অনেকেই বাদশাহ ফয়সালের ব্যাপারে সুধারণা পোষণ করেন, তার একটি বিখ্যাত উক্তির কারণে। ফায়সাল মাসজিদুল আকসায় সালাত আদায়ের ব্যাপারে একটি কথা বলেছিল যা অনেক বিখ্যাত হয়। কিন্তু সে ছিল তার বাবার মতোই এক বিশ্বাসঘাতক এবং মিথ্যাবাদী। ফায়সালের মতো লোকেরা এসব সুন্দর কথার মাধ্যমে সাধারণ মুসলিমদের বোকা বানায়। এই ফায়সাল মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহ্‌হাবের বংশধরদের হত্যা করে। সে তাঁদের প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দেয়। কেন? কারণ সে এবং তার পরিবারের লোকেরা মনে করে ইমাম মুহাম্মাদের উত্তরসূরীরা তাদের জন্য হুমকি।

আল্লাহর শপথ! আল্লাহর শপথ! এই পৃথিবীতে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর জন্য বিজয় আনবে মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহ্হাব এর আদর্শিক উত্তরসূরীরাই। কারণ তিনি নতুন কিছু আনেননি। আমাকে একটি উদ্ধৃতি দেখান যেখানে তিনি নিজের থেকে কিছু বলেছেন। যা কিছু তিনি বলেছেন তার সবই হয় কুরআন, সুন্নাহ থেকে নেয়া অথবা নেয়া সালফে সালেহীনের কাছ থেকে। একারণেই পশ্চিমা বিশ্ব তাঁর বইগুলোকে নিজেদের জন্য হুমকি মনে করে।

দেখুন কিতাব আত-তাওহিদ, কাশফুশ শুবুহাত, উসুলুস সালাসাহ। এগুলো প্রাথমিক পর্যায়ের বই। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব এগুলোকে হুমকি মনে করে। কারণ এ বইগুলো এমন পুরুষ তৈরি করে যারা কেবল আল্লাহকে সার্বভৌম মনে করে। যারা আল্লাহর কালেমাকে বাকি সবকিছুর ওপরে তুলতে চায়।

এ বইগুলো ঐ ধরণের লোক তৈরি করে না যারা বলে আমরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি কারণ তারা আমাদের জমি দখল করেছে।

না, আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি কারণ তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শত্রু। আমরা যুদ্ধ করি আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। এটাই ইসলামের শিক্ষা এবং এটাই মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহ্‌হাব শিক্ষা দিয়েছিলেন।

আমার তো মনে হয় আজ যদি তিনি বেঁচে থাকতেন, তাহলে যারা তাকে সেই সময়ে সমর্থন করেছিলো তাদের বংশধরদেরকে তিনি আগে (আলে-সাউদ) তিনি তার দাওয়াহ শুরু করতেন। কেননা তারা ইসলাম বিরুদ্ধে অনেক, অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে।

আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি আনুগত্যের ব্যাপারে ইমাম মুহাম্মাদের বইয়ে আলাদা অধ্যায়ই আছে।

‘‘ওহে মুমিনগণ! ইহুদী নাসারাদের তোমরা অন্তুরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহন করোনা।’’ ( ৫:৫৫)

কোন প্রকৃত মুমিনকে আপনি আল্লাহর শত্রুর পক্ষাবলম্বন করতে দেখবেন না। এই আয়াত নিয়ে তিনি আলোচনা করেছে। তিনি আজ থাকলে বাস্তবে এই আয়াতের প্রয়োগ দেখতে চাইতেন। তাঁর সময়ে কবরপূজা, আল্লাহ ব্যাতীত অন্যের নামে শপথ, বিভিন্ন শিরক ব্যাপকভাবে ছড়ীয়ে পড়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে ছিলো, ইবনু তাইয়মিয়া এবং ইবনুল কাইয়্যিমের শিক্ষাকে মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহ্‌হাব বাস্তবে প্রয়োগ করেছিলেন। একইভাবে এখন আমাদের এমন একজন মানুষ দরকার যে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাবের শিক্ষাকে তুলে ধরব এবং বাস্তবে প্রয়োগ করবে। বিশেষ করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি আনুগত্য, কুফফার এবং বাতিল ফিরকার প্রতি অবস্থান এবং মুসলিমদের প্রতি ভালোবাসার ব্যাপারে তাঁর শিক্ষাকে বাস্তবে প্রয়োগ করার মত মানুষ দরকার।

মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে (লেকচারের কয়েক সপ্তাহ আগে) সৌদি বাদশাহ ইসমাইলী শিয়াদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে। ইসমাইলিরা একটা বাতিল ফিরকা। তারা কাফির। এমনকি শিয়ারাও এদের কাফির মনে করে। সৌদিতে এই ইসমাইলিরা সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল এবং একজনকে হত্যাও করেছে। এটা কয়েকমাস আগের ঘটনা। তারা ধরা পড়ে এবং বিচারে তাদের মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। এটা যখন অনুমোদনের জন্য বাদশাহর কাছে যায় তখন সে এই ইসমাইলি কাফিরদের শাস্তি কমিয়ে দেয়। মৃত্যুদন্ড পরিবর্তন করে কাউকে ৫ বছর, কাউকে ১০ বছর করে সাজা দেয়। কাউকে পুরোপুরি ক্ষমা করে দেয়া হয়। এটা হল ইসমাইলি কাফিরদের সাথে আলে সাউদের বাদশাহর আচরণ।

একই ঘটনা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর কিছু ভাইয়ের ক্ষেত্রে হয়েছিল। তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাঁদের দোষ কেবল এটুকুই ছিল যে তাঁরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসতেন এবং আল্লাহর শত্রুদের ঘৃণা করতেন। তাঁদের জেলে ছুড়ে দেয়া হয় এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মে ধরে তাঁরা জেলের অন্ধকার বন্দী থাকেন। যুগ যুগ ধরে তাঁদের সুযোগ হয় না সূর্যের আলো দেখার।

কেন?

কারণ এদের আল ওয়ালা ওয়াল বারা নেই। এদের কোন আকীদা নেই। আলে সাউদ যে আকিদার ব্যাপারে মানুষের সামনে গর্ব করে, মানুষকে দেখিয়ে বেড়ায়, যে পথের অনুসরণের কথা বলে, সেই আকিদা তাদের নিজেদের মধ্যেই নেই। এ বিষয়টা আপনাদের মনে রাখতে হবে। অনেক মানুষ এই বরকতময় দাওয়াহর বিরোধিতা করে কেবলমাত্র আলে সউদের সংশ্লিষ্টতার কারনে।

প্রথম সউদ, মুহাম্মাদ বিন সাউদের জীবন আমি গভীরভাবে নিরীক্ষণ করেছি এবং তার আপাতভাবে আমার কাছে মনে হয়েছে তাঁর নিয়্যাত এবং কর্মকান্ডে দোষণীয় কিছু ছিল না, এবং আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত। কিন্তু আব্দুল আযীযের সময় থেকে আজ পর্যন্ত আলে সাউদের কাছ থেকে আমরা গাদ্দারি, দুর্নীতি, কলুষতা এবং আল্লাহর হুকুম ব্যাতীত অন্য কিছু শাসন ছাড়া অন্য কিছু দেখিনি। আর মানুষ যে আজ সালাফি দাওয়াহর বিরোধিতা করে, যে দাওয়াহকে লোকে ওয়াহাবি দাওয়াহ বলে থাকে, এর বড় একটি কারণ হল এই আলে সাউদ।

আলহামদুলিল্লাহ, সমাপ্ত