একটা গ্রুপে পোস্ট চলছে বিয়ের ক্ষেত্রে ভার্জিন খোজা অন্যায় বলে। তাও তালাকপ্রাপ্তা বা বিধবা বিয়ে হলে চুপ থাকতাম। অতীতে ব্যভিচারে লিপ্ত মহিলাদের বিয়ের ক্ষেত্রে অনীহা কেন অনুচিত সে বিষয়ে পোস্ট! পোস্টগুলোর মূলভাব -তওবাহ করার পর মানুষ নিষ্পাপ হয়ে যায়। তাই অতীতে পাপের পর কেউ তওবাহ করলে সে মহাপবিত্র হয়ে যায়। অন্তরের খবর জানেন না কেউ। সে আপনার চাইতেও ভাল হতে পারে ইত্যাদি।

আমি এক পোস্টে কমেন্ট করেছি। পোস্টদাতা বা যারা এই ধরনের মত ধারন কারেন তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে খাটো করার জন্য নয় বরং তাদের মতের ভুলগুলো ধরানোর জন্যই আমার কমেন্টটি শেয়ার করলাম। পোস্টদাতার অসম্মানের ভয় করে মূলপোস্টের লিংক দিচ্ছি না। তাতে কমেন্টটি বুঝতে হয়তো অসুবিধা হতে পারে। তাছাড়া উনি ভুল বুঝতে পারলে পোস্টটিও হয়তো থাকবে না। তাই দিয়ে লাভও নেই।

----

২. আগে বিয়ে হওয়ায় ভার্জিন নয় এমন কাউকে বিয়ে করা বিষয়ে কারো আপত্তি থাকা উচিত নয়। বিশেষত যারা নিজেরা বয়ষ্ক, বা যাদের আগে বিয়ে হয়েছে বা আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে এটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু যখন সামাজিক চাপে পড়ে কোন পুরুষ মেনেই নিয়েছে যে সে কখনো একই সাথে একটির বেশি বিয়ে করবে না সে স্বাভাবিকভাবেই কুমারী নারীকে বিয়ে করতে চাইবে, এমনকি তার চাইতে বয়সে ছোটও চাইতে পারে। এক্ষেত্রে তাকে দোষ দেয়া যাবে না। কিন্তু কেউ যদি ব্যতিক্রমটি চায় সেক্ষেত্রেও তাকে দোষারোপ করা উচিত নয়। একেকজনের বাস্তবতা একেক রকম।

৩. অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক কোনভাবেই ছোট কোন ব্যাপার নয়। সবাই জানে যে এটা ঘৃণ্য কাজ। এমনকি সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলন হয়ে গেলেও এই কাজ ঘৃণিতই থাকবে। এটি নিছক বিড়ি সিগারেট টানা বা মদ গাজা সেবনের পর্যায়ের পাপ নয়। (বিবাহিতদের ক্ষেত্রে) এর শাস্তি মৃত্যুদন্ড, তাও খুবই যন্ত্রনাদায়কভাবে মৃত্যু। (অবিবাহিতদের জন্যও জামাই আপ্যায়ন না।) এর প্রতি লোকজনের ঘৃণাবোধ/অনীহা থাকা খুবই ভাল ব্যাপার। উমার (রা)ও অনুরূপ অনীহা প্রকাশ করেছিলেন পোস্টে উল্লিখিত ঘটনায়। আল্লাহর রাসুল (সা) নবী হিসেবে ওয়াহির মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পারতেন যা সাধারন লোকজনের অজানা। ঐ মহিলার তওবাহ কবুল হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল (সা) অবগত ছিলেন, উমার (রা) বা অন্যান্য সাহাবারা নন। তাই ওনারা ওনাদের স্বভাবসুলভ ঘৃণাবোধ প্রকাশ করেছেন। আল্লাহর রাসুল (সা) এই মহিলার তওবাহ কবুল হওয়ার ব্যাপারে এক্সক্লুসিভলি বলেছিলেন। এর দ্বারা প্রমাণ হয় না যে সকল ব্যাভিচারি/ব্যাভিচারিনী পাপ কাজ করে ধরা পড়ার পর তারা এই ঘটনার জন্য সরি বললে আমরা তাদেরকে মাথায় নিয়ে নাচবো।

৪. আঈশা (রা) এর বিরুদ্ধে অপবাদের ঘটনা থেকে মুসলিমদের জন্য অনেক শিক্ষনীয় ব্যাপার আছে। তবে এই ঘটনার শিক্ষা কোনভাবেই এটা নয় যে, ব্যাভিচার তেমন বড় কোন পাপ নয়। সিম্পল ডালভাতের মত ব্যাপার, অহরহ ঘটে। নবীর স্ত্রী পর্যন্ত এটা করেছে, নবী কিছু বলেন নাই, শুধু তওবাহ করতে বলেছেন। নাউযুবিল্লাহ। বরং আপনার এই উপসংহার খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়ে খুবই অসম্মানজনক এক পরিস্থিতি তৈরি করেছে নবী (সা) ও নবীপত্নীর (রা) ব্যাপারে।

৫. নিজের পাপ সর্বদা গোপন রাখতে হয়। কেউ যদি ব্যভিচার করে থাকে পূর্বে, এরপর তওবাহ করে সেক্ষেত্রে সে তার ঐ পাপ গোপন করবে। বলে বেড়াবে না। স্বামীর কাছে প্রয়োজনে মিথ্যাও বলতে পারবে। অর্থাৎ এই রকম কোন ঘটনা থাকলে এটা রাখ-ঢাকের মধ্যে থাকবে। কোনভাবে প্রকাশ পেলে সমাজের মানুষের উচিত ছি ছি করা। সমাজের মানুষ এতে ঘৃণাবোধ প্রকাশ না করাই বরং বৃহত্তর নৈতিক অধঃপতনের ইঙ্গিত।

কেউ তওবাহ করলে আল্লাহ তাকে মাফ করতে পারেন। আবার নাও করতে পারেন। তওবাহ্ করলে আল্লাহর নিকট সে নিষ্পাপ হয়ে যায়। আল্লাহ তওবাহকারীকে পছন্দ করেন। এই ব্যাপারগুলো সত্য এবং তওবাহের প্রতি উৎসাহিত করার জন্য এগুলো বলা হয়েছে। পাপে উৎসাহিত করতে নয়।

এই দলীলগুলোকে তওবাহ করার পর পাপীকে ঘৃণা করার জন্য বাধা হিসেবে সরাসরি প্রয়োগ ত্রুটিপূর্ণ। কারো পাপ কাজ প্রকাশ হয়ে পড়লে সে সামাজিক চাপের মুখে ভুল বলে স্বীকার করে। এটা যে ভুল সে তা আগে থেকেই জানতো, এমনকি ভুল করার সময়ও। তার তওবাহ আল্লাহর কাছে একটা আবেদন বা দরখাস্ত। আল্লাহতালা চাইলে মঞ্জুর করতে পারেন আবার আন্তরিক তওবাহ না হলে গ্রহন নাও করতে পারেন। তা বান্দা ও আল্লাহর মধ্যকার ব্যাপার। সেজন্য তওবাহ কখনো দুনিয়াবি কনসিকোয়েন্সকে দূর করে না। যেমন উল্লিখিত ব্যাভিচারী মহিলা তওবাহ করার পরে নিষ্পাপ হয়ে যাওয়ার পর তার মৃত্যুদন্ডের প্রয়োজন পড়ে না যেখানে স্বয়ং আল্লাহর রাসুল (সা) সত্যায়ন করেছেন তার তওবাহ কবুল হওয়ার ব্যাপারে।

৬. আমরা সবাই গুনাহ করি, গুনাহ করে তওবাহকারী উত্তম। তাই গুনাহ করে তওবাহকারী আমাদের চাইতে উত্তম। তাই কারো অতীত জীবনের পাপের কথা জানলেও আমাদের সবাইকে তাকে খুব উত্তম স্বভাব চরিত্রের ভাবতে হবে - এমন বাধ্যবাধকতা নাই।

কোন এক জনপ্রিয় নষ্টা মহিলার অনৈতিক কাজের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে একবার। সে তার কাজের জন্য অনুতপ্ত বলে বিবৃতি দিলে, নিজেকে তাহাজ্জুদ গুজার দাবী করলে এবং বোরখা নিকাব শুরু করলেই কি আমাদের সবাইকে তার অতীত ভুলে গিয়ে দ্বীনি বোন হিসেবে তাকে বিয়ে করার জন্য সিরিয়ালে দাড়াতে হতো? পত্রপত্রিকায় সম্ভবত এরকম শুনেছিলামও। মানুষের নিজেদের তওবাহ, ব্যক্তিগত আমল এসবই আল্লাহ ও বান্দার মধ্যকার ব্যাপার। এর দোহাই দিয়ে পাপকে স্বাভাবিকীকরনের মাধ্যমে কেবল ইতোমধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যাওয়া পাপে প্রচ্ছন্ন উৎসাহিতকরনই হয়। আপনার মন চাইলে আপনি তাদেরকে সম্মান করুন, বিয়ে করুন। সাধারন লোকজনকে তাদেরকে ভালভাবে নিতে বলতে পারেন না।


01/05/2019, 11:18