[ক]

আমাদের ইসলামিস্টদের মুখে কোনভাবে একের অধিক বিয়ের প্রসংগটা উঠলেই মানুষজন আমাদের চোখে-মুখে কীভাবে যেন একটা ভয়ানক লোভাতুর ভাব খুঁজে পায়। যেন ইসলামের নাম বেঁচে এই একটা প্রচন্ড মোহনীয় জিনিস হাতে পাবার আনন্দে ভেতরে ভেতরে আমরা পৈশাচিক হাসি হাসছি। মুখ ফুটে না বললেও অনেকেই মনে মনে দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে ফেলেন। ঠিকই তো। এই হুজুরেরা মুখে পারে না নিজেদের মেয়েদেরকে বস্তায় পুড়ে ঘরে ফেলে রাখে আজীবন, কিন্তু মেয়েদের কথা উঠলে ঠিকই অন্তরে লালা ঝরা শুরু হয়!

এখানে কিছু বিষয় খেয়াল করার আছে। প্রথমত, এটা সত্যি যে আমরা কাঠমোল্লারা একটু কেমন যেন। নিজের পুরুষত্ব বিকিয়ে দিয়ে ক্লাসের ছেলেগুলোর চাইতেও মেয়েদের সাথে বেশি সখ্যতা আমরা গড়ে তুলি না। “উই আর জাস্ট ফ্রেন্ডস”, “ভাই-বোনের মত পবিত্র/নিষ্পাপ সম্পর্ক আমাদের” ইত্যাদি হাজারটা মিথ্যা নীতিবাক্যের ঢাল ব্যবহার করে তাদের সাথে হাসাহাসি, মাখামাখির বৈধতা আমরা দেই না। ফলে নারীর প্রতি পুরুষসুলভ যে দুর্বলতাটা থাকার কথা সেটা আমাদের বজায় থাকে, “আমাদের ওসব ফিলিংস কাজ করে না” দাবীদার নপুংসকদের মতন আমরা নই—অস্বীকার করতে যাবো কেন? সেটার জন্যও আলহামদুলিল্লাহ। এর জন্য আমাদের ক্যারেক্টারের আগে পরে যত খুশি একটার পর একটা বাজে বিশেষণের কালিমা লেপন করে যান—আমাদের কোন আপত্তি নাই। আলহামদুলিল্লাহ বলে একটা তৃপ্তির হাসি হাসবো। রব্বুনা ইয়া’লামু … [সুরা ইয়াসিন ১৬] আমাদের রব জানেন … (আমাদের সম্পর্কে খুব ভালভাবে)। দুনিয়ায় কে কি বললো সেটা আমরা গায়ে মাখি না।

দ্বিতীয় বিষয়টা হচ্ছে, আমরা হয়ত এখন কারো স্বামী, কেউ হয়ত এখনও হই নি—ভবিষ্যতে হবো। এর বাইরেও আমাদের আরো কিছু পরিচয় আছে। আমি বেঁচে থাকলে হয়ত কোন একদিন আরেক মেয়ের বাবাও হবো। তখন হয়ত বুঝতে পারবো নিজের মেয়ের প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে আরেক মেয়েকে দেখবার জ্বালা কতটুকু। তবে এরই মাঝে আমি আমার মায়ের ছেলেও। আমার বাবা এই মুহূর্তে আরেকটা বিয়ে করলে বিষয়টা মেনে নেয়া আমার মায়ের জন্য যতটা কষ্টকর হবে, ঠিক ততটা না হোক—মানিয়ে নেয়াটা আমার জন্যও যে খুব একটা সহজ হবে তা নয়। আমার একটা আদরের ছোট বোন আছে। তার এক সময় বিয়ে হবে। জেনে শুনে মনে হয় না কোন ভাই চাইবে তার একমাত্র কুমারী বোনটিকে আরেকজনের হাতে তার দ্বিতীয়/তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে তুলে দিতে যদি না পরিস্থিতি বাধ্য করে। বহুবিবাহ করতে পারায় যদি স্বামী হিসেবে একটা পুরুষের জন্য তেমন পৈশাচিক আনন্দের কিছু থেকে থাকে তবে একজন ছেলে, ভাই কিংবা বাবা হিসেবে সেই পুরুষটির জন্য কিছু অপ্রীতিকর মুহূর্তও প্রস্তুত আছে ক্ষেত্রবিশেষে বিপরীত দিক থেকে।

হ্যাঁ। আমার বাবা, মেয়ের জামাই বা বোনের স্বামী কেউ একজন আরেকটা বিয়ে করা মানে সেটা আমার জন্য কষ্টকর—তীব্রতা খুব কম হলেও সেটা আমার জন্য অন্তত সুখকর কিছু না। সেজন্য আমি যেটা করতে পারবো নাঃ আমি আল্লাহ এই বিধানের বিরোধিতা করতে পারবো না। কিংবা কুরআন-হাদিস থেকে প্রমাণ করতে যাবো না যে ইসলাম বহুবিবাহকে অনুৎসাহিত করে যখন আমি নিশ্চিত জানি যে এটা রাসুলুল্লাহ (সা) এর সুন্নাহ। যখন আমি জানি, ইবনে আব্বাস (রা) এর উক্তি, “বিয়ে করো। কেননা এই উম্মাহের সর্বোৎকৃষ্ট তারা যাদের সবচাইতে বেশি স্ত্রী ছিল” [বুখারীঃ অধ্যায় ৭, ভলিউম ৬২, হাদিস ৭]

আবারো বলি। কিছু জিনিস আছে বাস্তবতা। তিক্ত বাস্তবতা। আল্লাহতা’আলা পরম দয়ালু—এরপরও আল্লাহ প্রত্যেকের জন্য কিছু বিপদ-দুর্যোগ-কঠিন মুহূর্ত বরাদ্দ রেখেছেন। প্রত্যেককে মৃত্যুবরণ করতে হবে। এখানকার সবগুলোতেই আছে তিক্ততা। এই বিষয়টাও এমনই। যে মেয়েটার সাথে ঘটবে তার জন্য বিষয়টা তিক্ত হবে, তার কাছের মানুষগুলোর জন্য বিষয়টা তিক্ত হবে। কাছের মানুষটি আমি হলে আমার জন্যেও হবে। শরীয়াহ এর উদ্দেশ্য হলো এই সব তিক্ততাকে যথাসম্ভব কমানো এবং ভাল-কল্যানের পরিমাণ তা দ্বারা যথাসম্ভব বাড়ানো। কখনও যদি আল্লাহর নির্দিষ্ট একটা বিধানের মাধ্যমে কীভাবে সেটা সম্ভব তা মাথায় নাও আসে এরপরেও মেনে নিতে হবে একজন মুসলিমকে। সমাজে এখন যেটা হচ্ছে সেটা চরম তিক্ত বাস্তবতা। যৌতুক, নারী নির্যাতন ইত্যাদিকে সেকুলারিজমের বড়ি গিলিয়ে দমানো যাবে না এটাই ধ্রুব সত্য। নারীকে দাসীর মত খাটানো হবে সেটাই সত্য। ইসলাম চেষ্টা করে এই তিক্ত সত্যের তিক্ততা যথাসম্ভব কমাতে।

এবারে ধরা যাক, প্রত্যেকটা মুসলিমের জন্য চারটা করে বউ রাখা ওয়াজিব। একবার কল্পনা করেন তো। আল্লাহু আকবার। একটা এলাকায় যদি ১০০ টা পুরুষ থাকে তবে বউ হবার জন্য মহিলা দরকার হবে ৪০০। সুতরাং যেভাবে ইসলাম বিদ্বেষীরা প্রচার করে বেড়ায় যে মুসলিম মানেই চারটা বিয়ে করে, নারীর অধিকার লঙ্ঘিত হয় … আরো কতসব হাবিজাবি—সেগুলো একদমই ফালতু একিউজিশন। কখনই এমনটা সম্ভব না।

বাস্তবতা হচ্ছে এই যে সমাজের একদমই হাতেগোনা একটা শ্রেণী এই বহুবিবাহ জিনিসটার সুযোগ পাবে। যদি আমরা ধরে নেই শতকরা ২০ জন মহিলা ১০ জন পুরুষের সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয় সেক্ষেত্রে অবশিষ্ট ৯০ জন পুরুষের জন্য ৮০ জন মহিলা থাকে বিয়ের জন্য। চাহিদা-যোগান সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে তাদের বোঝা উচিত যে এর তাৎপর্য কতটা ভয়াবহ পুরুষদের জন্য। ইসলাম এই কাজটাই করে। আল্লাহতালা মেয়েদের সম্মানের জন্য যে ব্যবস্থাটা করলেন সেটাকে শয়তান এবং তার দোসররা আমাদের সামনে এমনভাবে তুলে ধরছে যে আমরা সেটাকেই ঘৃণা করে ইসলামকে অপবাদ দিচ্ছি নারীর অবমাননার দায়ে—মুখে স্বীকার না করলেও অন্তরে।

এক বোন একবার একটি পোস্ট দিয়েছিলেন,

এখন যদি একটা মেয়ে বলে, “যে ছেলে যৌতুক নেয় সে আত্মসম্মানবোধহীন, আমি আত্মসম্মানবোধহীন কোন ছেলেকে বিয়ে করবো না” অথবা “বিয়েতে মোহর যতই কমহোক, না দেওয়া পর্যন্ত শ্বশুরবাড়ি যাব না।”—সে মেয়ের বিয়ে হতে খবর আছে।

মেয়ে যদি বলে, “বিয়ের দিন আমি খুব সাজতে চাই, কিন্তু কোন নন-মাহরাম সেখানে ঢুকতে পারবে না যেখানে আমি থাকবো …” খুব কম মানুষের এই কথাটা পছন্দ হবে।

যদি মেয়েটা বলে,“আমি পছন্দ করি না কোন নন মাহরাম আমাকে দেখুক” অথবা (পাত্রের পরিবারের কেউ যিনি মেয়েটির মাহরাম নন) কথা বলতে আসলে মেয়েটা যদি কথা না বলে, উত্তর না দেয়, তাহলে সে অহংকারী, ভাব মারে।

যদি বলে, “আমার স্বামীর সামর্থ্য আছে, আমি আলাদা বাসা নিয়ে থাকতে চাই”—সমাজ বলবে মেয়েটা খারাপ, ছেলেকে তার পরিবার থেকে আলাদা করে ফেলেছে।

মেয়ে যদি তার স্বামীকে বলে, “তোমার টাকা আমার টাকা, আমার টাকাও আমার টাকা। আমার টাকা আমি যেখানে খুশি খরচ করবো, কারো কিছু বলার নাই” তাহলে?

যে বলে ইসলাম মেয়েদের অধিকার দেয় না, তাদের সাথে আমার কোন কথা নাই।

আলহামদুলিল্লাহ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোনটি সম্ভব আর কোনটি সম্ভব না—সে বিতর্কে যেতে আমি মোটেই আগ্রহী নই। কোনটি ঠিক, কোনটি বেঠিক—সেই সংজ্ঞা কার কাছে কি মনে হয় সে অনুযায়ী জানতে চাচ্ছি না, ইসলাম কি বলে সেটাতে আমি আগ্রহী। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এগুলোর বাস্তবতা যাই হোক না কেন, এই পোস্ট থেকে আমরা জানতে পারছি ইসলামের বিধান অনুসারে,

১.

মেয়ে তার স্বামীর বাড়িতে সংসার করবার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যেতে পারে বাবার বাড়ি থেকে। মেয়ের বাবা-মা চাইলে মেয়ের জামাইকে উপহার সামগ্রী দিতে পারে। আসলে উপহারসামগ্রী যে কেউ, যে কাউকে দিতে পারে। এই বৈধতাগুলোকে কাজে লাগিয়ে যে ট্রেন্ডটা মুসলিম সমাজে তৈরি হয়েছে সেটা মূলত এসেছে মুশরিকদের সংস্কৃতি থেকে। সেটা হলো কন্যাদায় এড়ানোর জন্য মেয়ের সাথে টয়লেটের বদনা থেকে শুরু করে ঘর পরিষ্কার করার ঝাড়ু পর্যন্ত কোন কিছু বাদ যায় না শ্বশুড়বাড়িতে পাঠানো।

উপহার সামগ্রী আদান-প্রদানের মাধ্যমে ঘনিষ্টতা বাড়ে। যেমন বলা নেই, কওয়া নেই হঠাৎ কেউ একজন যখন কোন কিছু আমাকে দেবে, অবশ্যই তার প্রতি আমার ভালোবাসাটা বাড়বে। অথচ এই যৌতুকের ব্যাপারটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এমন যে, একটা ছেলে এবং তার পরিবার দেখছে জিনিসটাকে একটা অধিকার হিসেবে। ছেলের বউ ঘরে তুলবো—সাথে এসব আমাদের প্রাপ্য। সারপ্রাইজ গিফট প্রাপ্তিতে খুশিতে আটখানা হওয়া দূরে থাক, অপ্রাপ্তিতে রোষানলে পুড়তে হয় বউটিকে সারাজীবন ধরে। কখনও কখনও দুনিয়া থেকে বিদায় নেয় শারীরিক-মানসিক যন্ত্রনার বোঝা সইতে না পেরে। অথচ হবার কথা ছিলো ঠিক উল্টোটি। মেয়ের পক্ষ থেকে কোন কিছু পাওয়াটাই কল্পনাতীত, পুরুষের কাছেই বরং মেয়ের সব পাওনা। মোহরানার বোঝা বইতে বইতে বেচারার অবস্থা খারাপ হবার কথা ছিলো উল্টো। তারপরও খুশি হয়ে যখন একটা ছেলেকে কিছু দেয়া হবে সে এই অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তিতে তার স্ত্রী এবং স্ত্রীর পরিবারের প্রতি অন্যরকম একটা কৃতজ্ঞতাবোধ এবং আন্তরিকতা অনুভব করবে। হবার কথা ছিল এমনটি।

২.

একটা মেয়ের এটা অধিকার যে সে স্বামীর আত্নীয়দের মধ্যে যারা মাহরাম না, যেমন স্বামীর ভাইয়ের সামনে আসবে না। অথচ এমনকি একটা ইসলামের বিধান মেনে চলা মেয়ে পর্যন্ত এ বিষয়ে মুখ খুলতে অপারগ। পাছে সমাজের চোখরাঙ্গানি দেখতে হয়!

৩.

একজন স্ত্রী বাধ্য নয় যে তাকে শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির সাথে একই ছাদের নিচে থাকতে হবে। এক্ষেত্রেও একই কথা। কেউ যদি থাকে সেটা স্ত্রীর পক্ষ থেকে বিরাট এক সদাকাহ যার জন্য স্বামী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। বিশেষ করে স্বামীর প্রাপ্তবয়ষ্ক ভাই থাকলে একই পরিবারে পর্দা মেনে চলাটা বেশ দুরূহ বিধায় একটা মুসলিম মেয়ে তাতে আপত্তি করবে এটাই বরং স্বাভাবিক। অথচ সেটা একটা মেয়ের জন্য মুখ ফুটে বলা অসম্ভব—সে চাই এবার যেমন পরিবারেরই হোক না কেন। কেননা ইসলাম মেনে চলা ভাইয়েরা পর্যন্ত এতে আপত্তি তুলবেন। মা-বাবার একমাত্র ছেলে হিসেবে আমি নিজেও চাই না আমার বউ এমন দাবী করে বসুক। তবে এটা একটা মেয়ের অধিকার যা ইসলাম তাকে দিয়েছে।

৪.

মেয়েদের নিজের বলতে কিছু থাকতে পারে—এই ধারণাটাই বেশিরভাগ পুরুষের কাছে অনুপস্থিত। অথচ মূলনীতি এটাই যে একটা মেয়ের চলাফেরা, খাওয়াদাওয়া, পোশাক—যাবতীয় ব্যয়ভার তার স্বামীর। আবার একটা মেয়ে তার অর্থকড়ি কোথায় কীভাবে ব্যয় করবে সে বিষয়ে স্বামীকে কৈফিয়ত দিতে সে বাধ্য না। এখন কোন মেয়ে যদি সব কাজ কর্ম স্বামীকে জানিয়ে, পরামর্শ নিয়ে পরে করে তাহলে স্বামীর কাছে সেটা ভাল লাগবে—দু’জনের মাঝে আন্তরিকতাকে প্রগাঢ়ত্ব দান করবে। কখন সম্ভব সেটা? যখন কৈফিয়ত দেয়াটা বাধ্যতামূলক না, তারপরেও অপ্রত্যাশিতভাবে দেয়া হচ্ছে তখন।

সুবহানাল্লাহ।

আল্লাহতা’লা মুসলিম মেয়েদের জন্য যথেষ্ট সম্মানের ব্যবস্থা করেছেন। স্বামীর সাথে বাহ্যত “রাফ এন্ড টাফ” একটা প্রফেশনাল সম্পর্কের গন্ডি দিয়ে দিয়েছেন। স্ত্রী যখনই সেই তিক্ততা/রাফনেসটাকে একটু করে সরিয়ে দেয় তখনই সেই সদাকাহটুকু স্ত্রীকে আরো মূল্যবান করে তোলে স্বামীর কাছে।

সত্যিকারের মুসলিম সমাজে এই যে একটা বৈশিষ্ট্য যে স্ত্রীর “ঠ্যাকা পড়ে নাই” স্বামীর পা ধরে থাকার। সেটা কীভাবে সম্ভব? সেটা আল্লাহতালা সম্ভব করেছেন এই বহুবিবাহের প্রচলনের মাধ্যমেই। ডা. জাকির নায়েকের একটা লেকচার বহুবিবাহের বিষয়ে খুব প্রচলিত যেখানে তিনি উপাত্ত দেখান যে, “সাধারণত” একটা এলাকায় পুরুষের তুলনায় মহিলারা সংখ্যার দিক থেকে কিছু বেশি থাকে। বাংলাদেশের ভোটার তালিকা দেখলেও ব্যাপারটা বোঝা যাবে। পুরুষের চাইতে নারী ভোটারের সংখ্যা বেশি। তো এই পার্থক্যটা কতটা বেশি? ১০০-১০২ এরকম। অর্থাৎ প্রতি একশ জনে দেখা গেলো নারীর সংখ্যা কেবল দুইজন বেশি। এতেই যদি ডা. জাকির নায়েকের ভাষ্যমতে সমাজে আকাশ পাতাল সমস্যা হয়ে যায় সেক্ষেত্রে যখন ৯০ জন পুরুষের জন্য ৮০ জন মহিলা থাকবে তখন কি হবে?

তখন যেটা হবে, মেয়েদের জন্য হাহাকার থাকবে চারদিকে। অমুকের মেয়ে আয়শা ৬ বছরে থাকতেই বুকিং দিয়ে রাখতে বাধ্য হবে যে আমি বিয়ে করবো। এখন বিয়ে হয়ে থাকুক, পরে উঠিয়ে নিয়ে যাবো। এটা হচ্ছে মেয়েদের সম্মান। কাড়াকাড়ি অবস্থা। এক ভাই সেদিন প্রশ্ন করলো, আল্লাহর রাসুল (সা) বলেছেন বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বীনদারী প্রাধান্য দিতে। আবার ইসলামে ইহুদী-খ্রিস্টান ইত্যাদি আহলে কিতাব মেয়েদেরকে বিয়ে করাও জায়েজ (মুসলিম প্রধান এলাকায় যেখানে সন্তান চারদিকে ইসলামের ডোমিনেন্স দেখতে পাবে সেখানে এই নীতি প্রযোজ্য, কিন্তু যদি অমুসলিম প্রধান এলাকায় হয় সেক্ষেত্রে ফতোয়া পরিস্থিতি অনুযায়ী ভিন্ন হবে)। এখন একটা লোক কেন মুসলিম মেয়ে বাদ দিয়ে আহলে কিতাব বিয়ে করতে যাবে?

আসুন উত্তর খুঁজি। উত্তরটা হচ্ছে এই যে, একটা মুসলিম সমাজ হচ্ছে সেই পুরুষশাসিত সমাজ যেখানে নারীদেরকে যৌতুক না দিতে পারার জন্য আত্নহত্যা করতে হয় না—সেই সুবাদে তারানা হালিমদেরকে বড় বড় লেকচার দেবার সুযোগ হয়ে ওঠে না। বরং একটা পুরুষকে সব সময় মাথায় রাখতে হয় যে আমি উল্টা-সিধা কিছু করে বসলে বউ চলে যাওয়া মানে হচ্ছে ঐ ৯০ জনের কাতারে গিয়ে শামিল হতে হবে যারা ৮০ জন মেয়েকে পাবার জন্য প্রতিযোগীতা করছে। প্রতিযোগীতার বাজারে যুবকের মাথায় যৌতুকের চিন্তা আসার আগেই বরং বউ-শ্বশুড়কে সন্তুষ্ট করার মত মোহরানার কথাটা চিন্তা করতে হয়। সেখানে খাট-পালঙ্কের হিসেবের কথা তুলতে যাওয়াটাই বরং অকল্পনীয়। মেয়ের বাপের “ঠ্যাকা পড়ে নাই”। সে বরং পান থেকে চুন খসলে গর্বভরে বলতে পারবে—“বিয়ে করবা না? ফুটো। তোমার মতন আরো ১০ জন আবিয়াইত্যা লাইনে আছে … নেক্সট!!”

সুরা নিসার ২৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে “আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বাধীন মুসলমান নারীকে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে না, সে তোমাদের অধিকারভুক্ত মুসলিম ক্রীতদাসীদেরকে বিয়ে করবে। …”

বোঝা যাচ্ছে ব্যাপারটা? মুসলিম সমাজ হচ্ছে বিয়ের বাজারে মেয়েদের পাবার জন্য একটা কঠিন প্রতিযোগিতা। কে কত পারফেক্ট। সে পাবে ততো ভালো মেয়েদেরকে। মেয়েদের এই আকাশচুম্বি মূল্যের ফলে আপনাকে চিন্তা করতে হবে বিকল্প ব্যবস্থার কথা। সুরা নিসার ২৫ এ ক্রীতদাসী বিয়ের কথা বলার পরে আল্লাহ বলছেন এ বিষয়ে ২৮ নং আয়াতে, “আল্লাহ তোমাদের বোঝা হালকা করতে চান। মানুষ দুর্বলভাবে সৃজিত হয়েছে।”

সুবহানাল্লাহ। মেয়েদের প্রতি দুর্বলতা দিয়ে, বহুবিবাহের মাধ্যমে বিয়ের বাজারে পাত্রী সংকট তৈরীর মাধ্যমে আল্লাহ পুরুষকে যে বিশাল বোঝা দিয়েছেন সেটা কমানোর উপায় বাতলে দিচ্ছেন দয়াপরবশ হয়ে যে, চাইলে আহলে কিতাব মেয়েদেরকে বিয়ে কর, না পারলে দাসী হলেও বিয়ে কর। এভাবে বোঝাটুকু হালকা হচ্ছে।

কিন্তু এই নারীরাই সবচাইতে বেশি অপছন্দ করে বহুবিবাহের ব্যাপারটা। হোক সে যতবড় ইসলামিস্ট বউ। বিবাহিত ভাইদের কাছে শুনি তাদের কট্টর ইসলামপন্থি বউদের ঝারির কথা—“বিয়ে একটা মুবাহ ইস্যু। এইটা নিয়ে এত মাতার কি হলো!! আরো কত ফরয, সুন্নাহ বাকি আছে। সেগুলো বাদ দিয়ে এগুলো যদি আর শুনি … [অগ্নিমূর্তিময় একখানা ইমো হবে এখানে]”

বিয়ে একটা মুবাহ ইস্যু নয় বোন। এটা একটা মুস্তাহাব ইস্যু, এটা একটা সুন্নাহ তাদের জন্য যাদের সামর্থ আছে। এই বিষয়টাকে ঘৃণা করছেন তো? নাম শুনলেই ছি ছি করছেন তো? অথচ এই জিনিসটার প্রচলনই আপনাদেরকে মুক্তি দিতো শত শত বছরে দাসত্বের অভিশাপ বলেন আপনারা যাকে—সেটা থেকে। আপনাকে কারো অগ্নিচক্ষুর ভয়ে সবসময় ভীত থাকতে হতো না। আপনার নিজের বলে কিছু থাকতো। আপনার শ্বশুড়বাড়ির লোকজন আপনার সাথে যাচ্ছে-তাই ব্যবহার করতো না, গরুর হাটের মত করে একটা মেয়েকে চৌদ্দগোষ্ঠিসহ দেখতে যেত না লোকজন, আপনি আপনার অধিকারের কথাগুলো তুললে “বেহায়া মেয়ে” বলে আপনাকে তাচ্ছিল্য করা হতো না। আপনাকে বিশ্বাস আনতে হবে বোন যে, আল্লাহ অনেক সময় এমনসব জিনিসে কল্যাণ রাখেন আমাদের জন্য, যেগুলো আমাদের কাছে চরম অপ্রিয়।

“… তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়,অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না।”[সুরা আল-বাকারাহ ২১৬]

আপনার বহুবিবাহ ব্যাপারটা নিয়ে অ্যালার্জি নেই—এর মানে কোনভাবেই এই নয় যে আপনার স্বামী আজই ঘরে নতুন একটা বউ নিয়ে হাজির হচ্ছেন। সুতরাং রাগ হচ্ছেন কেন? আপনি চান না নিজের সাথে এমনটা হোক। ঠিক আছে সেটা। আমিও চাই না আমার আত্নীয় কোন মেয়ের সাথে এমনটা ঘটুক। কিন্তু তাই বলে নিজের অপছন্দনীয় বিষয়টির প্রতি ক্ষোভ দেখাতে গিয়ে আল্লাহর একটা বিধান নিয়ে এমনসব কথাবার্তা বলে ফেলবেন না যেটা আল্লাহর বিধানের অবমাননা হয়।

বহুবিবাহ (কেবল পুরুষের জন্য চারটি পর্যন্ত) জায়েজ হবার দলীল হিসেবে সর্বজনবিদিত আয়াতটি রয়েছে সুরা নিসার শুরুতে। সুরা নিসা নাজিল হওয়া শুরু হয় হিজরতের তৃতীয় বছর থেকে। অর্থাৎ উহুদ যুদ্ধ শেষ হবার ঠিক পর থেকে। ইসলামের বহুবিবাহের কনসেপ্টটা বুঝতে হলে সেজন্য এই প্রেক্ষাপটটা বোঝাটা খুবই জরুরী। উহুদের যুদ্ধে অসংখ্য মুজাহিদ সাহাবা (রা) শহীদ হন। যেকোন যুদ্ধেই এমনটা হয়। এটা একটা তিক্ত বাস্তবতা। এই তিক্ত বাস্তবতার সাথে সাথে চলে আসে শহীদ পরিবারের বিষয়টা। এইসব শহীদদের রেখে যাওয়া স্ত্রী-সন্তানদের দায়িত্ব নেবে কে? চোখে সেকুলারিজমের চশমা চাপানো লোকগুলো শুধু দেখে—আমরা আমাদের অন্তরস্থিত কামাতুর-লালসা চরিতার্থ করার জন্য বহুবিবাহ করবার সুযোগ খুঁজি। কিন্তু ইসলাম মানুষকে যে ফিতরাহটুকু দিয়েছে সেই আলো দিয়ে একটু খেয়াল করলে দেখবেন—আমার শহীদ সহযোদ্ধার পরিবার, অর্থাভাবে কষ্টকর জীবন কাটাবে আর আমি বিশাল বিত্ত নিয়ে বসে থাকবো এমনটা সম্ভব না। চার-পাঁচ বাচ্চার মা এই বিধবা মেয়েটিকে ঘরে তুলবার সময় আমার চারিত্রিক দুর্বলতা খুঁজতে যাবেন না। কারণ আপনি বেশ ভাল করেই জানেন যে আমরা আমাদের যৌবনের শুরুর দিকের উত্তাল সময়গুলো পার করেছি কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলে না তাকিয়ে।

উহুদের যুদ্ধের পরপর এই আয়াতটি নাজিল হবার ফলে যা হলো—অনেক সাহাবা ছিলেন যাদের ঈমানের এতটাই দৃঢ়তা ছিলো যে ঘরে এরই মাঝে পাঁচ-ছয় জন স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও কেবল সহযোদ্ধার স্ত্রী-সন্তানের প্রতি মানবিক দায়িত্ব থেকে আরো কয়েকজনকে বিয়ে করে নিতে দ্বিধা করবেন না। এই আয়াত নাজিল হবার পূর্বে এই প্রচলন ছিলো আরবে। যেমন বুখারি কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে একজনের কথা পাওয়া যায় যার দশ জন স্ত্রী ছিল, আল্লাহর রাসুল (সা) তাকে চারজন রেখে বাকিদেরকে ছেড়ে দিতে বলেন। তাছাড়া আবু দাউদে বর্ণিত উমাইরাহ আল আসাদির ইসলাম গ্রহণের সময় আটজন স্ত্রী, আশ-শাফিয়ি বর্ণিত নওফাল ইবনে মুওয়াউইয়া আদ-দাইলামির পাঁচজন স্ত্রী ইত্যাদি বর্ণনাগুলো নির্দেশ করে যে এটা তখনকার আরবে একদমই সাধারণ একটা প্র্যাকটিস ছিলো। আল্লাহ’তালা এই আয়াতের মাধ্যমে ব্যাপারটাতে একটা বাধ্যবাধকতা আনলেন যে চারজনের বেশি বিয়ে করবে না বেশি মানবতাবোধ দেখাতে গিয়ে। কারণ সেক্ষেত্রে বর্তমান স্ত্রীদের সাথে ইনসাফ রক্ষা করা, সবার চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে না। রাসুলুল্লাহ (সা) এর বহুবিবাহ নিয়ে আমরা যত ধরনের অ্যাকিউজেইশান দেখি সবগুলো আল্লাহ এক কথায় উড়িয়ে দেবার ব্যবস্থা করেছে আমাদের জন্য একইভাবে যে, যৌবনের শুরুর দিকে ২৫ বছর বয়স থেকে মোট প্রায় ২৪ বছরের বিবাহিত জীবনে কখনও বহুবিবাহের অধিকারকে যিনি কাজে লাগান নি—তার বিরুদ্ধে বাজে কথা বলবে যে, তার সমস্যা আছে। ৫০ বছর বয়সের পর থেকে তিনি যাদেরকে ঘরে তুলেছিলেন তাদের মধ্যেও কেবল আয়েশা (রা) বাদে বাদ বাকি কেউই কুমারী ছিলেন না। আসলে একাধিক বিয়ে যতটা না শখের বলে মনে হয় তার চাইতে অনেক বেশি দায়িত্ববোধের সাথে জড়িত।

সুতরাং সূরা নিসার ঐ একটি আয়াতেই তিন তিনবার স্ত্রীর হক, অধিকার, ইনসাফ ইত্যাদির ব্যাপারগুলো তুলে ধরার বিষয়টি তাদের জন্য একটা সান্তনা যে আল্লাহতালা তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন না যে কেন দায়িত্ব নাও নি অসহায় পরিবারগুলোর এবং সতর্কবাণী এভাবে যে যাদের মোটামুটি এক বা একাধিক স্ত্রী আছে তারা যেন আবেগতাড়িত হয়ে ইচ্ছেমত সহযোদ্ধাদের স্ত্রী-পরিবারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে পরবর্তীতে আগের স্ত্রী এবং নতুনদের উভয়ের অধিকার ক্ষুন্ন না করে। আবার সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ আসার কারণে অনেকেই উৎসাহ পেল একাধিক বিয়ে করে ঐ পরিবারগুলোর দায়িত্ব নেবার জন্য। মুসলিমদের প্রতি বছরে কমপক্ষে একবার অফেনসিভ জিহাদ করা উচিত বলে অনেক ফুকাহার মত। ফলে প্রতি বছর বেশ কয়েকবার আসলে এই পরিস্থিতিটা আসে। ফলে একজন শহীদের ফ্যামিলির দায়িত্ব নেবার বিশাল দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবার সুযোগ মেলে অনেকের জন্য।

আগেই বলেছি, যে সমাজে বহুবিবাহ হয় সে সমাজে মেয়েরা “বানের পানিতে ভেসে আসা কিছু একটা” হিসেবে গণ্য হয় না। ফলে আমি আমার ছোট বোনটিকে এমন কারো হাতেই তুলে দেব যার আখলাক ভাল, স্বচ্ছল, দ্বীনদারীর দিক থেকে উত্তম। আমি চাইবো না এমনিতেই যে সতীনের ঘর করুক গিয়ে। তবে হতে পারে যে আমার এমন একটা বোন আছে যারা আগে বিয়ে হয়েছিলো একবার, কিংবা গায়ের রঙ উজ্জল নয়, কিংবা মোটা, কিংবা খুব বেশি লম্বা না … আরো কত কি। ফেইসবুকেরই বিভিন্ন পোস্টে দেখতে পাওয়া যায়, দ্বীনদার ভাইদের একটা খুত ধরা হয় বেশ ভালোভাবে যে তারা কোন কিছু ছাড় দিতে রাজি নন। তারা উচ্চ-শিক্ষিতা চান, লম্বা, গায়ের রঙ, পরিবার অর্থ-সম্পদ সবই চান। মেয়েদের পরিবারও যে একদম পুতঃ পবিত্র তাও কিন্তু না। মেয়ের বাবারাও মজুতদারীতে অদক্ষ নন। বরের মধ্যে কোন দিকটা দেখেন না তারা? যাই হোক, ছেলেদের এই সমস্যাগুলো থাকতো না—তারা গায়ের রঙ, চেহারা, মোটা-চিকন এতকিছু দেখার সুযোগ পেত না যদি ইসলাম থাকতো সমাজে। আমাদের চক্ষুশুল বহুবিবাহ বিষয়টাকে যদি আমরা মেনে নিতাম তাহলে এত কথা বলার সুযোগ থাকতো না। তাছাড়া দ্বীনদারদের মধ্যে সামর্থবানেরাও এটাই জীবনের একমাত্র বিয়ে বলে একদম রাজকন্যাই খুঁজে খুঁজে বের করতে ব্যস্ত থাকতো না।

যা বলছিলাম, যে সমাজে মেয়েদের যথেষ্ট চাহিদা আছে, প্রাপ্ত বয়স্ক হবার আগেই লাইন লেগে যায় অমুকের মেয়েটার জন্য—সে সমাজে সুবিধা হলো আমার বিধবা বোনটির জন্য কিংবা এ রকম কালো, ওজন বেশি, একটু খাটো বোনটিকে বিয়ে দিতে খুব বেশি ঝামেলা পোহাতে হবে না। পাত্রী সংকট থাকায় অনেকেই বিয়ে করতে আগ্রহী হবে। অনেকের জন্য যে এটা কী পরিমাণ একটা বোঝা সেটা বলে বোঝানো সম্ভব না। যাদের ক্ষেত্রে এরকম হয় কেবল তারাই ভালো জানেন। আবার এরকমও হয় যেক্ষেত্রে কারও দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্ত্রী হওয়াতে কোন আপত্তি থাকে না। সেটাই তো হবার কথা তাই না? অর্থাৎ

  • সমাজে পুরুষের বহুবিবাহ প্রচলন থাকলে বিয়ের বাজারে মেয়েদের সংকট থাকে।
  • একটা মেয়ের অভিভাবক বা মেয়ের জন্য প্রিফারেবল থাকে অবশ্যই কুমার পাত্র। কোন সমস্যা না থাকলে কেউ সতীনের সংসারে যাবার কথা না।

ফলে যারা দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিবাহ করছে তারা মূলত তাদেরকেই পাচ্ছে যারা হয় আর্থিকভাবে খুব বেশি অস্বচ্ছল, শারীরিক ত্রুটি আছে কিংবা পূর্বে বিয়ে হয়েছে। এ ধরনের একটা মেয়ের দায়িত্ব নেয়াটা যতটা না কামাতুর ভাবের পরিচায়ক তার চেয়ে বেশি মহানুভবতার। পশ্চিমাদের চশমাটা খুলে ছুড়ে ফেলে দিলে যে কারোই বিষয়টা উপলব্ধি করার কথা।

অথচ পরাজিত মানসিকতার মুসলিমেরা এবং অনেকক্ষেত্রে আবেগ প্রবণ বোনেরা এমন সব কথাবার্তা বলে বসেন যেটা ভয়াবহ উম্মাহের জন্য। আপনার ভালো লাগে না সেটা এক কথা। আর আপনার খারাপ লাগার ওপরে ভিত্তি করে শরীয়াহকেই পরিবর্তন করে দিতে চাইছেন সেটা ভিন্ন কথা। আপনার ভাল নাই লাগতে পারে। আল্লাহই তো বলে দিয়েছেন কতগুলো বিষয় আমাদের কাছে অপছন্দনীয়। অপছন্দ করেন। আমিও করি। কিন্তু শরীয়াহ নিয়ে অজ্ঞানতা বশত ভুলভাল বলে বসবেন না। সাবধান।

[খ]

আমার ভাল লাগে না, আমি মানবো না—এমন একটা ভাব ধরে নিয়ে যেসব দুর্বল লজিক দিয়ে থাকে পরাজিত মানসিকতার সাধারণ নামধারী মুসলিমেরা যারা কাফিরদের চোখ দিয়ে কুরআন পড়তে ভালোবাসেন আর নিজের মত করে ইসলামকে কাটছাট করে নিতে ভালোবাসেন, সেগুলোর মধ্যে আছেঃ

বক্তব্য -১

“বর্তমান সময়ে/প্রেক্ষাপটে” বহুবিবাহের পক্ষে যে কথা বলতে পারে তার মাথায় সমস্যা আছে।

এই ধরনের বক্তব্য সাধারণত যাদের কাছ থেকে আসে তাদের দ্বীনের বুঝ, চিন্তা চেতনায় যথেষ্ট সমস্যা আছে। এদের মতে কম বয়সে দাড়ি রাখারও দরকার নাই। জিজ্ঞেস করে দেখেন যে, “ভাই চোরের শাস্তি হাত কাটা—এই জামানায় কি এটা মানায়?” শতভাগ নিশ্চয়তা দিচ্ছি এটাও এর কাছে ব্যাকডেইটেড মনে হবে। এদের সমস্যা হচ্ছে আসলে শরীয়াহ নিয়ে। ইসলাম এসেছে একদম কিয়ামত পর্যন্ত সকল জাতির সব ধরনের সমস্যাকে সমাধান করার জন্য। অর্থাৎ এই শরীয়াহ -এর এক্সপায়ার ডেইট আল-কিয়ামাহ। এর আগে কখনও এই শরীয়াহ পঁচে যাবে না, নষ্ট হবে না, ফেলে দেয়া যাবে না। এই শরীয়াহকে ঘৃণা করা, অন্য শরীয়াহকে আধুনিক নাম দিয়ে ইসলামী শরীয়াহ- এর ওপরে প্রাধান্য দেয়া, এমনকি অন্য ব্যবস্থাকে ইসলামী শরীয়াহ -এর সমকক্ষ বলে বিশ্বাস করলেও সেটা সুস্পষ্ট কুফর এবং এটা ইসলামের গন্ডি থেকে একজনকে বের করে দেবে। সে একজন কাফির। এবার সে সিজদাহ দিতে দিতে কপালের চামড়া তুলে ফেললেও এ বিশ্বাস ত্যাগ করে তওবাহ না করলে মুসলিম হবে না।

বক্তব্য -২

আপনি কুরআন/ হাদিসের ভুল/ নিজের মত ব্যাখ্যা করছেন।

এটা একটা অত্যন্ত নিচু মানের দাবী। সাধারণত যাদের কাছ থেকে আসে এদের দাড়ি থাকে না, হিজাব করে না নিজেরা। আপনি ঠিক ব্যাখ্যাটা জানলে পরে কোনটা ভুল কোনটা ঠিক সে বিষয়ে মন্তব্য করতে পারেন। অথচ যে শ্রেণীর লোকজন এ ধরনের প্রশ্ন করে তারা কুরআনের ব্যাখ্যা গ্রন্থ যে তাফসীর—এই টার্মটার সাথেও পরিচিত না। এই বক্তব্যটাই তাদের অজ্ঞতার একটা সবচেয়ে বড় সনাক্ত চিহ্ন। যারা একটা বিষয়ে ন্যূনতম ধারণা রাখে তারা কোথাও অসামঞ্জস্য হলে এতটা জেনার‍্যালাইজড্‌ কথা না বলে বরং সরাসরি কোথায় ভুল সেটার ব্যাখ্যায় চলে যায়।

বক্তব্য -৩

বহুবিবাহের কথা কেবল বিকৃত মানসিকতা/রুচির লোকজনই বলতে পারে। কী দরকার ভাই একটা বউ থাকতে আরেকটা বিয়ে করার। পরকীয়াও খারাপ, বহুবিবাহও খারাপ।

বাস্তবে এই শ্রেণীর রুচিবোধ এতটা থাকে যে নিজের বোনটা পর্যন্ত কম করে হলেও দশটা ছেলের সাথে অবাধ মেলামেশা করা সত্ত্বেও বাধে না। খোঁজ নিয়ে দেখুন—এরা নিজেরা, এদের ছোট-বড় ভাই-বোন, চৌদ্দগোষ্ঠীর রুচিবোধ এমনই। আমাদের মুখে বহুবিবাহের কথা উঠলেই কেবল এদের রুচিবোধ উপচে পড়তে থাকে এদিক সেদিক। এই ধরনের লোকগুলোর বক্তব্য অনুসারে রাসুলুল্লাহ (সা), তাঁর সাহাবা (রা) সবাই বিকৃত রুচির। নাউযুবিল্লাহ।

জ্বী ভাই। আমাদের রুচিবোধের সাথে আপনাদের রুচিবোধের আকাশ পাতাল ফাঁড়াক। আমাদের রুচিবোধ হচ্ছে এই ধরনের যে ২০-২২ বছরের যুবকেরা একেকজন মুখভর্তি দাড়ি রেখে জংলী বনে যাই। আপনার এই উচুমানের রুচিবোধ নিয়ে কাইন্ডলি মুসলিমদের আলোচনায় মাঝখান থেকে নাক গলানো থেকে একশত হাত দূরে থাকুন। আপনাদের এই ছোট মাথায় আমাদের কোন কর্মকান্ডই ধরাতে পারবেন না যতক্ষণ না দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করেন পরিপূর্ণভাবে।

বক্তব্য - ৪

প্রথম স্ত্রীর অনুমতি …

দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য প্রথম স্ত্রীর অনুমতির বিষয়টা দেশের শরীয়াহতে থাকতে পারে, কিন্তু যা কিছু আল্লাহর শরীয়াহ -এর সাথে সাংঘর্ষিক সেটা বাতিল বলে গণ্য হবে। সো এটা আল্লাহর শরীয়াহের সাথে সাংঘর্ষিক বিধায় বাতিল।

বক্তব্য -৫

কেবল দরকারের ক্ষেত্রেই বহুবিবাহ করা যায়। প্রয়োজন না থাকলে ইসলাম একের বেশি বিয়ে করা সমর্থন করে না।

থামেন ভাই। আপনাকে ইসলাম কোন বিষয় সমর্থন করে আর কোন বিষয় সমর্থন করে না—সেই ফতোয়া দিতে কে বলছে?

এটা একটা কমন বক্তব্য—“রাসুল (সা) এবং সাহাবারা (রা) প্রত্যেকটা বিয়ে দরকারে করেছেন।” আমরা শরীয়াহ দলীল দিয়ে কথা বলি। আপনি একটা ইবাদাহের জন্য একটা জিনিসকে শর্ত করছেন। যেমন নামাযের জন্য ওযু থাকা শর্ত, আপনার ভাষ্য হচ্ছে, একের বেশি বিয়ে করতে বিয়ের প্রয়োজন থাকা জরুরী। কোথায় পাইছেন? আমার মন চাইছে বিয়া করবো। কোন সমস্যা? বিয়ের জন্য শর্ত আর্থিক সামর্থ্য থাকা এবং স্ত্রীদের মধ্যে ইনসাফ করার সক্ষমতা। এর বাইরে অন্য কোন ধরনের শর্ত আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল বেঁধে দেন নি। মনগড়া যাবতীয় বিষয়াদি আউট অভ সিলেবাস।

বক্তব্য -৬

আল্লাহ বলেছেন ইনসাফ করার কথা। আবার আল্লাহই বলেছেন যে আমরা ইনসাফ করতে পারবো না। সুতরাং ইসলাম একটি বিয়ে করাকেই বরং উৎসাহিত করে।

যুক্তিটা হচ্ছে এই যে, এক্ষেত্রে ইসলাম অনেক বাধা-ধরা নিয়ম বেধে দিয়েছে যেগুলোর কারণে বহুবিবাহ ব্যাপারটা ইসলামে মোটামুটি নিষিদ্ধ, না হয় বড়জোর নিরুৎসাহিত বলা চলে। ভ্রান্ত যুক্তির পেছনে দলীলঃ

“আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই …” [সুরা নিসা (৪), ৩]

আবার আল্লাহই বলে দিয়েছেন যে কখনই একাধিক স্ত্রীকে সমান চোখে দেখা সম্ভব না।

“তোমরা কখনও নারীদেরকে সমান রাখতে পারবে না, যদিও এর আকাঙ্ক্ষী হও …” [সুরা নিসা (৪), ১২৯]

সুতরাং একাধিক বিয়েই করা যাবে না—এই হল যুক্তি। অথচ এই আয়াতের পরেই বলা আছে,

… অতএব, সম্পূর্ণ ঝুঁকেও পড়ো না যে,একজনকে ফেলে রাখ দোদুল্যমান অবস্থায়। যদি সংশোধন কর এবং খোদাভীরু হও, তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। [সুরা নিসা (৪), ১২৯]

একজন স্বামী চেষ্টা করবে যতটা সম্ভব বাহ্যিক ভারসাম্য বজায় রাখার। যেটা অন্তরের সেটার ওপর তো মানুষের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রন নেই। যথাসাধ্য চেষ্টা করার পরেও না পারলে বাকিটা আল্লাহ ক্ষমা করবেন।

[তাফসির ইবনে কাসির থেকে] ইবনে আব্বাস, উবাইদাহ আস-সালমানি, আল হাসান আল-বাসরি, আদ-দাহহাক বিন মুযাহিম বলেছেন (এই আয়াত সম্পর্কে), “হে লোকেরা! তোমরা কখনই একদম পুরোপুরিভাবে সবদিক থেকে স্ত্রীদের প্রতি সমতা বজায় রাখতে পারবে না। এমনকি কেউ যখন সমানভাবে স্ত্রীদের মাঝে রাতের সংখ্যা বন্টন করে তখনও ভালবাসা, আসক্তি, শারীরিক ঘনিষ্টতা ইত্যাদি দিক থেকে তারতম্য রয়েই যাবে।“ সেজন্য সাহাবারা (রা) একাধিক বিয়ে করেন নাই? রাসুলুল্লাহ (সা) করেন নাই?

আঈশা (রা) বলেছেন, “রাসুলুল্লাহ (সা) তাঁর স্ত্রীদের প্রতি ভারসাম্য বজায় রাখতেন এবং আল্লাহর কাছে দু’আ করতেন, হে আল্লাহ! এটা হচ্ছে সেই অংশ যেটা আমার মালিকানায় আছে। যেটুকু তোমার মালিকানায়, আমার হাতে নেই (অন্তর বোঝানো হচ্ছে), সেটুকুর জন্য আমায় অপরাধী করো না।“ [আহমাদ, আবু দাউদ, হাদিসটি হাসান]

অর্থাৎ একজন ব্যক্তি একাধিক বিয়ে করবে। মন থেকে কাউকে একটু বেশি ভালো লাগবে, কাউকে কম। সবার চাহিদা সমান হবে না। সেজন্য এমন আচরণ করতে হবে যেন কোন একজনের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়ে অন্যদেরকে অবহেলা করা না হয়। অর্থাৎ বাহ্যিকভাবে যতটা সম্ভব ততটা চেষ্টা করতে হবে, এরপরে অন্তরেরটা কিংবা চেষ্টা থাকার পরেও যেটুকু ভুল ভ্রান্তি সেটা আল্লাহ দেখবেন।

বক্তব্য - ৭

ইসলাম একের অধিক বিয়েকে উৎসাহিতও করে নাই আবার নিষেধও করে নাই।

উপরের সবগুলো বক্তব্যের মাঝে এটা সবচেয়ে নিরাপদ বক্তব্য। তবে এরপরও যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ। আলেমদের মাঝে কেউ কেউ এটাকে মুবাহ (ভাল মন্দ কোনটিই না, যেমন আপনি সাদা রঙের পাঞ্জাবী পড়ে বাইরে বের হবেন। এটা ফরয, সুন্নাহ, নফল, মুস্তাহাব কোনটিই না—তাহলে এটা মুবাহ) বলেন, তবে অনেকেরই অভিমত এটা সামর্থবানের জন্য মুস্তাহাব (recommended, favored or virtuous action). রেফারেন্সঃ Plural marriage is mustahabb for the one who can afford it; it is not obligatory.

উৎসাহকে যদি বাধা-ধরা দায়িত্ব হিসেবে ধরেন তাহলে কথাটা সত্য যে ইসলাম জোর করে নাই কাউকে যে, টাকা-পয়সা আর সামর্থ্য থাকলে একের বেশি বিয়ে করতেই হবে।

সমস্যাটা হয় কোথায় সেটা বলি। ইসলাম থেকে দূরে থাকা সমাজের মানুষগুলো বিষয়টাকে অপছন্দ করে ভীষণ রকমের। আপনি আমি যেভাবে নিজেদের সাথে ঘটুক (আপনার স্বামী কিংবা আমার বোনের স্বামী করুক) কেবল এটা অপছন্দ করি তাদের বিষয়টা এমন না। তারা এই নীতিটাকেই অপছন্দ করে। এখন আপনি যদি তাকে সন্তুষ্ট করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তাহলে সমস্যা। ইসলামকে আমরা মিসরির প্রলেপ দিয়ে মানুষের সামনে তুলে ধরবো না। ইসলাম যেমন, ঠিক তেমনভাবেই তুলে ধরবো। কিছু কথা থাকে এমন যে, বাহ্যত কথাটা ভুল না। কিন্তু আপনি যাকে বললেন সে এটাকে ভুলভাবে নেবে—সেটা আপনিও জানেন, আমিও জানি।

আমরা যখনই একটু নরমভাবে অবস্থান নেব কোন বিষয়ে, মডারেট একটা উত্তর দিতে চেষ্টা করবো যাতে প্রশ্নকর্তা খুশি হয় শুনে সেক্ষেত্রে লোকজন করবে কী? নিজেদের মত করে কথাটাকে ঘোরাবে। স্থান থেকে পরিবর্তন করে নিয়ে নিজের মত করে বুঝবে। বাই ডিফল্ট লোকজনের ধারণা থাকে যে বহুবিবাহ জিনিসটা খারাপ, যারা করে তারা কামাতুর, তারা খারাপ, সংসারে অশান্তি … হাবিজাবি আরো কত্ত কি। এখন আপনার এমনটা উচিত হবে না যে ইসলামকে এই অপবাদগুলো থেকে রক্ষা করবেন বলে একটু চিনি দিয়ে ঢেকে দিলেন কিংবা বহুবিবাহ থেকে ইসলামকে দায়মুক্ত করে দিলেন। “ইসলাম বহুবিবাহকে উৎসাহিতও করে না, আবার অনুৎসাহিতও করে না” দিয়ে আপনি কী বোঝাচ্ছেন—আমি বুঝতে পারছি আলহামদুলিল্লাহ। আমাকে বোঝানোর জন্য আপনি বলেনও নি। কিন্তু আপনি যাদেরকে মূলত বোঝাচ্ছেন তারা এর অর্থ ধরছে ভিন্ন কিছু—ইসলাম হ্যাঁ না কিছুই বলে না। Islam has nothing to say about polygamy. তাদের দৃষ্টিতে যেহেতু ব্যাপারটা অপছন্দনীয় তারা ধরে নিচ্ছে যেহেতু ইসলামের কোন দায়দায়িত্ব নেই এ ব্যাপারে, সেহেতু যে এ কাজটা করছে সে অপরাধী। ইসলাম তাকে বাঁচাবে না।

অথচ আল্লাহ সকল প্রকার অপবিত্রতা থেকে মুক্ত। আল্লাহতালা একটা মানুষকে এই আশ্রয়টুকু দিয়েছেন যে সে যদি এমনকি নারীদের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তির কারণেও চারটা পর্যন্ত বিয়ে করে তারপরও তার চরিত্র নিয়ে বাজে কিছু ধারণা করা যাবে না। সে হারাম কিছুই করে নি। যেই মানুষজন বহুবিবাহকে পরকীয়ার চাইতেও খারাপ হিসেবে দেখে আপনি এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে তাদের সামনে আমাদের মুসলিম ভাইটিকে ছেড়ে দিচ্ছেন অপবাদের বোঝা মাথায় নেবার জন্য।

ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই। ধরুন আপনাকে প্রশ্ন করা হলো, “ইসলাম কি লেবুর শরবত খেতে উৎসাহিত করে?”

প্রশ্নটাই একটু কেমন যেন না? লেবুর শরবত খাওয়াটা কারো ওপরে ফরয না, সুন্নাহ না, মুস্তাহাব না, নফল না, কিছুই না। তো কি উত্তর দেব? “হ্যাঁ উৎসাহিত করে” নাকি “না, উৎসাহিত করে না”? আসলে এটা তো উৎসাহিত করা না করার মতই কিছু না। বিষয়টা মুবাহ। এক্ষেত্রে উৎসাহিত করে কি করে না মন্তব্য করাটাই ভুল। প্রশ্নটাই ভুল হয়েছে। এর উত্তর দিতে গেলে প্রশ্নকর্তা ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করবে বুঝতেই পারছেন। আপনি “উৎসাহিত করে” বললে বলবে যে, “হ্যাঁ। লেবু খাওয়া ইসলামে একটা বিশাল পূণ্যের কাজ।” আবার না বলে দেখুন। লেবু খাওয়া হারাম বানিয়ে দেবে। যেহেতু বিষয়টা হালাল-হারামের সাথে সম্পর্কিত আপনি প্রশ্নকর্তাকে বুঝিয়ে বলুন যে, ভাই কেউ যদি লেবুর শরবত খায় তাকে কিছু বলা যাবে না। লেবুর শরবত খাওয়া সম্পূর্ণ হালাল। তবে না খেলেও কোন সমস্যা নেই। এটাতে বাধ্যবাধকতা নেই, খাওয়া ফরয না।

বহুবিবাহ নিয়ে কথা উঠলেও একই। আমি বিশ্বাস করি বিষয়টা মুস্তাহাব, অর্থাৎ যার সামর্থ্য আছে ইসলাম তাকে বহুবিবাহ করতে উৎসাহিত করে। বিয়ের গুরুত্ব নিয়ে অনেকগুলো হাদিস রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা) তাঁর নিজের কাজের মাধ্যমে দেখিয়ে গিয়েছেন যে এটা ঘৃণার কিছু না। সবচেয়ে বড় কথা রাসুলুল্লাহ (সা) নিজে যে কাজটা করে গেলেন সেই কাজটাকে কীভাবে ঘৃণার চোখে দেখা সম্ভব!! আপনি যদি বিশ্বাস করেন যে বিষয়টা মুবাহ, ঠিক আছে। আমার তাতেও কোন আপত্তি নাই। আমি আপনার সাথে দলীল নিয়ে তর্ক করতে যাবো না। তবে আপনিও ভুলে যাবেন না যে, মুবাহের ইন্টারপ্রিটেশন অবশ্যই মাকরুহ (অপছন্দনীয়) না। এমনকি মুবাহও হচ্ছে মাকরুহ আর মুস্তাহাবের (উৎসাহিত, পছন্দনীয়) মাঝামাঝি। আপনার কথার অর্থ যাতে কেউ এমনটি নেবার সুযোগ না পায় যে বহুবিবাহ ইসলামে মাকরুহ। উপরের বক্তব্যটার ইমপ্লাইড মিনিং এই যে বিষয়টা মাকরুহ।

মানসিকভাবে পরাজিত মুসলিমদের কি বিশ্রী অবস্থা। লেকচার খোঁজে, ফতোয়া খুঁজে বেড়ায় কোথাও যদি একটু বিপক্ষে মত পাওয়া যায়, অন্তত অনুৎসাহিত টাইপ হলেও চলে। আস্‌তাগফিরুল্লাহ।

বিভ্রান্তিঃ

ইসলামের প্রতি মুহাব্বাতের গভীরতা যাচাই করতে গিয়ে অনেকেই একটা প্রশ্ন করে বসেন দ্বীনদার কনে দেখতে গিয়ে, “আপনার স্বামী আরেকটা বিয়ে করলে মেনে নেবেন?”

উদ্ভট বিব্রতকর প্রশ্ন। আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে আপনার বাচ্চা ছেলে হারিয়ে যাবে আপনি তা চান কিনা? কী বলবেন যে, হ্যাঁ চাই? ইউসুফ (আ) এর বাবা ইয়াকুব (আ) তাঁর সবচেয়ে প্রিয় পুত্রকে হারালেন। বছরের পর বছর কান্নাকাটি করলেন। এতদিনে ইউসুফ (আ) এর জীবনে বয়ে গেছে অনেকগুলো ঝড়-ঝাপ্টা, উত্থান-পতন। শেষে তিনি মিসরের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিতে পরিণত হলেন। এই দীর্ঘ সময়েও ইয়াকুব (আ) পুত্রশোক ভুলতে পারছেন না। অসহনীয় কষ্ট বুকে নিয়ে শেষে কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে গেলেন। লক্ষণীয় বিষয় যে এই যে এত বছরের এত কান্না—বহু বছর পরও একদম সতেজ বেদনা—এর মাঝেও কিন্তু একমুহূর্তের জন্য আল্লাহর ওপরে আস্থা হারান নি। আল্লাহকে দোষারোপ করেন নি যে কেন তকদীরে এমন রাখলে!

কোন মেয়ে এমনটা চাইবে না যে তার স্বামী আরেকটা বউ ঘরে তুলুক। যদি কেউ চায় চাক কিন্তু আমরা এমন বউ চাই না। আমরা চাই বউরা স্বামীকে অনেক ভালোবাসুক, ঈর্ষাবোধ করুক স্বামীকে নিয়ে। স্বামী আরেকটা বিয়ে করলে কষ্ট পাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু রিঅ্যাকশন এমন কিছু হওয়া যাবে না যেটা হারাম। সুইসাইড করা যাবে না, স্বামীকে একটা হালাল কাজের জন্য যে কোন ধরনের শাস্তি দেয়াও অনুচিত। দুই-একদিন কথা না বলে থাকা যেতে পারে বড়জোর, কান্নাকাটিও করা যেতে পারে দীর্ঘ সময় ধরে।

আল্লাহ ভাল জানেন।

“The woman who feels jealous does not hate the fact that Allaah has allowed her husband to marry more than one woman, but she hates to have a co-wife. There is an obvious difference between the two matters.”—Shaykh Ibn Uthaymeen

তো আমরাও যাতে দুটো বিষয়কে এক করে না ফেলি। শরীয়াহকে পরিবর্তন করে না ফেলি।