আমাদের সমাজে "তালাকপ্রাপ্ত" কথাটা বিশাল অর্থ বহন করে। সত্যি বলতে একজন নারী যখন তালাকপ্রাপ্ত হয়, তা সে নিজে থেকেই নিয়ে থাকুক কিংবা স্বামীর পক্ষ থেকেই দেওয়া হয়ে থাকুক, যা-ই হোক না কেন, তার জন্য এটাই সবচেয়ে বড় পরিচয় হয়ে দাঁড়ায়।

আমার আম্মুর এক কলিগের কথা সেদিন শুনছিলাম। মেয়েটির প্রথমে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়, বিয়ের পর তিনি লন্ডনে চলে আসেন। কিন্তু স্বামী তার উপর প্রচণ্ড অত্যাচার চালাত। শারীরিক-মানসিক কিছুই বাদ ছিল না। একসময় মেয়েটি আর সহ্য করতে না পেরে তালাক নিতে বাধ্য হয়।

এই দেশের কথা যারা কিছুটা হলেও জানেন, তারা জেনে থাকবেন, এখানে স্পাউস ভিসায় আসা প্রত্যেকের ভিসা তার বিয়ে টিকে থাকার উপর নির্ভর করে, বিশেষ করে প্রথম কিছু বছর। ধরুন, এক লোক তার স্ত্রীকে স্পাউস হিসেবে আনতে চাচ্ছে। স্ত্রী হয়তো স্পাউস হিসেবে তিন বছরের ভিসা নিয়ে এখানে এসেছে, কিন্তু দেড় বছরের মাথায় তাদের ডিভোর্স হয়ে গেলো। তখন সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীর ভিসাটাও বাতিল হয়ে যাবে।

এ ধরনের আধুনিক বিশ্বে একবার আসলে কেউই আর দেশে ফিরতে চায় না, বিশেষ করে যাদের ইসলামি জ্ঞান কম, তারা এখানকার এত আরাম-আয়েশ, সুযোগ-সুবিধা বাদ দেয়ার কথা চিন্তাও করতে পারে না। তো এমন একজন নারী কতোটা অসহায় হলে তার ভিসা, তার চাকরি, তার মান-সম্মান কোনোকিছুর পরোয়া না করে ডিভোর্স নিতে পারে?

আল্লাহর ইচ্ছায় মেয়েটা ডিভোর্স নিয়ে দেশে ফিরে যায়, এরপর আবারও পরিবারের সম্মতিতে অন্য এক জায়গায় বিয়ে হয়। ভালোভাবে খোঁজখবর করে বিয়ে হওয়ার পরেও দেখা যায়, এবারের স্বামীটি ড্রাগ-অ্যাডিক্ট, যা স্বামী ও তার পরিবার পাত্রীপক্ষের কাছে সুকৌশলে গোপন করে গেছে। অ্যাডিকশনের প্রভাবের কারণে লোকটার বাচ্চা হচ্ছিল না।

এত কষ্টের পর দ্বিতীয় বিয়ে হওয়া সত্তেও মেয়েটা মা হতে পারল না। উল্টো স্বামীর অত্যাচারে অতীষ্ট হয়ে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নিলে সবার কাছে তাকেই নানারকম খোঁটা শুনতে হয়। এই সমাজে ডিভোর্সের রূপ কী পরিমাণ ভয়াবহ তা ততদিনে মেয়েটার জানা হয়ে গেছে, তাই সে দ্বিতীয়বার ডিভোর্সের কথা ভাবতেও ভয় পায়! অথচ বয়স বেড়ে যাচ্ছে। এতদিনেও মেয়েটার না হলো সুন্দর একটা সংসার, না হলো মা হওয়া..।


ডিভোর্স আমাদের কারো জন্যই সুখকর কোনো বিষয় না। সাধারণত কেউই তালাক নিতে চায় না। অনেকেই পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাধ্য হয়ে "শেষ অপশন" হিসেবে এই পথ বেছে নেয়। ডিভোর্সি নারী-পুরুষের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। এরা কোথায় যাবে? এদের কি আর কখনও একটা সুন্দর সংসার হবে না? এদের সন্তানেরা কি বাবা-মা অলা একটা পূর্ণাঙ্গ পরিবারের স্বাদ থেকে আজীবন বঞ্চিত হবে?

যা বলছিলাম, আমাদের সমাজে "তালাকপ্রাপ্ত" নারী-পুরুষ, বিশেষ করে ডিভোর্সড নারীদের জন্য এটাই হয়ে যায় সবচেয়ে বড়ো পরিচয়। হয়তো সে একজন দ্বীনদার নারী, হয়তো সে কুরআনকে অন্তরে ধারণ করার ইচ্ছায় ক্রমাগত হিফজের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, হয়তো সে দ্বীন শিখছে, শেখাচ্ছে, হয়তো সে দাওয়াহর কাজে রত থাকছে... এ সমস্ত কিছুই মলিন হয়ে যায় ঐ একটা কথার সামনে, "তালাকপ্রাপ্ত"। অথচ এই পরিচয়গুলোই আমাদের কাছে বড়ো হওয়ার কথা ছিল...

আমার ঘটকালি জীবনে আমি এমন কোনো বোনের জন্য এখনও কোনো পাত্র খুঁজে পেতে সফল হই নি- এটা নিয়ে আমার অনেক দুঃখ আছে, তবু আমি ধরে নিই এটা আমারই ব্যর্থতা। হয়তো আমার এ ধারণা ভুল যে দ্বীনি সমাজে ডিভোর্সড নারীদের দ্বিতীয় বিয়ের জন্য পাত্র পাওয়া যায় না! নিশ্চয়ই এমন ভাই অনেক না হলেও অল্পকিছু আছেন, যারা নিজেরা ডিভোর্সড হোক কিংবা না হোক, একজন ডিভোর্সড পাত্রীকে শুধু "তালাকপ্রাপ্ত" শুনেই বাদ দিয়ে দেবে না, বরং তার বাদ বাকি সুন্দর গুণাবলির জন্য অন্য সবার মতোই তাকে হবু জীবনসঙ্গী হিসেবে একবার বিবেচনা করে দেখবে।

--

তালাকপ্রাপ্তা
By: আনিকা তুবা


জনৈক ভাইয়ের মন্তব্য—

বোন এসব ইউটোপিয়ান মটিভেশনাল লিখা পজ দিয়ে এবার নারীদের উদ্দেশ্যে লিখুন কিভাবে কারো দ্বিতীয় স্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যায়। একপেশে বাস্তবতা বিবর্জিত মটিভেশানাল লিখা পড়ে অনেকেই বিশাল নদীকে খাল মনে করে ঝাপ দিতে পারে।

দ্বিতীয় বিয়ের ব্যপারে বৈরী এই সমাজে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর পক্ষ থেকে কি পরিমান সাপোর্ট একজন পুরুষের লাগতে পারে সে ব্যপারে ধারনা দিন। লিখুন কিভাবে এমন একটা স্বামীকে ভাল বাসা যায় যার আরেকটা স্ত্রী আছে।

আর দ্বীনদার বিবাহিত বোনদের লিখুন তারা যেন তাদের স্বামীকে আরেকটি মেয়ের সাথে শেয়ার করার মানসিকতা তৈরী করেন। বোনেরা তার স্বামীর মাঝে সাহাবাদের চরিত্র চান কিন্তু তিনি বুঝতে চাননা কিভাবে সেই সমাজ এবং সেই মানুষ তৈরী হয়েছিল। ইমাম শাফেয়ী একজন নারীর পায়ের গোড়ালি উন্মুক্ত দেখে তার স্মৃতিশক্তির উপর সেটার নেগেটিভ প্রভাব অনুভব করতে পেরেছিলেন। এই যুগে আমাদের যুবকরা অবশ্যই শুধু পায়ের গোড়ালি দেখে না।

একজন দ্বীনদার বোন বলবেন, "কত দীনদার দেখেছি সব ছেলেই সুন্দরী খোঁজে।"
খোঁজবেইত! আরেকটা বিয়ে করতে চাইলে আপনিইত আপনার স্বামীকে বলবেন, "আমার লাশের উপর দিয়ে....।" একটা ছেলে যদি জানত যে তার যদি প্রয়োজন হয় সে একাধিক বিয়ে করতে পারবে তাহলে একজন দ্বীনদার ছেলে সর্বদাই অন্য কিছুর ব্যপারে কড়াকড়ি না হয়ে পাত্রীর দ্বিন্দারিত্বের ব্যপারে জোর দিতে পারত। সে তো রাস্তার বিলবোর্ড ও টিভির পর্দার নিউজ প্রেজেন্টার দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে চাইবে না।

আপনি দ্বীনদার বোনদের লিখুন, "আপি আপনি সহজেই সমাজে পলিজিনির একটি সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারেন।" এটা ত আপনার জন্য আরো গর্বের বিষয় হতে পারত যে আপনার স্বামী একজন সাহসী পুরুষ যে কি না একাধিক পরিবারের দায়িত্ব নেয়ার যোগ্যতা রাখেন।

আমি মনে করি নারীদের "তালাক প্রাপ্তা" স্টিগমার জন্য নারীরাই বেশী দায়ী।