এই লেখাটা পড়ার আগে—

**ইনজেকশনের বিষ** লেখাটা কি আপনার পড়া আছে? না থাকলে ওই লেখাটা আগে পড়ে নিন, তারপর এই লেখাটা পড়ুন। নতুবা এই লেখাটা পড়ে হয়ত আপনার কোন লাভ হবে না : )

[১]

সে ছিলো ভীষণ লাজুক। কৈশোর সবে পেরিয়েছে। ঘর থেকে একা বেরুত না। ঘর-কন্যার সামান্য ব্যাপারেই লজ্জায় মায়ের কোলে মাথা গুঁজে দিত। বাবা আর ভাই ছাড়া কোন পুরুষ মানুষকে সে ভালো করে জানতো না। তার বয়স এমন হয়ে গিয়েছিল যে, বাবার আদর আর ভাইয়ের প্রশ্রয় ছাড়াও স্বামী ব্যাপারটি সম্পর্কেও সে জেনে ফেলেছিল আর মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করছিল। বাবা-মা আর ভাইটি তাকে তাদের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতো। আজন্মা লাজুক এ মেয়েটির জন্য তারা ভালো একটি ছেলে খুঁজছিলো। কন্যা আর বোনের আসন্ন বিদায়ের বেদনায় নিকষ কালো রাতে সবার অজান্তে বাবা আর ভাইটি গোপনে অশ্রু ঝরাতো।

মেয়েটির নাম ছিলো ফাতিমা

আমার ঘরের বাইরে প্রকাণ্ড সাউন্ড বক্সে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ারের’ গান বাজছে- “ঝান্ডু বাম……।” প্রচন্ড শব্দে কান পাতা দায়। পাড়ার ছেলেরা চিৎকার করে করে নাচছে। ফাতিমার ঘরের বাইরেও প্রচন্ড শব্দ হতো, এবং প্রায় প্রতিদিনই। শব্দগুলো ছিলো বোমা আর বুলেটের। তার বাসাটা ছিলো বাগদাদে।

সে রাতটিও ছিলো নিকষ কালো রাত। বোনটি স্বামীর ঘরে চলে যাবে এটা ভেবেই ভাইটির চোখ বেয়ে নিরব অশ্রুপাত হচ্ছিলো। বাসার বাইরে কি কোন শব্দ হলো? গাড়ি থামার শব্দ? গুলি আর বোমার ভেতরে তাদের বসবাস, কিন্তু এটা তো অন্য শব্দ। এবার বাসার বাইরে থেকেই গুলির শব্দ পাওয়া গেলো। ফাতিমাদের ছোট্ট এই পরিবারের সবাই জেগে উঠলো। চোখের পলকে দরজা ভেঙে গেলো আর হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়লো একদল আমেরিকান সেনা। ফাতিমার পরিবারের অন্যদের কি অবস্থা হয়েছিল তা জানা যায়নি, তবে তার বাবা-মা-ভাইটি এমন ছিলোনা যে তারা বেঁচে থাকতে ফাতিমাকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে দেবে। যে ফাতিমা বাবা বা ভাইকে ছাড়া একা কোথাও সফর করেনি, সেই ফাতিমাকে নিয়েই আমেরিকান হামফ্রে জিপটি রাতের বোমার আওয়াজ ছাপিয়ে এগিয়ে চলল আবু গারিব কারাগারের দিকে।

আহ, ফাতিমা।

সে কি আমার আপনার বোনটি নয়? কী করা হলো তার সাথে?

একদিন, দুদিন, তিনদিন… সময় চলে যায় কিন্তু তার কোন খবর আসেনা। তবে কি তার ভাগ্যে তাই হলো যা আরো অসংখ্য বোনের হয়েছিলো, যারা চিরতরেই হারিয়ে গিয়েছিলো সবার কাছ থেকে?

কয়েকদিন পর একটি গোপন চিঠি এলো আবু গারিব থেকে।

এতো ফাতিমার চিঠি। কী লিখেছে সে? আসুন দেখি……………


“বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইছি। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

ক্বুল হু ওয়াল্লাহু আহাদ (বল আল্লাহ এক)
আল্লাহুস সমাদ (আল্লাহ অমুখাপেক্ষী)
লাম ইয়ালিদ (তিনি কাউকে জন্ম দেননি)
ওয়ালাম ইউলাদ (না তাঁকে কেউ জন্ম দিয়েছে)
ওয়ালাম ইয়া কুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ (তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই)—সুরা ইখলাসঃ ১-৪

আমি শুরুতে এই সুরার উদ্ধৃতি দিলাম, কেননা আমি মনে করি মহান আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরার জন্য এই সুরাটিই সবচেয়ে ভালো, আর মুমিনদের অন্তরে এই সুরাটি দৃঢ়ভাবে গেঁথে আছে।

আল্লাহর পথে লড়াইরত আমার ইরাকী মুজাহিদ ভাইয়েরা,

আপনাদের কাছে আমার কিইবা বলার আছে? শুধু এতটুকুই বলি, আমার মতো এমন অসংখ্য ইরাকী বোনের গর্ভে এখন মার্কিন সেনারূপী পশুদের বাচ্চা। এরা আমদের অসংখ্যবার ধর্ষণ করেছে। তারা আমাদের শরীরকে নষ্ট করে দিয়েছে, আমাদের মুখে থুথু ফেলেছে আর যে কুরআনকে আমরা গলায় ঝুলিয়ে রাখি, সে কুরআনকে তারা ছিঁড়ে ফেলেছে।

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।

আপনারা কি আমাদের অবস্থা উপলব্ধি করতে পারছেন না? আপনারা কি এখানকার অবস্থা সম্পর্কে জাননে না?

আমরা আপনাদের মুসলিম বোন, আমরা আপনাদের মুসলিম বোন। আল্লাহ কাল এ ব্যাপারে আপনাদের কাছ থেকে হিসাব নেবেন।

আল্লাহর শপথ, আমরা এমন কোন রাত কাটাইনি, যে রাতে পশুরূপী মার্কিন সেনারা আমাদেরকে ধর্ষণ করার জন্য আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েনি। আমরা হচ্ছি তারা, যারা আল্লাহর ভয়ে নিজেদের সতীত্বকে রক্ষা করে চলতাম।

আল্লাহকে ভয় করুন। ও ভাই, আল্লাহকে ভয় করুন।

আমাদের সহ তাদেরকে মেরে ফেলুন। আমাদের সহ তাদেরকে ধ্বংস করে ফেলুন। আমাদের এখানে এভাবে ফেলে রাখবেন না। আমাদের এখানে এভাবে ফেলে রাখবেন না, যাতে তারা আমাদের ধর্ষণ করে আনন্দে থাকতে পারে। এটা আপনাদের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্য পাবার একটা পথ হবে।

আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করুন। মার্কিনদের ট্যাংক ও বিমানকে উপেক্ষা করুন। আবু গারিবে আমাদের কাছে আসুন। আবু গারিবে বন্দীদের কাছে আসুন। আমি আপনাদের মুসলিম বোন ফাতিমা। আমি আপনাদের মুসলিম বোন ফাতিমা। একদিন তারা আমাকে নয়বারেরও বেশি ধর্ষণ করেছে। নয়বারেরও বেশি………………

আপনারা কি উপলব্ধি করতে পারেন না? ও ভাই, আপনারা কি উপলব্ধি করতে পারেন না? কল্পনা করুন, আপনার আপন বোনকে যদি তা করা হতো………।

আপনারা কেন আমাকে বোন হিসাবে নিচ্ছেন না? আমি আপনাদের বোন, আপনারা কেন আমাকে বোন হিসাবে নিচ্ছেন না?

আমার মত এখানে আরো তেরোজন মেয়ে আছে, সবাই অবিবাহিতা। সবাইকেই প্রত্যেকের সামনে ধর্ষণ করা হয়েছে। তারা আমাদেরকে নামাজ পড়তে দেয় না। তারা আমাদের কাপড় কেড়ে নিয়েছে এবং আমাদের পোষাক পড়তে দেয় না।

আমি যখন এই চিঠি লিখছি, তখন একটি মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। তাকে বর্বরভাবে ধর্ষণ করা হয়েছিলো। একজন সৈন্য তাকে ধর্ষণ করার পর তার বুক ও উরুতে আঘাত করে। সেই সৈন্যটি তাকে অবিশ্বাস্যভাবে নির্যাতন করে। মেয়েটি এরপর দেয়ালের সাথে মাথা ঠুকতে শুরু করে। দেয়ালের সাথে মাথা ঠুকতে থাকে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত………সে আর সহ্য করতে পারছিলো না।

যদিও আত্মহত্যা করা ইসলামে হারাম, আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি, আমি আশা করি আল্লাহও তাকে ক্ষমা করে দেবেন কারণ তিনি হলেন সর্বোত্তম ক্ষমাশীল।

মুসলিম ভাইয়েরা, আমি আপনাদের আবার বলি—আল্লাহকে ভয় করুন। আমাদের সহ তাদের মেরে ফেলুন যাতে আমরা শান্তি পেতে পারি।

আবু গারিব কারাগার থেকে আপনাদের বোন ফাতিমা…।”


আমার বাসার বাইরে প্রচন্ড শব্দে গান বাজছে। মুসলিম পরিচয় নিয়ে একদল ছেলে নেচে চলেছে। আজ যাদের ফাতিমার কষ্টে একাত্ম হয়ে সাহায্য করার জন্য আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন, তারা উন্মত্ত অশ্লীলতায় নিজেদের ভেতর হ্যাপি নিউ ইয়ার সেলিব্রেশনে মত্ত। মুখে আর মোবাইলের ম্যাসেজে চলছে তাদেরই একনিষ্ঠ অনুসরণ, যারা একদিনে আমাদের বোন ফাতিমাকে নয়বার ধর্ষণ করেছে। আল্লাহ কি আমাদের এমনিই ছেড়ে দেবেন? অবশ্যই না, আমাদের সাবধান হওয়া উচিৎ এখনি, কেননা তিনি বলেছেন, “ইন্না বাতশা রাব্বিকা লাশাদিদ” (নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালকের পাকড়াও অত্যন্ত কঠোর)।

আবু উসাইদ, ১ ডিসেম্বর, ২০১২


পরিশিষ্টঃ

ফাতিমার চিঠি পাবার পর প্রায় একশ মুজাহিদ আবু গারিব কারাগারে হামলা চালায়। সামান্য রসদের এই অসামান্য দলটি আমেরিকান সেনাদের হাই ভোল্টেজ সিকিউরিটি সত্ত্বেও কারাগারের একটি দেয়াল ধ্বসিয়ে দিতে সক্ষম হয়। ইরাকী মুসলিম মুজাহিদদের একটি ওয়েব সাইটে ফাতিমার চিঠির জবাব দেয়া হয়েছে এভাবে—

“দুঃখিত বোন, আমরা সত্যিকার অর্থেই মানুষ নই। সত্যিই যদি মানুষ হতাম তাহলে তোমার চিঠি পাবার পর আবু গারিব কারাগার ধুলায় মিশিয়ে দিতাম।”

[২]

সময়টা তখন ১৯৭২। পাকিস্তানে জন্ম হল একজন নারীর। বাবা মা নাম রেখেছেন আফিয়া সিদ্দিকি। সফলভাবে পড়াশোনার প্রাথমিক পর্ব শেষ করে আমেরিকায় আসেন ১৯৯০ সালে। তিনি ইউনিভার্সিটি অফ হিউস্টনে ৩ সেমিস্টার পড়েন, এরপর স্কলারশিপ পেয়ে ভর্তি হন এমআইটিতে। তারপর আমেরিকার ব্রান্ডেইস ইউনিভার্সিটি থেকে নিউরোসায়েন্সের উপর পিএইচডি সম্পন্ন করেন ২০০১ সালে। তিনি নিউরোসায়েন্সের উপর ১৪৪টি সম্মানসূচক ডিগ্রি লাভ করেন বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। তিনি বিশ্বের একমাত্র নিউরোলোজিস্ট যাকে হার্ভাড সম্মানসূচক পিএইচডি ডিগ্রিতে ভূষিত করে।

তিনি ছিলেন পবিত্র কুরআনের হাফেজা, ছিলেন একজন আলিমা।

মুনাফিক পারভেজ মুশাররফ সরকার তাকে আল কায়েদাকে সাহায্যের মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমেরিকার হাতে তুলে দেয়। করাচির রাস্তা থেকে ৩ সন্তানসহ তাকে কিডন্যাপ করা হয়। তারপর তাকে আফগানিস্থানের কুখ্যাত বাগরাম কারাগারে ৫ বছর ধরে আটকিয়ে রাখা হয়। তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি কুফফার আমেরিকা। তার ২ সন্তানকে ফেরত দেয়া হয়। কিন্তু একজনকে আর পাওয়া যায়নি। ছোট বাচ্চাটা হয়ত শহিদ হয়ে গেছে কুফফারদের হাতে। তারপর ৮৬ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় এই মহীয়সী নারীকে। দিনের পর দিন তাকে কারাগারে নির্যাতন করা হয়। চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়। বিবস্ত্র করে পবিত্র কুরআনের উপর হাটতে বাধ্য করা হয়।

বছর খানেক আগে পাকিস্তানি মিডিয়া দ্যা নেশন এ ‍‍‌‌‌‌‌‍”মা‍‍‍‍‍‍‍র্কিন কারাগারে ক্যান্সারে আক্রান্ত আফিয়া সিদ্দিকী” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি হুবহু উপস্থাপন করা হল—“মার্কিন কারাগারে ৮৬ বছর কারাদন্ড ভোগরত পাকিস্তানি বিজ্ঞানী ড. আফিয়া সিদ্দিকী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। তা ছাড়া যৌন নির্যাতনে তিনি গর্ভবতীও হয়েছেন বলে তার বোন ফৌজিয়া সিদ্দিকী অভিযোগ করেছেন। দ্যা নিউজ ট্রাইবের সাথে আলাপকালে ফৌজিয়া বলেন তিনি হাউস্টনের পাকিস্তানী কনসাল জেনারেলের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন স্বাস্থ্য পরীক্ষায় আফিয়ার ক্যান্সার ধরা পড়েছে। তিনি আরো বলেন, আগে খবর পাওয়া গিয়েছিল, বন্দী থাকাকালে যৌন নির্যাতনের কারণে তিনি গর্ভবতী হয়েছিলেন।

কারাগারে বন্দী ডঃ আফিয়া সিদ্দীকা থেকে প্রেরিত চিঠি।

“আমার প্রিয় জাতি,

আমি আফিয়া সিদ্দিকা। পড়াশুনা করেছি ম্যাসাচুসেটস ইন্সিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে তিন সন্তান নিয়ে এই আশায় যে আমার উচ্চশিক্ষা আমার জাতির কাজে লাগবে। আমাকে আমার নিজ দেশ থেকে আমার মুসলিম ভাইয়েরা অপহরণ করেছে এবং আমেরিকার কাছে বিক্রি করেছে। আমাকে জঘন্যভাবে বিবেচনা করা হয়েছে, ধর্ষণ করা হয়েছে এবং নির্যাতন করা হয়েছে এবং বারবার আমার নাম দেওয়া হয়েছে বন্দি নং ৬৫০। আমার বন্দিত্বের বছরগুলোর প্রতিটি সেকেন্ডে আমি প্রার্থনা করেছি একজন মুহাম্মাদ বিন কাশিমের আফগানিস্থানের মত একটি মুসলিম দেশে।

আমি পৃথিবীর দেড়শ কোটি মুসলিম জনসংখ্যার একজন বোন। আমার জাতি ঐতিহাসিকভাবে বিখ্যাত তার নাগরিকদের মর্যাদা এবং নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে। উমার রাঃ বলেছিলেন, আরাফাতের নদীর নিকটে যদি কোন কুকুর মারা যায় তার জন্য আমাকে পরকালে জবাবদিহি করতে হবে। এখন আমি নিজে হাটতে পারি না। আমার একটি কিডনি সরিয়ে ফেলা হয়েছে এবং বুকেতে বুলেট লাগাতে আমি আহত। এবং আমি জানি না আমি বাচতে যাচ্ছি না মরতে যাচ্ছি। আমি আমার বোন হওয়ার দাবি তুলে নিতে যাচ্ছি। আমি মুহাম্মাদ সাঃ এর একজন গর্বিত অনুসারি। আমি উমার, আবু বাকার, আলি এবং উসমান রাঃ এর মেয়ে, তাদের বন্ধু এবং তাদের সত্যিকারের অনুসারী।

আমি আর তোমাদের বোন হতে চাই না। তারাই আমার উদ্ধারকারী এবং আমি আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে সাহায্য চাই না। আমি একজন পাকিস্তানি হতে চাই না যাদের প্রায় ৬০০০০০ এর মত সেনাবাহিনীর সদস্য এবং বিশেষ বাহিনী এস এস জি থাকার পরও আমাকে রক্ষা করতে ব্যর্থ। তারা শপথ করেছিলো সাহায্য করার কিন্তু যখন আমি সাহায্যের জন্য তাকিয়ে ছিলাম তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

আমার তথাকথিত মুসলিম উম্মাহর লাখ লাখ সেনাবাহিনী, ট্যাঙ্ক, সাবমেরিন এবং যুদ্ধবিমান রয়েছে। তারপরও তারা আমাকে রক্ষা করতে ব্যর্থ। চিন্তা করো না এই ভেবে যে পরকালে তোমাদের জিজ্ঞাসিত হতে হবে। কারণ তোমরা আমার মুসলিম ভাই নও। তোমরা আরবিক, পারসিক, আলজেরিয়ান, পাকিস্তানি কিন্তু তোমরা মুসলমান নও।

যদি আমি তোমাদের আঘাত দিয়ে থাকি তাহলে আমি দুঃখিত। কিন্তু তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না আমি কতটা ব্যথিত……”

[৩]

(ক) জাতিসংঘের বিশেষ নিরাপত্তা ক্যাম্প, চিনকারা ফ্যাক্টরি। সেখানে আশ্রিতদের অভয় দেওয়া হয়েছিল তারা সেখানে নিরাপদ। ১২ বছর বয়সী মিনা স্মেইলোভিক আর তাঁর ১৪ বছর বয়সী চাচাত বোন ফাতা স্মেইলোভিক বসে ছিলেন।

তাদের দিকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের পোশাক পরা কিছু সৈন্যের নজর পড়ে। এই দুই বোন আর সাথে নিজামা অরিক নামে আরও এক যুবতীকে তুলে নিয়ে যায় সৈন্যরা। মেয়ে তিনটি কয়েক ঘণ্টা পর ফেরত আসে।

তাদের গায়ে কোনও কাপড় ছিল না, দেহজুড়ে আঁচড় আর কামড়ের চিহ্ন ছিল। মাত্র ১২ বছরের মিনা আর ১৪ বছর বয়সী ফাতার লজ্জাস্থান থেকে রক্তপাত হচ্ছিল প্রবলভাবে। এমনকি রক্তাক্ত শরীর ধোয়ার মত পানিও সেখানে ছিল না।

(খ) সেই শহরেরই আরেকটি ঘটনা। জাতিসংঘের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে, যারা পাহারায় ছিল নেদারল্যান্ডের শান্তিরক্ষী বাহিনী। জারা তুর্কোভিচ এক রাতের বর্ণনা দেন, তারা আধঘুমে।

চার জন সার্ব সৈন্য তাদের মধ্য থেকে একজন তরুণীকে তুলে নিল, আর কয়েক পা দূরেই ধর্ষণ করতে শুরু করে। দুজন সৈন্য দুই পা ধরেছিল, ৩য় জন রেপ করছিল, মেয়েটি যখন প্রচণ্ড কান্নাকাটি আর সাহায্য প্রার্থনা করছিল, তখন সৈন্যরা তাঁর মুখেও র‍্যাগ করে।

জারার ১৯ বছর বয়সী বোন ফাতেমাও সেখানেই ছিল, সে ভয়ে তাঁর বোনের ৪ সন্তানকে আঁকড়ে ধরে। ফাতেমা বলেছিল, তিনি ভেবেছিলেন তারা হয়ত একজন মায়ের প্রতি আগ্রহী নাও হতে পারে। কিন্তু ফাতেমাকেও একই কায়দায় ধর্ষণ করা হয়।

পূর্ব বসনিয়ায় পটোকারি শহর ছিল জাতিসংঘের বিশেষ নিরাপত্তা এলাকার অন্তর্গত। সেখানেই এই চিনকারা ফ্যাক্টরি। শুধু কি মুসলিম নারীদের ক্ষেত্রেই এমন ঘটেছে? তা নয় বরং ছেলে শিশুদের উপরও একইরকম নির্যাতন হয়েছে।

এমন বহু ঘটনার কথা জানা গেছে যখন বেছে বেছে ১০/১১ বছরের বালকদের নিয়ে যাওয়া হত, আর যাদের কখনোই ফিরে পাওয়া যায় নি। আন্দাজ করতে অসুবিধে হয় না, এরা হত্যার আগে বলৎকারের শিকার হয়েছিলেন।

(গ) বসনিয়ায় যে ভয়াবহ জাতিগত নিধন চলছিল মুসলমানদের উপর তার এক পর্যায়ে নানা নাটকের পর জাতিসংঘ সেখানে শান্তিরক্ষী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়।

কিন্তু যেখানে ৩৭ হাজারের বেশি সৈন্য প্রয়োজন ছিল সেখানে মাত্র ৭ হাজারের মত সৈন্য মোতায়েন করা হয়। এর মধ্যে কার্যকরভাবে মোতায়েন ছিল মাত্র ৩ হাজারের কিছু বেশি সৈন্য।

জাতিসংঘ সেব্রেনিকা শহরকে সেফ জোন হিসেবে ঘোষণা করলেও সেখানে ৬ হাজার সৈন্যের প্রয়োজনের বিপরীতে মোতায়েন করেছিল মাত্র কয়েকশ ডাচ শান্তিরক্ষী। সেটাও আবার খুবই সাধারণ অস্ত্র সজ্জিত অবস্থায়।

সব কিছু সাজানোই ছিল। ফলে কোনও রকম বাঁধা ছাড়াই ডাচ সৈন্যদের একপ্রকার সহায়তায় সেখানে ১১ জুলাই শহরটি দখলে নিয়ে ব্যাপক গণহত্যা শুরু করে সার্বরা।

লাইনে দাঁড়িয়ে হত্যা করে নিরাপত্তার ঘোষণা দেওয়া ৮ হাজার মুসলিম যুবক ও নাবালেগ ছেলেদের। সেই গণহত্যার প্রমাণ থাকা ভিডিওচিত্রটি ধ্বংস করেন সেখানে জাতিসংঘের নিযুক্ত ডাচ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা। এভাবেই খোদ জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে যাবতীয় প্রমাণ লোপাট করা হয়।

এই খবরগুলো গোপন কিছু না। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, নিউইয়র্ক টাইমস এবং দি ইন্ডিপেনডেন্টের রিপোর্টে এগুলো আলোচনায় এসেছিল।

(ঘ) পনেরো শতকের শেষে ১৪৯০ সালে বসনিয়াতে যখন উসমানি খিলাফত বিজয়ী বেশে প্রবেশ করে তখন সেখানে মুসলিম ছিল ৯৯ জন। যুদ্ধবর্তী এক বছরেই সে সংখ্যা দাঁড়ায় ২০৫৪৬ জনে।

এমনকি সমগ্র বসনিয়া বিজিত হওয়ার পূর্বেই সেখানকার মুসলিমরা হয়ে উঠে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী। সেই বসনিয়াতেই ১৯৯২-৯৫ যুদ্ধে ১ লাখ মুসলিম পুরুষ হত্যার শিকার হয়েছিলেন। আর ২৫ হাজার নারী ধর্ষিত হয়েছিল।

আর ৯৫-এর ১১ জুলাই কেবল একদিনেই হত্যা করা হয়েছিল ৮ হাজার জনকে। বসনিয়ার এই ঘটনা মুসলমানের জন্য পশ্চিমা দুনিয়া আর জাতিসংঘকে বুঝার জন্য যথেষ্ট সহায়ক।

(ঙ) উল্লেখ করার মত ব্যাপার হচ্ছে, ২০১৯ সালে পিটার হ্যান্ডকে নোবেল পেলেন সাহিত্যে। ৯০ এর দশকের তামাম সময়টা জুড়েই তিনি ছিলেন সার্বিয়ানদের চালানো এই হত্যাকাণ্ডের পক্ষে প্রত্যক্ষ প্রচারণা চালানো লোক।

৯৫’ এর জুলাইয়ে চালানো হত্যাকাণ্ডের কিছুদিনের মধ্যেই তিনি লিখতে শুরু করেন “A Journey to the Rivers: Justice for Serbia” নামে ভ্রমণ কাহিনী। সেখানে তিনি সার্বিয়ান দানবদের মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর চালানো গণহত্যাকে অস্বীকার করেন।

তিনি তার লেখালেখি, বক্তৃতা ও আলোচনার মধ্য দিয়ে সার্বিয়ানদের গণহত্যা, খুন, ধর্ষণ ও অন্যসব জুলুমের লেজিটিমেসি দেন, এডভোকেসি করেন।

এইরকম ভয়ঙ্কর মানবতাবিরোধী, সন্ত্রাসের মদদদাতা, গণহত্যার বিস্তারে ভূমিকা পালনকারী, শিশু ধর্ষণ ও খুনের বৈধতাদানকারী এবং প্রত্যক্ষ প্রচারণায় শামিল একজনকে নোবেল দেওয়া হলো সাহিত্যে। যিনি তার অপরাধের মাধ্যম বানিয়েছিলেন সাহিত্যকে।

নোবেল ঘোষণার সময় এইসব কিছুই যে বিবেচনায় নেওয়া হয় নি—তা কিন্তু কেবল এইজন্যই যে—এই খুন, গণহত্যা, ধর্ষণের শিকার মুসলমানেরা। ভিক্টিম মুসলমান না হলে ঠিকই দুনিয়ার সর্বত্র পিটার হ্যান্ডকে ঘৃণিত থাকতেন।

শিগগিরই আমরা দেখতে পাব, এই রক্তলুলুপ পিটার হ্যান্ডকে মহৎ করে এদেশের পত্রিকায়, সেক্যুলার পাড়ার সাহিত্যাঙ্গণে আলাপ উঠবে। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের পাঠে সে উঠে আসবে।

[৪]

শাহবাগের ইস্যুটা যখন সারাদেশে আলোচনার কেন্দ্রে তখন একটা স্লোগান খুব জনপ্রিয় ছিল। “তুমি কে আমি কে, বাঙালী…বাঙালী।” কতবার মাথা নিচু করে শাহবাগের ভেতর দিয়ে যাতায়াত করেছি, কতবার এই কান ফাটা স্লোগান শুনেছি। কেউ বুঝে, কেউ না বুঝে, কেউ তালে, কেউ বেতালে। দেশপ্রেমের ফাঁকা বুলি। যেদিন আল্লাহর রহমতে দ্বীনের বুঝটুকু পেলাম, যেদিন বুঝলাম আমি একটি উম্মাহর অংশ সেদিন…। সেদিন থেকেই সীমান্তের এই কাঁটাতারে আমার ঘৃণা জন্মালো। অরুচি আসলো এই জঘন্য জাতীয়তাবাদের মিথ্যে অহমে। আমরা মুসলিম। আমরা একটি জাতি, একটি উম্মাহ, একটি পরিবার। এই মুসলিম উম্মাহ একটি দেহের মত যার পায়ে একটি কাঁটার আঘাতেও সারা শরীরে ব্যথা অনুভূত হয়, হওয়া উচিত।

আরেকটি ৩১ ডিসেম্বর। আরেকটি বছরের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে নতুন একটি বছরের বরণ করে নেওয়ার কুৎসিত আর নোংরা কিছু আনুষ্ঠানিকতার অংশ হতে হয়তো আপনিও প্রস্তুত। পছন্দ করে কিনে রেখেছেন নিউ ইয়ার কার্ড, লিখে রেখেছেন সুন্দর কোন SMS, প্রিয়জনের জন্য কিনে রেখেছেন কোন উপহার কিংবা নতুন বছরের প্রথম দিনটাতে মোজমাস্তির যাতে কোন কমতি না হয় সেজন্য বুকিং দিয়ে রেখেছেন কোন নাইট ক্লাব কিংবা বারে! আপনিও মুসলিম। আপনার ফেসবুক ইনফোতেও লেখা আছে—‘proud to be a muslim’.

আপনিও শুক্রবারে ক্লিন শেভ করে আয়রন করা পাঞ্জাবীটা আলমিরা থেকে নামিয়ে জায়নামাজটা বগলদাবা করে জুমার নামাজে যান। মিলাদে হুজুরের লম্বা মুনাজাতে আবেগাপ্লুত হয়ে আপনিও হয়তো কোনদিন চোখের পানি মুছেছেন। মুসলিম উম্মাহর দুর্দশায় ফেসবুকে জ্বালাময়ী স্ট্যাটাস সেঁটে, ধুম থ্রির HD প্রিন্ট ডাউনলোড দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। আর দশজনের মত আপনারও নিশ্চয় অগাধ বিশ্বাস যে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, তিনি আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন কিংবা জাহান্নামে পুড়িয়ে হলেও সরিষা দানা পরিমাণ ঈমানের জন্য একদিন জান্নাতে দাখিল করবেন! হ্যাঁ ভাই আপনাকে, আমি আপনাকেই বলছি। বারো মাসে তেরো পূজার মত সারাবছর জুড়ে অগণিত আনন্দ উৎসবে মুশগুল এই আপনাকে আজ আরেকটি উৎসবের আগে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি আপনার পরিবারের সাথে, আপনার দেহের সাথে, একটা উম্মাহর সাথে।

এক যুবতী, তাকে রাস্তার মধ্যখানে ফেলে রাখা হয়েছে, অতঃপর তার শরীর থেকে সব ধরনের কাপড় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, অথচ সে হচ্ছে মুসলিম সচ্চরিত্রবান পর্দানশীন, এরপর প্রায় একশ (কসাই) বাশারের কুলাঙ্গার তার সম্ভ্রম লুন্ঠনে ধেয়ে আসছে। মানুষ তখন আতঙ্কে দেয়ালের পিছনে লুকায়িত, কিন্তু যখুনি কোনো লোক আড়াল থেকে বের হয়ে এই যুবতীকে উদ্ধারে এগিয়ে আসে, তাকে উঠিয়ে কিছুদুর নিয়ে যায়, তখন তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়, এভাবে একের পর এক কয়েক যুবক এই যুবতীকে উদ্ধারে শহীদ হয়েছে!!! আরেক ব্যক্তি, তাকে বলা হয়েছে, বল, বাশার ছাড়া কোনো ইলাহ নেই! কিন্তু সে এই ঘৃণিত ঈমানবিধ্বংসী কথা বলেনি, সে বলেছে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। অতএব তাকে জীবন্তাবস্থায় মাটিতে গর্ত খুড়ে দাফন দিয়েছে!!!

এটা সিরিয়ার বর্তমান অবস্থা। আপনার বাড়ির মেয়েটা কি নিউ ইয়ার কনসার্টে ঠিকঠাক মত পৌছেছে? ফোন করে খবর নিয়েছেন তো? তাকে আনতে যাবে কে, আপনি? নাকি মেয়ে সারারাত মোজমাস্তি করবে এই ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার মত মধ্যযুগীয় আপনি নন?

ক্রিসমাস উপলক্ষে আরব আমিরাতে $১১ মিলিয়ন ব্যয় করা হয় ক্রিসমাস ট্রিগুলোকে জেমপাথর (এক ধরণের দামী পাথর) দিয়ে সাজাতে। এরকম একটা ছবিতে আরব শেখকে দেখলাম হাসিমুখে পোজ দিতে। আপনি নিউ ইয়ারের ধামাল কনসার্টের যে টিকিটটা কিনেছেন তার দামও নিশ্চয় হাজার টাকা! আর ভারত মাতার দিদি আর দাদাবাবুরা আসলে তো কথাই নেই। ২০১৪ সালের টি-টিয়োন্টি বিশ্বকাপের টিকিট কিনতে নিশ্চয় রাত জেগে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন? আপনাকে সেদিন দেখলাম সাকিব তামিমের মাসিক আয়ের হিসেব নিয়ে বন্ধুদের সাথে বেশ আড্ডা জমিয়েছেন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এখনো টপ ফাইভেই আসতে পারেনি খুবই টেনশনে আছেন তাইনা? ওদিকে মেসির ইনজুরির খবর কী? চ্যম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে সে থাকছে তো? আচ্ছা আসন্ন বিশ্বকাপ টি টোয়েনটির জন্য কাকে কাকে একাদশে রাখলে ভাল হয় কিছু ভেবেছেন?? ব্রাজিল বিশ্বকাপের জন্য LED টিভিটা ব্যবস্থা করে রেখেছেন কি? ২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে কাঠামোগত উন্নয়নের জন্য কাতার খরচ করতে যাচ্ছে প্রায় $২০০ মিলিয়ন! অন্যান্য খরচ তো বাদই দিলাম। তবে খরচটা একটু কম হয়ে যাচ্ছে কি বলেন?? এদিকে আপনার পছন্দের টিমের জার্সি, ফ্ল্যাগ, হাজারো আনন্দের পসরা সাজিয়ে বসবে কুফফাররা! আহা কতকাজ এখনো বাকি! আজকের নিউ ইয়ারের মজাটা করে নেন তারপর প্ল্যান করে মাঠে নামা যাবে!

অনেকদিন আগে আবু গারিব কারাগার থেকে একটা চিঠি আসল। মুসলিম উম্মাহর ভাইদের উদ্দেশ্য করে লিখলো এক ইরাকি বোন ফাতেমা। সে লিখলো তাকে দিনে নয়বারেরও অধিক ধর্ষণ করা হয়েছে। সে সহ আরো মুসলিম বোনদের পেটে আমেরিকান কুত্তাদের সন্তান। সে উদাত্ত আহ্বান জানালো তার ভাইদের কাছে তারা যেন আবু গারিব কারাগারে যায়। তাদের সহ জালিমদের যেন কারাগার সহ ধ্বসিয়ে দেয়। আপনি হয়তো তখন হলিউডের নতুন মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির ক্রিটিক বর্ণনা করছিলেন বন্ধুদের কাছে। GRE, TOEFL নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন আর দোয়া করছিলেন আমেরিকার ভিসাটা যেন এবার আল্লাহ হয়! ফাতেমার সেই চিঠি পাওয়ার পর অল্প কিছু মুজাহিদিন আবু গারিব কারাগারে হামলা চালায়। কুফফারদের ভারী অস্ত্রসস্ত্রের সামনে তারা জানতো তাদের কিছুই করার নেই তারপরও তারা গিয়েছিল আর আবু গারিব কারাগারের একটা দেয়াল ধ্বসিয়ে দিয়েছিল। আপনি হয়তো খবরটাও শুনেছিলেন আর ফেসবুকে পোস্টও করেছিলেন ক্যাপসন দিয়ে, “জঙ্গিদের জ্বালায় আর বাঁচিনা।“

খুব দেরি হয়ে যাচ্ছে? বন্ধুরা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে? আপনি না গেলে কিছু জমবেই না? এই আরেকটু আপনাকে বেশিক্ষণ আটকে রাখবো না!

হ্যাঁ যা বলছিলাম গত দুইদিনেই সিরিয়ায় বাশারের বিমান হামলায় শহীদ প্রায় পাঁচশত। আপনি ভিডিও গেমে নিশ্চয় একদিনেই এর চেয়ে বেশি মারতে পারেন! সিরিয়ায় এখন চলছে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াভহ শৈত্যপ্রবাহ! রিফিউজি ক্যাম্পগুলোতে আমাদের মুসলিম ভাই বোনেরা আছে সীমাহীন কষ্টে! কয়দিন আগে বাশার আল আসাদের বিমান হামলায় আহত তিন বছরের এক শিশু হাসপাতালে মৃত্যুর আগে কাঁদতে কাঁদতে বলে গেল কলিজা ছেঁড়া একটা লাইন, “I’m gonna tell God everything!” সে তার রবকে সবকিছু বলে দেবে!

ওয়াল্লাহি এটাই আপনার পরিবার। এটাই আমাদের উম্মাহ! আপনি যখন কাফেরদের সাথে আজকের মত প্রতিটা দিন মোজ মাস্তি আর আনন্দে কাটাচ্ছেন আপনার পরিবারের মানুষগুলো এভাবেই দিনাতিপাত করছে। আপনি যখন কাফেরদের বিনোদনে আত্মার প্রশান্তি খুজচ্ছেন আপনি এভাবেই এই উম্মাহ থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। আপনি যখন আজকের সাথে waiting for tonight এর তালে উন্মাতাল হতে তৈরি উম্মাহর অভিশাপ আপনার উপর এসে পড়ছে! রক্তাক্ত উম্মাহর সাথে আপনি এভাবেই উপহাস করছেন, কৌতুক করছেন!

ওয়াল্লাহি আল্লাহ অবশ্যই তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করবেন, এই উম্মাহকে হেফাজত করবেন। অবশ্যই করবেন ইনশাআল্লাহ। আপনার এই আনন্দ উৎসব আর উপহাসকে এই উম্মাহ করুণার চোখে দেখে এই কারণেই যে আপনি কোনদিন বিজয়ের কাফেলায় শরিক হতে পারবেন না। আপনি কোনদিন আল্লাহু আকবর ধ্বনি তুলে কালো পতাকা নিয়ে রাস্তায় বিজয়ের আনন্দ মিছিলে নামতে পারবেন না। আপনি আপনার দ্বীনকে বিক্রি করে দিয়েছেন ভাই। আপনি বিক্রি করেছেন উম্মাহর প্রতি আপনার ভালোবাসা, গিরাহ। আপনার অন্তরের সবটুকু অনুভূতি শুষে নিয়েছে কুফরের ড্রাকুলারা! শাহবাগে শখের দেশপ্রেমী সবাই হতে পারে, আনন্দ উৎসবে সবাই উন্মাদ হতে পারে ওয়াল্লাহি উম্মাহর এই বিজয়ের পতাকা সবাই উড়াতে পারেনা। ক্রিসমাস, ভ্যালেন্টাইন, নিউ ইয়ারের উৎসবে এই উন্মাদনা—আপনি কোনদিন পারবেন না, ক্রিকেট ম্যাচের টিকেট না পেয়ে ব্যাংক ভাংচুর করা বিপ্লবী-উম্মাহর অংশ হতে পারেনা। হলিউড বলিউডের ন্যাকামু দেখে অশ্রুসিক্ত করা নয়নে কোনদিন উম্মাহর জন্য ভালোবাসা থাকতে পারেনা।


৪টি লেখা এক করে দেওয়া হয়েছে এখানে। হয়তবা আমার ব্যর্থ আশা এই যে, এ থেকে আমার প্রাণপ্রিয় ধর্মের ভাইয়েরা একটু হলেও অনুধাবন করার চেষ্টা করবেন।


শেষকথাঃ একটি মুসলিমপ্রধান দেশে বিপদ নাযিল করে আল্লাহ অন্যান্য দেশগুলোর ইসলামকে পরীক্ষা করেন। তারা কি জীবিত না মৃত তা দেখে নেন। কারণ মুসলিম উম্মাহ এক দেহের মতো। দেহের একটি অঙ্গ যদি অন্য অঙ্গের ব্যথা অনুভব না করে তাহলে সেটি মাদকাসক্ত না হয় মৃত। আর এই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে আল্লাহ তাঁর অবাধ্য জাতিকে ধ্বংস করে অন্য জাতি দিয়ে প্রতিস্থাপন করে দেন। শামের হাজারো মানুষের উপর আরোপিত অবরোধ আর কুকুর-বিড়াল খাওয়ার ব্যাপারে আলেমদের ফাতওয়া প্রমাণ করে যে এমন একটি প্রতিস্থাপনের সময় চলে এসেছে। যারা তাদেরকে সাহায্য করতে সমর্থ ছিলো, তারা সাহায্য না করার মাধ্যমে নিজেদেরকে ধ্বংস হওয়ার যোগ্য বলে প্রমাণ করেছে। [শাইখ আব্দুল আযীয আত-তারেফী, বই: সবুজ পাতার বন, সীরাত পাবলিকেশন]