আমাদের জীবনটা ত খুব ছোট। তার মধ্যে এক চতুর্থাংশ চলে যায় বড় হতে, শিখতে, বুঝতে। বড় হওয়ার পরেও তিন ভাগের একভাগ কাটে ঘুমিয়ে আর নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ সারতেই। বাকি এত অল্প সময়টার মধ্যে পড়াশুনা, চাকুরি, ব্যবসা – এসব করব কী, সংসার চালাব কী.. আর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজই বা করব কী?

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করাও ত চাট্টিখানি কথা নয়, আগে জানতে ও বুঝতে হবে, নিয়্যতটাকে পরিষ্কার করতে হবে, তবেই না! এসব করে সেরে মোটামুটি সংসারের দায়িত্ব সেরে টেরে হিসেব মেলাতে গেলে দেখা যায়, ওমা! কবে জীবনের দুই তৃতীয়াংশ শেষ করে ফেলেছি, টেরই পাইনি! এখন এই শেষ সময়ে তড়িঘড়ি করে দানের টাকা দিয়ে ফেলা, একটু বেশি করে তজবি জপা.. সারাদিন জায়নামাজে বসে থাকা – এসব করতে হয়।

কিন্তু ওসবেও ত সমস্যা। আল্লাহ ত চান ভারসাম্যপূর্ণ জীবন। যখন যেখানে সুবিধা সেখানে হেলে পড়লে ত আর ভারসাম্য হল না। আল্লাহ চান আপনি যখন অফিসের কাজে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তখনও আল্লাহ কে খুশি করুন, ছেলে মেয়ে দুটোর পরীক্ষা পরদিন সকালে – সিলেবাস শেষ করাতে করাতে আল্লাহকে মনে করুন.. এমন। তাহলে কীভাবে হবে?

এজন্যই, আমরা দিনের একেবারে খুঁটিনাটি ঘটনায় আল্লাহকে এনে ফেললে আর দিন শেষে তজবির উপর ভরসা করে থাকতে হবে না। এখানে অত্যন্ত সরল সোজা কিছু টিপস্ দেই।

প্রতিদিন একটু হাঁটা হয়না? হাঁটার সময়টা কী করেন আপনি? পা দিয়ে ত হাঁটাই হয়, মনটা দিয়ে কী করা হয়? কিছুই না, তাইনা? এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখা, আগের বা পরের কিছু ভাবা – এসবই ত! এখন থেকে হাঁটার ছন্দের সাথে ছোট দু’আ (যেমন সুব-হা-নাল্-লাহ, ওয়ালহাম-দু-লিল্-লাহ, ওয়ালা-ইলাহা-ইল্লাল্-লাহু, ওয়াল্-লাহু-আক্ব-বার, অথবা সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী সুবহানাল্লাহিল আযীম) মিলিয়ে পড়তে পড়তে হাঁটবেন। প্রথম প্রথম মনেই থাকবে না পড়ার কথা। তারপর একটা সময়ে পুরোপুরি প্রোগ্রাম হয়ে যাবে মাথার ভেতর। দিনে কত কদম হাঁটা হয়? দুহাজার? প্রতি ষোল কদমে যদি একবার করে দু’আটা শেষ করা হয়, দিন শেষে কতগুলি নেকী জমা পড়ল? কোন কষ্ট ছাড়াই?

এই ত গেল হাঁটা। গোনাগুনির কাজ করতে হয়না? আটটা ডিম, ছ’টা কলম, তিন তলা, কুড়িটা সিঁড়ি? এক দুই তিন করে না গুণে ‘সুবহানাল্লাহ’ ‘ওয়ালহামদুলিল্লাহ’ ‘ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ ‘ওয়াল্লাহু আক্ববার’ – এভাবে চার চার করে গুণে ফেলুন। একদম কোন ঝামেলা ছাড়া আরও আট দশবার দুআ পড়া হয়ে যাবে। গায়েই লাগবেনা।

তারপর নতুন সূরা শেখা হয়না কতবছর হল? শিখতে চান? পছন্দের তিলাওয়াতকারীর তিলাওয়াতের এমপিথ্রি চালিয়ে দিয়ে রাখুন মোবাইলে, গাড়িতে, ঘর গুছানোর সময় – গানের মত পুরোটা মাথায় কপি হয়ে যাবে দু’সপ্তাহ পর। এভাবে শুনে শেখার আরো সুবিধা হচ্ছে উচ্চারণও শুদ্ধ হবে, কোথায় কতটুকু বিরতি দিতে হবে, সব জানা হয়ে যাবে।

ক্লাসে যাবেন, বাজারে যাবেন, অফিসে যাবেন, জ্যামে বসে আছেন, মেজাজটা তিরিক্ষি – সময়টা কাজে লাগান একটা অডিও লেকচার শুনে। সেটা হতে পারে কুরআনের তাফসির, নবীদের জীবনী, পারিবারিক সম্পর্কের উপর ইসলামিক আলোচনা.. শুধু যে মেজাজ রক্ষা পাবে তাই না, অলস সময়টাতে অনেক ভাল ভাল চিন্তা মাথায় চলে আসবে। হঠাৎই হয়ত মনে হবে, ‘আরে! এই কাজটা ত করা যায়!’ ব্যাস, কোন রিকশাওলা কোন দিক দিয়ে ঢুকে গেল – এসব দেখে আর মেজাজ খারাপ হবে না। আপনি ত আর আপনার সময় নষ্ট করছেন না! ওরা যা ইচ্ছে করুক না!

এগুলো ছিল একদম কোন আয়াস ছাড়াই সওয়াব কুড়ানোর পদ্ধতি। এবার আসি একটু শ্রম দিতে হয় এমন কাজে। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ভাল লাগে? তক্কে তক্কে থাকুন, কখন অসুস্থ হয় (তাই বলে আবার দোয়া করতে যাবেন না যেন অসুখে পড়ে); হলেই মিস নেই, দেখতে যান, ফোন করে খোঁজ নিন, অন্য সময়ের চেয়ে দুইবার বেশি ফোন দিন। শুধু বন্ধুর অসুখই না, বন্ধুর পরিবারের যে কারোর বেলায়ও। আল্লাহ ভীষণ খুশি হন এসব কাজে। আর তার উপর যদি আল্লাহকে খুশি করার নিয়্যতে করেন, তাহলে ত ডাবল লাভ!!

দাওয়াতে কোন মুরুব্বী কারও সাথে দেখা হয়? নানু দাদু শ্রেণীর, যারা পার্টি টার্টিতে চুপচাপ এক কোণে বসে থাকেন, সবাই দেখা হলে সালাম দিয়ে চলে যায়, কিন্তু কথা বলে না এমন বয়সের? পাশে গিয়ে বসে কথা বলতে শুরু করুন। এমনভাবে আধা ঘন্টা গল্প করুন, যাতে তাঁর মনে হয় এই সমাবেশে উনার সাথে সময় কাটিয়েই আপনি সবচেয়ে বেশি মজা পাচ্ছেন। চলে আসার সময় দেখবেন প্রাণঢালা দোয়ার ওজনে হাঁটতে পারছেন না।

পরিচিত মানুষজনের সাথে এমনভাবে নরম করে কথা বলা শুরু করুন, যাতে কেউ সমস্যায় পড়লে আপনার কাছে বলতে ভরসা পায়। তারপর সমাধান করতে পারেন না পারেন, একটু সুন্দর করে বলুন, ‘হ্যা… সত্যিই ত… আসলেই ত সমস্যা… ধৈর্য ধরে থাকেন ভাই! আপনার ত অনেক ধৈর্য মাশাআল্লাহ!’ হয়ে গেল! সে ভাই খুশি, আল্লাহ খুশি, আপনি খুশি। খুশিই খুশি।

যদি দেখেন কেউ একটা ভাল উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু কাজটা সুন্দর করে হয়নি দেখে অনেক সমালোচনা করছে সবাই… খুব উৎসাহ দেখান। বলুন, জিনিসটা খুবই ভাল হয়েছে। সে যখন উৎসাহে টগবগ করতে থাকবে – তখন না হয় সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে খুঁতগুলো ঠিক করার পরামর্শ দেবেন। ভাল কাজে এই যে উৎসাহ দিলেন, চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন – এতে করে আল্লাহ সে ভাল কাজের সওয়াবে আপনারও একটা অংশ লিখে রাখবেন ইনশাআল্লাহ।

ফিরে আসি হাঁটার কথায় আবারো। চাইলে এক জোড়া গ্লাভস/পলিথিন সাথে করে বের হতে পারেন। রাস্তায় ঠোঙা, পেপসির ক্যান, পলিথিন পড়ে থাকতে দেখলে তুলে ডাস্টবিনে ফেলে দেবেন। রাস্তার জিনিস পলিথিন মোড়া হাত দিয়ে ধরলে কিন্তু হাত খসে পড়ে যায় না। আমরা টাকা ধরার সময় আরো অনেক জীবাণু ধরি। আর ভাববেন না, আমি মিউনিসিপ্যালিটির পয়সা বাঁচানোর জন্য আপনাকে দিয়ে ফ্রি ফ্রি কাজ করাচ্ছি। এগুলো সব সদকা। আখিরাতে ভাল কাজের পাল্লা ভারি করার কিছু ফ্রি টিপস।