বিজ্ঞানের কাছেই সবকিছুর জবাব। বিজ্ঞান সবকিছু আমাদের জানিয়ে দেবে। সব সমাধান করে দেবে। যা বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে পারে না তার অস্তিত্বই নেই। যার জবাব বিজ্ঞানের কাছে নেই, তা কুসংস্কার। এই অগাধ বিশ্বাসকে বলে বিজ্ঞানবাদ। বিজ্ঞান একটা টুল, আর বিজ্ঞানবাদ একটা ধর্মবিশ্বাস: বিজ্ঞান পারবেই। বিজ্ঞান যেখানে চুপ, বিজ্ঞানবাদ সেখানেও সরব। যেমন পীর চুপ, কিন্তু মুরিদ লাফায়, সেরকম। যার বস্তুগত ব্যাখ্যা করা যায় না, সেখানে বিজ্ঞান বলছে এটা আমার ফিল্ড না। আর বিজ্ঞানবাদ বলছে, বিজ্ঞানের নীরবতা মানে ওটা আসলে নেই, ওটা কুসংস্কার। এই জায়গাটা মুসলিম বিজ্ঞানপড়ুয়াদের বুঝতে হবে।

কখনোই বিজ্ঞান বলবে না, আল্লাহ আছেন কিংবা করোনা আল্লাহর গযব। আধুনিক বিজ্ঞান সব কিছুর একটা বস্তুগত ব্যাখ্যা দাঁড় করাবে। যেমন, নবীজীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত করার ঘটনা। কুরআনে সূরা ক্বমারে রয়েছে। সুতরাং ধর্মীয়ভাবে অকাট্য। প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা.এর বর্ণনা আছে যিনি ঐ সময় নবীজীর সাথে বসা ছিলেন। সে হাদিস শুদ্ধতার ফিল্টারে উত্তীর্ণ। এই শুদ্ধতার ফিল্টার সম্পর্কেও আমাদের আইডিয়া ভয়ংকর রকম হতাশাজনক। সেসময় কাফিররা বহিরাগত নন-আরবদের থেকে যাচাইও করে নিয়েছিল যে তারাও দেখেছে কি না। নন-আরব সোর্সও রয়েছে। ভারতের মালাবার রাজ্যের রাজা চেরুমান পেরুমল সেটা দেখেন এবং জ্যোতিষীর কাছে এর কারণ জেনে নিজে মক্কা এসে মুসলিম হন, তাঁর নাম হয় তাজউদ্দীন। আনাস রা. এর হাদিসে তিনি এক 'মালিকুল হিন্দ' মানে ভারতীয় রাজার কথা বলেছেন, যে নবীজীর জন্য আদার আচার এনেছিলেন। মানে ধর্মীয় ও ঐতিহাসিকভাবে সুনিশ্চিত, যে এটা ঘটেছিল। এখন আজকের যুগে হলে কী হত?

চন্দ্রে ভূমিকম্প বা কোনো বড় গ্রহাণুর আকর্ষণে এমনটা হয়েছে। পরে আবার মহাকর্ষের কারণে জোড়া লেগে গেছে। এরকমই একটা ব্যাখ্যা দেয়া হত। ব্যাখ্যা দিয়ে আল্লাহ, রাসূলের আগমন, মুজিযা এগুলো বাইপাস করে ফেলা হত। সেই যাদুবিদ্যা তুকতাকের যুগে 'যাদুকর' বলে যাদের বাইপাস করার করেছিল। এই বিজ্ঞানের যুগে আমরা বিজ্ঞানের নামে বাইপাস করতাম। একই হলো। ঈমানের শুধু দাবি? যত মিল সব বেঈমানের সাথে? হলো? আজকের এই করোনা যে 'আল্লাহর গযব' এটা একজন মুসলিম হিসেবে আপনাকে চিনে নিতে হবে, এবং সেটা 'পশ্চিমা বস্তুবাদী বিজ্ঞান' (নট বিজ্ঞান টুল) আপনাকে চেনাবে না। চেনাবে আপনার ঈমানের 'ইন্দ্রিয়'। ঈমানের ইন্দ্রিয় আপনাকে বিজ্ঞানের ফাইণ্ডিং আর ওয়াহীকে (কুরআন-হাদিস) কোরিলেট করিয়ে দেবে। আর যদি কোরিলেট না করতে পারেন, ডাক্তারদের গ্রুপে কেন মধু-কালোজিরার পোস্ট দেয়া হল, সেজন্য হা হা রিয়্যাক্ট আসে। তাহলে ধরে নেবেন কেবল নামটাই আরবি, ঈমানের ইন্দ্রিয় অন্ধ। 'তাদের অন্তরে মোহর পড়ে গেছে'... 'দেখেও তারা দেখেনা, শুনেও তারা শোনেনা'... 'অন্ধ, বধির, মূক... তারা ফিরবেনা'। মুসলিমের সন্তান হলেও আল্লাহর খাতায় হয়ত মুসলিমের তালিকায় আপনি নেই। অবশ্য না থাকলেই কী আসে যায়, এমনটা মনে হলে, নিশ্চিত থাকতে পারেন আপনি আসলেই নেই।

এই প্রত্যেকটা নিউয ও রিসার্চের রেফারেন্স আমি দিতে পারব। এগুলো সব রিসার্চ। প্যারাডক্সগুলো দেখেন। কীভাবে গত ৫ মাসে তথ্যগুলো বদলে গেছে খেয়াল করেন।
১ক: ফ্লু ভাইরাসগুলো এনভেলপড (আবরণযুক্ত)। উচ্চতাপমাত্রায় আবরণ নষ্ট হয়ে ভাইরাস অকেজো হয়। ফ্লু-ভাইরাসেরই জাত করোনা। ফলে গরম পড়লে সব ঠিক হয়ে যাবে। ভৌগোলিকভাবে এত থেকে এত অক্ষাংশের শীতপ্রধান দেশগুলোই আক্রান্ত।
১খ: কয়েকদিন পর সৌদি-ইরান-মালয়-ইণ্ডিয়া সব গরমের দেশগুলোআক্রান্ত। ল্যাবে ৯২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তক গরমে ভাইরাসটা কর্মক্ষম।

২ক: শুধু ম্যান-টু-ম্যান কনটাক্টে ছড়ায়।
২খ: বাতাসে ৩ ফুট পর্যন্ত যায়, এরপর মাটিতে পড়ে যায়।
২গ: বাতাসে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত ভাসে।

৩ক: সার্ফেসে (বস্তুর উপর) ৭২ ঘন্টা বাঁচে। এর মধ্যে মানবদেহে ঢুকতে না পারলে অকেজো হয়
৩খ: সার্ফেসে ৭-১০ দিন পর্যন্ত বাঁচে।

৪ক: শুধু বয়স্করা মরছে। যুবকরা লক্ষণই প্রকাশ করে না। করলেও সামান্য, ঠিক হয়ে যায়। শিশুরা তো একেবারেই সেফ।
৪খ: আমেরিকা হাসপাতাল ভর্তি ২৯% এর বয়স ১৮-৪৪। নিউইয়র্কে ৫০%। আইসিইউ লেগেছে যাদের, তাদের ১২% এর বয়স ১৯-৪৪। বাংলাদেশে ২১-৪৬ রোগী ৪৬%।

৫ক: হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন (HCQ) আমাদের আশা। সব মার্কেট আউট
৫খ: HCQ এর খুব একটা উপকার নেই। বরং আইসিইউতে মরেছে বেশি।

৬. ভ্যাক্সিন তৈরি করতে ১-২ বছর সময় তো লাগবে।
৭. ভ্যাক্সিন তৈরি না-ও হতে পারে। (WHO)। বহু ভাইরাসের ভ্যাক্সিন হয়নি (ইবোলা, এইডস)
৮. জাপানি ওষুধটা কার্যকর। দাম ফুল কোর্স ৬ লাখ টাকা।
৯. যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ Remdesivir মানব পরীক্ষায় ব্যর্থ।
১০. ভাইরাসটা নতুন, আমরা এখনও এটা সম্পর্কে সব জানিনা, জানছি।
১১. ভাইরাস বার বার জিন মিউটেশন করছে। চরিত্র বদলাচ্ছে।

এই সিরিয়ালটা আর কতদূর গেলে আমার সোকল্ড 'মুসলিম মন' স্বীকার করবে এটা 'আল্লাহর গযব'। মানবজাতির অহংকার, দ্য গ্রেট 'সায়েন্স' বিগত ৫ মাস ধরে এটা-ওটা-সেটা বলছে। আশায় বুক বেঁধে সামনে যা পাচ্ছে আঁকড়ে ধরছে। কখনও বয়স, কখনও তাপমাত্রা, কখনও ভূগোল, কখনও বিসিজি ভ্যাকসিন, কখনও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন। ফী নারি জাহান্নাম খলিদীনা ফিহা অভিজিৎ রায় লিখেছিল: বিজ্ঞান এতদূর এগিয়েছে, এতদূর এগিয়েছে, যদি স্রষ্টা থাকতোই, তাহলে এতদিনে আবিষ্কার হয়ে যেত। পিকোমিটার, ফেমটোমিটারের একটা ভাইরাস এখনও অচেনা। উনি বেঁচে থেকে দেখে গেলে ভালো হত। বস্তুবাদী সভ্যতা বস্তুর বাইরে কিছু ভাবতে পারেনা। আমি আপনিও কি তাই? তাহলে যা পার্থক্য গড়ে দেবে সেটা কই? ঈমান কোথায়? ঈমানের অস্তিত্ব, উপযোগিতা, ব্যবহার, কার্যক্ষমতা কোথায়? নাকি শুধু মুখে, শুধু নামে, শুধু দাবিতে। একটা রূপকথার মতো, যার কোনো অস্তিত্ব নাই। 'অস্তিত্বহীন ঈমান'কে কী বলে? এত অস্পষ্ট কেন আমার পরিচয়?

(ছবি দিয়ে কিছুই দাবি করছি না। এমনি দেখালাম আর কি। ছবি যা-ই হোক, কুরআনের আয়াত সত্য। আমাদের ঈমান কুরআনের আয়াতে। সেখানে এসব ছবির কোনো জায়গা নেই)

চলবে ইনশাআল্লাহ