ভাই, দেখ দুনিয়ার নারী,ধন সম্পদ, সন্তানসন্ততি এগুলো একধরণের ফিতনাহ। এগুলো দ্বারা দুনিয়াকে সুশোভিত করে রাখা হয়েছে।

‘জেনে রাখ! তোমাদের অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পরীক্ষার বিষয় মাত্র। আল্লাহর কাছে এর চেয়েও মহান প্রতিদান আছে।’ (সূরা আনফাল : ২৮)

‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের প্রতিপত্তি, ধন-সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না রাখে। যদি তোমরা গাফেল বা উদাসীন হও তবে অবশ্যই তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা মুনাফিকুন : ৯)

কতো সৎ মানুষের পদস্খলন হলো নারীর ফিতনায়, দ্বীনের অর্ধেক পূরণ করার জন্য বিয়ে করল, তারপর দ্বীনের বাকি অর্ধেকও হারিয়ে ফেলল, এমন মানুষ সমাজে বহু আছে। আল্লাহ্‌র দ্বীন কায়েমের স্বপ্ন দেখতো যেই যুবকের দু’চোখ, সেই যুবক বউয়ের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে গিয়ে আর ওসব নিয়ে ভাবার সময়ই পায়না। বিপ্লবের মৃত্যু ঘটে শুরুর আগেই।

বিয়ে মানে শুধু রোমান্টিসিজমই নয়। বিয়ের পরে তোমার ঘাড়ে অনেক দায়িত্ব, কর্তব্য আসবে। তুমি যদি বিয়েকে শুধু রোমান্টিসিজম ভেবে বসে থাকো তাহলে বিয়ের পরে খাপ খাওয়াতে ঝামেলা হবে। মধুমাসের পরে তোমার মোহভঙ্গ হবে। কঠিন,কঠোর বাস্তবতা আঘাত হানবে। আগে থেকে প্রস্তুতি না থাকলে হয়তো তুমি ভেঙ্গেই পড়বে। কেন যে বিয়ে করলাম, বিয়ের আগেই তো ভালো ছিলাম এই চিন্তাও চলে আসতে পারে মাথাতে।

ভাই দেখ, তোমার এই বয়সে আগুন জ্বলে ওঠে প্রত্যেক শিরা উপশিরায়,সেই উত্তাপে বদলে যায় তোমার দুনিয়া। বদলে যায় দেখার দু’চোখ। নারীকে শুধু আর রক্তমাংসের মানুষ বলে মনে হয়না,নারীর মানবীয় বৈশিষ্ট্যের কথা তুমি ভুলে যাও। নারীকে সৌন্দর্য আর পরিপূর্ণতার এমন পোষাক তুমি পরিয়ে রাখো যার আড়ালে ঢাকা পড়ে নারীর সকল দোষত্রুটি। নারীর কোনো ভুল, কোনো সীমাবদ্ধতা ধরা পড়েনা। মূর্তি পুজারীর মতো নারীকে বানিয়ে ফেলো কল্যাণের প্রতিমা। মনে প্রাণে পুজো করো তাকে। যেন শুধু নারীর স্পর্শেই তোমার মুক্তি। নারী যেন পরশ পাথর যার ছোঁয়াতে আপাদমস্তক নিজেকে পালটিয়ে নিবে তুমি। কিন্তু পরে যখন আবিষ্কার করো নারীরও সীমাবদ্ধতা আছে, দোষত্রুটি আছে, সেও রক্ত মাংসের একজন মানুষ তখন মোহভঙ্গ হয়। হতাশ হও।

তোমার এই অপরিপক্ক চিন্তাভাবনার পালে জোর হাওয়া লাগায় নাটক,সিনেমা, গান আর পর্ন । অন্তরে নিঃসঙ্গতার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। তোমাকে রোমান্টিসিজমে ভাসিয়ে নেয়। আর যৌবনের উত্তাপ ছড়িয়ে দেয় শিরা উপাশিরায়, প্রতিটি লোহিত রক্তকণিকায়।

মুভি আইটেমসং পর্ন হস্তমৈথুন, গার্লফ্রেন্ড জাস্ট ফ্রেন্ড, ফ্রি মিক্সিং এগুলো থেকে শতভাগ দূরে থাকতে হবে। কঠোরভাবে চোখের হেফাযত করতে হবে। এগুলোই তো প্রধান কারণ যার কারণে তুমি অন্ধকার কানাগলিতে মাথা কুটে মরছো। যিনা,ব্যভিচার,বেহায়াপনা,লুচ্চামির হাতছানি উপেক্ষা করতে পারছনা। বাবা মা, আত্মীয়স্বজন, একান্ত আপন মানুষগুলো তোমার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। তুমি ঠাট্টা,তামাশার পাত্রে পরিণত হয়েছো। বিয়ে পাগলা সহ আরো অনেক উপাধি পেয়ে গিয়েছো।। ভাই এগুলো থেকে দূরে থাকো। দেখবে, তোমার অশান্ত হৃদয় অনেকটাই শান্ত হয়ে গিয়েছে। বিয়ের তীব্র প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই কমে এসেছে। তুমি সবর করতে পারছো। বালেগ হবার পরে তোমার যে শরীরের ক্ষুধা লাগবে সেটা বিয়ে ছাড়া পুরোপুরি মিটবেনা, কিন্তু কিছুটা তো মিটবে। পুরো পেট না ভরুক, অর্ধেক পেট ভরবে। ক্ষিদের কথা, তীব্রতা কিছুটা ভুলে থাকতে পারবে। মুক্ত বাতাসের খোঁজে বইটা ভালোমতো পড়ো। সে অনুসারে আমল করো। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। আল্লাহ সহজ করে দিবেন।তাই বলে এটা না যে তুমি বিয়ে করতে দেরি করবে বা বিয়ে করার চেষ্টা থামিয়ে দেবে। বিয়ের চেষ্টা চলবে। পাশাপাশি এগুলোর দিকেও নজর দিবে।

মনে করো তুমি রোযা রেখেছো। ইফতারির অনেক দেরি। বারবার ফ্রিজ খুলে সুস্বাদু খাবার দেখতে থাকো, আম্মা রান্না করছে, সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকো, তাহলে তোমার ক্ষুধার তীব্রতা,কষ্ট বেড়ে যাবেনা? এখন এটা কী কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হবে রোযা রেখে সুস্বাদু খাবারের আশেপাশে ঘুরে বেড়ানো? তাদের ঘ্রাণ নেওয়া? বরং যতো বেশি খাবার থেকে দূরে থাকা যায়, যতো বেশি খাবারের কথা ভুলে থাকা যায় ততো ভালো। তোমার জন্য ইফতারি পর্যন্ত অপেক্ষা করা ততোবেশি সহজ হয়ে যাবে।

ভাই তাহলে চিন্তা করো, শরীরের ক্ষুধা নিয়ে( ক্ষুধা পূরণের হালাল উপায়ও নেই) কেন তুমি এমন কিছু করো যা তোমাকে বারবার ক্ষুধার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়? কেন তুমি মুভি আর নাটকে ডুবে থাকো যা প্রতিনিয়ত তোমার শরীরের ক্ষুধা, তোমার নিঃসঙ্গতা বাড়িয়ে তোলে? কেন ইউটিউবে একটার পর একটা রোমান্টিক মিউজিক ভিডিও দেখে চলছো? কেন তুমি জাস্টফ্রেন্ডদের সাথে একই রিকশায় ঘোরো, গায়ে হাত দিয়ে কথা বলো? কেন তুমি শপিংমল,রেস্তোরা, গার্লসস্কুল,কলেজ বা এমন জায়গাগুলোতে ঘোরাফেরা করো যেখানে সুন্দরী, আকর্ষনীয় মেয়েদের আনাগোনা? কেন রাস্তায় চোখ নামিয়ে চলোনা? কেন ফেসবুক ইন্সটাগ্রামে লাস্যময়ী,রুপবতী নারীদের ছবি জুম করে দেখ? ট্রল পেইজ বা গ্রুপগুলোতে ‘ফান’ করার নামে অশ্লীল, উত্তেজক কথাবার্তা বলো? রাত জেগে খোল্লামখোল্লা মেয়েদের লাইভে একটিভ থাকো?

ভাই, তুমি তো রোযা রেখেছো, ইফতারির আগে তো খাবার খাবেনা, তাহলে কেন এভাবে নিজের ক্ষুধা বাড়িয়ে তুলছো? ক্ষুধা বাড়তে বাড়তে একসময় এমন অবস্থা হবে তুমি আর ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করতে পারবেনা। হালালের পথ যেহেতু খোলা নেই, তুমি বেছে নিবে হারাম। পর্ন,হস্তমৈথুন, রুম ডেটিং,লিভ টুগেদার, ক্লাসরুমে,পার্কে,বাসে,চিপায় চাপায় বেহায়াপনা। আখিরাত তো নষ্ট হবেই, দুনিয়ার এই জীবনটাও বরবাদ হয়ে যাবে।কখনো শান্তি পাবেনা। বুক জ্বলে যাবে ভাই, বুক জ্বলে যাবে। অশান্তি আর অস্থিরতায়। তীব্র হতাশায়।

নারীর সাথে অন্তরংগতার ব্যাপারটিকে তোমরা অপার্থিব সুখ আর শিহরণের প্যাকেজ ভেবে দিন রাত কল্পনা করো, তা আসলে খুব সামান্য একটা ব্যাপার। মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কিন্তু স্বাভাবিক, সাধারণ একটা ব্যাপার। তোমরা যেরকম ভাবে একে কল্পনা করো, সেটি এর ধারে কাছেও নেই। ভাত খাওয়া, পানি খাওয়ার মতোই সাধারণ ব্যাপার এটি। সেরকম বিশেষত্ব কিছুই নেই। অথচ এগুলো ভেবেই দিন রাত অস্থিরতা,অশান্তিতে ভোগো তুমি।

হারাম রিলেশন,লুচ্চামি ছেড়ে দাও। ফিরে আসো রবের পথে। যারা ফিরে এসেছে তারা বলেছে, যারা ফেরেনি তারাও বলেছে- ওপথে শান্তি নেই, সুখ নেই। প্রীতি নেই, ভালোবাসা নেই। ভালোবাসা ওপথে নয় , বরং ভালোবাসা তোমার রবের পথে, হ্যাঁ ভালোবাসা তোমার দ্বীনের পথে রয়েছে। চারপাশে ছড়ানো ছিটানো। অবশ্যই পড়- শান্তি পাবো কোথায় গিয়ে

তো যা বলছিলাম বিয়ে কিন্তু সকল সমস্যার সমাধান না। নারী কোনো ম্যাজিক জানেনা, যে চোখের পলকে তোমার জীবনের সকল সমস্যার সমাধান করে দিবে ম্যাজিলওয়ালারা যেমন টুপির ভেতর থেকে কবুতর বের করে আনে। নারী তোমাকে হয়তো কিছুটা পাপ পঙ্কিলতা থেকে উদ্ধার করবে, কলুষতাময় নিশ্চিত পতন থেকে রক্ষা করবে, জীবনটাকে আরো একটু গুছিয়ে দিবে, কিন্তু সকল সমস্যার সমাধান করে দেবে না।বিয়ে সকল প্রশান্তির উৎসও না। এটা শতোভাগ সত্য যে আল্লাহ (সুবঃ) স্ত্রীদের মধ্যে চোখের শীতলতা রেখেছেন, স্ত্রীদেরকে প্রশান্তির উৎস বানিয়েছেন। কিন্তু স্ত্রীরাই একমাত্র চোখের শীতলতার কারণ নয়, প্রশান্তি পাবার আশ্রয় স্থল নয়। তাই যদি হতো, তাহলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলতেন না , সালাতেই দান করা হয়েছে আমার চক্ষুর শীতলতা। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২২৯৩; সুনানে নাসাঈ, হাদীস ৯৩৪০

অন্য হাদীসে বেলাল রা.-কে সম্বোধন করে বলেছেন,

সালাতের ব্যবস্থা করে আমাকে শান্তি দাও, হে বেলাল!। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯৮৫

একটি বিষয় বোঝার চেষ্টা করি, যদি স্ত্রীই সর্বোচ্চ প্রশান্তির উৎস হতো, তাহলে সাহাবাগণ স্ত্রীর সাথেই বেশি সময় কাটাতেন। স্ত্রীর উষ্ম স্পর্শ ছেড়ে তাহাজ্জুতে দাঁড়াতেন না; স্ত্রীর মায়াবি আচলের বাধন খুলে দিনের বেলা জিহাদের ময়দানে নামতেন না।

খালিদ বিন ওলীদ (রাঃ) বলতেন না, ‘আমি যেই নারীকে ভালবাসি তার সংগে আমার বিয়েও আমাকে ততটো আনন্দিত করবেনা, আমাকে যদি আমার ঔরসজাত কোন পুত্র সন্তান জন্মের সুসংবাদ দেওয়া হয় তাহলেও আমি ততোটা খুশি হবনা যতোটা খুশি আমি হব কোন এক হাড়কাঁপানো শীতের রাতে মুসলিম সৈন্যবাহিনীর সংগে কাফিরদেরকে আক্রমনের জন্য অপেক্ষা করা’

ভাই,আমরা তোমাকে বিয়ে করতে নিরুৎসাহিত করছিনা কোনোমতেই শুধু বাস্তবতাটা বোঝানোর চেষ্টা করছি। তুমি দেরি না করে অবশ্যই বিয়ে করে নিবে। বিয়ে তোমাকে অনেক পাপ পঙ্কিলতা থেকে রক্ষা করবে, অগোছালো জীবনটাকে গুছিয়ে দিবে, রিযিকে বারাকাহ দিবে, চোখ শীতল হবে। তবে তুমি এটা ভেবে বসে থেকোনা যে বিয়ের পর তোমরা রূপকথার রাজকন্যা রাজপুত্রদের মতো ‘সুখে শান্তিতে চিরকাল বসবাস করিতে থাকবে’। কখনো আকাশে ঝড় উঠবেনা।

দাম্পত্য জীবন মানে এই সুখের তুফান তো, এই ঝগড়াঝাটি, মন কষাকষি । কখনো ঝকঝকে রোদ তো কখনো কালো মেঘ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে পর্যন্ত মনোমালিন্য হতো। এখন তুমি যে পরীক্ষা যে কষ্টগুলোর সম্মুখীন হচ্ছো বিয়ের পরে হয়তো এই কষ্টগুলো আর থাকবেনা, কিন্তু তুমি তখন হয়তো অন্য অনেক পরীক্ষার সম্মুখীন হবে, অন্য দিক থেকে কষ্টের মধ্যে পড়বে। কাজেই এই ব্যাপারগুলো তোমার মাথাতে যেন থাকে, তুমি এগুলোর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে থাকবে।

আবারো বলছি, আমাদেরকে ভুল বুঝোনা। জলদি বিয়ে করে নাও। একটুকু দেরি করোনা। কিন্তু এই ব্যাপারগুলোও মাথাতে রেখো।