স্টেটমেন্ট ১: প্রসুর অবিবাহিত ভাই ব্রাদার আছেন যাদের কাছে সুন্দরী পাত্রী খোঁজার কারণ জানতে চাইলে বলে, "আমি চাই সুন্দরী কাউকে যেন বিয়ের পর অন্য কারো সৌন্দর্য্যের ফিতনায় না পড়ি।"

স্টেটমেন্ট ২: অনেক বিবাহিত ভাইয়েরা বলে থাকেন, "বিয়ের ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত ভালবাসা থাকে, এরপর সৌন্দর্য/ভালবাসা থাকে না।"

এবার আসেন হাকিকত বলি, আসলেই বিয়ের পর কি হয়।

আগে অবিবাহিতদের থিওরি। স্ত্রীর সৌন্দর্য্য মেটারস টু সাম এক্সটেন্ড। এমন না যে সুন্দরী স্ত্রী না হলেই আপনি ফিতনায় পড়বেন, সুন্দরী হলে পড়বেন না। আপনার ঘরে যদি সুন্দরী স্ত্রী থাকে, তবু আপনি বাইরে নজর হেফাজত না করে চলেন, আপনার স্ত্রীর ঐ মাতাল করা সৌন্দর্য্য আপনার কাছে ফিকে হয়ে আসবে। বাইরের বেপর্দা, এক্সপোসড স্টুপিডদেরকে চোখে বেশি সুন্দর দেখাবে। শয়তান খারাপ জিনিসকে সুন্দর করে ধরবে আর সুন্দরকে খারাপ।

স্ত্রী যদি হূর্পরী নাও হয়, সে আনুগত্যশীলা, বিনয়ী স্বভাবের হয়, তাহলে এই সৌন্দর্য আপনার কাছে অনেক বেশি ভ্যালু রাখবে। ট্রাস্ট মি, অনেক হূর্পরীর জামাইরা আফসোস করে, হায় যদি মোটামুটি সুন্দর কাউকে বিয়ে করতাম, যদি শ্যামলা, কালো কাউকে বিয়ে করতাম আর তার আনুগত্য আমার চোখের প্রশান্তি হত!

আর ধরেন আপনার স্ত্রী সুন্দরী/মোটামুটি/মোটামুটিও না, কিন্তু সে আনুগত্যশীলা, বিনয়ী হলেও আপনি যদি নজরের হেফাজত না করেন, দিন শেষে ঐ স্ত্রী আপনার চোখের শীতলতা হবে না। আপনার বাইরের এক্সপোসড স্টুপিডদেরকেই বেশি ভাল লাগবে।

সো, সুন্দরী বিয়ে করলেই ফিতনামুক্ত দাম্পত্য জীবন কাটবে, এটা বড় ভুল ধারণা।

এবার বিবাহিতদের স্টেটমেন্টে আসি। ঐ ৬ মাস থেকে ১ বছর পর কি চলে যাবে এটা ক্লিয়ার না। এটা কি শুধু ভালবাসা একে অন্যের প্রতি স্বাভাবিক মায়া মমতা, কেয়ারিং; নাকি এটা কামনা বাসনা, সেক্সচুয়াল ব্যাপার গুলো?

যদি সেক্সচুয়াল ব্যাপার হয়; হ্যা এটা সত্য যে ৬ মাস, ১ বছর পর এগুলো মিনিমাইজড হয়ে যাবে। একজন অবিবাহিত ছেলের মাথায় বউ শব্দটা আসলে মাথায় স্বাভাবিকভাবে যা ঘুরপাক খায়, সেটা ১ বছরের বিবাহিত পুরুষের বেলায় অনেক ভিন্ন। বিয়ের পর ইটস মোর লাইক, রেস্পন্সিবিলিটি, তার ফিজিক্যাল ওয়েল বিং, ফ্যামিলির ভরণপোষণ, হায়রে রেগে আছে তারে কেমনে যে মানাই, হুদাই গেল বাপের বাড়ি কি এমন করলাম, ফোন বন্ধ রাখার কি হল এতে; ইত্যাদি মেটারস।

এমনও না যে ফিজিক্যাল ডিমান্ড একেবারেই থাকবে না, তবে এটাকে নিয়ে যেভাবে একজন অবিবাহিত যুবক ফ্যান্টাসিতে ভুগে, ব্যাপারটা মোটেও তেমন না।

আর যদি কমে যাওয়ার মানে ভালবাসা কমে যাওয়া হয়, তাইলে ঐ নজরের সমস্যা। বাইরে, ফোনে যেকোন জায়গায় নজরের হেফাজত না থাকলে স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা, মায়া কমে যায়। আর সৌন্দর্যের অভিযোগের ব্যাপারটাও সেইম। বাইরে চোখকে দেদারসে ঘুরতে দিলে ঘরনীর সৌন্দর্য্য সে চোখে ফুটবে না। হারামে তখন আরাম খুঁজবে, যেটা কখনো পাওয়ার না।

মোদ্দাকথা, গুনাহ ছাড়তে হবে। তাকওয়াহ না থাকলে চার বউ নিয়েও লাভ নাই। কেউ ভাইবেন না যে, কোন পুরুষ যদি তাকওয়াহ এর জন্য সেকেন্ড বিয়ে করতে চায় এতে দ্বিমত করছি, না। অনেক সময় বিবাহিত থেকেও অনেক জটিল অবস্থায় পড়ে যায় অনেকে, তখন সেটা জরুরি হয়ে দাঁড়ায়।তবে বিয়ে করলেই কেউ নিরাপদ হয়ে যায় না। হ্যা জিনিসটা সহজ হয়।


তবে বিয়ের পর শয়তানের গেইমের লেভেল ভিন্ন। আপনি যখন অবিবাহিত, শয়তানের বিপক্ষে শুধুই আপনি। এই স্টেজের ডিফিকালটি আলাদা। সবকিছু আপনার উপর, আপনার তাকওয়া লেভেলের উপর, আপনার গুনাহ ছাড়ার উপর ডিপেন্ডেড।

যখন আপনি বিবাহিত, তখন শয়তানের বিপক্ষে আপনারা দুইজন। এই স্টেজের ডিফিকালটি আগের থেকে বেশি, মানে শয়তান এ স্টেজে আরও সূক্ষ্ণ সূক্ষ্ণ চাল চালাবে। একটু আপগ্রেডড। এ স্টেজে দুইজন একসাথে শয়তানের মোকাবেলা করতে হয়। কেউ একজন পিছিয়ে গেলে শয়তান ছো মেরে নিয়ে তাকে অন্যজন থেকে আলাদা করে দিবে। একজনের তাকওয়া, গুনাহ করা, গুনাহের প্রবণতা, গুনাহ ছাড়া অন্যজনের উপর প্রভাব ফেলবে। আমার নিজের বেলাতেই অনেক দেখেছি যে যখনই কিছু একটা সিরিয়াস পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে, দোষ নিজের না হলেও সেটা ছিল নিজেরই করা কোন গুনাহের কনসিকোয়েন্স।

এই লেখার উদ্দেশ্য কখনোই বিয়ে থেকে অনুৎসাহিত করা না। বরং দুইটা স্টেটমেন্ট এর আসল হাকিকত জানানো। অনেকেই সুন্দরী ছাড়া বিয়েই করবে না, আবার অনেকে ৬ মাস পরে কি হবে না হবে ভেবে ভয়ে বিয়েই করতে চায় না। তাদের উদ্দেশ্যে এই সংশয় নিরসন।