সত্যি কথা বলতে যে বিষয়ে লিখতে যাচ্ছি তার কোন প্রস্তুতি আমার নেই। তাই কি লিখতে যাচ্ছি বা আমি যা বোঝাতে চাই তা আপনাদের কতোটুকু বোঝাতে পারব জানিনা। অনেকদিন ধরে কিছু মানুষের আবেগী আর ভণ্ড ইসলাম এর সামনে দাঁড়িয়ে আজ বলতে ইচ্ছে করছে, I have something to say! কয়েকদিন আগে একটা নিউজ আর ছবি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমীর খান তার মাকে নিয়ে হজ্ব করতে গেছে! সেখানে আবার ক্রিকেটার আফ্রিদীর সাথে সাক্ষাতের ছবিও! খুবই খারাপ লেগেছে যখন দেখলাম অনেক ইসলামী পেজেও এইসব ছবি শেয়ার দিয়ে ইসলামকে রিপ্রেজেন্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। ব্যাপারটা নতুন নয়। যখনই কোন নায়ক-নায়িকা, শিল্পী বা কোন ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ইসলামের “formality” রক্ষা করতে আসে আমাদের ইসলাম ছলাত ছলাত করে উঠে। আজকের দিনের ফেসবুকের কল্যাণে এই বিষয়গুলো ব্যাপকহারে হাইলাইট করা হয়। আমরা যখন এসব তারকাদের ফরমাল ইসলামের “formality” রক্ষার একটা স্থিরচিত্র বা তাদের কোন কথাকে পুঁজি করে “দেখ দেখ” বা “দেখেছিস এতকিছুর পরও সে কিন্তু ইসলাম ভোলে নাই” আবেগী বক্তব্য জাহির করে মানুষগুলোকে আরও তারকা বানাতে চাই তখন প্রশ্ন জাগে আসলে আমরা কি বোঝাতে চাই?? এই মানুষগুলোর একটা “ফরমাল” ইসলামে ইসলামের অনেককিছু হয়ে গেছে?? জাতে উঠা কিছু বক্রহৃদয়ের মানুষের ইসলাম গ্রহণের খবর জানিয়ে বলতে চাই আমাদের দল ভারী হচ্ছে??

না…! আমরা তার কিছুই চাইনা! চেতন মনে হোক আর অবচেতন মনে হোক আমরা যেটা করার অপচেষ্টা করি তাহলো ইসলামাইজেশন! এই ইসলামাইজেশন যতোটা না এইসব তারকা খ্যাতির ফাসেকদের জন্য তার চেয়েও বেশি নিজেদের জন্য! আমাদের যে খারাপ লাগে! কেমন কেমন জানি লাগে!

ইসলাম যখন বলে গান-বাজনা শোনা যাবেনাতখন আমাদের খারাপ লাগে!

ইসলাম যখন বলে হলিউড-বলিউডের মাখামাখি দেখা যাবেনা তখন আমাদের খারাপ লাগে!

ইসলাম যখন বলে আকাইম্মাদের গাঁজাখুরি গল্প উপন্যাস কিংবা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্রিকেট- ফুটবল ম্যাচ দেখে সময় নষ্ট কেন করছ—তখনো আমাদের খারাপ লাগে!

না মানে ইয়ে … মাথা চুলকিয়ে হাজারটা যুক্তি বের করার চেষ্টা করি এগুলোকে কোনমতে চালিয়ে নেওয়ার জন্য!


হিন্দি গানে হঠাৎ করে একটা trend শুরু হয়েছে। আরাবি এবং ইসলামের পরিচিত শব্দের ব্যবহার! এর কারণও আছে। সাজিদ-ওয়াজিদ জুটি, সেলিম-সলাইমান জুটি, এ আর রাহমান এরাই হিন্দি মিউজিক নেতৃত্ব দিচ্ছে! এ আর রাহমানের নাম শুনলে অনেকের আবার শ্রদ্ধায় মাথা কাত হয়ে যায়। মাথা কাত করার সময় খেয়াল রাইখেন ভাই ঘাড়ের রগ যেন ত্যাড়া হয়ে না যায়! জীবনতো একটাই—নাকি??

অনেকেই হয়তো জানেননা এ আর রাহমান আগে হিন্দু ছিল! পরে মুসলিম হয়ে নাম রাখে আব্দুর রাহমান! পাবলিকের খোরাক বোঝে এমন এক পরামর্শকের পরামর্শে একটা আলাদা R লাগিয়ে A R RAHMAN! কিন্তু এই মানুষটার জন্যই আমার সবচেয়ে বেশি আফসোস হয়! সত্যের ছায়ায় এসেও যে মানুষটা নিজের জন্য আখিরাতের মূলধন জোগাড় করতে পারেনি তার মত অভাগা আর কে আছে!! হারাম সঙ্গীত, শিরকি গানের কথা আর সুরে কোটি কোটি মানুষের জন্য পথভ্রষ্টটা আর গোমরাহি আমদানি করা মানুষটা হয়তো অমুসলিম থেকে এ আর রাহমান হতে পেরেছে কিন্তু আসলেই কি মুসলিম হতে পেরেছে?? ইসলাম কি আসলেই আছে এদের মাঝে?? তার বুক হু হু করা “তুহি রে” নিয়ে যখন প্রশ্ন করা হয় , “আপনি এত টাচি গানটা কি করে সুর করলেন?” “আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে” উত্তরে শিরকি গানের কথা আর হারাম কাজটাকে হালালাইজ করার ঘৃণ্য চেষ্টাটাকি মুসলিমরা বোঝে?? বোঝেনা! বুঝতেও চায়না! বুঝতে চাইলে যে শয়তানের বাদ্য বাজনা শোনা যাবেনা! মানুষের সামনে cool হওয়া যাবেনা! কনসার্ট এ এসব গানের তালে তালে উন্মাদ নৃত্য করা যাবেনা!


ছোটবেলা থেকে আমি এমন অনেক মানুষ দেখেছি যারা শাহরুখ, সালমান, আমীর খানের মুভি দেখেন তারা মুসলিম বলে! “travel and living” নামের একটা চ্যানেলে শাহরুখ খানের জীবনের উপর একটা ডকুমেন্টারি দেখেছিলাম! সেখানে দেখা যায় শাহরুখ খান বউ বাচ্চা নিয়ে তার বাড়ির ভেতরের সারি সারি মূর্তির সামনে পূজা করছে! পূজা শেষে আবার হাত তোলে মোনাজাত! আহা! এক ঢিলে দুই পাখি মারার কি অসাধারণ উদাহরণ! আর বাড়িতে গণেশ পূজা করে ভারতীয় “মৌলবাদী(!?)” মুসলিমদের তোপের মুখে পরা সালমান খানের খবর কি আবেগী মুসলিমরা জানে?? এদিকে নবাব সাইফ আলী খান তো ঘোষণা দিয়েই দিয়েছেন, “আমি চাইনা বিয়ের পর কারিনা তার ধর্ম পরিবর্তন করুক!” এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই ফাসেকদের কাছে ধর্ম আবার কি জিনিস??

“মাই নেম ইজ খান” এর প্রচারণার ফাঁদ পেতে ভারতের NDTV তে আয়োজন করা হয়েছিল এক টক শোয়ের! করন জোহর, শাহরুখ, সোহা আলী খান, কবির খানদের সাথে প্রথম বারের মত মিডিয়ার ফাঁদে পা দিতে গেলেন ডাঃ জাকির নায়েক, যেখানে তাকে তিন মিনিটেরও কম সময় কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল! সেখানে শাহরুখ খানের “আসলে মুসলিমদের তাদের ধর্ম সম্পর্কে জানা উচিত, পড়াশোনা করা উচিত” টাইপ মাখো মাখো কথায় অনেকের নাকি ঈমান মুজবুত হয়েছিল!! আর মাই নেম ইজ খান মুভিটাতে শাহরুখ খানের অদ্ভুত অভিনয় আর নাচ গানের জাঁকাতলে ইসলাম নিয়ে যে ট্রিক্সটা খেলা হয়েছে তা আজ এই লেখা লেখার মত মানসিকতাটা না পেলে হয়তো আমিও জিন্দেগিতে বুঝতে পারতাম না! যেখানে দেখানো হয়েছে ইসলাম মানে শান্তি! হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান সবাই এক! সহজ বাংলায় “ধর্ম যার যার উৎসব সবার!” আর খুবই সূক্ষ্মভাবে “ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা করা জঙ্গি(?)” দেরকেও মানুষের সামনে মঞ্চস্থ করার সুযোগটা হাতছাড়া করা হয়নি! তা ইসলামের এতকিছু মানুষকে দেখালো কে?? বিশিষ্ট ইসলাম ধর্ম বিশেষজ্ঞ করন জোহর(!!??)। বিশ্বাস করুণ আর যাদের মুভিখোর বন্ধু বান্ধব আছে তাদের সাথে আলোচনা করলে বুঝতে পারবেন এই ধরনের মুভিগুলো আর কিছু মুসলিম নামদারি তারকা দিয়ে মুসলিমদের আবেগকে ব্যবহার করে খুবই সূক্ষ্মভাবে মগজে এইধরনের “কুফরের পাউরুটিতে ইসলামের মাখন” মেখে খাওয়ানো হচ্ছে! আপনি আমি রামছাগলের মত সবকিছু মুখে দেওয়ার মানসিকতা বর্জন করতে না পারলে এই সূক্ষ্ম ট্রিক্সগুলো কখনোই ধরতে পারবনা ভাই!


“অল্পসময়ের ব্যবধানে বাংলা সাহিত্যাকাশে হুমায়ূন আর সুনীল দুই উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন।” বাহ! এই শিরোনামে কিছু লিখলে নিশ্চয় প্রচুর লাইক কমেন্ট আর প্রশংসা পাওয়া যাবে! পরকিয়া, পিরিতির ভিটামিন বড়ি আর মাঝে মাঝে চটি লিখে এই দুইজন আসলেই পথভ্রষ্টটা আর গোমরাহি আমদানির দুই উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে সবার মনে জ্বলজ্বল করবে! নামের মুসলিম হুমায়ূন আহমেদ একদিকে “কচ্ছপ হাজার বছর বাঁচলে মানুষ কেন ৭০-৮০ বছর বাঁচবে? কোন মানে হয়!!” এর মত ভয়ংকর নাস্তিকি কথন আবার পত্রিকার কলামে “god কি তাহলে exit করে??” প্রশ্ন আচ্ছাদিত ঘুরিয়ে পেচিয়ে কিছু কথা বলে তার ভক্তকুলের মনমাজারে আলোড়ন তোলে দিয়েছেন!! তাই তার মৃত্যুর পর অনেক practicing মুসলিমকেও দেখলাম তাকে “god বিশ্বাসী” নয় একেবারে “আল্লাহ্‌প্রেমী মুসলিম” প্রমাণ করতে ব্যস্ত হয়েছেন! তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে একটা স্ট্যাটাস দেখে মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছিল! স্ট্যাটাস এ বলা হয়েছে তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে তার কোন মামা নাকি একটা বই লিখেছেন! সেখানে বলা হয়েছে তসলিমা নাকি তার ভুল বুঝতে পেরেছিল! সে নাকি ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতেও চেয়েছিল! কিন্তু তার পরিবার করতে দেয়নি ইসলামের বিরুদ্ধে লেখার কারণে বিদেশী অনুদান বন্ধ হয়ে যাবে তাই!! এক দ্বীনি ভাইয়ের স্ট্যাটাস ছিল বলে সবার ধুমাইয়া শেয়ার দেখে মনে হচ্ছিল চটির রানি তসলিমার প্রতি সহানুভূতিশীলতার হেকমতে তার উপরও কি তবে চলবে হালালাইজেশন???


মুসলিমদের পাকিস্তানি ক্রিকেট প্রেমটা অনেক পুরানো! সাকিব তামিমের সৌজন্যে এখন বাংলার বাঘদের জন্যও বাঙ্গালিকে মোনাজাত করতে হয়! কি আর করা দেশপ্রেম তো ফেলে দেওয়া যায়না! আবার এদিকে IPL, BLP তো আছেই! গভীর রাতের বার্সা-রিয়াল আমার মুসলিম ভাইদের দিনদিন নিশাচর বানিয়ে রাখছে! গ্রাম থেকে শহরের কলেজে ভর্তি হয়ে বাসস্থানের অভাবে কিছুদিন একটি জনপ্রিয় ইসলামী দল শাসিত কলেজের হলে বহিরাগত হিসেবে ছিলাম! তখন এই ধরনের কিছু ইসলামাইজেশন আর হালালাইজেশনের চিত্র মনে পরলে এখনো আমার গা জ্বলে! অন্য কোন চ্যানেলে নাচ-গান, ভাব-পিরিতের কুটুম কুটুম চললে এই এই চ্যানেল চেঞ্জ কর!! কিন্তু তাহাদের একটি “exclusive” চ্যানেলে এসব চললে সমস্যা নাই, চলুক! ইন্ডিয়ান আইডল বা সা রে গা মা পা হলে সমস্যা কিন্তু তাহাদের “exclusive” চ্যানেলে লাইভ মিউজিকাল শো?? no problem! it’s halal(???)! ইসলামে বিকিনি শর্টস হারাম হতে পারে কিন্তু পাকিস্তানের ম্যাচে চিয়ারলিদারসদের অর্ধনগ্ন ডিস্কো আর গ্যালারীর বিকিনি পরিহিতা সাদা চামড়া হালাল(!!!) পাকিস্তানের কেউ সেঞ্চুরি করে ধুম করে একটা সিজদা আর আফ্রিদি হাশিম আমলার দাড়ি গ্যালারীর সবকিছু হালাল করে দেবে??

টেনিস দিয়ে কিছু করতে না পারলেও সানিয়া মির্জারা টেনিস কোর্টে সারা দুনিয়ারে প্যানটি দেখিয়ে ঠিকই তারকার লেবেল লাগিয়ে নিয়েছে! আর বরাবরের মত যখন কোন “ফরমাল” ইসলামের ফর্মালিটি maintain করতে এসে মাথায় একটু কাপড় দিয়ে বলে “আমি মুসলিম নারীদের আদর্শ হতে চাই” তখন আমাদের ঈমানের পারদ ছলছলিয়ে উঠে! মজার বিষয় হল টেনিস কোর্টের সানিয়া মির্জাকে দেখে নিশ্বাস ভারী করা আর মাথায় একটু কাপড় দিয়ে formality maintain এর ছবি শেয়ার দিয়ে ঈমান মজবুত করা মানুষগুলো প্রায়ই same হয়!


একই মানুষের কি অদ্ভুত বৈপরীত্য! আমাদের পত্রিকাওয়ালারাও মানুষের আবেগের জায়গাগুলো এত ভাল বোঝে! তাই প্রথম আলোর মত পত্রিকাগুলো যতটা রসালো করে ছাপবে টেনিস কোর্টের বিশেষ দৃশ্য ঠিক ততটাই “শ্রদ্ধা আর সম্মান(!!)” দিয়ে ছাপবে “মুসলিম নারীদের আদর্শ হতে চাই” নিউজ!


আবার এদিকে সবাইকে ধরে ধরে মুসলিম বানানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে! কদিন আগে দেখলাম “ইসলাম গ্রহণ করেছেন সানি লিওন।” এই ভণ্ডামির তালিকাটা মাইকেল জ্যাকসন, প্যারিস হিলটন, এঞ্জলিনা জোলি থেকে অং সান সুচি পর্যন্ত দীর্ঘ! এ যেন পাড়ার ক্রিকেট খেলার মত! যে একটু ফর্মে থাকে তাকে নিয়ে সবাই টানাটানি করে! তাকে দলে নিয়ে দল শক্তিশালী করতে চায়! আরেক আকাইম্মা বলদ প্রতারক ভণ্ড আবার কাবাঘরের উপরে নাকি ফেরেশতা জিবরাঈল (আঃ) কে দেখেছে! হলিউডের এলিয়েনমার্কা মুভি দেখে তার সাথে মিলিয়ে জিবরাঈলকে ডাইনোসরটাইপ কিছু একটা প্রমাণ করে ঈমান মজবুতের ভণ্ডামিটা কি না করলেই নয়?? ভাইরে ভাই! ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব বোঝানোর জন্য মিথ্যা আরোপ কিংবা ইসলামের সমুদ্র থেকে এক ফোটা ইসলাম নিয়ে কুফরিকে হালালাইজ বা ইসলামাইজ করার দরকার পরেনা!

আপনি আমি চাইলেই ইসলামকে এতটুকু বড় বা ছোট করতে পারবোনা!

এই লেখাটা আমি কারো হাতে হালাল হারামের লিস্ট ধরিয়ে দিতে লিখিনি! আমি বোঝানোর চেষ্টা করছি এইসব ঈমান বিনষ্টকারী ইসলামহীন পথভ্রষ্টটার বিনোদনে আমরা হালালাইজেশন চালাচ্ছি! একটু কমন সেন্স ব্যবহার করি ভাই! আল্লাহর প্রতিটি সৃষ্টি আমাদের জন্য নিদর্শন স্বরূপ! আমার কথা নয়, আল্লাহ্‌ নিজেই বলেছেন……

“নিশ্চয় আসমানসমুহ ও জমিনের সৃষ্টিতে এবং রাত্র ও দিনের আবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য বহু নিদর্শন আছে।” [৩ঃ১৯০]

আকাশের চাঁদটার দিকে তাকান। একজন আশরাফুল মাখলুখাত হিসেবে এখান থেকে আমাদের নিদর্শন খোঁজার কথা, আল্লাহর সৃষ্টির মহত্ত্ব বোঝার কথা, আল্লাহর বাণীর সত্যতা খুঁজে নিয়ে আমাদের ঈমান আর বিশ্বাসটাকে আরও পাকাপোক্ত করার কথা! কিন্তু আমাদের সেই সময় কই?? কালের বিবর্তনে কিছু পথভ্রষ্ট মানুষ যে সৃষ্টি করে রেখেছে “পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”, “চাঁদের সাথে আমি দেবনা তোমার তুলনা”, “ জোছনা যেন প্রেমিকার দীর্ঘশ্বাস” এরকম হাজার হাজার আকাইম্মা কথামালা, গান-কবিতা, সাহিত্য! আমরা এখন এসবে সময় দেই! Amazing!! যে সৃষ্টি থেকে আল্লাহ্‌ আমাদের নিদর্শন খুঁজতে বলেছেন সেই সৃষ্টি চাঁদ, জোছনা, বৃষ্টি …… থেকেই আমরা পথভ্রষ্টটার materials তৈরি করছি! এই পথভ্রষ্টটা মৃত্যু পর্যন্তও আমাদের টেনে নিয়ে যায়! “চান্নি পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়” এ যেন দুইহাত তোলে আমাদের প্রার্থনা সঙ্গীত!


ভাই! আমাদের বুঝতে হবে “kun fayakun” দিয়ে শুরু করলেই মাজার পূজার গানটা হালাল হয়ে যাবেনা! বিসমিল্লাহ, মাশাআল্লাহ, সুবহানাল্লাহ দিয়ে শুরু করলেই এই গান বাজনা আর তার নোংরা ভিডিওগুলো হালাল হয়ে যাবেনা! ফেসবুকে সানিয়া মির্জার ছবি শেয়ার দিয়ে ক্যাপশনে “হে আল্লাহ্‌ আমারে শোয়াইব মালিক বানায়া দাও” আর শত শত নোংরা কমেন্টকে একদিন তার একটা মাথায় কাপড়ওয়ালা ছবি শেয়ার দিয়ে হালাল করা যায়না! শর্টস পরে তার টেনিস খেলা জায়েজ হয়ে যায়না! অনেককিছু “শেখার” আছে যুক্তিতে শত শত মুভি আর বস্তা বস্তা গল্প- উপন্যাসকে হালকা করা যায়না! মেসি- রোনালদোর ড্রিবলিং আর ম্যাজিক গোলে চোখ বড় বড় করা যায় কিন্তু তা ঈমানের বা ইসলামের জন্য কোন সুফল বয়ে আনতে পারেনা! এখন একটা প্রশ্ন আসতেই পারে আমাদেরতো এসব ভাল লাগে! তাহলে এগুলো বাদ দেব কেন?? এগুলো জায়েজ হবেনা কেন?? exactly এমন কনফিউসন ১৪০০ বছর আগেও হয়েছিল যখন মদ-জুয়া হারাম করা হয়েছিল! আর এসবে একটা ভাল দিক আছে এটা আল্লাহ্‌ নিজেই বলে দিয়েছেন…

“তোমাকে লোকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। বল, ঐ দুটোতে আছে ভয়ঙ্কর গুনাহ এবং মানুষের জন্য উপকারও কিন্তু এ দুটোর পাপ এ দুটোর উপকার অপেক্ষা অধিক……” [২ঃ২১৯]

যদি তাফসীর দেখেন দেখবেন মদ হারাম হওয়ার আয়াত নাযিল হওয়ার পর এর কারণ বুঝতে না পেরে ওমর (রাঃ) প্রার্থনা করলেন,

“হে আল্লাহ্‌, শরাবের ব্যাখ্যাটি তুমি আমাদের পুরোপুরি বলে দাও।”

এরপর সূরা বাকারার আয়াতটি নাযিল হয় এবং ওমর (রাঃ) কে ডেকে তা শোনানো হয়। তিনি আবারো প্রার্থনা করলেন, হে আল্লাহ্‌ তুমি শরাবের ব্যাপারে আরও সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করো। এরপর সূরা আন নিসার ৪৩ নম্বর আয়াত, “হে ঈমানদাররা, তোমরা কখনো নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামজের কাছে যেওনা” নাযিল হয়।

ওমর (রাঃ) আবারো প্রার্থনা করলেন, হে আল্লাহ্‌ আমাদেরকে শরাব সম্পর্কে আরও বর্ণনা প্রদান করো। তারপর যখন সূরা মায়েদার ৯১ নম্বর আয়াত,

“তোমরা কি (একাজ থেকে) বিরত থাকবেনা?”

নাযিল হল তখন ওমর (রা) বলে উঠলেন, “আমরা বিরত থাকলাম, আমরা বিরত থাকলাম।” চিন্তা করে দেখুন শরাবের নেশায় নামাজ বিনষ্ট হবে তাই আল্লাহ্‌ শরাবকে হারাম করেছেন (মদের আরও অনেক অপকারিতা আছে) আর আজ আমরা কি একইভাবে গান বাজনা, মুভি, গল্প উপন্যাস, খেলাধুলার নেশায় মত্ত নই?? যে মানুষগুলো বলে আমি নামাজে মনোযোগ দিতে পারছি না, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত পড়তে পারছিনা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি এরা এইসব ঈমান বিনষ্টকারী হেকমতি শরাবের নেশায় ডুবে থাকে!

আর আমি বাস্তবতাও জানি। কারণ আমি এই বিষয়গুলোর ভেতর দিয়ে গিয়েছি! আমি জানি সত্য স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর ওমর (রাঃ) এর মত “শুনলাম মানলাম” ঈমান আমাদের নেই কিন্তু তাই বলে এই ঈমান বিনষ্টকারী বিষয়গুলোকে “শুনিনাই মানিয়ে নিয়েছি” পর্যায়ের ইসলামাইজেশন কেন করব ভাই?? আমাদের সূক্ষ্মভাবে বুঝতে হবে! আপনি যদি এগুলোকে ঈমান বিনষ্টকারী ধরে নিয়ে আল্লাহর পথে চেষ্টা করেন তাহলে আজ না হোক, কাল না হোক পরশু আপনি এগুলো ছাড়তে পারবেন! কিন্তু আপনি যদি এগুলোকে ইসলামের সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তাহলে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি এগুলো আপনাকে চূড়ান্ত রকম পথভ্রষ্ট করে ছাড়বে! আর কাজটা হবে খুবই সূক্ষ্মভাবে।

আর আমরা এমন এক সিস্টেমে বাস করি যেখানে আমরা ১০ মিনিট ইসলামের মোটিভেশন পেলে এর পরের ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাব কুফর আর কাফেরদের মোটিভেশন। আপনি যদি চিন্তা করে দেখেন তাহলে সহজেই বুঝবেন এই গান-বাজনা, মুভি, গল্প-উপন্যাস, খেলাধুলা এসবই কুফরি মোটিভেশন যা আমরা খুবই সূক্ষ্মভাবে হালালাইজ করে গ্রহণ করছি। আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। সূক্ষ্ম বিষয়গুলো চিন্তা করে আল্লাহর পথে চেষ্টা করার তৌফিক দান করুন……

“যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন।” [২৯ঃ৬৯]