সমকামিতা। হালের আলোচিত টপিক। কারো কাছে মানবিক, স্বাভাবিক। কারো কাছে পাশবিক, বিকৃতি। কারো কাছে ‘ঘেন্নার', তবে ‘এটাও একটা ধরন', ওদেরও আছে সমাজে বসবাসের অধিকার, ইত্যাদি। নিজের পছন্দমত যৌনচর্চার অধিকার। কেউ তো আবার আগ বাড়িয়ে জিনগত-জন্মগত-প্রাকৃতিক প্রমাণ করেও ছেড়েছে। আজিব হ্যায় ইয়ে দুনিয়া। যা ইচ্ছে প্রমাণ করে ফেলা যায়। সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য করে ফেলা যায়। নিজের চাহিদাকে বৈধতা দেয়া কেন ব্যাপারই না। প্রতারণার যুগ, এইজ অব দাজ্জাল (দাজ্জাল অর্থ চরম প্রতারক)। সব সম্ভবের যুগ।

ডাক্তার হওয়ার জন্য ম্যালা বইপত্র পড়তে হয়েছে। ১১ টা সাবজেক্টে প্রতিটার ২ টা মেইন বই, একটা গাইড ধরলে ৩৩ টা কেতাব খতম দিয়ে লাইসেন্স মিলেছে রোগীর গায়ে হাত দেয়ার। তাই, একটা দুটো বই পড়ে আপনি যেমন খুব সহজে ‘গে জিন' এর অস্তিত্ব বিশ্বাস করে সমকামিতা-কে ‘হাতের স্পর্শ ছাড়াই প্রাকৃতিক’ বলে বিশ্বাস করে ফেলতে পারেন, আমি পারি না। জেনেটিক্সে ‘সমকামিতা’ প্রাকৃতিকভাবে প্রোগ্রামড কি না, তা নিয়ে পক্ষ বিপক্ষ তৈরি হলেও, মেডিকেল সায়েন্সে সমকামিতার ‘অপ্রাকৃতিকতা’ নিয়ে কোনই সন্দেহ নেই।

সমকামিতা যদি প্রাকৃতিকই হয়, স্বাভাবিকই হয়; তাহলে আমাদের শরীরের গঠন তা সাপোর্ট করার কথা। আমাদের এনাটমি ও শারীরতত্ত্ব তো সমকামবান্ধব হবার কথা। সমকামের জন্য যা যা প্রয়োজন, আমাদের গঠনও তেমনটাই হবার কথা। যেহেতু এটা প্রাকৃতিক দাবি করা হচ্ছে। সমকামের সাথে যায়—এমন বৈশিষ্ট্য পায়ু-লিঙ্গে পাওয়া গেলেই তো দাবিটা সঠিক হয় যে, সমকাম সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ও সুস্থ স্বাভাবিক যৌনক্রিয়া, তাই না? যেমন ধরেন যোনির গঠনটাই এমন যে পুরো জায়গাটা—

– ঘর্ষণ উপযোগী
– প্রচুর পিচ্ছিলকারী তরল তৈরির ব্যবস্থা
– এসিডিক পরিবেশ, ফলে বহিরাগত জীবাণু প্রতিরোধী
– প্রসারণশীল
– আনন্দের অনুভূতি সৃষ্টিকারী স্নায়ুসমৃদ্ধ
– এসব বৈশিষ্ট্যই প্রমাণ করে যে, যোনিপথে মিলন একটা প্রাকৃতিক ব্যাপার।

অপরপক্ষে নাকের ছিদ্র বা কানের ছিদ্রে এই বৈশিষ্ট্যগুলো নেই। যা প্রমাণ করে নাকের ছিদ্রে বা কানের ছিদ্রে মিলন, চাই সেটা যত আগে থেকেই প্র্যাকটিস করা হোক না কেন, কোনভাবেই প্রাকৃতিক নয়। এমন কোন জায়গায় মৈথুন আর যা-ই হোক, প্রাকৃতিক হতে পারে না। অনুপযুক্ত স্থানে অনুপযুক্ত চর্চা অবশ্যই প্রকৃতিবিরুদ্ধ এবং ‘গে-জিন’ এর রূপকথা বানিয়ে দিলেই পায়ু মৈথুনের উপযুক্ত হয়ে যাবে না। মনে রাখবেন, কোন জিনেই লেখা থাকে না যে এটা ‘গে-জিন’। বরং এগুলো ধারণা করা হয় যে, হতে পারে এই জিন এই কাজের জন্য দায়ী। কিছু ভাইয়াকে এইসব ধারণাগত বিষয়কে এত বেশি বিশ্বাস করতে দেখা যায়, যদিও তারা দাবি করে তারা না দেখে কিছু বিশ্বাস করে না। যেহেতু গে-জিন আমার আলোচ্য বিষয় না, তাই আজ এখানে তা আলোচনা করছি না। চলুন দেখি, মানবদেহের গঠন আমাদের কী বলে।

ভূমিকাঃ

আগে কিছু কথা শিখে নিই যাতে পরের কথাবার্তা বুঝা যায়। আমাদের শরীর বহু কোষের সমন্বয়ে গঠিত। একই ধরনের একাধিক কোষ ভ্রূণদশায় যদি একই উৎস থেকে তৈরি হয়, আর যদি একই ধরনের কাজ করে সেই কোষের গ্রুপকে কলা/টিস্যু (Tissue) বলে। যেমন ধরেন নার্ভটিস্যু বা স্নায়ু কলা। ভ্রূণ অবস্থায় সবচেয়ে বাইরের লেয়ার থেকে এরা উৎপন্ন হয়ে সারা দেহে বিস্তার লাভ করে এবং নার্ভ তৈরি করে। সেন্স আনা-নেয়ার কাজটাই করে। আবার ধরেন, পেশীকলা। ভ্রূণের মধ্যস্তর থেকে তৈরি হয়, সারা শরীরে ছড়ায়, মাসল তৈরি করে, ওজন নেয়ার ও হাড্ডিকে বাঁকিয়ে নানান নড়াচড়ার কাজটা করে। অনেকগুলো কলা মিলেঝিলে যখন একটা কাজ করে তাকে বলে ‘অঙ্গ’। যেমন ধরেন, হার্ট ❤️। এর মধ্যে পেশীকলা-স্নায়ু কলা-যোজক কলা-আবরণী কলা সব মিলে রক্ত পাম্পের কাজটা করে।

কলাগুলোর মধ্যে আবরণী কলার (Epithelium) ডিটেইলস জানা দরকার। দেহের বাইরের ও ভিতরের আবরণ তৈরি করে যে কোষরা তাদেরকে আবরণী কলা বলে। চামড়ায় আছে, মুখের ভিতরের আবরণে এরা, রক্তনালীর ভিতরের আবরণে এরা, শ্বাসনালীর ভিতরের লেয়ারটায় এরা, ফুসফুস-ব্লাডার-পেশাবের নালী, সব সব। সব ধরনের আবরণ এরা সারি সারি কোষ বসে বসে তৈরি করে। এদেরকে সাংগঠনিকভাবে একসাথে কাজের ভিত্তিতে আবরণী কলা বলে।

ফুসফুসে আঁইশাকার কোষ

এরা আবার কয়েক ধরনের। যেখানে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় অণুর আদানপ্রদান দরকার, সেখানে আছে চ্যাপ্টা চ্যাপ্টা মাছের আঁইশের মত কোষওয়ালা আবরণী কলা। যেমন ফুসফুসের শেষ মাথায় (Alveolus) যেখানে অক্সিজেন-কার্বনডাইঅক্সাইড আদানপ্রদান হবে সেখানে অন্যগুলো থাকলে হবে না, সেখানে আছে এই আঁইশাকার আবরণী কলা, যাতে লেনদেন সম্ভব হয়। আবার এগুলো আছে রক্তনালীর ভিতরের লেয়ারে, কারণ সেখানে (বিশেষত কৈশিকজালিকায়) গ্লুকোজ, এমিনো এসিড, স্নেহ পদার্থ সরবরাহ করতে হবে, আবার বর্জ্য নিতে হবে রক্তে, আদানপ্রদানের জন্য সেখানেও একস্তর আঁইশাকার কোষ (Simple Squamous Epithelium)। কেন আইশাকার? যাতে অণুগুলোকে কম দৈর্ঘ্য অতিক্রম করতে হয়। কোষের বেধ কম, আঁইশের মত।

আবার যে আবরণকে ঘর্ষণ সহ্য করতে হবে বেশি সেখানে বহুস্তর আঁইশাকার আবরণী কলা (Stratified Squamous Epithelium)। যাতে অল্প পুরুত্বে কয়েকস্তর কোষ দেয়া যায়। উপরের লেয়ার ঘষায় উঠে গেলেও (Desquamation) তলায় আরও কয়েক লেয়ার থাকে যা জীবাণু প্রতিরোধ করবে। যেমন ধরেন, মুখগহ্বরের ভিতরের লেয়ারটা। গোশত-হাড্ডি চাবায়ে, লাকড়ির মত টোস্ট কুড়মুড় করে খাচ্ছেন, এই কোষগুলো আছে বলে। অন্যকোষ থাকলে সারাবছর ঘা হয়ে থাকত। আবার অন্ননালী জুড়েও এই কোষ, কারণ আমরা একদম তরল করে গিলি না, কিছুটা চিবিয়েই গিলে ফেলি, শক্ত শক্ত।

আবার কিছু জায়গা আছে যেখানে রস উৎপন্ন করাটাই কাজ। যেমন বিভিন্ন গ্ল্যান্ড। এখানে রস বানানোর কাঁচামাল জমানো লাগবে, রস বানানোর মেশিনপত্র রাখা লাগবে, আবার বানানো রস রাখারও জায়গা লাগবে। তাই এখানে আঁইশের মত চ্যাপ্টা হলে কাজ হচ্ছে না। এসমস্ত রসের কারখানার জন্য আছে ছক্কার গুটির মত (Cube) একস্তর কোষের আবরণী কলা। কিছুটা স্পেস যাতে পাওয়া যায়। যেমন ধরেন: লালাগ্রন্থি, থাইরয়েডগ্রন্থি।

পরিপাক আবরণী কোষ (একস্তর স্তম্ভাকার)

আর যেখানে রস উৎপাদনের চেয়ে রস শোষণ মুখ্য উদ্দেশ্য, সেখানে কন্টিনিউয়াস শোষণ হতে হবে। এজন্য আরও স্পেস বেশি লাগবে। এজন্য সেখানে একস্তরবিশিষ্ট স্তম্ভাকার কোষের আবরণ (Simple Columnar Epithelium)। থামের মত লম্বা লম্বা। পুরো পরিপাক নালী জুড়ে এরা। এখানে পদে পদে উৎপাদন আর শোষণ। রস উৎপাদন করে হজম, খাবারকে সরল তরল করা আর শোষণ। এজন্য এই ধরনের কোষকে পরিপাক আবরণী কলাও (Digestive/ Gastrointestinal Epithelium) বলে। পাকস্থলী-ক্ষুদ্রান্ত্র-কোলন-মলাশয়।

যেখানে যেটা দরকার সেখানে সেটা, কোন ব্যত্যয় নেই। অবশ্য একশ্রেণীর মানুষ একে দুর্ঘটনা মনে করে। এমনি এমনিই এমন ছন্দের মত, নিখুঁত নকশা তৈরি হয়েছে বলে তারা দাবি করে। এনারা রোবটের কাজকাম নিখুঁত হলে এঞ্জিনিয়ারের প্রশংসা করে, কিন্তু এতো অতি-আণুবীক্ষণিক লেভেলের পারফেকশন নাকি লক্ষ লক্ষ ঠাডা পড়ে নিখুঁত হয়েছে বলে তিনারা বিশ্বাস করেন।

আচ্ছা, অন্য প্রসঙ্গে না গেলাম। যে ধরনের আবরণী কলার যেটা সহ্য করার ক্ষমতা নেই, সেখানে সেটা হলে (Stess) একটা সমস্যা হয়। যেমন ধরেন, পাকস্থলীর ভিতরের আবরণে আছে স্তম্ভাকার কোষ। এরা সেখানে এসিড, শ্লেষ্মা ও অন্যান্য রসটস তৈরি করে। এখন, অন্ননালীর আবরণ আবার আঁইশাকার।

যদি কারও দীর্ঘদিন পেটের খাবার উপরে উঠে আসার সমস্যা থাকে (Reflux), তাহলে ঐ আঁইশাকার কোষগুলো এসিডের ছ্যাঁকায় ছ্যাঁকায় পরিবর্তন হয়ে স্তম্ভাকার হয়ে যায়, এই প্রক্রিয়াকে বলে মেটাপ্লাসিয়া (Metaplasia)। এটা ভালো জিনিস না, ক্যান্সারপূর্ব লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত। এই অসুখকে বলে ‘ব্যারেটস ইসোফ্যাগাস’। আবার পিত্তথলিতে পানি শোষণ ও পিত্তরস সংগ্রহ হয়, এখানে আবরণী কলা ‘স্তম্ভাকার’। যদি দীর্ঘদিন কোন পাথর থাকে, তাহলে পাথরের ঘষায় ঘষায় এখানেও মেটাপ্লাসিয়া হতে পারে। কেননা ঘষার উপযোগী তো আঁইশকার কোষ। একই কাহিনী হতে পারে পেশাবের ব্লাডারেও। আবার শ্বাসনালীতে থাকে স্তম্ভাকার কোষ যাদের কাজ শ্লেষ্মা উৎপাদন। শেষপ্রান্তে গ্যাস অণু বিনিময়ের জন্য থাকে আঁইশাকার। ধূমপানের কারণে যে ক্যান্সার হয় তা মূলত নিকোটিনের কারণে না, তামাকের অন্যান্য উপাদানের কারণে, যেমন টার, বেনজিন। এসব কেমিক্যাল সহ্য করা স্তম্ভাকার কোষেরও কাজ নয়, একস্তর আঁইশেরও কাজ নয়।

মেটাপ্লাসিয়া (দেখেন স্তম্ভ কোষ কীভাবে আঁইশ হচ্ছে)
বামে শ্বাসনালীর মূল স্তম্ভ কোষ, ডানে আঁইশাকার ক্যান্সার কোষ

কেমিক্যাল সহ্য করতে চাই ত্বকের মত বহুস্তর আঁইশাকার কোষ, তাও আবার উপরে থাকতে হবে জড় কেরাটিন স্তর। ফলে এখানেও হবে মেটাপ্লাসিয়া। এবং ক্যান্সারে রূপ নেবে যদি কেমিক্যাল টর্চার চলতেই থাকে। স্তম্ভগুলো আঁইশে রূপান্তরিত হয়ে যে ক্যান্সার হবে তাকে বলে ‘আঁইশাকার কোষ ক্যান্সার’ (Sqamous Cell Carcinoma, SCC)। আর আঁইশগুলো ঘনকাকার হয়ে যে ক্যান্সার হবে তার নাম ‘ঘনকাকার কোষ ক্যান্সার’ (Small Cell Carcinoma)। আশা করি এতটুকু ক্লিয়ার।

যোনির ভিতরের আবরণ
(মাল্টিলেয়ার আঁইশ কোষ)

এবার মূল আলোচনা শুরু। পয়লা আমরা যোনিপথের (Vagina) গঠন দেখব। এটা একটা নালী বা টিউবের মত অঙ্গ। স্বাভাবিক অবস্থায় এর দৈর্ঘ্য থাকে ২.৭৫ ইঞ্চি থেকে ৩.২৫ ইঞ্চি। আর নারীর উত্তেজিত অবস্থায় বেড়ে দাঁড়ায় ৪.২৫-৪.৭৫ ইঞ্চি। [1] পুরো যোনিপথ তো বটেই, সেই সাথে পুরুষাঙ্গ যেখানে গিয়ে ধাক্কা দিতে পারে, মানে সারভিক্সের যে অংশ যোনিপথের দিকে বেরিয়ে থাকে (Ectocervix), সে অংশও মাল্টিলেয়ার আঁইশ কোষে আবৃত (ঘর্ষণ উপযোগী)। যদিও মূল সারভিক্সের (Endocervix) আবরণ একস্তর স্তম্ভ কোষের। [2] বামের ছবিতে দেখুন যোনিপথ ও বহিঃসারভিক্সের মাল্টিলেয়ার আঁইশ কোষ দেখা যাচ্ছে।

বহিঃসারভিক্স ও যোনির আবরণ মাল্টিলেয়ার আঁশ কোষ ঘর্ষণ উপযোগী

আর ডানের ছবিতে দেখুন জরায়ুর একটা অংশ যোনিপথের দিকে বেরিয়ে আছে। ঐ অংশটাও (বহিঃসারভিক্স) যোনিপথের মত একই ঘর্ষণযোগ্য মাল্টিলেয়ার আঁইশ কোষ আবরণ দিয়ে আবৃত।

এবার, পায়ুর গঠনটা দেখি চলেন। ছবিটা দেখতে হবে খুব ভালো করে। পায়ু একটা নালী (Tube)। মাঝখান থেকে লম্বালম্বি চিরে ফেললে এমন দেখাবে। ছোট ছোট ঢেউয়ের মত কাল দাগ দেয়া আছে দেখেছেন? ঐ বর্ডার থেকে লোমওয়ালা বর্ডার পর্যন্ত এলাকাটা হল ‘পায়ুপথ’ (Anal canal), মাত্র ৪ সে.মি. (৩-৫ সেমি)। [3] এই এলাকাটুকু মার্ক করে ‘Anoderm’ লেখা আছে, মানে হল এখানে আবরণ আমাদের চামড়ার মতই, কেবল লোম-ঘামগ্রন্থি এসব নেই। এর উপর থেকে রেক্টাম বা মলাশয় শুরু। মানে হল কালো ঢেউ ঢেউ দাগের নিচেরটুকু জড় কেরাটিন যুক্ত মাল্টিলেয়ার আঁইশাকার কোষের আবরণ (ত্বকের মত), আর উপরের অংশ রেক্টামে একস্তর স্তম্ভটাইপ কোষের আবরণ (পৌষ্টিকনালীর বাকি অংশের মত)। [4]

পায়ুপথ ও মলদ্বার
মলদ্বার ও পায়ুপথের আবরণী হঠাত পরিবর্তন

ডানের ছবিতে তীর চিহ্নিত অংশে লক্ষ্য করুন, আবরণ হঠাৎ বদলে গেছে। বাম পাশে গোল গোল শ্লেষ্মাগ্রন্থি বিশিষ্ট পরিপাক আবরণী (digestive epithelium), আর ডানে মাল্টিলেয়ার আঁইশ টাইপ কোষ। বামে রেক্টাম, আর ডানে পায়ুপথ। আগের ছবিতে দেখেন সুপরিসর রেক্টাম থেকে বেশ চিকন পায়ুপথে মল আসার সময় বেশ ঘর্ষণের ঘটনা ঘটে, তাই মাল্টিলেয়ার আঁইশ দেয়া হয়েছে। এখন আমার কথা হলঃ

১.

এখানে আমরা দেখলাম, পায়ুপথের মাত্র ৪-৫ সেমি জায়গা ঘর্ষণ উপযোগী। পরের এলাকাগুলো মোটেও ঘর্ষণ উপযোগী নয়। পুরুষের গড় উত্থিত লিঙ্গের দৈর্ঘ্য ৫ ইঞ্চি, আমরা এক ইঞ্চি কমিয়ে ধরলাম। ৪ ইঞ্চি মানে ১০ সেমি। মানে লিঙ্গের বাকি ৫ সেমি গিয়ে আঘাত করবে রেক্টামের স্তম্ভাকার কোষের আবরণে, যা ঘর্ষণের জন্য অনুপযোগী। আর আমরা আগেই দেখেছি যে কাজের জন্য যা উপযোগী না, সেখানে সে কাজ হলে মেটাপ্লাসিয়া ঘটে। কোষের ধরন বদলে যায়, যা উপযুক্ত পরিবেশে ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে। সমকামীদের মলদ্বারের ক্যান্সারের ঘটনা সাধারণ মানুষের চেয়ে ২০ গুণ বেশি। [5] আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি জানাচ্ছে, পায়ুমিলন পায়ুক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায়। আরও বেশি সম্ভাবনা বাড়ে সমকামী পায়ুমিলনে। [6]

২.

যেহেতু এমন জায়গায় গিয়ে আঘাত হচ্ছে যা একস্তরী স্তম্ভ কোষ, মাল্টিলেয়ার না। ফলে প্রতিবার সেক্সে ইনজুরি হবেই। আবরণী ক্ষতিগ্রস্ত হবেই। ফলে এইডস ভাইরাস, প্যাপিলোমা ভাইরাস ইনফেকশন ছড়ায় দ্রুত। এইডস তো এইডস-ই, আর প্যাপিলোমা ভাইরাস-ই মূলত ৮০-৯০% মলদ্বারের ক্যান্সারের জন্য দায়ী। [7]

৩.

টিউমার-এর খারাপ জাতটাকেই (malignant) বলে ক্যান্সার। টিউমার বড় হতে সাহায্য করে আমাদের দেহে উৎপন্ন প্রোস্টাগ্লান্ডিন (PG) নামক কেমিক্যাল গ্রুপের PGE2 ও PGF2. আর টিউমার তৈরি শুরু হতে সাহায্য করে PGE2, PGF2, ও PGE1. এবং এই ৩ ধরনের PG-ই অত্যধিক পরিমাণে আছে বীর্যে। দেহস্থ অন্য যেকোন রস বা টিস্যুর চেয়ে বেশি। [8] মানে বীর্য সহ্য করার ক্ষেমতাও পায়ুর নেই, যা জরায়ুর আছে।

৪.

এবার একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মতামত তুলে ধরব। ডাক্তার Stephen E. Goldstone, MD সাহেব Mount Sinai School of Medicine, New York এ assistant clinical professor হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এবং তিনি gayhealth.com এর মেডিকেল ডিরেক্টর। তিনি ২০০০ সালের American Society of Colon and Rectal Surgeons এর বার্ষিক সম্মেলনে বলেন, ১৯৯৭ সালের আগে আমি আমার পুরো ক্যারিয়ারে একটা পায়ু ক্যান্সারের রোগী পেয়েছি। ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত আমি আমার চেম্বারে রেফার হয়ে আসা ২০০ পুরুষ রোগীর ডাটা সংগ্রহ করি। এদের সবাই নন-ক্যান্সার সমস্যা নিয়ে এসেছিল। এদের ৬৬% ছিল এইচআইভি পজেটিভ। বায়োপসি করে পেলাম, এদের ৬০% এর হাইগ্রেড আঁইশ কোষের টিউমার ক্যান্সার যা এখনও ছড়িয়ে পড়েনি (high-grade squamous intraepithelial lesions (HSIL) আর ৩% এর পেলাম ছড়িয়ে পড়া (invasive) ক্যান্সার। যদিও এদের কারোরই ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশ পায়নি। [9] ফাইনালি তিনি সিদ্ধান্ত দেন, সমকামী পুরুষেরা পায়ুপথের যেকোন সমস্যা নিয়ে এলেই তাদের গভীর পরীক্ষা (aggressive screening) করা দরকার। হতে পারে ভিতরে ক্যান্সার-পূর্ব আরও মারাত্মক কোন সমস্যা লুকিয়ে আছে।

৬.

পায়ুপথের অধিকাংশ ক্যান্সার Adenocarcinoma টাইপ, মানে গ্ল্যান্ড টাইপ। আঁইশকোষ ক্যান্সার (Sqamous Cell Carcinoma, SCC) খুব বিরল। কিন্তু অধুনা এই আঁইশকোষ ক্যান্সার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান University of California-র professor of clinical pathology জনাবা Teresa M. Darragh, MD ও associate director for gynecologic pathology জনাবা Barbara Winkler, MD. [10]

এই ক্যান্সার হচ্ছে ঠিক যে জায়গায় স্তম্ভাকার-টু-আঁইশাকার চেঞ্জটা হয়েছে তার সংলগ্ন উপরের অংশে যেখানে পুরোটাই স্তম্ভকোষ (squamo-columnar junction with the rectal columnar mucosa)। তারা বলেন, পায়ুমৈথুনে (receptive anal intercourse) আঘাত-ইনজুরি-মেরামত চলতে থাকে, যা মেটাপ্লাসিয়া প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। (In this area of transition, there is active changeover of columnar epithelium to squamous epithelium through the process of squamous metaplasia. This process is accelerated by trauma, healing, and repair such as might be expected to occur with receptive anal intercourse.)

আবার দিলাম ছবিটা। কালো জিগজ্যাগ দাগটা হল সেই জাংশন। এর উপরে শার্পলি স্তম্ভকোষ শুরু, নিচে শার্পলি মাল্টিলেয়ার আঁইশ কোষ শুরু। দাগের ঠিক উপরের জায়গাটাতেই মেটাপ্লাসিয়া বেশি হয় আমরা জানলাম, সমকামীদের ক্ষেত্রে। দেখেন এই জায়গাটা বাকি রেক্টামের চেয়ে উঁচু, লম্বা লম্বা ভার্টিকাল ভাঁজ আছে । মানে ঘষা এখানে লাগে বেশি, বাকি রেক্টামের চেয়ে। যা ঘষা লাগার জন্য তৈরি হয়নি, তাতে ঘষা লাগতে লাগতে একসময় তাই ঘটে যা আমরা আগে বলেছি—মেটাপ্লাসিয়া। এই মেটাপ্লাসিয়া থেকে হচ্ছে এই ক্রমবর্ধমান হারে আঁইশ কোষ ক্যান্সার।

উপরের নীল আর নিচের নীল মিলিয়ে দেখুন

৭. এবার উপরের ছবির নীল রঙের জায়গাটা লক্ষ্য করুন। নীল যেগুলো দেখছেন, এগুলো শিরা, উচু জায়গাটাকে বলে ‘কুশন’ (coushion)। এখানে যে বিখ্যাত অসুখটা হয়, তার নাম আপনারা সবাই জানেন— পাইলস (haemorrhoid). দেখুন, ঐ নীল অংশটাই বেড়ে গোটার মত হয়েছে।

পায়ুর এই জায়গাটা অতিমাত্রায় রক্তনালীসমৃদ্ধ। দুটো ভিন্ন রক্ত পরিবহন সিস্টেমের মিলনস্থল এটা (Porto-systemic anastomosis). আবরণীর নিচেই রয়েছে প্রচুর রক্তজালক (venous plexus)। আঘাত/ঘর্ষণের জন্য এ জায়গাটা মোটেই নিরাপদ না। আসলে এই শিরাজালিকা চওড়া হয়ে ও মোটা হয়ে ঝুলে পড়ে হয় পাইলস। পাইলসের কারণগুলো যদি আমরা দেখিঃ [11]

– শিরা থেকে কম রক্ত ব্যাক করাঃ দীর্ঘসময় টয়লেটে বসে থাকা, গর্ভাবস্থা, পায়ুপেশীর অধিক সংকোচন
– কোষ্ঠকাঠিন্য
– পেটে অধিক চাপ দেয়া
– গর্ভাবস্থা
– পারিবারিক ইতিহাস
– Lack of erect posture
– Familial tendency
– Higher socioeconomic status
– Chronic diarrhoea
– Colon malignancy
– Hepatic disease
– Obesity
– Elevated anal resting pressure
– Spinal cord injury
– Loss of rectal muscle tone
– Rectal surgery
– Episiotomy
Anal intercourse ****
– Inflammatory bowel disease, including ulcerative colitis, and Crohn disease

তাহলে দেখা গেল পাইলসের একটা কারণ হল পায়ুসঙ্গম। পায়ুসঙ্গম নিজেই অনেকগুলো রোগের কারণ। এটা ন্যাচারাল বিহেভিয়ার হলে তা এতো অসুখবিসুখের কারণ হবে কেন? ন্যাচার সাপোর্ট করে না বলেই তো এত সমস্যা। ন্যাচারের বিরুদ্ধে যায় বলেই তো ন্যাচার বিদ্রোহ করে।

৮.

রয়টার্সের রিপোর্ট। ৬১৫০ জন নরনারীর ডাটা বিশ্লেষণ করলেন গবেষকগণ। এদের ৩৭% মহিলা একবার হলেও পায়ুসঙ্গম করেছেন। আর ৫% পুরুষ পাওয়া গেল যারা একবার হলেও পায়ুসঙ্গম করেছেন। প্রধান গবেষক Dr. Alayne Markland, University of Alabama জানান, পায়ুসঙ্গমের সাথে ‘পায়খানা ধরে রাখতে না পারা’র (fecal incontinence) সম্পর্ক আছে। এবং সেটা মেয়েদের চেয়ে পুরুষের ক্ষেত্রে বেশি। এই ৩৭% মহিলার ৫০% এরই মাসে একবার হলেও fecal incontinence হয়, মানে কাপড় নষ্ট হয় আর কি। আর পুরুষের ৩ গুণ বেশি হয় এই দুর্ঘটনা, প্যান্ট ভরায়ে ফেলে। [12]

৯.

পিরোনীজ ডিজিজ (Peyronie's Disease) নামে একটা অসুখ আছে। গবেষকগণ মনে করেন, লিঙ্গে ইনজুরি হয়ে লিঙ্গের অভ্যন্তরে রক্তপাত হতে পারে। অনেকসময় ইনজুরি লক্ষ্য করার মত না-ও হতে পারে, তবে ভিতরে রক্তপাত হয়ে থাকে। [13] কারণ লিঙ্গ কোন মাংসপেশী নয়। এটা বিশেষ একধরনের স্পঞ্জের মত টিস্যু যার ভিতরে রক্ত প্রবেশ করে তা শক্ত হয়। আবার রক্ত বেরিয়ে গেলে নরম হয়ে পড়ে। নিচের ছবি দুটো দেখুন। CC-CS লেখা জায়গাগুলো স্পঞ্জের মত রক্ত ধরে রাখে, ফলে শক্ত হয়।

লিঙ্গের প্রস্থচ্ছেদ
লিঙ্গের প্রস্থচ্ছেদ

অত্যধিক পরিমাণে রক্তনালী থাকার কারণে সামান্য ইনজুরি হলেও রক্তক্ষরণ হতেই পারে, আপনার অজ্ঞাতেই। ফলে সেখানে তৈরি হয় স্কার (বাংলায় ‘চল্টা’ বলা যেতে পারে), এদের বলা হয় ‘প্লাক’। ফলে লিঙ্গ বেঁকে যেতে পারে বা এবড়োখেবড়ো হয়ে যেতে পারে। কারো কারও প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে, এমনকি লিঙ্গ উত্থিত হবার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলতে পারে। জানাচ্ছে American Urological Association. [14]

Southern Illinois University-র urologist Tobias Köhler, M.D. সাহেব জানাচ্ছেন ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকাকে, বেশি চাপ দিয়ে হস্তমৈথুন করলে হতে পারে এই অসুখটা। [15] তার মানে সামান্য এই ‘হাতের চাপেই’ রক্তক্ষরণ হয়ে যেতে পারে লিঙ্গের ভিতরে, কেউ তো আর কিল-ঘুষি দিয়ে মাস্টারবেশান করে না। বিছানা বা বালিশে ঘষাঘষি তো আরও মারাত্মক ব্যাপার। নিচের টেবিলটা খেয়াল করুনঃ

ছবিঃ ৩

(ছবির ১ নং রেফারেন্স [16] ছবির ২ নং রেফারেন্স [17] ছবির ৩ নং রেফারেন্স [18])

167 mm Hg মানে 22264.8 প্যাসকেল চাপ। অর্থাৎ ৩.২২ পাউন্ড ওজন এক বর্গইঞ্চিতে যে পরিমাণ চাপ দেয়। মানে ১.৪৬ অর্থাৎ প্রায় দেড় কেজি একটা বাটখারা লিঙ্গে বেঁধে দিলে যে চাপ অনুভব হবে অতখানি চাপ দেয় মলদ্বার সংকোচন (লিঙ্গের গোড়ার ক্ষেত্রফল এক বর্গইঞ্চি ধরেছি)। অনেক প্রেসার। লিঙ্গের মত সেন্সিটিভ অঙ্গের জন্য এটা অনেক প্রেসার। লিঙ্গ প্রবেশনের জন্য মলদ্বার খুবই রিস্কি জায়গা। মলদ্বারের চাপ নেবার মত ক্ষমতা নেই পুরুষাঙ্গের। আর স্কুইজ ছাড়া সারাক্ষণ প্রেসার থাকে ৭৭০ গ্রাম ওজন ঝুলিয়ে দিলে যেমন লাগবে, তেমন। হস্তমৈথুনেও এত চাপ দেয়া হয় না। নিঃসন্দেহে পেনিসে ইনজুরি হতেই হবে। পেনিস আর মলদ্বারে ইনজুরি না করে সমকাম করা অসম্ভব।

আমরা পায়ুপথে আঙুল দিয়ে একটা পরীক্ষা করি (Digital Rectal Exam, DRE)। তখন টের পাওয়া যায়, কত শক্তভাবে মলদ্বার চাপ দেয়। এছাড়া একটা স্বয়ংক্রিয় সংকোচন আছে মলদ্বারের যাকে বলে Anal Reflex/Anal wink. অর্থাৎ পায়ুর আশেপাশের ত্বকে কোন খোঁচা/চিমটি দিলে পায়ু সংকোচন হয়। [19] পায়ুমৈথুনে এই চাপ অতিক্রম করে চাপের বিরুদ্ধে লিঙ্গ প্রবেশ ও চালনা করাতে হয়। আবার ভিতরেও রেস্টিং প্রেসারের বিপরীতে লিঙ্গচালনা করতে হয়। সেখানে প্রচুর শিরাজালকের উপস্থিতিও আমরা দেখলাম। মোদ্দাকথা লিঙ্গ ও পায়ুর দৃশ্যমান কিংবা অদৃশ্যমান ইনজুরি না করে পায়ুমৈথুনের কোন সুযোগই নেই।

এজন্যই পায়ুমৈথুনে ২০ গুণ বেশি এইডসের সম্ভাবনা। আর এই রিস্ক আরও বাড়ে যদি আগে থেকেই রেক্টামে কোন ইনফেকশন থাকে। [20] আর আমরা দেখলাম, ইনজুরি ছাড়া পায়ুমৈথুন অসম্ভব। এক তো আবরণ ঘর্ষোণোপযোগী না, সিঙ্গেল লেয়ার, তার উপর আবার প্রেসার বেশি, ইনপুট প্রেসারও দিতে হবে বেশি, আবার রক্তজালিকা বেশি। তার উপর এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ জীবাণু প্রজাতি E. coli যারা রক্তে এন্ট্রি পেলেই ইনফেকশন করে।

১০.

যোনিপথের Skene's ও Bartholin's গ্রন্থি থেকে প্রচুর পিচ্ছিল তরল নির্গত হয়। একজন মহিলার কোন উত্তেজনা ছাড়াই প্রতিদিন ১.৫ গ্রাম তরল বের হয়। আর উত্তেজিত হলে তা বহুগুণে বেড়ে যায় (arousal fluid)। আর অর্গাজমের সময় তা আরও বৃদ্ধি পায়। [21]

যোনিপথের মত পায়ুতে যথেষ্ট পিচ্ছিলকারকের উৎপাদনও নেই, ফলে প্রচুর লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করতে হয়। অনেক বিজ্ঞ সমকামী ভাইয়া বলতে পারেন, জেলী ব্যবহার করলেই তো আর আঘাত-ঘর্ষণের ফলে ইনজুরি আর হলো না। আচ্ছা, ২০১০ সালে International Conference on Microbicides এ ২ টা গবেষণা উপস্থাপন করা হয়। ৪৭ টি দেশের সহস্রাধিক মাইক্রোবায়োলজিস্ট অংশ নেন। এই দুটি রিপোর্টের সারমর্ম হল, পায়ুকামে জেলী (lubricants) ব্যবহারে এইডসের রিস্ক আরও বাড়ে। [22] একটিতে বাল্টিমোর ও লস এঞ্জেলসের ৯০০ পুরুষ ও মহিলার ডেটা নেয়া হয়। গবেষকগণ দেখেন, যারা জেলী ব্যবহার করে তারা ৩ গুণ বেশি যৌনবাহিত রোগের (rectal sexually transmitted infections) ঝুঁকিতে আছে। আরেকটা স্টাডি বলছে, জনপ্রিয় জেলীগুলোকে ল্যাবে নিয়ে দেখা গেছে, সেগুলোর অনেকগুলো রেক্টাল কোষের জন্য মরণঘাতী (toxic)। যার ফলে এগুলো ব্যবহারে এইডসের ভাইরাসের প্রবেশ হয় আরও সহজ। এমনকি পুরুষ না কি নারী, এইডস আছে না কি নেই, কোন শহরে থাকে, কনডম ইউজ করে কি না, গত মাসে কতজন যৌনসঙ্গীর সাথে মিলিত হয়েছে—এই সবগুলো ফ্যাক্টরকে সমান সমান নিয়েও দেখা গেছে, পায়ুমৈথুনের (receptive rectal intercourse) আগে জেলী (lubricant) ব্যবহার করার সাথে পায়ুর যৌনবাহিত রোগের সম্পর্ক জোরালোই রয়ে গেছে। (Even after controlling for gender, HIV status, city, condom use, and number of sex partners in the past month, the association between use lubricant before receptive rectal intercourse and rectal STIs remained strong) জানাচ্ছেন গবেষকদলের প্রধান Dr Pamina Gorbach যিনি School of Public Health এবং University of California, Los Angeles-এর David Geffen School of Medicine-এর একজন চিকিৎসক।

University of Pittsburgh ও Magee-Womens Research Institute এর Charlene Dezzutti, Ph.D এর নেতৃত্বে পরিচালিত আরেকটা গবেষণার রিপোর্টে বহুল প্রচলিত ৬ টা জেলী নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে,

– এতে অনেক বেশি পরিমাণে লবণ ও শুগার থাকে যা কোষের পানি টেনে নেয়। ডিহাইড্রেশান হয়ে মারা যায় আবরণী কোষ। ইনফেকশনের জায়গা করে দেয়।
– আবার কোনটা পায়ুর ভালো ব্যাকটেরিয়ার পুরো বসতিই জ্বালিয়ে দেয়। ফলে খারাপ ব্যাকটেরিয়া আসার সুযোগ পায়।

মোটকথা, যোনিতে যেখানে প্রচুর লুব্রিক্যান্ট ক্ষরণের ব্যবস্থা আছে, সে তুলনায় পায়ুতে প্রায় জিরো। লুব্রিক্যান্ট নিয়েও শেষরক্ষা নেই, ইনফেকশান হবেই। কেননা আগেই দেখেছি, কেমিক্যাল সহ্য করার জন্য চাই মাল্টিলেয়ার আঁইশ কোষের আবরণ। রেক্টামের একস্তর স্তম্ভকোষ মারা যাবে অহেতুক কেমিক্যাল টর্চারে।

সামারিঃ

মেয়েদের সমকামিতায় প্রবেশন (penetration) নেই বলে একে প্রকৃত মিলন বলা হয় না, তাই আজকের আলোচনায় জায়গা পায়নি। আর পুং সমকামিতা ছাড়াও নারীর সাথে পায়ুমৈথুনও আমাদের আলোচনার আওতায় এসেছে। মোদ্দাকথা, মানবদেহের প্রাকৃতিক গঠন সমকামিতার বা পায়ুমিলনের সাথে যায় না, এটা স্বাভাবিক প্র্যাকটিস না। কোনভাবেই প্রাকৃতিক তো নয়ই, বরং প্রকৃতিবিরুদ্ধ, যার বহিঃপ্রকাশ প্রাণঘাতী রোগ উৎপাদন (disease process).

আমরা ফরেনসিক মেডিসিন বইয়ে ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ যৌন অপরাধ’ (Unnatural Sexual Offence) অধ্যায়ে সমকামিতা, পশুকামিতা এসব পড়েছি, ইন্ডিয়ান রাইটারের লেখা বই। আজ ইন্ডিয়া সমকামিতার মত ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ যৌন অপরাধ’-কে অপরাধের লিস্ট থেকে উঠিয়ে দিলেই এর প্রকৃতিবিরুদ্ধতা চলে যাবে, প্রকৃতিবান্ধব হয়ে যাবে, তা না। যা টের পাবে প্রতিটি সমকামী তাদের জীবনের কোন এক পর্যায়ে। ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর প্রহর গুণবে আর স্মরণ করবে সেই সব অগ্নিঝরা দিনগুলোর কথা, আর অপেক্ষা করবে সামনের অগ্নিঝরা ভবিষ্যতের।

আর তিনারাই তো বিশ্বাস করেন—সারভাইভাল ফর দ্য ফিটেস্ট। পায়ুমিলনে তো ফিটেস্ট কোন প্র্যাকটিস না, প্রজাতির ধারা রক্ষায় এর কোন ভূমিকা নেই।

সমকামীরা সামাজিক ও নৃতাত্ত্বিকভাবে আনফিট। মানবসমাজ ও মানবপ্রজাতি রক্ষায় তাদের কোন ভূমিকা নেই। এখন এই আনফিট অংশ মানবপ্রজাতির জন্য অপচয়, ওয়েস্টেজ। আগে হলে হিটলার ও স্ট্যালিন ‘সোশ্যাল ডারউইনিজম’ (আনফিট জনসংখ্যাকে সমাজ থেকে ঝেড়ে ফেলা) এপ্লাই করত। ভবিষ্যতে এরাও একা একাই বিলুপ্ত হয়ে যাবে, তবে সমাজে যেন এদের প্রভাব না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। সমকামিদের প্রতি ইসলামের বিধান এজন্যই দেয়া হয়েছে, যাতে এই ভয়ংকর আনন্যাচারাল রোগ সমাজে ছড়াতে না পারে। টপ ও বটম দুজনকেই হত্যা করার বিধান দেয়া হয়েছে, কেননা একজন বেঁচে থাকলেই সে আরেকজনকে প্ররোচিত করবে। ইসলামী শাসনব্যবস্থা না থাকায় এই ভয়াবহ অপরাধীদের থাবা থেকে সমাজ আজ নিরাপদ নয়। প্রতিকার সম্ভব নয় বলে আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে এই ঘাতক ব্যাধি। আমার আপনার সন্তান যেন এই অপরাধের শিকার না হয়, এই ব্যাধিতে আক্রান্ত না হয়। নোট বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে বলে আলোচনা এখানেই শেষ করছি। সমকামিতা প্রতিরোধ, কারণ, করণীয় সম্পর্কে একজন যুগসচেতন আলিমের লেখা আশা করছি। এ বিষয়ে আমার মনের কথাগুলো আমি চাই একজন আলিম বলুক। কিছু বিষয়ে কথা বললে নিজের গায়েই থুথু এসে পড়ে। আত্মসমালোচনার দিক দিয়ে উলামাদের লেখনী এ বিষয়ে আরও ভারসাম্যপূর্ণ হবে ইনশাআল্লাহ।

শেষকথাঃ

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিখ্যাত হাদিসটা মনে আছে না তাবারানী শরীফের সূত্রেঃ হে ইবনে মাসঊদ, কিয়ামাতের আলামত ও শর্তগুলো হল— এরপর আল্লাহর রাসূল একের পর এক কিয়ামাতের আলামাতসমূহ উল্লেখ করতে থাকেনঃ

– শিশুরা হয়ে যাবে ক্ষিপ্ত, দুর্ব্যবহারকারী
– বৃষ্টি হবে জ্বালাময় (এসিড রেইন)
– মানুষ যোগাযোগ করবে থালার সাহায্যে (ডিশ এন্টেনা)
– এজন্য আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট হবে
– বাদ্যযন্ত্র থাকবে মানুষের মাথার উপর (হেডফোন)
– তাদের হৃদয়ে ফিতনা প্রদর্শন করা হবে ‘ম্যাট’ এর মত (টিভি)
– নেতৃত্ব থাকবে সমাজের নিকৃষ্ট লোকদের হাতে
– চোরকে সাধু ও সাধুকে চোর মনে করা হবে
– মুমিনকে ছাগলের চেয়েও বেইজ্জত করা হবে
– তাদের চুল থাকবে ‘বুখতি উট’ এর মত (Bactrian Camel)- আধুনিক ঘোড়া কাট

ভাবার্থ বললাম, এরকম আরও কিছু লক্ষণ উল্লেখ করেন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তার মধ্যে একটা ছিল—আর রিজালু বির রিজাল, ওয়ান নিসাউ বিন নিসা। পুরুষ পুরুষের সাথে মিলিত হবে, আর নারী নারীর সাথে।

১৪০০ বছর আগেই নবীজীকে জানানো হয়েছিল, কওমে লুত (আঃ) যেমন অফিসিয়ালি সমকাম প্র্যাকটিস করত, ১৪০০ বছর পরে তেমনি অফিসিয়ালি আবার ফিরে আসবে সেই ঘৃণ্য পাপাচার। কী? টেনশন? টেনশন লেনেকা নেহি, স্রেফ দেনে কা হ্যায়। বিজয় ঈমানওয়ালাদেরই হবে নিশ্চিত। সে বিজয়ে আমার কী অবদান রইল, সেটাই টেনশনের বিষয়।

সুবহানাল্লাহ।
সাদাকা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
আলহামদুলিল্লাহি আলা দীনিল ইসলাম।


Saturday, 29 September 2018


রেফারেন্সঃ

[1] Does Vagina Size Matter?

[2] Junqueira's Basic Histology - Text and Atlas (13th Ed), Page 1031, 1034

[3] Anal Canal Anatomy

[4] Junqueira's Basic Histology - Text and Atlas (13th Ed), Page 709-710

[5] Daling, J., Weiss, N., Hislop, T., Maden, C., Coates, R., Sherman, K., et al. (1987). Sexual practices, sexually transmitted diseases, and the incidence of anal cancer. The New England Journal of Medicine, 317(16): 973–7.
অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশন অব এইডস অর্গানাইজেশান এর সাইট

[6] Risk Factors for Anal Cancer

[7] ঐ আর্টিকেলেই আছে। বরাতঃ International Journal of Cancer এর দুইটি রিসার্চ পেপার।
(1) De Vuyst, H., Clifford G., Nascimento, M., Madeleine, M., Franceschi, S. (2009). Prevalence and type distribution of human papillomavirus in carcinoma and intraepithelial neoplasia of the vulva, vagina and anus: a meta-analysis. International Journal of Cancer, 124(7), 1626–36.
(2) Hoots, B., Palefsky, J., Pimenta, J., Smith, J. (2009). Human papillomavirus type distribution in anal cancer and anal intraepithelial lesions. International Journal of Cancer, 124(10), 2375–83.

[8] Journal of American Medical Association (JAMA) এর

[9] [10] [11]

[12] American Journal of Gastroenterology, published online January 12, 2016 এর বরাতে রয়টার্স

[13] [14] [15] [16] [17] [18] [19] [20]

[21] Lentz, Gretchen M. (2012). Comprehensive Gynecology (6th ed.). Philadelphia, PA: Elsevier. pp. 532–533.

[22] Use of lubricants with anal sex could increase risk of HIV