল‌ না। স্ত্রীর দ্বীনদারিতায় ঘাটতি দেখে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
অথচ তিনি নিজেই ছিলেন না, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর আদর্শে আদর্শবান।"

২) আহমাদ মুসা আলী, সারাদিন ফেসবুকে বিয়ে নিয়ে পোস্ট করেন, একদিন হঠাত দেখা। কথার এক পর্যায়ে জিজ্ঞেস করলাম, বিয়ে করছেন নাকি?
উত্তরে বললেন, বিয়ের জন্য আপাতত তিনি প্রস্তুত নন।"

৩) মুহাম্মাদ যাকারিয়া, বিয়ের আগে হবু স্ত্রীকে নিয়ে সারাক্ষণ ফ্যান্টাসিতে থাকতো, একসময় এটা যিনার(কল্পনার যিনা) কারণ হয়ে দাঁড়াল।"

৪) ইবনে ফুলান, বিয়ের আগে নিজের কল্পনায় একজনকে এঁকেছে, তাঁকে তাঁর পছন্দ মতো রুপ দিয়েছে, পছন্দ মতো আচরণ দিয়েছে, এককথায় সে যেরকম চায় সবকিছু ওরকম করে একজনকে এঁকেছে।‌ একসময় বিয়েও করল, কিন্তু বিয়ের পর পুরাই ভেঙ্গে পড়ে, হতাশ‌ হয়ে যায়। কারণ সে একজনকে যেরকম করে এঁকেছিল তাঁর স্ত্রী ওরকম হয়নি। এমন না যে সে‌‌ (স্ত্রী) নামাজি, পর্দাশীল ছিল না।

ভাই আমার, ফ্যান্টাসি থেকে বের হয়ে আসুন, আজ আপনি যেরকম করে একজনকে নিজ কল্পনায় সাজাচ্ছেন, কাল যদি কোনো কারনে সে ওরকম না হয়, তাহলে আপনি ভেঙে পড়বেন হতাশ হবেন। আল্লাহর ফয়সালা মেনে নিতে কষ্ট হবে আপনার।

তবে এই দোয়া'টা বেশি বেশি পড়া যায়,

رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَّاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِيْنَ إِمَامًا

হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন

রব্বানা-হাব্লানা-মিন্ আয্ওয়া-জ্বিনা-অ র্যুরিয়্যা-তিনা-কুররাতা আ’ইয়ুনিঁও অজ্ব্‘আল্না-লিল্মুত্তাকীনা ইমা-মা-। [২৫:৭৪]

(বিঃদ্রঃ : ঘটনা গুলো সব কাল্পনিক নয়)

[চ]

বিয়ের উদ্দেশ্য কী হবে? বিয়ের অনেক উদ্দেশ্যই হতে পারে। সহিহ বুখারির প্রথম হাদিসের দ্বিতীয় অংশ সামনে রাখলেই বিষয়টা বোঝা যাবে। 'ব্যক্তির জন্য রয়েছে, যা সে নিয়ত করেছে'। এখানে 'যা' শব্দটা ব্যাপক। এ থেকে মুহাদ্দিসগণ বলেন, এক আমলে একাধিক নিয়ত থাকলে ব্যক্তি সবগুলোরই প্রতিদান পেয়ে যাবে। দুজন ব্যক্তি একই আমল করল; কিন্তু একজনের নিয়ত হচ্ছে একটি, আরেকজনের নিয়ত হচ্ছে একাধিক। তাহলে দ্বিতীয় ব্যক্তির প্রতিদানের মাত্রা বেড়ে গেল। এখান থেকে বুজুর্গরা বলেন, ঘরে জানালা রাখবে শুধু বাতাস খাওয়ার নিয়তে নয়; বরং এর পাশাপাশি আজান শোনার নিয়তও করবে। তাহলে তোমার বাতাস খাওয়াও হয়ে যাবে; নিয়তের বরকতে অতিরিক্ত সওয়াবও পেয়ে যাবে।

এক জি হা দের পেছনেও কত নিয়ত কার্যকর থাকে দেখুন। ইসলাম বিজয়ী করা, শরিয়াহ বাস্তবায়ন করা, আল্লাহর জমিনে আল্লাহর শাসন প্রতিষ্ঠা করা, কুফফারের হাত থেকে মুসলিমদের ভূমি উদ্ধার করা, শহিদানের খুনের বদলা নেওয়া, মাজলুম মুসলমানদেরকে উদ্ধার করা, কাফিরদের ক্রোধ ও ক্ষোভ জাগ্রত করা, কুফরের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া, মুসলিম নারীদের ইজ্জত রক্ষা করা, বন্দি মুসলিমদের উদ্ধার করা প্রভৃতি। একইভাবে বিয়েও একটি মহান ইবাদত। যদিও খুব কম মানুষই এটাকে ইবাদত ভেবে সম্পন্ন করে থাকে। কিন্তু বাস্তবে এটি একটি ইবাদত এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এক নবির সুন্নাহই নয়; বরং প্রায় সকল নবির সুন্নাহ।

বিয়ের মূল নিয়ত কী হবে? মূল নিয়ত তা-ই হবে, যে জন্য আল্লাহ বিয়ের বিধান প্রদান করেছেন। আর তা হচ্ছে চারিত্রিক পরিশুদ্ধি ও তাকওয়ার সুরক্ষা। বলা বাহুল্য, এ দুটো ফরজ। এর মাধ্যম হিসেবে বিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় সুন্নাতে মুয়াক্কাদা; ক্ষেত্রবিশেষ ফরজ-ওয়াজিব বা হারাম-মাকরুহও হয়ে থাকে। সুতরাং বিয়েতে এক নিয়ত হতে পারে, চারিত্রিক পরিশুদ্ধি ও তাকওয়ার সুরক্ষা। আরেক নিয়ত হতে পারে, সুন্নাহ পালন। এর পাশাপাশি আরও নিয়ত হতে পারে, অধিক সন্তান জন্মদান; যা আলাদা সুন্নাহ। একজন নারীর দায়িত্বভার গ্রহণ করে তার জীবন যাপন সহজ করা। তার সন্তানদের মাথার ওপর ছায়া হওয়া। তার দুঃখ দূর করা।

রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর বিয়েগুলোতেও একাধিক নিয়তের বিষয়টি অনুমান করা যায়। যায়নাব (রা.)-এর সঙ্গে তার বিয়ের দ্বারা একটি কুসংস্কার দূর হয়েছে। আয়িশা (রা.)-এর সঙ্গে বিয়ের দ্বারা ইলম সংরক্ষিত হয়েছে। কিছু বিয়ের দ্বারা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে; পরবর্তীতে এর বরকতে যাদের হিদায়াতের দুয়ার খুলেছে। তার কোনো বিয়ের দ্বারা ইসলামি রাজনীতি শক্তিশালী ও সুসংহত হয়েছে। এভাবে তার বিয়েগুলো প্রভূত কল্যাণ ও উপকার বয়ে এনেছে। আলিমগণ তাঁর একাধিক বিয়ের হিকমত হিসেবে এসব বিষয় উল্লেখ করেছেন। হতে পারে, এগুলো তাঁর নিয়তে ছিল।

আপনি একজন যেনতেন নারীকে বিয়ে করে তার সঙ্গে সংসার করা আর উত্তম নিয়তে একজন শহিদের স্ত্রীর 'সাহারা' হওয়া নিশ্চয়ই এক কথা নয়। রাসুলুল্লাহ ﷺ শহিদের স্ত্রী বিয়ে করেছেন। উম্মু সালামা রা. তার স্বামী আবু সালামার মৃত্যুর পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। রাসুলুল্লাহ ﷺ তাকে নিজের বধূ করে ঘরে তুলে তার মন জয় করে নিয়েছিলেন। সুহৃদ ও নিকটজনের সঙ্গেও বৈবাহিক বন্ধন গড়ে তুলেছিলেন। আবু বকর ও উমর রা.-এর দুই মেয়েকে বিয়ে করেছেন এবং উসমান ও আলি রা.-এর কাছে তিন মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। উসমান রা.-এর সংসারে তার দু-মেয়ে পরলোকগমন করলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিলেন, আরও মেয়ে থাকলে তাদেরকেও তার সঙ্গে বিয়ে দিতেন। নিকটজনদের ভালোবাসার হক পুরোপুরি আদায় করেছেন এবং এই বৈবাহিক বন্ধনের দ্বারা সেই সম্পর্ককে আরও বেশি সুদৃঢ় করেছেন।

এই যুগে নিয়তের বিষয়টা গৌণ হয়ে যায়। অথচ মুমিনের শান হলো, যেকোনো কাজের শুরুতে নিয়ত যাচাই করে নেওয়া। নিয়তে কোনো গলতি থাকলে তা সহিহ করে নেওয়া। সম্ভব হলে এক আমলে একাধিক বিশুদ্ধ নিয়ত করা।

[ছ]

বোনেরা, আপনারা দয়া করে ফেসবুকে বিয়ে নিয়ে ফ্যান্টাসি মার্কা স্ট্যাটাস গুলো পড়বেন না। এই স্ট্যাটাস গুলো বেশিরভাগই কল্পনাপ্রসূত মস্তিষ্ক থেকে আসা। বাস্তবতার সাথে কোনই মিল নেই।

আমি কোন ধরনের রোমান্টিক গল্প কখনো পড়তে কখনো পছন্দ করি না ইভেন জাহেল লাইফেও হাতে গোনা দুই একটা পড়েছি, এর কারণ এগুলো কখনো বাস্তবতার সাথে মিল রেখে লেখা হয় না। এইসব জিনিস পড়ার মানে কল্পনায় ডুব দিয়ে বাস্তবতাকে দূরে সরানো; যা মানুষের চিন্তাকে কখনো ম্যাচিউর করে না। আজকাল দেখবেন মানুষ ব্রেক'আপ হলে বা সম্পর্ক একটু খারাপ হলে মরে যেতে চায়, এর কারণ মানুষের ইমোশনগুলোকে ঠিক মতো নার্চার করতে না পারা। সবই আসে এই গান-বাজনা,ফ্যান্টাসি গল্প, উদ্ভট রোমান্টিসিজম থেকে।

এই দ্বীনি মহলের বিয়ের পরের কাহিনী গুলোও এইরকম। যারা এইসব ফ্যান্টাসি কাহিনী পড়ে, বিয়ের পর তাদের স্পাউজের কাছে তাদের আকাশছোঁয়া চাহিদা থেকে যায়। ফলস্রুতিতে তাদের এক্সপেক্টেশন পূরণ না হওয়ায় ভালোবাসা-মায়া কমতে থাকে। অন্যদিকে ভায়েরা বিয়ে করে আর ভাবে প্র‍্যাক্টিসিং মেয়ে মানেই সুপার হিউমেন। সে দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করবে, স্বামী-সংসার-বাচ্চা-বিজনেস সব করবে। কিন্তু মানুষের অনেক অনেক ডেফিসিয়েন্সি আছে। অনেক বোনেরা আছেন যারা ফেসবুকে লিখে উল্টায় ফেলে কিন্তু ৫ ওয়াক্ত সলাত ঠিক করে পরেন না। এখন এইগুলা তো আরো ভুরি ভুরি।

রিসেন্ট একটা লেখা দেখলাম বিয়ের সময় কি করবে না করবে এই নিয়ে। এই লেখাটা শুধুমাত্র লেখিকার স্বপ্ন হতে পারে কিন্তু সবার পক্ষে এইগুলা মানা সম্ভব না। বোনেরা এতো এতো স্ট্রাগল করে বিয়ে করে এখন যদি বলে যে আমি আমার বিয়েতে কাউকে দাওয়াত দিবো না, এটা সামাজিকভাবে কোনদিন এক্সেপ্টেড হবে না অন্যচোখে দুনিয়া দেখে আসা বাবা-মা'র কাছে। আর এভাবেই ক্ল্যাশ হবে,ফিতনা হবে। অপছন্দ কে আপনারা হারাম বানায় ফেলতেসেন এইসব প্রচার করে।

আরেক ফিতনা হলো বিবাহিত অবস্থায় কোন স্পাউজ যদি প্র‍্যাক্টিসিং হয় তখন সে তার দ্বীন পরিপূর্ণ না বোঝা স্পাউজের কাছে এইসব ফ্যান্টাসি আশা করেন, যা আদতে উনি দ্বীনি হলেও পূরণ করা সম্ভব হতো না। এইভাবে ছোট ছোট কারণে সংসার ভাংতেসে। আমি অবাক হয়ে গেলাম সেদিন এক বোন ফোন দিয়ে বলছেন, "আমার জামাই খুবই ভালো সলাত পরে, দাঁড়ি আছে, টাকনুর উপর প্যান্ট পরে কিন্তু সারাদিন ব্যস্ত থাকায় উনি ইল্ম অর্জনে অতটা মনোযোগ দেন না, আমার সাথে স্টাডি করেন না তাই আমার উনাকে ভালো লাগে না।" আমি শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলাম। আমি বললাম, "বিয়ের উদ্দেশ্য কি আপু? একসাথে স্টাডি করা?"

যারা ফ্যান্টাসি মার্কা কথা লিখবে তাদের জিনিস পড়বেন না। নিজের স্পাউজকে অন্যের সাথেও তুলনা করবেন না। প্রত্যেক মানুষের পার্সোনালিটি ভিন্ন। আপনার নিজের এইসব ফ্যান্টাসি চিন্তা একটা পার্সোনালিটিকে কেন্দ্র করে অন্য পার্সোনালিটির উপর চাপায় দিবেন না। আর ফ্যান্টাসি মার্কা কথা গুলো লিখে তারাই যাদের বিয়ে হয়নাই।

ভাষা রুড হলে দুঃখিত। এইগুলো নিয়ে সবার নিজ জায়গা থেকে অন্যদেরকে সচেতন করা উচিৎ।


Sources: [ক] [খ] [গ] [ঘ] [ছ]