ইসলামে মদ হারাম হওয়ার ঘটনাটা আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং একটা ঘটনা। যখনই যেখানে সুযোগ পাই এই ঘটনাটা বলে আমি একটা লেসন ড্র করার ট্রাই করি। কারণ এই ঘটনায় কন্সেপচুয়াল উইকনেসের একটা ব্যাপার ছিল। এবং সুবাহানাল্লাহ ঘটনাটা ঘটেছিল হযরত উমার (রাঃ) এর মত একজন মানুষের সাথে। মদ হারামের আয়াত নাযিল হওয়ার পর হযরত উমার কোনভাবেই বুঝতে পারছিলেন না এই বস্তু কেন হারাম করা হল। কারণ মদ হারাম হওয়ার আগে সাহাবীরাও মদ পান করত। তিনি আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করলেন

“হে আল্লাহ্‌, শরাবের ব্যাখ্যাটি তুমি আমাদের পুরোপুরি বলে দাও।”

এরপর সূরা বাকারার এই আয়াতটি নাযিল হলে হযরত উমার (রাঃ) কে ডেকে শুনানো হয়,

“তোমাকে লোকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। বল, ঐ দুটোতে আছে ভয়ঙ্কর গুনাহ এবং মানুষের জন্য উপকারও কিন্তু এ দুটোর পাপ এ দুটোর উপকার অপেক্ষা অধিক……” [সূরা বাকারাঃ ২১৯]

তিনি আবারো প্রার্থনা করলেন, হে আল্লাহ্‌ তুমি শরাবের ব্যাপারে আরও সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করো। এরপর সূরা আন নিসার ৪৩ নম্বর আয়াত, “হে ঈমানদাররা, তোমরা কখনো নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামজের কাছে যেওনা” নাযিল হয়। ওমর (রাঃ) আবারো প্রার্থনা করলেন, হে আল্লাহ্‌ আমাদেরকে শরাব সম্পর্কে আরও বর্ণনা প্রদান করো। তারপর যখন সূরা মায়েদার ৯১ নম্বর আয়াত, “তোমরা কি (একাজ থেকে) বিরত থাকবেনা?” নাযিল হল তখন ওমর (রা) বলে উঠলেন, “আমরা বিরত থাকলাম, আমরা বিরত থাকলাম।”

এই ঘটনা থেকে অনেককিছু শেখার আছে কিন্তু আমি এখান থেকে যেটা বুঝি সেটা হল আল্লাহ যেটা হারাম করেছেন বা ইসলামের সাথে contradict করে এমন বিষয় আর ইসলাম কখনো একসাথে সারভাইভ করতে পারেনা। সংক্ষেপে ইসলাম এবং কুফরি একসাথে মানুষের কোন সমাধান দিতে পারেনা। এর মাধ্যমে ইসলামের আবেদনটুকু মানুষের কাছে পৌঁছায় না। আমরা সেরকম কিছু কন্সেপচুয়াল বিষয় নিয়ে আজ আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

সৃষ্টির সেই শুরু থেকে মানুষের আবির্ভাব আর যুগে যুগে নবী রাসুলগণের আগমন থেকে আমরা মানুষের একটি উদ্দেশ্যের কথাই বারবার জানতে পারি। আর সেই উদ্দেশ্যের কথা আল্লাহ নিজেই বলছেন কোরআনে—

“আমি মানুষ ও জিনকে সৃষ্টি করেছি এই কারণে যে তারা শুধু আমারই ইবাদাত করবে।” [সূরা আয যারিয়াতঃ ৫৬]

কিন্তু সময় পাল্টেছে। কালের বিবর্তনে মহাগৌরবের সম্মান মুসলিমরা নিজেরাই পায়ে মাড়িয়েছে। সময়ের আবর্তনে মুসলিমরা দ্বীন থেকে বিচ্যুত হয়েছে। আল্লাহর একত্ববাদের যে দ্বীন ইসলামকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের জীবন রাঙানোর কথা ছিল সেই মুসলিমরা অন্য কোন আদর্শে জীবন খোঁজা শুরু করেছে। আমরা মুসলিমরা আজ কাফেরদের মত করে জীবনকে দেখি। আল্লাহ আমাদের জন্য জীবনের যে উদ্দেশ্যকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন সেই উদ্দেশ্য থেকে আজ আমরা বহু বহু দূরে। নিজেদের মগজকে কুফরাইজ করতে করতে এখন আমরা ইসলামটাকেও কাফেরদের চোখে মানানসই করে নিয়েছি। মনের অজান্তে নির্বোধ মোরা মুসলিম নিজেরাই জানিনা কখন নিজেদের মগজ কাফেরদের কাছে বন্ধক দিয়েছি। আমাদের মগজে আজ কাফেররাই তাদের মত করে তাদের আদর্শের আবাদ করে। আমরা সবকিছু তাদের হাতে তুলে দিয়ে জরাজীর্ণ কংকালটা নিয়ে মহা গর্বে proud muslim সেজে বসে আছি। আজ আমি আমার মুসলিম ভাই বোনদের কাছে সেরকম কিছু মগজ বিক্রির গল্প শুনাব। আসুন শুরু করি…

তারেক (ছদ্মনাম) ছেলেটা খুব ভাল। ইসলামী মাইন্ডের প্র্যাক্টিসিং মুসলিম মাশাআল্লাহ! নামাজ দোয়া পড়ে। ইসলামী পড়াশুনা করে। প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন হালাক্বায় যায়। ফেসবুকে ইসলামপন্থী হিসেবে তার বেশ পরিচিতিও আছে। খিলাফা, জিহাদ, আহলে হাদিস-মাজহাব তর্কে তার সাথে কথায় পেরে উঠা যায়না। মানুষকে ইসলামের দাওয়াহও দেয়। পাশাপাশি……

ছেলেটা বেশ উদারপন্থী, মুক্তমনা এবং আধুনিকও! হলিউড বলিউদের কোন মুভিই তার মিস যায়না। সে আবার খুব সৌখিন। কম্পিউটার হার্ডডিস্কে বাঘা বাঘা শায়খদের লেকচারের পাশাপাশি বলিউড হলিউডের মুভিগুলোর HD প্রিন্টও সে সংগ্রহ করে। গানও তার বেশ ভাল লাগে। হার্ড, মেটাল, রক, মেলোডি সবই তার প্রিয়। গীটারের ক্লাসেও তারেক নিয়মিত থাকে। আর রাতের বেলা বার্সা রিয়াল ম্যাচ মিস গেলে তো তার দিনটাই মাটি! মলির সাথে বনিবনা হচ্ছেনা বলে তার সাথে ব্রেক আপ করে এই তো সেদিন এলিটার সাথে সে In a relationship এ এসেছে!!

Why brother why?? এমন তো কথা ছিলনা!! আপনি কি ইসলাম বুঝতে পারছেন না নাকি ইসলামকে নিজের মত বুঝে নিয়েছেন?

এভাবে হয়না ভাই। এভাবে কোনদিনও হয়না, হবেনা, হতে পারেনা। ইসলামে আচার অনুষ্ঠানের চেয়ে এখানে অনেক বেশি উপলব্ধির বিষয় আছে। চিন্তা করেন সাহাবারা কানে হেডফোন লাগিয়ে, অবসরে(!!) সামাজিক, রোমান্টিক, অ্যাকশন মুভি দেখে, গার্লফ্রেন্ড maintain করে আবার দ্বীনের দাওয়াতও দিচ্ছে? (নাউযুবিল্লাহ) এভাবে দ্বীন কায়েম করছে?? চিন্তা করতেও তো অস্বস্তিতে নাড়ী ভুঁড়ি বেরিয়ে আসে। সুবহানাল্লাহ! আজ আমরা সেভাবেই কিনা দ্বীনের খেদমত (!) করছি। এসব ছোট ছোট কন্সেপচুয়াল বিষয়ে আমরা মুসলিমরা বড় বেশি মার খেয়ে যাচ্ছি। খুব দ্রুত দ্বীন থেকে বেরিয়ে পড়ছি। আমাদের বুঝতে হবে ভাই এসব কুফরের দুনিয়ালোভী শয়তানী জীবনের দর্শন আর ইসলামের জীবনদর্শন এক নয়। এক তো নয়ই এই দুইটা একসাথে যায়ও না।

আমার এক বন্ধু এক রাতে আমার সাথে সে কি তর্ক! তার আলোচনার বিষয় ইসলামে কিভাবে গান, হরেক রকম মুভি, খেলাধুলা এসব লাগবে! অথচ সে নামাজটাই পড়েনা। সে খুঁজছে গান বাজনা, রকমারি মুভি আর রাত জেগে খেলা দেখার ইসলামী লাইসেন্স। আর যাই হোক অনৈসলামিক যেন কেউ বলতে না পারে! সুবাহানাল্লাহ! কাফেররা আমাদের মাথাকে এভাবে গিলে খাচ্ছে। আমরা একটুও মাথা খাটাচ্ছি না।

একজন সালাফের একটা কথা ছিল এরকম—“একই হৃদয়ে কুরআনের জন্য ভালোবাসা আর গান বাজনার জন্য ভালোবাসা একই সাথে থাকতে পারেনা।”

ইসলামের সাথে contradict করে এমন সব বিষয়ের সাথে এই কথাটি সত্য। ইসলাম আর কুফরি এক সাথে একই অন্তরে সারভাইভ করতে পারেনা। বলা হচ্ছে সালাত মানুষকে অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখে। তাহলে সালাত পড়ার পরও মানুষ অশ্লীলতা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না কেন?? সারাদিন হা করে টিভিতে অর্ধনগ্ন নারীর শরীর দেখে, শয়তানের বাজনা কানে বাজিয়ে, নারী থেকে নারীর শরীরে চোখ ঘুরিয়ে কি করে আশা করতে পারেন যে আপনার সালাত আপনাকে অশ্লীলতা থেকে মুক্ত করবে?? নদীতে বিশাল বাধ বেঁধে দিয়ে যদি বলেন পানি আসছেনা কেন তার কোন অর্থ আছে?? ঠিক তেমনি ইসলাম পালন করেও পাশাপাশি দিনে তিনবেলা কুফরি গিলে সে ইসলাম আপনাকে উপকৃত করবে সেটা কি করে আশা করেন??

উত্তরা থেকে সেদিন ভার্সিটিতে আসছিলাম। কিছু হিজাবি মেয়ে উঠলো বাসে। আল্লাহ তায়ালা এই মেয়েগুলোকে পারফেক্ট ভাবে হিজাব করে নিকাব করারও তৌফিক দিয়েছেন। কিন্তু পুরোটা পথ এই মেয়েগুলো এত চিল্লাচিল্লি, ফেসবুকে এই হইছে সেই হইছে, অমুকের সাথে অমুকের রিলেশন, অমুক ছেলেটা এমন, ওর সাথে রিলেশন চলছে…… সুবাহানাল্লাহ! কথার মাঝে একজন জানালো সে নামাজও পড়ে! এদের পর্দা আছে, হিজাব আছে, নামাজ রোজা আছে, বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে ইসলামের সবই আছে। কিন্তু তবুও যেন কিছুই নেই। সবই যেন শূন্য। ইসলামে হিজাব ফরজ এটা বুঝলেও এরা বুঝছেনা আল্লাহ সুবাহানু ওয়া তায়ালা হিজাবের আয়াতে নন-মাহরামের কথাও বলেছেন (সূরা নুরঃ ৩১), সূরা আহযাবে নিচু গলায় এবং পুরুষের সামনে সুললিত কণ্ঠে কথা না বলার বিষয় আছে (সূরা আহযাবঃ ৩২), এরা বুঝতে পারছে না বন্ধু আড্ডা গানে হারিয়ে যাওয়াটা জাহিলিয়াতের সাথে কোন পার্থক্য রাখেনা। ইসলাম পালন করলেও এরা বুঝতে পারছে না এরা আসলে ইসলামটাই বুঝেনি। ইসলামের আবেদন এদের মর্মে গিয়ে পৌঁছেনি। ইসলামকে এরা আর দশজনের মত কিছু আচার অনুষ্ঠান হিসেবেই দেখে!

ইসলামের বিশাল বিশাল ক্ষেত্রে আমাদের বিচরণ থাকে। খিলাফতের কথা বলি, মুসলিম উম্মাহর কথা বলি, জিহাদের কথা বলি। এই বিশাল বিশাল ক্ষেত্রগুলোর খুঁত বের করি, করণীয় নিয়ে মাথা নষ্ট করি। কিন্তু সারা পৃথিবীর মানুষকে যে ইসলামের প্রতিষ্ঠার কথা বলি সেই ইসলাম নিজেদের জীবনেই প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, প্রতিদিন কোরআন তিলাওয়াত, নফল ইবাদাত, জিকির আযকার এসব জানিনা নিজেদের জীবনে কতটুকু প্রতিষ্ঠিত! আমাদের মগজকে কাফেররা এত নিখুঁতভাবে কুফরাইজ করেছে সুবাহানাল্লাহ আমরা নিজেদের দ্বীন ইসলামকেও তাদের মত করে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চাই। গণতন্ত্র হয়ে যায় আমাদের দ্বীন কায়েমের জিহাদ। আসহাবিয়া (জাতীয়তাবাদ), গনতন্ত্র, কাফেরদের আচার অনুষ্ঠানে ইসলাম ঢুকিয়ে আমরা ইসলামের একটা comfort zone তৈরি করে নিয়েছি। এবং এমনভাবে কাফেররা এই comfort zone তৈরিতে আমাদের মগজ ধুলাই করেছে সেখানে ইসলাম না বুঝা ম্যাংগো পিপল যেমন “ইসলামী ব্যবস্থার” সান্ত্বনা পাবে ঠিক তেমনি কাফেররাও হ্যাপি থাকবে। এই তো রামাদান শুরুর আগে শুরু হয়ে গেছে ইফতার পার্টির আয়োজন। আমরা এখন রামাদানের জন্য প্রস্তুতি নিইনা, ইফতার পার্টির জন্য মহাপ্রস্তুতি থাকে। বিভিন্ন জাতীয় দিবস, কুফরদের হেন তেন দিবসের সাথে আমরাও করে নিয়েছি বিশ্ব কোরআন দিবস, বিশ্ব হিজাব দিবস! ভালোবাসা দিবসের মত জঘন্য দিবসগুলোতে আমাদের ইসলামপন্থী ভাই বোনেরা যখন “পরিষ্কার মনে” (!) ভালবাসার লাল গোলাপ হাতে ছুটাছুটি করে আমার মনে হয় শয়তান তখন অট্টহাসি দিতে থাকে। কি লজ্জা। কি পরাজয়। কি অশ্লীল পরাজয় আমাদের ঈমানের! কি ভয়ঙ্কর পরাজয় নিজেদের ইসলামী সত্তার!

আমাদের অগাদ আস্থা মহান আল্লাহর উপর। আমাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়না আল্লাহ্‌ই আমাদের রিযিকদাতা। কিন্তু আমাদের সেই বিশ্বাসের উপর অটল থাকতে খুব বেশি কষ্ট। আল্লাহ্‌ই রিযিক দেবেন এই বিশ্বাস অন্তরে লালন করেও তাই মুসলিমদের ঘুষ খেতে হয়, সুদ নিতে হয়, দুর্নীতি করতে হয়। নামাজ পড়তে পড়তে কপালে দাগ ফেলে দিলেও আমারা ইসলামের এই কনসেপ্টে বড় বেশি মার খেয়ে যাই দুনিয়ালোভী কুফফারদের কাছে। বড় বেশি মিল আমাদের মধ্যে! বাবা মায়েদের সবসময় বলতে শুনবেন—“আমার মেয়েটাকে শুধু একটা ভাল ছেলের হাতে তুলে দিতে পারলেই হল, আর কিছু চাইনা। এরপর মরেও শান্তি পাব।” কিন্তু যে কাজের মাধ্যমে সম্মানিত বাবা মায়েরা মনের শান্তি খুজে সেই কাজটা করতে গিয়ে বড় বেশি দুনিয়ালোভী দ্বীনহীন সমাজের মানুষগুলোর মত ছেলের দ্বীনদারির চেয়ে ব্যাংক ব্যাল্যান্স ঘাঁটে! মেয়ের ভাল চাই কিন্তু দুনিয়ালোভী এক দ্বীনহীন মানুষের হাতে তুলে দিয়ে!! জানিনা এতে মরলেও কি শান্তি নিশ্চিত হবে! নামাজ রোজা করে, বুড়ো বয়সে একবার হজ্জ করে, ছেলে মেয়ে প্রতিষ্ঠিত (!!) করে এবার মসজিদের সামনের কাতারের সম্মানিত হাজী সাহেব হওয়ার মাঝেই আমাদের ইসলামের দর্শন এখনো আটকে আছে।

বাড়ির কর্তা আলহাজ্ব অমুক! গায়ে সাদা পাঞ্জাবী, মাথায় টুপি, হাতে তজবি, গায়ে আতরের সুবাস! সবকিছু মিলিয়ে সমাজের ঈমানদার! কিন্তু ছেলের বিয়েতে ডিস্কোর আয়োজন ঠিকই হবে। বাড়ির মেয়েরা শিলা, মুন্নি, চাম্মাক চালো পড়ে ঢং ঢং করে ঠিকই বেরোবে। আমরা কবে বুঝবো? আমাদের মগজ কবে কুফরি মোটিভেশনের প্রভাবমুক্ত হবে? কুফরের মোটিভেশনের উপর জীবনের ভিত খোঁজা মুসলিমদের ভেতর এই বোধটুকু কাজ করেনা—আমরা এখানে আল্লাহর গোলামী করতে এসেছি। আল্লাহর দ্বীনকে তাঁর জমিনে প্রতিষ্ঠিত করতে এসেছি। দ্বীনের জন্য, আল্লাহর জন্য কিছু করার কনসেপ্টটুকু আমাদের মগজে কবে ঢুকবে?? আল্লাহ যে সন্তানকে রহমত হিসেবে দিয়েছেন সেই সন্তানদের আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ের অংশ করার ইসলামটুকু আমাদের বাবা মায়েদের মগজে কবে স্থান পাবে?? সবকিছু থেকে গা বাঁচিয়ে ছবির ফ্রেমে হ্যাপি ফ্যামিলি হয়ে বেঁচে থাকার সস্তা জীবনদর্শন থেকে বেরিয়ে কবে আমরা আল্লাহর দ্বীনের জন্য কুফর আর কাফেরদের সামনে সিনা টান করে দাঁড়াতে শিখবো? কবে?? সেই দিনটা দেখে যাওয়ার খায়েশটুকু আল্লাহ তুমি কবুল করো……

দ্বীন ইসলামের প্রতি ভালোবাসা, আল্লাহর প্রতি রাসুল (সঃ) এর প্রতি ভালোবাসা যে মুসলিমের অন্তরে গেঁথে যায় তার কাছে এসব ছোট ছোট নিত্য কুফরির বিনোদনগুলো কত সস্তা, কত অর্থহীন ঠেকে!! কিন্তু আমার মুসলিম ভাই বোনেরা সেই কনসেপ্টটা নিতে পারেনা। ল্যাপটপে মুভি দেখতে বসে আযান শুনে পজ দিয়ে নামাজ পড়ে ছুটে এসে আবার প্লে বাটন টিপে মুভিতে ধ্যানমগ্ন হওয়া আমার মুসলিম ভাই বোঝেনা আল্লাহর দ্বীনকে সে আসলে ভালবাসতে পারেনি এখনো! দ্বীনের কথা বলার ফাঁকে নিজের গার্লফ্রেন্ডের রমণীয় ভাবালুতা বর্ণনা করা দ্বীনদার (!) যুবক বোঝেনা ইসলাম তার জীবনবোধের কোন পরিবর্তন আনতে পারেনি। সিগারেট ফুঁকে ফুঁকে খিলাফা, জিহাদের লেকচার ছাড়া মুসলিম ভাই বোঝেনা আল্লাহর জমিনে দ্বীন কায়েমের মহা সম্মানটুকু সে আসলে এখনো deserve করেনা। দ্বীনি ভাইয়ের (!!) মজা লস মার্কা স্ট্যাটাসে লুতুপুতু কমেন্টের সাথে ভেংচি কাটা ইমুশন মারা আমার হিজাবি বোনটা বুঝে উঠতে পারেনা আসলে শয়তান তাকে দিয়ে ঐ জাহেল ছেলেমেয়েদের আচরণটুকুই আদায় করিয়ে নিয়েছে। জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্রের রঙিন পর্দায় ইসলামের মহান গৌরবকে বাক্সবন্দী করে ফেলা আমার মুসলিম ভাইয়েরা অনুধাবন করতে অক্ষম মুসলিমদের এই আচরণে কাফেররাও মুচকি হাসে! নিজেদের জীবনে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত না করে তর্ক বিতর্ক, বুদ্ধিজীবী কিংবা ফেসবুক সিলেব্রিটি সেজে ভার্চুয়ালি দ্বীন কায়েম করে ফেলা আমার মুসলিম ভাইরা বুঝতে অক্ষম এখনো অনেক দূর যাওয়ার আছে। অনেক অনেক দূর……

ইসলামটা অনেক সহজ, আমাদের মানসিকতাই কঠিন। ইসলামে যুক্তি তর্ক, ব্যাকরণিক ফর্মুলার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মানুষের উপলব্ধি। যে ছোট ছোট বিষয়গুলো নিয়ে এতক্ষণ বকবক করলাম সে বিষয়গুলো কাউকে জোর করে বোঝানো যায়না যতক্ষণ না মানুষের উপলব্ধির জায়গাগুলোতে এগুলো নিয়ে চিন্তা না আসে। ইসলামের জন্য ভালোবাসা, আল্লাহর দ্বীনের জন্য আকুলতা, মহান রবের ভয়ে কুঁকড়ে যাওয়া ছোট্ট কলিজা যার সেই তো আল্লাহর সৈনিক। আল্লাহর পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি তো তারই জন্য! সরিষা দানা পরিমাণ ঈমান নিয়ে জান্নাতে যাওয়ার স্বপ্ন কোন মুসলিম দেখতে পারেনা dear brothers and sisters। কেন জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে আল্লাহর জন্য বাঁচতে শিখবো না?? কেন অতি তুচ্ছ, অর্থহীন গান বাজনা, এসব মুভি ইসলামের “মডার্ন (!!)” ভার্সন আমাদের দ্বীনকে হাস্যকর বানিয়ে ফেলবে??

যে রাসুল (সঃ) এশার সালাতের পর অপ্রয়োজনে কথাই বলতেন না, সেই রাসুলের উম্মাত হয়ে আমরা কেন বুঝবোনা রাত জেগে বার্সা রিয়ালের ম্যাচে মেসি রোনালদোর ড্রিবলিং হয়ত আমাদের চোখ বড় বড় করতে পারবে কিন্তু তা আমাদের দ্বীনের এতটুকু উপকারও করতে পারবে না অপকার ছাড়া!! কেন আল্লাহর ভয়ে ক্লাসের মেয়েটার সাথে ভাব না জমিয়ে নিজের নফসকে সংযত করতে পারব না? হোক না সে মেয়েটাও হিজাবি!! আমার বোনটা কেন হিজাব নিকাব করার পরও কুরআনের আয়াতগুলো পড়ে আল্লাহর আরও কিছু আদেশ আমলে নিয়ে আল্লাহর হুকুম আহকামে নিজেকে বাঁধতে শিখবে না?? নিজেদের অন্তর থেকে কুফরের আদর্শ, বিনোদন, জীবনবোধ সমূলে উৎপাটন করে কেন আল্লাহর রঙে নিজেদের রাঙাতে পারব না?? আল্লাহর কিতাবের এই আয়াতটা কি আমাদের উদ্দেশ্য করে নয়??

“(আমাদের দ্বীন) আল্লাহর রঙে রঞ্জিত এবং আল্লাহর রঙ অপেক্ষা আর কার রঙ উত্তম হবে? এবং আমরা তাঁরই ইবাদতকারী।” [২:১৩৮]

আল্লাহ কাকে কিভাবে হেদায়াত দেন তা তিনি ছাড়া আর কেউই জানেন না। হয়ত কোনদিন কোন এক দুর্বল সময়ে মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগবে। হয়ত কোনদিন জীবনবোধের পরিবর্তন হয়ে আমার মুসলিম ভাই বোনেরা নিজেদের এরূপ অর্থহীন দ্বীনের অসারতা খুঁজে পাবে। হয়ত একদিন কুফফারের প্রলেপ মাখা দ্বীন আদর্শের তাসের ঘর কোন ভয়ানক তীব্র অনুশোচনায় খসে পড়বে। আপনি আমি পরিবর্তন হই আর না হই একথাটুকু জেনে নিই আল্লাহর দ্বীনের বিজয় কোনদিন থেমে থাকবেনা। মিথ্যে জীবনবোধের শেকলে আটকে পড়া মানুষগুলো হয় শুকনো পাতার মত। মৃদু বাতাসেই ঝর ঝর করে ঝরে পড়ে। কিন্তু দ্বীনকে ভালোবেসে প্রতিটা সময় আল্লাহর সন্তুষ্টিতে ব্যয় করা মানুষগুলো হয় ডাল পালা আর বহুদূর বিস্তৃত শেকড়সহ গাছের মত। রোদ আসে, বৃষ্টি হয়, ঝড় বয়ে যায় আর এতে কত পাতা ঝরে পড়ে কত পাতা গজায় কিন্তু গাছ ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়। সত্যান্বেষী মুসলিমদের জন্য আল্লাহর অফুরন্ত পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি। আর কুফরের প্রলেপ মাখা মিথ্যে ইসলামের মরীচিকায় খেটে মরা মানুষগুলো সবসময়ই লুজার!!

আমাদের রহম করো ইয়া রব! আমাদের অন্তরগুলোতে তোমার দ্বীনের বুঝটুকু দিয়ে দাও। প্রতিটা সময় তোমার পথে ব্যয় করার তৌফিক দাও। তোমার দ্বীনের জন্য কিছু করতে না পারি রোজ হাশরের মাঠে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে যেন বলতে পারি—আমি অন্তত চেষ্টা করেছিলাম। তোমাকে যেন বলতে পারি আমি প্রতিটি সময় কাজে লাগিয়েছিলাম। তোমাকে যেন বলতে পারি আমি তোমাকে ভয় করেছিলাম। তোমাকে যেন বলতে পারি দুনিয়ার মোহে একটি মুহূর্তের জন্যও তোমার দ্বীনের কথা, তোমার কথা আমি ভুলিনি। ক্ষমা কর ইয়া রব। আমাদের হেদায়াত দাও। আমাদের মগজটুকু শয়তান আর তার অনুসারী কাফেরদের হাত থেকে রক্ষা কর। আমাদের হেফাজত কর। আমীন।