লাইফ শেয়ারিং বিষয়টা নিয়ে ভেবেছেন কি? বা লাইফ পার্টনার? শব্দটার গভীরতা বোঝেন? সারাজীবন একজন আপনার সাথে থাকবে। তার সাথে আপনার লাইফ শেয়ার করতে হবে।

আমাদের আয়ু যদি হয় ৬০ বছর এবং এর মধ্যে যদি আমরা ৩০ বছরে গিয়ে বিবাহ করি তাহলে বিবাহিত জীবন থাকছে কত? ৩০ বছর। এরমধ্যে ৩০ বছর হওয়া যুবকটির লাইফে একটা স্থিতিশীলতা এসেছে। মোটামুটি ফিক্সড হয়ে গেছে সে কীভাবে জীবন অতিবাহিত করবে বা তার ক্যারিয়ারটাই বা কেমন হবে। বা সে কীভাবে রোজগার করবে। একটা মেয়েকে যখন তার সংসারে আসতে হয় তখন নিতান্তই রেডিমেইড একটা লাইফে আসতে হয়। সেই লাইফটা অনেক গোছানো হয়ে গেছে। একে নতুন করে সাজানোর কিছু নেই। হ্যাঁ, হয়তো মেয়েটি এসে মোডিফিকেশন করতে পারে কিছু। তারপরও।

সেকেন্ড ইয়ারে সিমেন্ট এর প্রোপার্টি নিয়ে পড়তে হয়েছিলো। সেখানে দেখা গিয়েছিলো সিমেন্ট আর পানি মিক্স করার পর একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাকে শেইপ দেওয়া যায়। এরপর স্ট্রেংথ গেইন করলে আর তাকে কিছু করা যায় না। সত্যিই একটা বয়সের পর মানুষকে আর চেইঞ্জ করা যায় না বা তার লাইফের গ্রাফটায় উত্থান পতন ঘটানো যায় না। থিতু হয়ে যায়।

সংসারকে যদি সত্যিকার অর্থেই আমরা লাইফ শেয়ারিং বানাতে চাই তবে আমাদের সংসার শুরু করতে হবে আরো অনেক আগে। যখন আমরা কেবল লাইফ গোল সেট করছি তখন। তখন আপনারা সংসারের শুরুতেই পরস্পর জেনে নিবেন আপনারা অপরের কাছ থেকে কী চান। এরমধ্যে পরস্পরকে বুঝতেই অনেকটা সময় চলে যাবে। হয়তো ২০ বছর বয়সে বিবাহ করলে ২৫/২৬ এ গিয়ে নিজেদের শিরায় শিরায় চিনে যাবেন। হয়তো আরো কিছু সময় লাগবে আপনাদের সম্পূর্ণ একটি একক সত্তায় পরিণত হবে। কোরআনে স্বামী ও স্ত্রী কে পরস্পরের পোশাক বলা হয়েছে।

পোশাকের দুটি কাজ আছে। এক তা কমফোর্ট দেয় এবং আরেক তা নিরাপত্তা দেয়। আবার নতুন পোশাক এবং পুরনো আটপৌরে পোশাকের মধ্যে একটা মৌলিক পার্থক্য আছে। দেখবেন ঈদের দিনের পোশাকটা বেশিক্ষণ পরে থাকতে অস্বস্তি লাগবে। এই কাপড়টাই কয়েকদিন গায়ে দেবার পর ভালো লাগবে বা মনে হবে এ যেন আমার পরিচিত কেউ। এখানে কী হচ্ছে? আপনি কাপড়টার সাথে যত সময় কাটাচ্ছেন তত আপনার সাথে তার আন্ডারস্ট্যান্ডিং বাড়ছে। অন্ধকারে নিজের জুতাটা পরেছেন কি কখনো? সেই জুতাটা পায়ে দিয়ে চিনতে কি আপনার বেগ পেতে হয়? নাহ, আপনি পায়ে দিয়েই বুঝে যান এটা আমারই।

এভাবে আপনি দাম্পত্য জীবনে যত পুরনো হবেন, কমফোর্ট এবং পরিচয় বাড়বে। আপনি যখন আগেভাগেই এ যাত্রা শুরু করবেন না, তখন আসলে দাম্পত্যটা কম পুরনো হবে। চিনতে পারবেন না আপনার সঙ্গীকে।

চোখের একটা ভাষা আছে। সেটা দেখেই আপনার বুঝে নিতে হবে আপনার স্ত্রী আজ রান্নার মুডে নেই। এর জন্যে বেশি সময় কাটানো দরকার।

যেহেতু উভয়ের পরিকল্পনায় আপনারা জীবন গোছাবেন, তাই অভিযোগ কিছুটা হলেও কম আসবে পরবর্তী সময়ে। হ্যাঁ, এটাকে লাইফ শেয়ারিং অনেকটাই বলা যায়। ৩০ এ বিবাহ করলে বুঝতে বুঝতে আরো সময় চলে যাবে। বুড়া মস্তিষ্ক ও চাকরির চাপে রোমান্স কম আসবে মনে। ভালোবাসার সুযোগ কম পাবেন। বুঝতে বুঝতে ৪০ হয়ে যাবে। দায়সারা এক দাম্পত্য পার করবেন হয়তো।

IIUM (International Islamic University of Malaysia) এর এক নবদম্পতির স্টোরি পড়েছিলাম। বিবাহের সময় ছেলের বয়স ছিলো ১৮ বছর। তারা পরস্পরকে পছন্দ করার পর হারাম সম্পর্কে জড়াতে চাইছিলো না। তাই বিবাহের সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের ফ্যামিলিও মাশাআল্লাহ তাদের সাপোর্ট দেয়। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তাদের জন্যে বিষয়টি সহজ করে দিয়েছেন। তারা ভালোই আছে। একই ভার্সিটিতে দুজনের পড়াশোনা। ১৮ বছর বয়স থেকেই লাইফ শেয়ার করা শিখে যাচ্ছে। সেই নবদম্পতির ভাষায়,

“আমাদের বাবা মা ও বন্ধুরা বিবাহের জন্য পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে। কিছু মানুষ অবশ্য বিরোধিতা করেছিলো এই বলে যে নি’মাহ আর আমি এখনও শিক্ষার্থী আর কম বয়সী। কিছু তর্ক-বিতর্কের পর আমরা বোঝাতে সক্ষম হলাম যে আমাদের নিজেদের জীবন ও সমস্যাগুলো সামলানোর আত্মবিশ্বাস ও সামর্থ্য আমাদের আছে।”

সমাজের লোকজন অবশ্য বলতে পারে, “১৮ বছরেই কেন? এটা কি খুব বেশি তাড়াহুড়ো না?”

আল্লাহ তা’আলা কোরআনে বলেন—

وَلَا تَقْرَبُوا۟ ٱلزِّنَىٰٓ ۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَـٰحِشَةًۭ وَسَآءَ سَبِيلًۭا

“এবং ব্যভিচারের ধারে কাছেও যেও না, নিশ্চয়ই এটি অনৈতিক ও খারাপ পন্থা।” [১৭:৩২]

হ্যাঁ, এই বয়সটাতেই মানুষের মধ্যে সিমেন্টের প্রাইমারি অবস্থার মত প্লাস্টিসিটি (plasticity) থাকে। তাকে শেইপ দেওয়া যায় সুন্দর করে। আসলে মানুষ অনেক কিছুই বলবে। কিন্তু যুগে যুগে স্রোতের বিপরীতে চিন্তা করতে গিয়ে অনেক বাধা এসেছে। এখন সিদ্ধান্ত আপনার। আপনি কি স্রোতের বিপরীতে গিয়ে সত্যিকার লাইফ শেয়ারিং এর চেষ্টা করবেন, নাকি দায়সারা দাম্পত্য জীবন পার করবেন।