রাশিয়া প্রবাসী নারী নাস্তিক এই ক'দিন আগে স্ট্যাটাস দিয়েছিল: আল্লাহ-য় বিশ্বাস না করলেও 'প্রকৃতির প্রতিশোধ'- এ তিনি বিশ্বাস করেন। হ্যাঁ, নতুন কিছু না। প্রকৃতিপূজা, মাদার নেচার, প্রেতাত্মাপূজা, ভূত, এলিয়েন ইত্যাদি অদৃশ্য কাল্পনিক সব সত্তাই ওনারা বিশ্বাস করেন। শুধু স্রষ্টা ছাড়া। কারণ স্রষ্টা যে কিছু নিয়ম-কানুন বেঁধে দেন। প্রকৃতি-প্রেত-এলিয়েনদের মানলে আত্মপূজায় বাদ সাধে না। স্রষ্টা আবার যে ধর্মেই মানেন, কিছুটা কৃচ্ছ্রতা, কিছুটা আত্মসংযম, কিছুটা নৈতিকতা আরোপ করেন যে। ওখানেই সমেস্যা। সে যাকগে, আমার আলোচনা মুসলিমদের উদ্দেশ্যে যেহেতু, ওদিকপানে আজ গেলাম না।

ফেসবুকে ঢুকে সাধারণত করোনা আপডেট নিই। নতুন কোনো রিসার্চ এলো কি না। কে কী বললো, কর্তৃপক্ষ কী বললো, ডাক্তারদের গ্রুপে তাদের প্রতিক্রিয়া কী হচ্ছে। পুরো টকশো দেখিনা, নেট কিনে কিনে চালাচ্ছি তো, টকশোর ছোট ক্লিপ সামনে পেলে দেখি। কোনোখানে কেউ ভুলেও উচ্চারণ করছেনা এটা আল্লাহর গযব। সেকুলারিজমের পবিত্রতা নষ্ট হয়। নেহায়েত ধার্মিক কেউ খুব সাবধানে ধর্মনিরপেক্ষ কিছু শব্দ ব্যবহার করছেন: সৃষ্টিকর্তা, প্রার্থনা। যাতে ধর্মনিরপেক্ষতার মা'বুদেরা (অমুসলিমদের সন্তুষ্টি, গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা) নারাজ না হয়। তাও মানলাম। কিন্তু মুসলিমরা যে 'আল্লাহর গযব' কী, কেমন, কেন তা সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখেনা, এটা দুঃখজনক। যারা রাখে তারাও মুখ ফুটে স্বীকার করছে না সেক্যুলারিতা অপবিত্র হবে বলে। বস্তুবাদী পাশ্চাত্য মনোবৃত্তি আমাদের আচ্ছন্ন করে রেখেছে এতোটাই। আল্লাহর ক্রোধ যদি আপনি টেরই না পান, তা থেকে পরিত্রাণ পেতে কী করণীয় তাও বুঝব আমরা কীভাবে। কী আশ্চর্য অবস্থা আমাদের 'মুসলিমতা'র? একজন নাস্তিক 'প্রকৃতির প্রতিশোধ'-এ যতটুকু ঈমান রাখে, আমার কী 'আল্লাহর গযব' এ অতটুকু ঈমানও নেই?

একজন মুসলিম (আত্মসমর্পিত) হিসেবে আমাদের আল্লাহর গযব চেনার কথা ছিল। এটা ছিল ঈমানের একটা আলামত। 'আর যখন তাদের সামনে কুরআনের আয়াত তিলওয়াত করা হয়, তখন আপনি তাদেরকে দেখবেন অশ্রুবিগলিত, এটা এজন্য যে তারা তাদের রাব্ব-কে চিনতে পেরেছে'। এই মহামারীর ভিতর দিয়ে কথা ছিল আমরা আমাদের রাব্ব-কে চিনে নেব, নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হব। তাহলে কি পবিত্র রসূলের কথার বিপরীতে পশ্চিমের বস্তুবাদী ব্যাখ্যাকেই আমরা দীন হিসেবে নিলাম? মহামারী থেকে বাঁচার জন্য পশ্চিমের বস্তুবাদী রিসার্চের অপেক্ষাতেই আমরা থাকব, সেগুলোর কথাই আলোচনা করব, সেগুলোর মধ্যেই মুক্তি খুঁজব। তাহলে আমার ঈমান কোনটা? সেই ঈমানের চোখে কী দেখার কথা ছিল? মহামারী থেকে মুক্তির জন্য কী করার কথা ছিল?

এখানে খুব সূক্ষ্ম একটা ডিমার্কেশন আছে। বর্তমান 'আধুনিক' বস্তুবাদী বিশ্বে এই সীমাটা প্রত্যেক মুসলিমের বুঝা দরকার। বিজ্ঞান একটা টুল (tool)। এই টুল-টা ব্যবহার করছে পুঁজিবাদী বস্তুবাদী পশ্চিমা সভ্যতা। একটা সময় এই টুলটা আকরিক থেকে ইসলাম বানিয়েছে, শান দিয়েছে, ধারালো করেছে। সেটা দিয়ে সবজি কেটেছে, গোশত কেটেছে। নিজে খেয়েছে, অন্যকে খাইয়েছে। সেই টুলটা পশ্চিমা সভ্যতা নিয়েছে। সেটা দিয়ে ইসলামকে কাটছে, মুসলিমদের কাটছে, তৃতীয় বিশ্বকে কাটছে, পুঁজিবাদের জিভ দিয়ে রক্ত চুষে ফুলছে ফাঁপছে। যখন ইসলাম টুলটা ইউয করেছে, পরতে পরতে স্রষ্টাকে চিনেছে। আর ইউরোপ যখন ইউয করছে, তখন স্রষ্টাকে অস্বীকার করছে। তাই টুল-টার সাথে ইসলামের বিরোধ নেই। বিরোধ টুল-টা যেভাবে ব্যবহার হচ্ছে, এবং ঐভাবে ব্যবহার করে যা বের করা হচ্ছে তার সাথে। পশ্চিমা সভ্যতা বিজ্ঞানের ঘোড়ার উপর সওয়ার। আর বিজ্ঞানের ঘোড়াটার চোখে পরানো ঠুলি (blinders) , ঠুলির নাম 'প্রকৃতিবাদ'। জগতের প্রতিটি ঘটনাকে জাগতিক ব্যাখ্যা করা। বস্তু দিয়ে ব্যাখ্যা করা। যেমন ধরেন, মন কী? বিজ্ঞানের চোখে মন জাস্ট কিছু কেমিক্যাল ক্রিয়াবিক্রিয়া। কারণ ওটুকুই বিজ্ঞান মাপতে পারে। যা মাপা যায় না, সেক্ষেত্রে বিজ্ঞান যতটুকু পারে বস্তুগত সম্ভাবনা কথা বলবে, নয়তো চুপ হয়ে যাবে। এজন্য আত্মা, স্রষ্টা এসব বিষয়ে বিজ্ঞানের চুপ থাকার কথা। কিন্তু বাড়াবাড়িটা যে করে তার নাম 'বিজ্ঞানবাদ' (scientism)। বিজ্ঞান আর বিজ্ঞানবাদের মধ্যে পার্থক্য কী?

চলুক নাকি?

ইনশাআল্লাহ