হিজাব করে মেয়েরা সব করতে পারে। হিজাবিরা চাঁদে গেল, মাউন্ট এভারেস্ট জয় করলো। হিজাবি পাইলট, সফল হিজাবি ব্যাবসায়ী, হিজাবি খেলোয়াড়, হিজাবি মেকানিক, ইঞ্জিনিয়ার, হিজাবি সাইন্টিস্ট, হিজাবি হেন হিজাবি তেন! একই সাথে আমরা প্রচার করি, “হিজাব ইজ নট অনলি এ পিস অব ক্লোথ অন ইউর হেড” এবার একই সাথে হিজাব করে আপনি কী কী করতে পারেন (মানে সব ই করতে পারেন আর কি) তা প্রমাণে ব্যাস্ত। what a contradiction!

আমরা আসলে কী চাই? প্রমাণ করতে চাই যে, মাথায় এক টুকরা কাপড় নিয়ে মেয়েরা দুনিয়া জয় করতে পারে, অতএব হে নারী দুনিয়া জয় করার পূর্বে তুমি অতি অবশ্যই মাথায় কাপড়টি পেঁচিয়ে নাও। তাতে আমাদের কাফিরদের সামনে এটা প্রমান করতে সুবিধা হবে যে, আমরা আমাদের মেয়েদের বন্দী করে রাখিনি। দেখ তারা তোমাদের মেয়েদের চেয়ে কোনদিকেই পিছিয়ে নেই। আর হিজাবি বোনরাও পাল্লা দিয়ে এখন ঘর এবং বাহির দুটোই ব্যালেন্স করার সেই আদি চ্যালেঞ্জে অবতীর্ন!

হিজাব পরে (মানে যেভাবে দেখানো হয়, মাথায় ১টা কাপড় পেঁচিয়ে) সব কিছু করা কি আসলেই বড় কোন ব্যাপার? যারা হিজাব পড়ে তারা সত্যিই জানে যে, আজকাল এটা আসলেই তেমন কোন ব্যাপার না (যদি না সেই স্কার্ফ পড়াতেও কিছু মানুষের এলার্জি থাকে এবং অবশ্যই দেশ ভেদে হিজাবীদের অভিজ্ঞতাও ভিন্ন ভিন্ন)। হিজাব পড়াশুনা, চাকরি, ব্যাবসা, কোন কিছুতেই কোন সমস্যা না, যতদিন আমরা socially acceptable হিজাব নিয়ে চলব। মানে এমন হিজাব যাতে হয়তো কেবল মাথাটাই ঢাকলাম আর সব কিছুই আগের মত চালিয়ে গেলাম, চোখ, কান, জিহবা বা আচরনের হিজাবের ব্যাপারেও সতর্ক হলাম না, ইসলামের অন্যান্য বিধানগুলি মেনে চলতে সচেষ্ট নই, এমনকি ফরজ ইবাদাত গুলির ব্যাপারেও উদাসীন।

সত্য হলো, দুনিয়া আমাদের চুল দেখার জন্য মোটেই উদগ্রিব নয়। বরং এমন হিজাবে আমরা হয়তো নারীদের ফ্যাশনেই কিছুটা বৈচিত্র্য নিয়ে আসবো। তাছাড়া আর কিছু নয়। (আল্লাহ ক্ষমা করুন।)

এই প্রচারণা করে আমরা আসলে কি লক্ষ্য হাসিল করতে চাচ্ছি? নন-হিজাবি মেয়েদের হিজাবের দিকে আকৃষ্ট করতে? কিন্তু হিজাবের দাওয়াত দেয়ার আগে কি ঈমান, আকীদা, ইবাদাত, সালাহর দাওয়াত দেয়াই বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়? মা’বুদকে না চিনে, ইসলামকে না বুঝেই, নড়বড়ে আকীদা নিয়ে, হিজাবের উদ্দেশ্য পরিষ্কার না করে, চকমকে হিজাব নিয়ে সফল ক্যারিয়ারের হাতছানিতে অনেক মেয়েই হিজাবের দিকে উড়ে উড়ে আসছে বলেই হয়তো, হিজাবীদের আনাগোনা ফ্ল্যাশমবে, ইউনিভার্সিটর কালচারাল প্রোগ্রামে, হলুদ সন্ধ্যার নাচের আয়োজনে, পহেলা বৈশাখে লাল, সাদা হিজাবে।

আমরা সব চাই, একসাথে।

দুনিয়া জয় করাই কি মুসলিম মেয়েদের লক্ষ্য হওয়া উচিত? আমাদের সুপেরিওরিটি প্রমাণ করতে চাওয়ার ব্যাকুল ইচ্ছাই কি প্রমাণ করে না আমাদের নিজেদের মনের কমপ্লেক্সিটি?

সমান অধিকারের সংজ্ঞা, ইসলামে নারীর অত্যাধিক মর্যাদা, দায়িত্ব কি আসলেই আমাদের কাছে পরিষ্কার? যদি না হয়, হয়তো আমাদের উচিত কোন ফ্যাশনে হিজাব পড়বো তা ভাবার আগে, সূরা ‘নিসা’ র ম্যাসেজগুলি ভালোভাবে আত্মস্থ করে নেওয়া। এটি পূর্ণাংগই ১টি সূরাহ যা কেবল ‘নিসা’ দের মর্যাদায় অবতীর্ন, যেখানে ‘নিসা’ দের দায়িত্ব ও অন্যায়ের শাস্তির বিধানের পাশাপাশি তাদের মোহরানা, মিরাস, স্ত্রী, কন্যা, মা এমনকি এতিম ও দাসী হিসেবেও সামাজিক মর্যাদা, অধিকার নিশ্চিত করা, নিজ নিজ উপার্জন ও সম্পদের সুরক্ষা দেয়া, বিরোধ মীমাংসার বিধান সব কিছু বর্নিত আছে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে। যেখানে পুরুষকে আপনার কর্তা (আপনার উপর দায়িত্বশীল) করে আবার একই সাথে তিরষ্কারের সুরে মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে যে, তাদের কী হয়েছে যে, তারা আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে নামছে না! সুবহানাল্লাহ! অধিকার নিয়ে যুদ্ধ করার আগে একবার যেন আমরা খোলা অন্তরে আমাদের রবের ম্যাসেজগুলি পড়ে ও উপলব্ধি করে দেখি। সমান অধিকার আমাদের বাসে পুরুষের সাথে দাঁড় করিয়েই রাখবে, আর আল্লাহর অধিকারে পুরুষ শিক্ষকটিও আপনার জন্য দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থেকে আপনাকে আগে ঢুকতে দিবেন।

আমরা যখন হিজাব মাথায় নিয়ে দুনিয়ায় নিজ নিজ ক্যারিয়ারে সফলতার শীর্ষে উঠে গর্ব ভরে মাইকে ১টা বক্তৃতা দিতে যাই, “দেখুন আমার হিজাব আমার কোন কাজেই প্রতিবন্ধকতা নয়”, তার আগে একবার ভেবে কি নেই, আখিরাতের মঞ্চে কি একইভাবে গর্ব ভরে নিজের আমলনামা হাতে নিতে পারবো কিনা? দুনিয়াতে অনেক মানুষের হাততালি, বাহবা হয়তো আমরা পাবো, কিন্তু আখিরাতের ব্যাপারে নিশ্চিত তো? পর্দা মেনে পর্দার সামনে আসার চেয়ে , যে মানুষটা কেবল আল্লাহকে ভয় করেই পর্দার পেছনে রয়ে যায়, হয়তো আখিরাতে তার দাবী আমাদের চেয়ে অনেক বেশি হবে মা’বুদের কাছে। আফটার অল, আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য তো আখিরাতে নিজ নিজ আমলনামা ডান হাতে পাওয়া। তাই নয় কি?

আল্লাহ আমাদের সবার অন্তরগুলি পরিষ্কার করে দিন, নিয়্যাতগুলিকে পরিশুদ্ধ করে নিতে ও লক্ষ্যগুলি স্থির করে নিতে সাহায্য করুন। আমরা সবাই নিজ নিজ অন্তরের কাছে জিজ্ঞাসা করি, দায়বদ্ধ হই কেবল আমাদের মালিকের কাছে, শৃঙ্খলিত না হই নিজেদের প্রবৃত্তি ও শয়তানের ইচ্ছের কাছে। আমরা যে যতটুকুই হিজাব করছি কেবল আল্লাহকে খুশি করার জন্যই যেন তা করি ও নিজের আত্মিক ও বাহ্যিক উন্নতির জন্য কোন সীমাবদ্ধতা বেঁধে না ফেলি। দুনিয়ায় হিজাবের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হয়ে ক্যারিয়ারের সাফল্য অর্জনের ইচ্ছা কোনভাবেই আমাদের আখিরাতের সাফল্য অর্জনের চেয়ে বড় যেন হয়ে না যায়। আমীন ।