ভার্সিটি মানেই একটি নতুন জগৎ, যেখানে থাকে অনেক রঙিন স্বপ্ন আর অফুরন্ত স্বাধীনতা। আর এ বিশ্বাস সামনে রেখেই প্রত্যেকের ভার্সিটি লাইফ শুরু হয়। যেমনটি হয়েছিলো আমারও। কিন্তু পথিমধ্যে নানান ঘটনা পরিক্রমায় এক একজনের জীবন মোড় নেয় এক এক দিকে। কেউ সেই রঙিন স্বপ্নের পেছনে অবিরাম ছুটে চলে, কেউ স্বাধীনতার খোঁজে হয়ে উঠে ভবঘুরে, আর কেউবা সরে আসে শুরু হওয়া রঙিন স্বপ্নের ভুবন থেকে বাস্তব জীবনে। আর এমনি কিছু লাইফ স্টাইলকে বাস্তবতার আঙ্গিকে তুলে ধরতে এই লিখা। হয়তো এতে আমাদের পেছনে রেখে আসা ভুলগুলো সামনে আসবে এবং আমরা অনুশোচনার সুযোগ পাবো, সাথে এই পরিবেশে নবাগতরাও সচেতন হওয়ার সুযোগ পাবে, ইনশা আল্লাহ্।

বন্ধুত্ব

ভার্সিটিতে পা রেখেই সবাই তাদের পছন্দ মতো কিছু মানুষ খুঁজে বেড়ায়। কারণ তারা তাদের মতো করে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে চায়। তবে যাদের সাথে বেশি উঠা-বসা হয়, দিনশেষে তাদের সাথেই বন্ধুত্ব ঘনিষ্ট হয়। আর এই বন্ধুত্বের প্রভাবটা বাকি জীবনেও খুব থেকে যায়। তাই তো ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া বাবা-মা’র একমাত্র সন্তানটাও একদিন বাসায় গিয়ে বাবা-মা’কে চোখ রাঙিয়ে কথা বলে, পাড়ার ভদ্র ছেলেটা একদিন বালিশের নিচে সিগারেটের প্যাকেট রেখে ঘুমাতে যায়, আবার এসএসসি এইচএসসিতে প্লাস পাওয়া ছাত্রটা ৩ পয়েন্ট ছুঁতে পারে না, এমনকি নিকাব পরা মেয়েটাও একদিন জিন্স পরা শুরু করে। ভাবছেন, এগুলো কতটা বাস্তব? আমি বলছি পুরোটাই বাস্তব। বরং এর চেয়ে বেশি কিছু ঘটে যায়, যা খুব কাছ থেকেই দেখতে হয়েছিলো। তবে কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে, যেখানে একজন আরেকজনের সামনে জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্যটাকে তুলে ধরে। তারা সত্যকে খুঁজে বেড়ায় এবং একটি পরিচ্ছন্ন জীবনের স্বপ্ন বুনে। তবে তাদের সংখ্যা খুবই কম। তাই ভার্সিটি লাইফে বন্ধুত্ব একটি বিশাল ফ্যাক্ট, যা পরবর্তী পথ চলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর এ বিষয়ে আমাদের জন্য একটি ছোট রিমাইন্ডার-

সেদিন (বিচারদিবসে) বন্ধুরা একে অন্যের শত্রু হবে, তবে মুত্তাকীরা নয়। [সূরাহ আয-যুখরুফ (৪৩): ৬৭]‎

গ্রুপ স্টাডি

ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই কিছু ছেলে-মেয়ে একসাথে আড্ডা মারার সুযোগ খুঁজে। আর এই সুযোগের সহজ সমাধান খুঁজে পাওয়া যায় গ্রুপ স্টাডিতে। এখানে অ্যাকাডেমিক স্টাডির চেয়ে ব্যক্তিগত স্টাডিই বেশি হয়। তাই সবারই আগ্রহ বেশি থাকে। তবে এই স্টাডির শেষ পর্যায়ে প্রেম, সন্দেহ, ঝগড়া ইত্যাদিই বেশি অর্জিত হয়। কখনো দেখা যায় ছেলে বন্ধু মেয়ে বন্ধুকে নোট সংগ্রহ করে দিতে গিয়ে নিজেই ফেল মারে, আবার মেয়ে বন্ধু ছেলে বন্ধুর সাথে তাল মিলিয়ে ব্যাকলগ মারে। এ থেকেই বোঝা যায় কেমন গ্রুপ স্টাডি হয়েছে। অথচ তাদের এই স্টাডিটা নিজেদের (ছেলে-ছেলে/মেয়ে-মেয়ের) মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে অতিরিক্ত মানসিক চাপ নিতে হতো না, আবার শয়তানও সুযোগ পেতো না। তাই এই গ্রুপ স্টাডি ভাই-বোনদের জন্য একটি ছোট রিমাইন্ডার। রাসূল ﷺ বলেছেন,

মানুষ তার সমগ্র ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে যিনা করে। দেখা হচ্ছে চোখের যিনা, ফুসলানো কণ্ঠের যিনা, তৃপ্তির সাথে কথা শোনা কানের যিনা, হাত দিয়ে স্পর্শ করা হাতের যিনা, কোনো অবৈধ উদ্দেশ্যে পথ চলা পায়ের যিনা, এভাবে ব্যভিচারের যাবতীয় ভূমিকা যখন পুরোপুরি পালিত হয়, তখন লজ্জাস্থান তার পূর্ণতা দান করে অথবা পূর্ণতা দান থেকে বিরত থাকে। [বুখারি, মুসলিম ও আবু দাউদ]

স্টাডি ট্যুর

যে ট্যুরে স্টাডি নেই, সংক্ষেপে তাকেই স্টাডি ট্যুর বলে। তাই এতে কারো আগ্রহের কমতি নেই। টিউশনের টাকা, বাবার টাকা, এমনকি কসমেটিকস্ এর টাকা সেভ করেও ট্যুরে যাওয়া চাই। সাথে স্পন্সরের ব্যবস্থা তো রয়েছেই। তাই সবাই যেতে চায়। দু-একজন যেতে না চাইলে বন্ধু-বান্ধবী থেকে ডিপার্টমেন্টের হেড পর্যন্ত ক্ষেপে যায়। সাথে নানারকম কটু কথা থেকে শুরু করে পরীক্ষার ভাইভাতেও মজা নেয়া হয়। মনে হয় সে বিরাট রকমের পাপ করে ফেলছে। অথচ ট্যুর থেকে এসে তারাই একে অপরের বদনাম করে বেড়ায়, এই ছেলে ওই মেয়েকে নিয়ে ২ ঘণ্টার জন্য হারিয়ে গিয়েছিলো, ওই ক’জন ড্রিংকস করে পাগলামি করেছিলো, ওই মেয়ে সারাক্ষণ ছেলেদের সাথেই ছিলো ইত্যাদি। অথচ তারা প্রত্যেকেই নাকি শিক্ষার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলো। এ যদি হয় শিক্ষার অবস্থা, তাহলে বর্বরতার সংজ্ঞা কী হবে? এই দিশেহারা ছেলে-মেয়েগুলোর জন্য একটি ছোট রিমাইন্ডার। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,

“তোমরা (বেগানা) নারীদের নিকট (একাকী) যাওয়া থেকে বিরত থাকো।” (এ কথা শুনে জনৈক আনসারী নিবেদন করলো) “স্বামীর আত্মীয় সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?” তিনি ﷺ বললেন, “স্বামীর আত্মীয় তো মৃত্যুসম (বিপজ্জনক)।” [বুখারী, মুসলিম, রিয়াযুস স্বা-লিহীন, ১৬৩৬]

ধাক্কা খাওয়া

ফেইসবুকে ভার্সিটির নামে যতগুলো পেইজ আছে, তার মধ্যে একটি পেইজ সবসময়ই হিট। কারণ পেইজটির নামের সাথে আছে crushes and confessions. এখানে সবাই তাদের ধাক্কা খাওয়ার গল্প পাঠায়। এটা তো অনলাইন জগতের কথা, বাস্তবে তো ধাক্কা খেতে খেতে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। ছেলেদের ক্ষেত্রে প্রথমে নিজের ব্যাচ, তারপর এক ব্যাচ জুনিয়র, তারপর দুই ব্যাচ জুনিয়র এভাবে ভার্সিটিতে থাকাকালীন যত ব্যাচ পাওয়া যায়। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে এর উল্টো। তারা নিজের ব্যাচ থেকে শুরু করে উপরের দিকে উঠতে থাকে। শেষে কোনো এক জুনিয়র শিক্ষক পেয়ে গেলেই বেঁচে যায়। আর সবাই মনে করে তার পছন্দেরটাই সেরা। অথচ তারা সঙ্গী হিসেবে তাদেরকেই পায়, যারা তাদের যোগ্য। এখানে হারানোর কিংবা বেশি পাওয়ার কিছু নেই, যদি না আল্লাহ চান। তবে মাঝখানে রয়ে যায় অনেকগুলো ধাক্কা খাওয়ার ঘটনা, যা একদিন তার রব্বের সম্মুখে লজ্জিত করতে খুব যথেষ্ট হবে। এই ধাক্কা খাওয়া জাতির জন্য একটি ছোট রিমাইন্ডার-

দুশ্চরিত্রা নারীরা দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্যে এবং দুশ্চরিত্র পুরুষেরা দুশ্চরিত্রা নারীদের জন্যে। সচ্চরিত্রা নারীগণ সচ্চরিত্র পুরুষগণের জন্যে এবং সচ্চরিত্র পুরুষগণ সচ্চরিত্রা নারীগণের জন্যে। [সূরাহ আন-নূর (২৪): ২৬]

প্যান্ট নষ্ট

এই জাতির সাথে আমরা সবাই কম-বেশি পরিচিত। তারা সবসময় নষ্ট প্যান্ট নিয়ে চলাফেরা করে। আর তা ধরা পড়ে যখনই তাদেরকে সালাতের জন্য ডাকা হয়। এই নষ্ট জাতির জন্য একটি ছোট রিমাইন্ডার-

রাসূল (ﷺ) একদা দু‘টি কবরের কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, অতঃপর বললেন, এ দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে এদেরকে বড় কোনো গুনাহের কারণে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। বরং এদের একজন পেশাবের নাপাকী থেকে বেঁচে থাকত না। [আবূ দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ]

তিনি (ﷺ) আরও বলেন-

মুসলিম বান্দা এবং কাফির-মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত। [মুসলিম, কিতাবুল ঈমান]

উদযাপন

উদযাপন জিনিসটা আজ বিকৃত হয়ে গেছে। কে কোনটাকে উদযাপন বলে, তা বুঝা কঠিন। তাই তো ভার্সিটি লাইফে কেউ একটা সেলিব্রেট করতে গিয়ে আরেকজনকে প্রায়ই কষ্ট দেয়। বার্থডে পার্টি, ফ্রেন্ডশিপ পার্টি, ডেটিং পার্টি, প্রপোজড পার্টি, মোবাইল কেনা পার্টি, ইফতার পার্টি আরো কতো কী! এসব পার্টিতে ব্যস্ত ছেলে-মেয়েগুলো একসময় নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। কে কার সাথে মিশছে, কে কোথায় যাচ্ছে, কে কাকে ফলো করছে তা যেন একটুও ভাবার সময় নেই। অথচ তাদের জন্য আছে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা, আছে এক উত্তম আদর্শ। কিন্তু এগুলোকে তারা আজ পিছুটান মনে করে। এই দিকভ্রান্ত ভাই-বোনদের জন্য একটি ছোট রিমাইন্ডার-

হে ঈমানদারগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে। [সূরাহ আন-নূর (২৪): ২১]

উপহাস

ভার্সিটিতে পড়ুয়া ৯০% শিক্ষার্থীই উপহাসের সাথে জড়িত। কেউ বন্ধুর সাথে, কেউ শিক্ষকের সাথে, কেউ ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে, আবার কেউ নিজের জীবনের সাথেও উপহাস করে। এত উপহাসের মাঝেও কেউ কেউ নতুনত্ব খুঁজে। তাই তারা শুরু করে তার রব্বের সাথে উপহাস। অর্থাৎ, আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলামের সাথেই চলে তাদের উপহাস নামক খেলা। তাই তো ভার্সিটি আঙিনায় হিজাবি গার্লফ্রেন্ড আর নামাজি বয়ফ্রেন্ডদের অভাব হয় না। তারা হিজাব পরেও নাচতে জানে, আবার দাড়ি রেখেও মেয়ের হাত ধরতে জানে। এসব হারিয়ে যাওয়া ভাই-বোনদের ফিরে আসার উদ্দেশ্যে-

প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন। [সূরাহ আল-মুনাফিকুন (৬৩): ১১]

রাজনীতি

বিশ্বিদ্যালয়ের সাথে রাজনীতি শব্দটি খুব নাকি জড়িত। তাই সবাই ভার্সিটিকে রাজনীতি চর্চার কেন্দ্র বানিয়ে নিয়েছে। কিন্তু ভার্সিটির রাজনীতির বিকৃত চেহারা দেখে আমি স্তব্ধ। সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্য, অভদ্রকে ভদ্র, ভদ্রকে অভদ্র বানানোই যেন এ রাজনীতির সফলতা। তাই তো হলে সিট বরাদ্দ পেয়েও কেউ হলে উঠতে পারে না, আবার হলে সিট না থেকেও কেউ পুরো একটি রুমই দখল করে নেয়। আবার ভার্সিটিতে কোনো যৌক্তিক দাবি আদায় করতে গেলেও রাজনৈতিক ভাই-বোনদের অনুমতি নিতে হবে, অন্যথায় অযৌক্তিক বাধা এসে যাবে। এছাড়া বড় ভাইদের ভয়ে ছোট বোনেরা অশ্লীল কথা শুনেও কিছু বলতে পারে না, আবার বড় বোনদের ভয়ে ছোট বোনদের নাচ-গানও করতে হয়। কারণ, এই বড় ভাই-বোনেরা রাজনীতি করে। রাজনীতি করা ভাইদের আাবার বিভিন্ন কিছুতে পারসেন্টেজ দিতে হয়। তাই মাঝেমাঝে এই ভাগবাটোয়ারা নিয়ে হালকা মারামারিরও খবর পাওয়া যায়। আর হ্যাঁ, ভার্সিটিতে শুধু শিক্ষার্থীরাই রাজনীতি করে না, শিক্ষকগণও করেন। এমনকি তাঁদের আন্ডারে ছাত্র-ছাত্রীদের কিছু গ্রুপও থাকে। তাই যখন প্রয়োজন হয়, তখন ব্যবহার করেন। যাক, রাজনীতির অনেক ভালো গুণ থেকে কিছু খারাপ গুণ সামনে এনে ওই লড়াকু ভাই-বোনদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি-

হে মুমিনগণ, আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তি যেন চিন্তা করে আগামীকালের জন্য কী অগ্রীম প্রেরণ করেছে; আর আল্লাহকে ভয় কর; নিশ্চয় তোমরা যা কর, সে সম্পর্কে আল্লাহ পুরোপুরি অবহিত। [সূরাহ আল-হাশর (৫৯): ১৮]

নেশা

নেশা শব্দটির সাথে অনেকেই পরিচিত হলেও এর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সবার থাকে না। আর যারা এর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে, তাদেরকে সমাজও ভালো চোখে দেখে না। কিন্তু ভার্সিটিতে এসে দেখি এর ভিন্ন রূপ। যে ছেলেটাকে সমাজ শিক্ষিত মনে করে সম্মান দেয়, সেই ছেলেটা রাতে ‘বাবা আর ইয়াবা’ ছাড়া ঘুমাতে পারে না। এছাড়া প্রতিটা মিছিল-মিটিং এর পর এসবের বিশেষ পরিবেশনও থাকছে। আজকাল আবার তাদের মেয়ে বন্ধুরাও এই নেশাকে ফ্যাশন হিসেবে গ্রহণ করে চলছে। এই নেশার মেলায় ভার্সিটি অঙ্গন যেন প্রতিনিয়ত উন্মাদ হয়ে থাকে। যেখানে সত্য-মিথ্যা, বৈধ-অবৈধ কিংবা ন্যায়-অন্যায় ভাবার কোনো সুযোগ নেই। এই উন্মাদ জাতির জন্য একটি ছোট রিমাইন্ডার-

বলো, তোমরা কি চিন্তা করে দেখেছো, যদি তোমাদের কাছে আকস্মিক বা প্রকাশ্যে আল্লাহর শাস্তি নেমে আসে, তাহলে যালিম সম্প্রদায় ছাড়া আর কে ধ্বংস হবে? [সূরাহ আল-আন’আম (৬): ৪৭]

আগন্তুক

উপরের সবকটি ঘটনা প্রায়ই আমাদের চোখে পড়ে। কিন্তু কিছু ঘটনা আড়ালে থেকে যায়। কারণ ওই ঘটনাগুলো যাদের কারণে ঘটে, তাদের সংখ্যা খুবই কম। এসব আগন্তুকরা ভার্সিটিতে তেমন কোনো স্মৃতি রেখে যেতে পারে না, কারণ ভার্সিটি তাদেরকে গ্রহণ করতে চায় না। তাদের দ্বীন মেনে চলা, তাদের পবিত্রতা, তাদের সততা সবই যেন ভার্সিটির সাথে সাংঘর্ষিক। তাই তো দাড়ি রাখা ছেলেটা আর নিকাব পরা মেয়েটা যেন ভার্সিটির জন্য হুমকিস্বরূপ, টাখনুর উপর প্যান্ট পরা ছেলেটা আর হাত-পা মোজা পরা মেয়েটা থাকে সন্দেহের প্রথম সারিতে। আবার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর বেহায়াপনায় যোগদান না করলে বন্ধু-বান্ধবীদের চোখে তারা হয়ে যায় উজবুক, ক্ষেত, সেকেলে আরো কতো কী! তাই এই প্রতিকূল পরিবেশে তাদেরকে টিকে থাকতে হয় রীতিমতো যুদ্ধ করেই। এসব আগন্তুক ভাই-বোনদের জন্য একটি সুসংবাদ-

তোমরা মনমরা হয়ো না, দুঃখ করো না; তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো৷ [সূরাহ আলে ইমরান (৩): ১৩৯]

বিদায়

ভার্সিটি চিরদিন থাকার জায়গা নয়। একদল আসে, আরেকদল বিদায় নেয় প্রতিনিয়ত। কিন্তু কিছু বিদায় একটু আগেই নিতে হয়। কারণ তার রব্ব তাকে ডেকেছেন। তাই চাইলেও সে আর থাকতে পারবে না। তাকে যেতেই হবে। কেউ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে, কেউ গাড়ি চাপা পড়ে, কেউ পানিতে ডুবে, কেউ মারামারি করে, আবার কেউ স্বাভাবিকভাবেই বিদায় নিয়ে নেয়। অথচ বিদায়ের কিছু মূহূর্ত পূর্বেও তার একটি ডিপার্টমেন্ট ছিলো, একদল সহপাঠী ছিলো, কিছু শিক্ষক ছিলো, সর্বোপরি একটি ভার্সিটি ছিলো। কিন্তু সে এখন সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ওপারে চলে যাচ্ছে। তার এই বিদায়বেলায় সবাই সাময়িক শোকাহত হলেও একটা সময় সে স্মৃতির পাতা থেকে হারিয়ে যায়। অথচ সে কখনো এমনটি চায়নি। আর বাকিরাও বিদায় দিতে এতটা প্রফেশনাল হয়ে গেছে যে, এই বিদায় যেন তাদের মনে কোনো প্রভাবই ফেলেনি। অথচ এটা সবার জন্যই একটি আল্টিমেট মেসেজ বহন করে। আর তা হলো ‘এই পৃথিবীতে আমরা কখনোই চিরস্থায়ী নই, আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের রব্বের নিকট ফিরে যেতে হবে’। তাই এই বিদায়বেলায় আমাদের সবার প্রতি একটি স্মরণিকা-

হে মানুষ, কীসে তোমাকে তোমার মহামহিম পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করলো? [সূরাহ আল-ইনফিতার (৮২): ৬]