১।

আর্মি স্টেডিয়ামে সেদিন কনসার্ট চলছিল। সম্ভবত পাশের দেশ থেকে কেউ এসেছেন। প্রচুর লোকজনের আনাগোনা, শোরগোল, আলোকোজ্জ্বল পরিবেশ—স্টেডিয়ামের পাশের রোডটিতে জ্যামে আটকে থাকা বাসের যাত্রীদের অনেকের কাছেই বেশ উপভোগ্য ছিল। জ্যামের কষ্টও এদের কাছে বিরক্তিকর মনে হচ্ছিল না, যতক্ষণ তারা এলাকাটির আশেপাশেই ছিলেন।

তবে বাসের হাতল ধরে ঝুলতে থাকা পাশের ভাইটির চোখেমুখে ছিল নিদারুণ আফসোস। তার কাছে যদি আজ বিশ-ত্রিশ হাজার টাকা থাকতো সেও তো পারতো এই কনসার্টের সঙ্গী হতে। তার আফসোসের ভাষাটাও ছিল হতবাক হয়ে যাওয়ার মতো—

“আল্লাহ! সবাইরে সব কিছু দেয় না।”—

কথা তো সত্য। আল্লাহ সবাইকে সব কিছু দেন না। কিন্তু তার কথার অর্থ ছিল, আল্লাহ তাকে অর্থ কড়ি দেননি দেখেই তার এই সৌভাগ্যটুকু(?) হলো না। (নাউযু বিল্লাহি মিন যালিক)

২।

গত বছরের হজের মৌসুম। আমাদের এপার্টমেন্টের সামনে একটি মাইক্রোবাস দাঁড়ানো। কোনো একটি ফ্ল্যাটের কয়েকজন বাসিন্দা একসাথে হজে যাচ্ছিলেন। ইহরামের চাদর গায়ে তারা যখন বের হচ্ছিলেন, ঘটনাক্রমে আমি তখন বাসায় ঢুকছিলাম।

হঠাৎ চোখ পড়লো, বাসার গেটের দারোয়ান চাচার দিকে। যার কথা আগেও একবার লিখেছিলাম। অশ্রুজল চোখে তিনি হজযাত্রীদের দিকে তাকিয়ে আছেন।

জিজ্ঞেস করলাম, চাচা! কাঁদেন কেন?

তার সরল উত্তর (আঞ্চলিক ভাষায়)—“ভাইয়া! আমার তো টাকা পয়সা নাই। কিছু টাকা থাকলে তো আমিও সাদা রুমাল (ইহরামের চাদর) পড়তে পারতা……” শেষ হয়নি বাক্যটি। এর আগেই তার কণ্ঠ ধরে এসেছিল।


অদ্ভুত না! দু’জন মানুষ, একই এলাকার, একই দেশের, একই ধর্মের। অর্থকড়িও মোটামুটি দু’জনের সমান। কিন্তু দু’জনের ইচ্ছে, আকাঙ্খা আর আফসোসের বিষয়গুলোর মাঝে কত ব্যবধান!

গুনাহ না করেও কেউ গুনাহ কামায়। আমল না করেও অনেকে সাওয়াবের ভাগীদার হয়ে যায়।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

চার প্রকার মানুষের জন্য এই পৃথিবী। আল্লাহ তা’আলা যে বান্দাহকে ধন-সম্পদ ও ইলম (জ্ঞান) দিয়েছেন, আর সে এই ক্ষেত্রে তার প্রভুকে ভয় করে, এর সাহায্যে আত্মীয়দের সাথে সৌজন্যমূলক ব্যবহার করে এবং এতে আল্লাহ তা’আলারও হক আছে বলে সে জানে, সেই বান্দার মর্যাদা সর্বোচ্চ।

আরেক বান্দাহ, যাকে আল্লাহ তা’আল ইলম দিয়েছেন কিন্তু ধন-সম্পদ দেননি সে সৎ নিয়াতের (সংকল্পের) অধিকারী। সে বলে, আমার ধন-সম্পদ থাকলে আমি অমুক অমুক ভালো কাজ করতাম। এই ধরনের লোকের মর্যাদা তার নিয়্যাত মুতাবিক নির্ধারিত হবে। এ দু’জনেরই সাওয়াব সমান সমান হবে।

অপর এক বান্দাহ, আল্লাহ তা’আলা তাকে ধন-সম্পদ প্রদান করেছেন কিন্তু ইলম দান করেননি। আর সে ইলমহীন (জ্ঞানহীন) হওয়ার কারণে তার সম্পদ স্বীয় প্রবৃত্তির চাহিদা মতো ব্যয় করে। সে ব্যক্তি এ বিষয়ে তার রবকেও ভয় করে না এবং আত্মীয়দের সাথে সৌজন্যমূলক ব্যবহারও করে না। আর এতে যে আল্লাহ তা’আলার হক রয়েছে তাও সে জানে না। এই লোক সর্বাধিক নিকৃষ্ট স্তরের লোক।

আরেক বান্দাহ, যাকে আল্লাহ তা’আলা ধন-সম্পদও দান করেননি, ইলমও দান করেননি। সে বলে, আমার যদি ধন-সম্পদ থাকত তাহলে আমি অমুক অমুক ব্যক্তির ন্যায় (প্রবৃত্তির বাসনামতো) কাজ করতাম। তার নিয়্যাত মুতাবিক তার স্থান নির্ধারিত হবে। এদের দুজনের পাপও হবে সমান সমান।

– সুনান আত তিরমিযি, হাদিস নং ২৩২২। হাদিসের মান—সাহিহ