আমি সেন্ট যোসেফ স্কুলে ১১ বছর পড়েছিলাম। ক্লাস থ্রিতে ভর্তি হবার পরে গুলিয়েনবেরি সিনড্রোম হয়, ৬ মাস বিছানায় ছিলাম। পরের বছর আবার ক্লাস থ্রিতে ভর্তি হই।

আমি যে সময় শিশু হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম তখন ব্রাদার ডমিনিক আর ব্রাদার জন দেখতে গিয়েছিলেন। ব্রাদার রালফ হেডমাস্টার ছিলেন, তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আবার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া লাগবে? তিনি আদর করে জড়ায় ধরে বললেন, না।

এই স্মৃতিগুলো আমি সম্ভবত মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মনে রাখব। তবে ব্রাদারদের এই মানবিক আচরণকে আমি সেন্ট যোসেফের আদর্শিক মিশনের দায়মুক্তির সনদ হিসেবে দিই না। সেন্ট যোসেফ, নটরডেম, হলি ক্রস—এগুলো মিশনারি স্কুল। মিশনারি স্কুল মানে কী?

আপনার কমন সেন্স থাকলে বুঝবেন, তার একটা মিশন আছে।
কী সেই মিশন?
আপনাকে খ্রিষ্টান বানানো?
আপনার মানতে কষ্ট লাগবে।

আমি যদি ব্রাদারস অফ হলিক্রসের সাইট থেকে তাদের মিশন কপি করি,

We were to evangelize through education.

আপনারা যারা সেন্ট যোসেফে দশ বছর পড়েছেন ইংরেজি ভালো পারেন, এই লাইনটার অর্থ আমার অনুবাদ করে দেওয়া লাগবে না।

এখন এই কথাটা অনেকের খুব গায়ে লাগবে। আমার আম্মাকে যদি কেউ বলত সেন্ট যোসেফের প্রতিষ্ঠাতাদের উদ্দেশ্য তো বাচ্চাকে তাদের ধর্মে দীক্ষিত করা—আমার আম্মা আমাকে ওখানে ভর্তি করতেন না।

এই কারণেই, এই স্কুলে যারা পড়েছে তাদের কোনোদিন চার্চে নিয়ে যাওয়া হয়নি, চার্চের দাওয়াত দেওয়া হয়নি।

তাহলে কীসের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল?

—সেকুলারাইজেশনের।

উইকিপিডিয়ায় দেখেন,

A mission school or missionary school is a religious school originally developed and run by Christian missionaries. The mission school was commonly used in the colonial era for the purposes of Westernization of local people.

জোসেফাইটরা অনেক শিক্ষিত, দেশে বিদেশে অনেক উঁচু পদে আছেন। সোশাল মিডিয়ার সেলেব্রিটিও আছেন। তারা সবকিছু বোঝেন, কিন্তু এটা বোঝেন না যে শত শত বছর ধরে ১৬টা দেশে স্কুল-কলেজ যারা চালাচ্ছে তাদের কোনো উদ্দেশ্য নাই।

এবং সেন্ট যোসেফের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের তরীকা হচ্ছে তাদের মিশনটাকে অস্বীকার করা—এটা আমার কাছে অসততা মনে হয়। সত্যটা স্বীকার করতে সমস্যা কী? আপনি তো খ্রিষ্টান হয়ে যান নাই। আপনি হয়েছেন সেকুলার।

দুনিয়াতে মুসলিম মিশনারি স্কুল কয়টা আছে যেখানে সেকুলারিজম শেখানো হয়?

মুসলিমরা যেটা চালায়, মাদ্রাসা—সেখানে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয়। এই শিক্ষাটা প্রকাশ্যে দেওয়া হয়। হিডেন এজেন্ডা নাই।

মুঘল আমলে হিন্দুরাও মাদ্রাসাতে পড়ত, ইসলামি শিক্ষা পড়ত। সেন্ট যোসেফের মতো হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এবং মুসলমান সব ধর্মের আলাদা আলাদা ধর্ম ক্লাস মাদ্রাসাগুলোতে হতো না।

এই খানে একটা বিশাল পার্থক্য আছে।

সেন্ট যোসেফে আমাদের শেখানো হয়েছে দুনিয়াতে বেস্ট হওয়ার। ছাত্র, বিতার্কিক, কুইজার, ক্রিকেটার—বেস্ট হতে হবে।

আমি যখন একটা স্কুল বানাবো—তখন আমার প্রধান শিক্ষাটা হচ্ছে রব্বানা আতিনা ফিদ দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া কিনা আযাবান নার।

আখিরাতে ডাবল এমফ্যাসিস। দুনিয়াতে টিকে থাকি রিকশা চালক হয়েও, আখিরাতে মুক্তি পেলে সেটাই আসল সাফল্য।

এই কথাটা আমি একজন হিন্দুকে বলি, তাকে সাহায্য দিলেও বলি না দিলেও বলি। খ্রিষ্টানকে বলি। বৌদ্ধকে বলি। তোমরা মূর্তি পূজা করো। তোমরা শির্ক করো। তোমরা আল্লাহর জায়গায় অন্য কোনো বস্তুকে বসিয়েছ। এটার নাম শির্ক। এটা অক্ষমার্হ অপরাধ।

একটা সেকুলারকে বলি, তুমি দুনিয়ার পূজারী। অথচ তুমি মরার সাথে সাথে তোমার এই দুনিয়া শেষ। তুমি দেহটা বোঝ, আত্মা বোঝ না।

এটা আমার এনটেলেকচুয়াল অনেস্টি। ১ মানে তাওহিদ। ০ মানে শির্ক। ০ এর কোনো ভ্যালু নাই আখিরাতে। সাথে যত ভালো কাজই করো না কেন।

"মুসলিমরা ক্রুড, বর্বর কেমন একটা মোটা দাগের প্রাণী। কই দশ বছরে কোনো ব্রাদারে তো গীর্জায় ডাকে নাই, ডাকলেই যাইতাম।"

- এটা হচ্ছে মিশনারি স্কুল-কলেজ সিস্টেমের প্রডাক্ট। তারা ১ কে ১ আর ০ কে ০ বলতে ভয় পায়। সত্যটাকে ফেইস করতে ভয় পায়। তাদের কাছে সবই দশমিক। কারণ সে নিজে দশমিক ভাবতে ভালোবাসে। দশমিকরা তাকে সারাজীবন পড়িয়েছে। সেই ওই কৃতজ্ঞতা থেকে বের হয়ে সত্যটাকে স্বীকার করতে ভয় পায়, আলিঙ্গন করা দূর কী বাত!

আর কেউ যখন তাকে ১ আর ০ এর বাইনারি অবস্থানটা বুঝিয়ে দেয় তখন সে হারে রেরে করে তেড়ে আসে। আপনি একাই 'সাচ্চা মুসলিম'?

বাবা তুমি সেকুলার, তুমি মুসলিম না—এটা স্বীকার করে নাও না কেন? আমি হিন্দুদের সাথে সম্পর্ক রাখি, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবার সাথেই রাখি। তোমার সাথেও রাখব। এত আত্মগ্লানিতে ভোগো কেন বাবা?