​সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয় মানবীয় সীমাবদ্ধতাকে স্বীকার না করলে। আমরা প্রত্যেকে নিজে অজস্র ভুলের সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকলেও আশা করি অন্যের সবকিছু Perfect হবে। এই অতিরিক্ত Expectation কেবল জীবনের সুখগুলোকে যে খেয়ে ফেলে তা ই নয়, জীবনের সমস্ত ইতিবাচকতাকে দীর্ঘশ্বাসে রূপান্তরিত করে ফেলে।

ছেলেটা হয়তো মায়ের প্রতি আর বউয়ের প্রতি দায়িত্বের মধ্যে ব্যালেন্স করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে, কিন্তু মায়ের ধারণা ছেলের কাছে বউই সব, বউ পেয়ে সে মাকে ভুলে গেছে। আবার বউ ভাবে স্বামীর কাছে তার কোন দাম নেই, নিজের বাপ-মা-ভাই-বোনই সব।

অন্যদিকে ছেলে হয়তো বউকে নিয়ে হতাশ। সে ভাবে দুপ্রজন্ম আগের মেয়েদের মত সবদিক সামলে সবার সাথে সম্পর্ক মেন্টেইন করে মেয়েটি কেন চলতে পারে না। সে আফসোস করে বলে—এখনকার মেয়েদের চাহিদা বেশি, অভিযোগপ্রবণতাও বেশি।

ব্যাপারটা হল আপনাকে এগুলোকে মানবীয় সীমাবদ্ধতা হিসেবে মেনে নিতে হবে। আমাদের দাদি-নানি রা আট-দশজন সন্তানকে সামলেছেন, ঘর-দুয়ারের ভারি ভারি কাজ করেছেন, পনের-বিশজন মেহমান নিয়ে হাজির হলেও বিরক্ত না হয়ে রান্নাবান্না আর ধোয়ামোছার বিশাল বোঝা বয়েছেন। এতকিছুর পরেও তাঁদের তেমন কোন অভিযোগ ছিল না, খুব অল্পতেই তাঁরা সন্তুষ্ট হতেন। আপনি যদি এই যুগের মেয়েদের কাছেও সেই একই ধৈর্যশক্তি আর স্ট্যামিনা আশা করেন, তবে বলতেই হবে আপনি খুব ইম্প্রাক্টিক্যাল।

সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথেও তাঁর স্ত্রীদের মনোমালিন্য হয়েছে। আয়িশা (রা) অভিমান করে খাবার প্লেট ছুঁড়ে ফেলেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) স্ত্রীদের ওপর রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। আমি আর আপনি কী এমন মহামানব হয়ে গেছি যে আমাদের সবকিছু Perfect হয়ে যাবে? আমরা কেন আশা করি সবাই নিখুঁতভাবে আমাকে ট্রিট করবে, সবাই সবকিছু বুঝে যাবে? কেন প্রাপ্তির দিকে না তাকিয়ে অপ্রাপ্তির হিসেব করে “Life is hell” উপসংহার টানব বারবার?

সত্য হল, মানুষ কিছুতেই সন্তুষ্ট হয় না। আপনি যেমন ভাবছেন অন্যরা এমন না হয়ে অমন হলে কত ভালো হত, তেমনি অন্যরাও ভাবছে আপনি এমন না হয়ে অমন হলে ভালো হত। কাজেই এটা না হলে ওটা হত, ওটা না হয়ে এটা হত—ওসব ভেবে লাভ নেই। যে যেমন, তাকে তেমনটা রেখেই বিবেচনা করতে হবে। দুনিয়ার সব মানুষ আমার মনমত হবে, এই আশা কেন করি?

সম্পর্কের ব্যাপারগুলোকে ইবাদাত ভাবতে শিখুন। মায়ের আদেশ মানব কারণ আল্লাহ্ বলেছেন মায়ের আদেশ মানতে। স্ত্রীকে ভালোবাসব কারণ আল্লাহ্ বলেছেন স্ত্রীকে ভালোবাসতে। ভাইয়ের সাথে ভালো ব্যবহার করব কারণ আল্লাহর আদেশ। ভাইও আমার সাথে ভালো ব্যবহার করবে এই আশায় না। অন্যে যদি আমায় কষ্ট দেয় তবু আমার কর্তব্য পালন করে যেতে হবে। কারণ অন্যের থেকে কিছু পাবার আশায় মুসলিমরা কাজ করবে না।

নিজের সহস্র দুর্বলতা সত্ত্বেও যেমন নিজেকে সবাই ভালোবাসি, তেমনি অন্যদের দুর্বলতাগুলো মেনে নিয়েই জীবনে চলতে হবে। ‘আমি কারো সাথে দুর্ব্যবহার করি না আমার সাথে কেন সবাই করে’—এই খেদ নিয়ে পড়ে থাকলে আপনি এগোতে পারবেন না। আপনি আল্লাহর দিকে তাকিয়ে সদ্ব্যবহার আর কর্তব্যপালন চালিয়ে যান, চাওয়া-পাওয়ার হিসেবটা আল্লাহর জন্যই রেখে দেন।

যদি তা করতে পারেন, ঠকবেন না। বিশ্বাস করুন, ঠকবেন না।