হতাশ হবেন নাঃ

  • অনেকগুলো পৃষ্ঠা ভেবে ভয় পাবেন না। প্রতিদিন মাত্র পাঁচ লাইন মুখস্ত করুন,এটা খুবই অল্প আপনার জন্য। বাংলাদেশের “নুরানী হাফেজী কুর’আনগুলো”র প্রতি পৃষ্ঠায় থাকে পনেরো লাইন। তাঁর মানে এক পৃষ্ঠা খুব ভালো মতো শিখতে লাগবে মাত্র তিনদিন। বিশ পৃষ্ঠায় এক পারা/জুজ। যা মুখস্ত করতে লাগবে ৬০ দিন,মাত্র দুই মাস। প্রতি দুই মাসে এক পারা হলে,ত্রিশ পারা মাত্র ষাট মাস অর্থাৎ পাঁচ বছর মাত্র। ভাবা যায়! পাঁচ বছর পর আপনি কুর’আনের হাফিজ হিসেবে পরিচিত হবেন (আল্লাহর কাছে)। যেই কালাম আপনার পথ প্রদর্শক সেই কালাম আপনি মাত্র পাঁচ লাইন মুখস্ত করতে পারবেন না ??? চাইলেই পারবেন,খুবই সহজ। আর হ্যাঁ , শিওর থাকুন,ইন শা আল্লাহ্‌ আপনার পুরাটা মুখস্ত করতে পাঁচ বছর লাগবে না। তিন/চার বছরেই হয়ে যাবে। এবার আসুন পদ্ধতি নি্যে কথা বলি।

দেখে পড়তে শিখুন আগেঃ

  • প্রথমত ভালো একজন উস্তাদের কাছে সহিহ-শুদ্ধভাবে কুর’আন পড়তে শিখুন দেখে দেখে। উস্তাদের অনুমতি পেলে তাঁর অধীনে বা অন্য কারও অধীনে অথবা নিজে নিজেই মুখস্ত করা শুরু করুন। (এর পূর্বে অবশ্যই জেনে নিবেন যে, আপনি সহিহ ভাবে,বিনা ভুলে দেখে পড়তে পারেন কিনা!)

এবার মুখস্ত শূরু করুনঃ

  • প্রতিদিন আপনি একটি নির্দিষ্ট অংশ টার্গেট করুন, কতটুকু আপনি মুখস্ত/ইয়াদ করতে চান। প্রথম দিকে ন্যূন্তম সর্বনিম্ন পাঁচলাইন মুখস্ত/ইয়াদ করতে চেষ্টা করুন।
  • দুইটা নির্দিষ্ট সময় বের করুন,একটা দুপুর/বিকেলে। আরেকটা রাতে (আপনার দৈনিক কর্মব্যাস্ততা থাকলে ঘুমের পূর্বের এক/দেড় ঘন্টা সময় নির্ধারণ করুন,মুখস্ত শেষে ঘুমিয়ে যান)। যেই পাঁচ লাইন টার্গেট করবেন সেই পাঁচ লাইন বিকেলে মুতা’য়ালা করুন। (মুতা’য়ালা=প্রথমত আপনি দেখে পড়তে কিছুটা আটকে আটকে যাবেন,কয়েকবার পড়লে অনেক smoothly পড়তে পারবেন। এভাবে বেশ কিছু সময় চেষ্টা করলে প্রথমবারের চেয়ে অনেক সহজ লাগবে পড়াটা। এবার রেখে দিন।
  • রাতের নির্ধারিত সময়টুকু বিকেলের পড়াটুকুকে মুখস্ত করুন। ঝাড়া মুখস্ত যাকে বলে সেভাবে করুন। পরদিন সকালে ফজরের পর মুখস্ত করা অংশটুকুকে আবার পড়ুন। এরপর দৈনন্দিন কাজ শুরু করুন, দিনের অবসরে মুখস্ত অংশটুকু আউরে নিন মনে মনে/পড়ে।
  • কোনো ওস্তাদ বা ভালোমতো কুর’আন পড়তে পারে এমন কাউকে মুখস্ত করা পড়াটা শুনান , দেখেন ভুল পান কোথায় কোথায়,ভুল্গুলোর প্রতি খেয়াল রাখুন,কুর’আন এ মার্ক করে রাখুন, (আমরা লাল/হলুদ রঙ্গের কাগজ ব্যাবহার করতাম। ব্যানানার চুইঙ্গাম পাওয়া যেত,প্যাকেটটা ছিল হলুদ/বেগুনী/লাল,প্যাকেটে ৫/৬ টা থাকতো চুইংগাম।প্যাকেটের ভিতর প্রতিটা চুইংগাম পাতলা লাল/হলুদ/বেগুনী কাগজ দিয়ে মোরানো থাকতো, এইগুলা আমরা একেবারে ছোট করে ছিড়ে লালা দিয়ে লাগিয়ে রাখতাম ভুলের ঐখানে।) যেন প্রতিবার ঐ অনশটুকু পড়ার সময় ভুলটা চোখে পড়ে।
  • বিকেলে আবার আগের দিনের মতো নতুন একটা অংশকে টার্গেট করুন,মুতা’য়ালা করুন। (হোক সেটা পাঁচ লাইন,প্রথমদিকে পাঁচ লাইন করে করাই ভালো। আর তাছাড়া আপনার অন্য পড়াশোনা/কাজও আছে। )
  • রাতে আবার বিকেলের নতুন পড়াটাকে মুখস্ত করুন ভালোমতো। এরপর জেগে উঠুন তাহাজ্জুত এর জন্য, প্রথমদিন মুখস্ত করা পাঁচ লাইন দিয়ে তাহাজ্জুদ পড়ুন,প্রথম রাকাতে নতুন পাঁচ লাইন,দ্বিতীয় রাকাতে অন্য যেকোনো পুরনো মুখস্ত সুরা।
  • সকালে ফজরের পর গত রাতে নতুন মুখস্ত করা পাঁচ লাইন আবার মুখস্ত করুন,আরও ভালোমতো। এরপর এই নতুন পড়াটাও কাউকে শোনান দিনের যেকোনো সময়ে। আর হ্যাঁ যতক্ষণ না শিওর হচ্ছেন আপনার নতুন পড়াটায় কোনো ভুল নেই ততক্ষণ এটা নামাজে পরবেন না।আর সর্বমোট দশ লাইনকে আউড়ান নিজের মনে মনে/পড়ে।
  • বিকেলে আবার পুর্বের দিনগুলোর মতো করুন,রাতেও পূর্বানুরূপ করুন। রাতে তাহাজ্জুদে ওস্তাদের কাছে শোনানো নতুন পড়াটাকে সহ পুর্বেরদিনেরটা মিলিয়ে তাহাজ্জুদে সুন্দর লাহানে তিলাওয়াত করুন উচ্চস্বরে।
  • এভাবে করতে থাকুন। এক পারা পরিমাণ মুখস্ত হলে পুরো পারাটা ন্যুনতম একবার দেখে ও একবার না দেখে তিলাওয়াত করুন,রাতে পুরো এক পারা তাহাজ্জুদে পড়ুন। যখন পাচঁ লাইন মুখস্ত করা কোনো ব্যাপার ই হবে না তখন নতুন পড়ার পরিমাণ বাড়িয়ে সাত/দশ লাইন করুন মুখস্ত করার জন্য।এভাবে এক পৃষ্ঠা পর্যন্ত বাড়াতে পারবেন কিছুদিন পর,বেশি বেশি মুখস্ত করা জরুরি নাহ,অল্প করে ভালোমত পড়া জরুরি,যতো বেশিদিন সময় লাগবে ততো বেশিদিন আপনি আমলের উপর থাকতে পারবেন এই তাগীদে,কুর’আনের সাথে একনিষ্ঠভাবে লেগে থাকতে পারবেন।
  • একের অধিক পারা হলে সেটাকে দুই ভাগে রিভাইস দিন। একদিন এক পারা করে রিভাইস দিন (দিনে দুইবার) দেখে একবার, না দেখে একবার। পরেরদিন অন্য পারাটা পড়ুন দুইবার,একবার দেখে , আরেকবার না দেখে। তাহাজ্জুদেও একেকদিন একেক পারা পড়ুন,মনে রাখবেন যত বেশি তিলাওয়াত,ততো ভালোভাবে ইয়াদ হবে। আর হ্যাঁ প্রতিবার দেখে তিলাওয়াত করার সময় যেই ভুলগুলো মার্ক করে রেখেছেন সেগুলো ভালোভাবে খেয়াল রাখুন।

কখন পড়া ভালোমতো মুখস্ত হয়?

  • যখন আপনি মুখে পড়বেন,চোখে দেখবেন,কানে শুনবেন। অর্থাৎ এই তিনটা কাজ একসাথে করতে পারবেন তখন ভালভাবে মুখস্ত হবে,তাড়াহুড়া করবেন না মুখস্ত করার সময়। ধীরে-সুস্থে তারতীলের সাথে তিলাওয়াত করে মুখস্ত করুন,বারাকাহ পাবেন। উস্তাদ বলতেন, “যখন তোমার চোখ,কান,মুখ যখন একত্রিত হবে তখন তোমার হিফজ সহজ হবে।” অর্থাৎ মুখ দিয়ে যা পড়ছেন,কান দিয়ে শুনে চোখ দিয়ে তা পরখ করুন আপনার পড়ায় কোনো ভুল আছে কিনা!
  • ইন শা আল্লাহ্‌ আপনি সক্ষম হবেন।
  • প্রচুর তওবাহ করবেন রব্বে কারীমের দরবারে। প্রচুর দুয়া করুন সারাদিন,তাহাজ্জুদে। নফল ইবাদাত বাড়িয়ে দিন। ইলম ভিক্ষা চান রব্বে কারীমের দরবারে। হতাশ হবেন না,ধৈর্য্য হারা হবেন না।

যখন আপনি পাঁচোর্ধ পারা মুখস্ত করে ফেলবেনঃ

  • প্রতিদিন দুই/তিন পারা তিলাওয়াত করুন দেখে দেখে,সময় পেলে দেখে যেটা পড়লেন সেটাকেই মুখস্ত পড়ুন হাটতে ফিরতে।

এবার সামনে অগ্রসর হোন আমার ভাই ! আল্লাহ্‌ উত্তম সহায়ক আপনার জন্য। এই চেষ্টাটা আপনাকে নেক আমলের উপর অবিচল রাখতে সহায়ক হবে । মনে রাখুন,অনেক সময় স্বাভাবিকভাবে মাদ্রাসায় পড়াকালীনই ছাত্ররা পাঁচ থেকে ছয় বছরের চাইতেও বেশি সময় লাগিয়ে ফেলে,তাও তারা দাঁতে দাঁত চেপে লেগে থাকে । আপনার আমল ঠিক থাকলে,আল্লাহকে খুশি করার ইচ্ছা থাকলে বারাকাহ পাবেন ই পাবেন,আল্লাহ চাহেন তো ।

হিফজের জন্য মুসলিমদের উৎসাহিত করা বিরাট নেক আমল। দ্বীনি ভাইদের মনে কুর'আন হিফজের ভয়কে দূর করতে সহায়তা করুন। প্রায় সব দ্বীনি ভাইই চায় হিফজ করতে, সাহস করতে পারেন না।