★ আমার আমি:

একটু চোখ বুজি চলেন। আমার সাথে আমার owner -এর সম্পর্ক কেমন? সম্পর্ক মানে ভাব-বিনিময়, টু-ওয়ে। তিনি আমাকে যা যা বলেছেন, তার প্রতি আমার রেসপন্স কেমন? নাকি তাঁকে আমার দরকার নেই? সম্পর্ক পাতানো নিষ্প্রয়োজন আমার কাছে। যেখানে তিনি চাচ্ছেন আমার সাথে সম্পর্ক করতে:

- আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাকে স্মরণ করব (আয়াত)
- আমাকে ডাকো, আমি সাড়া দেব (আয়াত)
- তুমি একহাত এসো, আমি ২ হাত আসছি। হেঁটে আসো, আমি দৌড়ে আসবো (হাদিস)

আমি আল্ল-হকে পাত্তা দিচ্ছি না? আমি কার ডাক অগ্রাহ্য করছি? সে কে? অফিসের বস, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী? সে আল্ল-হ। আসমান যমীনের একচ্ছত্র Owner. বছরের পর বছর আমি নামায পড়ছি না, কাকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছি? পড়লেও জুমআয় দুটো ঠোকর দিয়েই দৌড়। বছরের পর বছর কুরআন খোলার সময় আমার হচ্ছে না, মানে পাত্তা পাচ্ছে না। যিকির কাকে বলে তা জানিও না, জানার প্রয়োজনও মনে করছি না। Who cares? আল্লাহর কসম, এই করোনা, এই ভীতি এগুলো কিচ্ছু না। সামনে আমার সাথে যা যা হতে যাচ্ছে তার তুলনায় এসব কিচ্ছু না। "একবার দহনের পর তাকে আমি দেব নতুন ত্বক, যাতে সে যন্ত্রণার স্বাদ ভোগ করতে পারে"। এভাবে অসীম দিন কেটে যাবে, তায় আবার সেখানে একদিন আমাদের হিসেবে হাজার দিন। কী করছি আমরা? বা কী করছি না আমরা? আমার জীবন থেকেই আমি আল্ল-হকে বের করে দিয়েছি।

ফেসবুকই ধরেন। দীনী কনটেন্ট আমি অপ্রয়োজনীয় মনে করি। স্কিপ করি। 'নট মাই টাইপ' মনে করি। দীন-আখিরাত-'আল্লাহ' আমাদের প্রায়োরিটি লিস্টে সবার শেষে থাকেন। আমার ২৪টা ঘণ্টা ক্যারিয়ার-ফ্যামিলি-ফ্রেন্ডস-টিভি-গেমস সবকিছুর মাঝে ডিস্ট্রিবিউটেড। দিনরাতের স্রষ্টা আমার জীবন-মৃত্যুর হুকুমদাতা আমার Owner আল্লাহর জন্য আমার এক মিনিটও সময় নেই। বন্ধু একটা পোস্টে ট্যাগ করেছে, সেটা পড়ার জন্য ১ মিনিটও নেই। ”তাদের অন্তর আছে, তারা ভাবেনা; চোখ আছে, তবুও দেখেনা; কান আছে, তাও শোনেনা" (আয়াত) দুনিয়ার বাকি সবকিছু আমার কাছে আল্ল-হর চেয়ে ইম্পর্টেন্ট। আল্ল-হ আমার জীবনে সবচেয়ে আন-ইম্পর্টেন্ট। I am not interested in ALLAH. ওফ!! আমাদের কথা-কাজ-চিন্তাকে ভেক্টর রাশি ধরেন, দেখেন এদের গতিপথ।‌ শয়তান লক্ষবছর ইবাদতের পর একটা বার মাত্র স্পর্ধা দেখিয়েছিল। আর আমি দিনে কতবার স্পর্ধা দেখাই? কতবার? আমার তো একটা শেষ আছে, একদিন তো সব ঔদ্ধত্য থামবে। তারপর?

সবার সামনে আল্লাহর নাম নিতে লজ্জা পাচ্ছেন। কোনো বক্তব্য, কোনো একাডেমিক সেশন/লেকচার, কোনো জ্বালাময়ী ভাষণে, কোনো সাক্ষাৎকারে। ভয় পাচ্ছেন, সামনে উপবিষ্ট বিধর্মীরা কী ভাববে। সাপোর্ট কমে যায় কিনা, লাইক কমে যায় কিনা। তালি কমে যায় কিনা। কাফির বস, বড়ভাই, বড় নেতার সুনজর থেকে পড়ে যাই কি না আল্লাহর নামটা নিলে। এক তো আল্লাহর প্রসঙ্গ আনারই দরকার নেই। ধর্ম টেনে আনার কী দরকার। আর একান্তই আল্লাহর নাম নিতে হলে অফিস-আদালত-বিশ্ববিদ্যালয়ে-জনসভায়-মিডিয়ায় 'আল্লাহ' বলবা না। বলবা সৃষ্টিকর্তা, পরম করুণাময়, গড এগুলা বলবা। ধর্মনিরপেক্ষ শব্দ। বলবা শুভসকাল বা 'সবাইকে শুভেচ্ছা'। সালাম-টালাম দেয়ার কী দরকার। বেশি দরকার হলে বলবা স্লামালিকুম। অন্তত ইসলামিক তো হল না।... আজ আমি এত স্মার্ট হয়েছি যে আমার Owner, আমার Sustainer (টিকিয়ে রেখেছেন যে) আমার আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে আমার লজ্জা হয়। আমার সেক্যুলার পবিত্রতা না-পাক হয়। "জাহান্নামের স্বাদ নাও, তুমি তো দুনিয়ায় সম্মানিত ছিলে" (আয়াত) এত সম্মানিত ছিলে, এত জনপ্রিয় ছিলে, আমার নাম নিতেও তোমার মান যেত।

কেউ যখন আল্লাহর কথা মনে করিয়ে দিয়েছে 'ভাই, কুরআনে নিষেধ আছে' 'ভাই, নবীজী তো নিষেধ করেছেন'। আমরা কী বলেছি? আমরা বলেছি 'সবকিছুতে ধর্ম টেনে আনবেন না'। মানে কী? মানে সবখানে আল্লাহ-নবীর কথা বলবেন না। সবখানে আল্লাহ-নবীর জায়গা নেই। সবখানে জায়গা নেই, নাকি আমার কাছে জায়গা নেই? আমি শুনতে চাই না এ ব্যাপারে আল্লাহ কী বলেছেন। কী প্রমাণ করতে চাই আমি এ কথা বলে? জিগ্যেস করি আজ নিজেকে, আমার জীবনের কোন জায়গায় আমি আল্লাহকে তাঁর স্থানটা দিয়েছি। মুখে আল্লাহকে মানার দাবি সবাই করে, প্রতিটি আস্তিক আল্লাহকে মানার দাবি করে। একজন মুসলিম (আত্মসমর্পিত) আর একজন আস্তিকের মধ্যে পার্থক্য কি বুঝি আমি? কী কী কাজ করলে, কোন কোন কথা বললে, অন্তরের রোখ কোনদিকে হলে আমার নাম আরবি থাকে, সরকারের আদমশুমারিতে আমি মুসলিম থাকি। কিন্তু আল্লাহর খাতায় আমি আর মুসলিম থাকি না। কীসে আমাকে নিশ্চিন্ত করল? কোন সে জ্ঞান যা আমাকে জান্নাতের ব্যাপারে এতোটা টেনশন-ফ্রী করে রেখেছে। আল্লাহর কথা শুনতে চাই না, আল্লাহর নাম নিতে চাই না, পাত্তা দিতে চাই না। মুসলিম পরিবারে জন্ম দিয়ে আল্লাহ ঠেকায় পড়ে গেছেন আমাকে জান্নাত দেবার।

যারা কুরআনের আল্লাহর কথা নবীর কথাকে পৌঁছনোর কাজটা করতো, আমাদের মাঝে নবীর দায়িত্ব পালন করতো, তাদেরকে 'মোল্লা, মৌলবী, হুজুর' লকব দিয়ে তাচ্ছিল্য করেছি, অচ্ছুৎ অবমানব হিসেবে মার্জিনালাইজ করেছি। যেন তাদের কথাকে পাত্তা দিতে না হয়। তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া যায়। বলেন, আমার জীবনে এমন কে আছে যে আমাকে আল্লাহর কথা পৌঁছোবে। জরুরি মনে করিনি, তোয়াক্কা করিনি। এমন কার সাথে আমি সম্পর্ক রেখেছি যে আমাকে আল্লাহর কথা শোনাবে। " সেই উত্তম সঙ্গী যাকে দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়, যার কাজে আখিরাতের স্মরণ আসে" (হাদিস)। আল্লাহ দীন সম্পর্কে জ্ঞান হাসিলকে ফরয করেছেন। আলিমদের জন্য আপনার কাছে গিয়ে আপনাকে শেখানো ফরজ নয়। ফিকহে আছে, কত কিলোমিটারের ভিতর একজন আলিম থাকলেই ঐ বাসিন্দাদের 'না জানার অজুহাত' বাতিল। আমার বাসার পাশে মসজিদ আছে, পাশের মহল্লার মাদরাসা আছে, আলিমদের সাথে উঠবসকারী বন্ধু আছে, আমার হাতে ফেসবুক-ইউটিউব-পিডিএফ (অনিরাপদ উৎস, তারপরও উৎস তো)। এরপরও আমার 'না জানার অজুহাত' আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ইয়া আল্লাহ, আমি জানতাম না। এরপরও দীন সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার অর্থ, আমার ইচ্ছা হয়নি। স্বেচ্ছায় আমি আল্লাহর করা ফরযকে অবজ্ঞা করলাম। এতো ব্যস্ত আমি, এতো আমার ডিমান্ড, দুনিয়াতে এতো জরুরি আমি? আমার নিজের পিঠ বাঁচানোরই সময় আমার নেই।

যে পরিমাণ স্পর্ধা আর দর্প আমি আমার রব্ব (Owner + Sustainer + Guardian + Master) এর সাথে এই এক জীবনে দেখালাম। তাতে কাফির কেন, আমিই তো তাঁর গযব/ক্রোধের বেশি উপযুক্ত। কাফির তো চিনে নাই, আমি তাঁকে চিনে জেনেই যা দেখাইলাম, দোষ আল্লাহকে দিতে পারবেন, বলেন? আসেন অন্তর ব্যবহার করে বলি:

লাাা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনাজ জ্বলিমীন।

আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ (দাসত্ব/উপাসনা পাবার উপযুক্ত) আর কেউ নেই। আপনিই পবিত্র, আমিই জালেম। আমার উপর যে সমস্যা এসেছে, আপনার কোনো দোষ নেই, আপনি পবিত্র। আমিই দোষী। আমিই আপনার ক্রোধকে সেধে এনেছি। নিজের কর্মদোষে আপনার ক্রোধে অটো পড়ে গেছি। আমাদেরকে মাফ করুন। আপনি ছাড়া আমরা আর কাউকে চিনিনা যে মাফ করার এখতিয়ার রাখে।

হেঁচকি তুলে সিজদায় কাঁদেন: আল্লাহ, আবার নতুন করে ঈমান আনলাম আপনার উপর, যেমন করে ঈমান আনার কথা ছিল। অতএব আপনি আমাদের মাফ করেন। কারণ 'আপনি তো আল্ল-হ'। লিআন্নাকাল্লাহ।