অনেক আগে এক ভাই আমার কাছে একটা প্রশ্ন করেছিল। সে জানিয়েছিল সে নামাজ পড়ে, তার মুখে লম্বা দাড়ি, সে দ্বীন পালন করে। কিন্তু গোপনে সে পাপকাজে লিপ্ত হয়। তার করণীয় কি? সে মনে প্রাণে চায় পুরোপুরি দ্বীনে প্রবেশ করতে!

এমন অনেক সময় হয় যখন পাপ আমাদের অন্তরে কাঁপন ধরায়। ভীত সন্ত্রস্ত করে। নিজেকে মুনাফিক মুনাফিক লাগে। মনে হয় এত পাপ কি আল্লাহ ক্ষমা করবেন? জাহান্নামই তাহলে ঠিকানা?

আলহামদুলিল্লাহ। নিজের পাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া, নিজের ভেতর মুনাফিকির বিষয়ে ভীত সন্ত্রস্ত থাকা একজন মানুষের সততার পরিচায়ক ইনশাআল্লাহ। কারণ একজন মুসলিম যখন নিজের অন্তরে মুনাফিকির ভয় করে তখন এটা নির্দেশ করে যে, তার অন্তর এখনো নির্জীব হয়ে যায়নি এবং ঈমান রক্ষায় সে এখনো যথেষ্ট তৎপর! ইবরাহীম (আঃ) বলেছিলেন, "যখন নিজের কথার সাথে কাজের সামঞ্জস্য খুঁজতে যাই, তখন আমি নিজের কপটতার ব্যাপারে ভয় করি।" আল হাসান আল বসরি মুনাফেকি নিয়ে বলেছিলেন, "মুমিন ছাড়া কেউ মুনাফিকির ভয় করেনা আর মুনাফিক ছাড়া কেউ এর থেকে নিজেকে নিরাপদ ভাবেনা।"

ইবনে আল কায়্যিম (রহঃ) বলেন, "একজন মানুষের ইলম আর বিশ্বাস যত পাকাপোক্ত সে তত বেশি মুনাফিকদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়ে ভয় করে।" এমনকি উম্মাহর দলনেতা এবং সালাফরাও মুনাফিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ভয় করতেন। হযরত উমার (রাঃ) হুজাইফা (রাঃ) কে বলেছিলেন, "আমি তোমাকে কসম কেটে বলছি! রাসুল (সঃ) কি আমার নাম মুনাফিকদের সাথে রেখেছেন?" আল্লাহু আকবর। উমার (রাঃ) ও মুনাফিকির ভয় করতেন। আল্লাহর বড় বড় আওলিয়ারাও নিজেদের মধ্যে মুনাফিকির ভয় করতেন। ইবন আবি মুলায়কাহ বলেন, "আমি রাসূল (সঃ) এর ত্রিশ জন সাহাবির সাক্ষাত পেয়েছি যারা মুনাফিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়ার ভয় করতেন।"

দিনের পর দিনের জাহেল জীবন থেকে হঠাৎ করে দ্বীন পালন করা, দ্বীনের অনুশাসন মেনে চলাটা কতোটা কঠিন সেটা যার উপর দিয়ে যায় সেই বুঝে! কেননা মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে আর আমাদের চারপাশে ঘিরে রয়েছে ফিতনা আর শয়তানের হাজারো ফাঁদ। আমাদের মনে রাখা উচিত জাহান্নামকে ঘিরে আছে কামনা বাসনার ধোঁকা আর জান্নাতকে ঘিরে আছে দুঃখ-কষ্ট, দুঃসময়!

এই সমাজে একটা ছেলে ইসলামের অনুশাসনে জীবন সাজানোর চেষ্টা করলে চারপাশের বন্ধু বান্ধব, পরিবার, আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে যে ব্যবহারটা আসে তা খুবই বেদনাদায়ক। সবচেয়ে বেদনাদায়ক যখন কেউ তার জাহেল জীবনের বিভিন্ন কাজের কথা তুলে ধরে তাকে অপমান আর অপদস্ত করে। তার দ্বীন নিয়ে হাসি তামাশা করে 'দুইদিনের হুজুর' বা এধরনের ট্যাগ লাগায়। এধরনের আচরণ একজন মানুষকে হতাশ করে তোলে যার ফলশ্রুতিতে সে একসময় দ্বীন ছেড়ে জাহেল জীবনে ফিরে যায়। আপনার বন্ধুটিকে কি অপরাধে অপমান করছেন? সে আল্লাহর দ্বীনকে মেনে নিয়েছে বলে? সে আপনার মত জাহেলিপনায় মত্ত না থেকে আল্লাহর দ্বীনের অনুশাসনে জীবন সাজানোর চেষ্টা করছে বলে? কত বড় জাহেল ছিল আপনার বন্ধু? কত বড় পাপী ছিল সে? গানের পাগল ছিল? মুভি দেখতো? তার গার্লফ্রেন্ড ছিল? আপনার সাথে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে অশ্লীল-অসার আড্ডা কিংবা গোপনে দুএকটা পর্ণ দেখতো? এর চেয়ে বেশি কিছু? কিন্তু সে কি আল্লাহর কাছে তাওবা করেনি? সে কি এসব কাজ থেকে এখন দূরে নয়? অথচ আপনি এখনো যে জাহেল ছিলেন সেই জাহেলই আছেন। কাকে অপমান করছেন আপনি?

আবু সুফীয়ান (রাঃ) ইসলাম গ্রহণের আগে ছিলেন মক্কার মুশরিকদের নেতা। মুশরিক থাকা অবস্থায় নিজের মেয়ে উনাকে নাপাক মুশরিক বলে পাটিতে বসতে দেননি। আপনার বন্ধুটি কি এর চেয়ে বড় পাপী ছিল? হযরত উমার (রাঃ) ছিলেন কাফের, মদ পান করতেন, কেউ মুসলিম হয়েছেন বলে জানতে পারলে পিটিয়ে আধমরা করে ফেলতেন। সেই উমার (রাঃ) পরবর্তীতে হলেন জান্নাতি সাহাবি এবং খলিফা! আপনার বন্ধুটি কি এরচেয়েও বড় গোমরাহ ছিলেন? রূপকথার মত করে যে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর বীরত্বগাঁথা শুনেন তিনিই ছিলেন একসময় মক্কার মুশরিকদের দলে এবং মুসলিমদের দ্বীনের পথে বাধা সৃষ্টিকারী! বলা হয়ে থাকে উহুদ যুদ্ধে মুসলিমদের পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল এই খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর বীরত্ব! আর এই খালিদ বিন ওয়ালিদই (রাঃ) পরবর্তীতে ইসলামে এসে হয়েছেন অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুসলিম বীর! আপনার বন্ধুটি কি এর চেয়েও খারাপ ছিল? যে ছেলেটি আল্লাহর দ্বীনের পথে আসতে চাইছে তাকে সাহায্য করতে না পারেন নিরুৎসাহিত করবেন না। তাকে ব্যঙ্গ করবেন না! যত বড় পাপই হোক কারো পাপগুলো নিশ্চয় আল্লাহর দয়ার চেয়ে বড় নয়! জান্নাত আর জাহান্নাম উভয়েই পাপিষ্ট রয়েছে; তবে পার্থক্য হল জান্নাতের পাপিষ্টরা দুনিয়াতে তাওবা করে নিজেদের পাপগুলো ক্ষমা করিয়ে নিয়েছে! আর জাহান্নামের পাপিষ্ঠরা দুনিয়াতে নিজেদের পাপেই সন্তুষ্ট থেকেছে!

সমাধান কি? সমাধান অনেক। সমাধান খোঁজার মানসিকতার চেয়ে বেশি জরুরী সমাধানকে সমাধান হিসেবে মেনে নেওয়ার মানসিকতা! নিজেকে আল্লাহর কাছে সঁপে দেওয়া। আন্তরিক তাওবা আর চেষ্টা করা। আল্লাহর কাছে খুব বেশি করে চাওয়া তিনি যেন আমাদেরকে দ্বীনের পথে রাখেন। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত স্বলাত আদায় করলেই আমাদের অনেকবার সূরা ফাতিহা পাঠ করার সুযোগ হয়। আল্লাহর সামনে বারবার বলার সুযোগ হয় 'ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম।' আবু বকর (রা) রাসূল (সঃ) এর নিকট এসে বললেন, আমাকে একটি দোয়া শিক্ষা দিন যা আমি স্বলাতে পাঠ করতে পারি। রাসূল (সঃ) বললেন, "বল, আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাছীরান ওয়ালা ইয়াগফুরুজজুনুবা ইল্লা আনতা ফাগফিরলী মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা ওয়ারহামনী ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহীম। (হে আল্লাহ! আমি আমার নাফসের উপর বেশি বেশি জুলুম করেছি, আর তুমি ব্যতিত গুনাহসমূহ কেউ ক্ষমা করতে পারেনা, সুতরাং তুমি তোমার নিজ গুণে আমাকে মার্জনা করে দাও এবং তুমি আমার প্রতি রহম কর, তুমি তো মার্জনাকারী দয়ালু।"

চিন্তা করুন আবু বকর (রাঃ) যিনি রাসূল (সঃ) এর পর উম্মাহর শ্রেষ্ঠ একজন মুসলিম, যিনি দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন তাকে রাসূল (সঃ) শিখিয়েছেন "হে আল্লাহ! আমি আমার নাফসের উপর বেশি বেশি জুলুম করেছি!" তাহলে আমাদের অবস্থা কেমন হওয়া উচিত? আল্লাহু আকবর! আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।

আরেকবার সাহাবীদের মধ্যে অন্যতম এবং জ্ঞান গরিমায় উত্তম ব্যক্তিত্ব মুয়ায (রাঃ) কে রাসূল (সঃ) বললেন, "হে মুয়ায! আমি তোমাকে ভালোবাসি।" মুয়ায (রাঃ) বললেন, "এবং আমিও আপনাকে ভালোবাসি হে আল্লাহর রাসূল।" তখন রাসূল (সঃ) বললেন, "প্রতিবার স্বলাতে এই দোয়াটি পড়তে ভুলো না, 'রাব্বি আ'ইন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিকা। (হে আল্লাহ আপনার যিকরে, আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে এবং আপনার ইবাদাত করার কাজে আমাকে সাহায্য করুন।")

দোয়াটির দিকে খেয়াল করলে দেখব যাকে রাসূল (সঃ) অত্যধিক ভালোবাসতেন তাকে বলছেন সে যেন ইবাদাত করার কাজে আল্লাহর সাহায্য কামনা করেন। কেননা আমরা যদি প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর সাহায্য না পাই তাহলে আমাদের কোন ক্ষমতা নেই আল্লাহর ইবাদাত করার। তাই আমাদের উচিত হবে বেশি বেশি আল্লাহর সাহায্য কামনা করা যাতে তিনি আমাদের উপর যা আরোপিত করেছেন তা যেন আমরা সঠিকভাবে মেনে চলতে পারি। কারণ প্রতিটা মানুষেরই সীমাবদ্ধতা এবং কাঁধে পাপের বোঝা রয়েছে। আল্লাহ বলেন,

"…. মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।" [সূরা নূরঃ ৩১]

"আর তোমরা নিজেদের পালনকর্তা সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা কর। অনন্তর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর। তাহলে তিনি তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করবেন এবং অধিক আমলকারীকে বেশি করে দেবেন আর যদি তোমরা বিমুখ হতে থাক, তবে আমি তোমাদের উপর এক মহা দিবসের আযাবের আশঙ্কা করছি।" [সূরা হুদঃ ৩]

" মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা কর-আন্তরিক তওবা। আশা করা যায়, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কর্মসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। সেদিন আল্লাহ নবী এবং তাঁর বিশ্বাসী সহচরদেরকে অপদস্থ করবেন না। তাদের নূর তাদের সামনে ও ডানদিকে ছুটোছুটি করবে। তারা বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের নূরকে পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি সবকিছুর উপর সর্ব শক্তিমান।" [সূরা আত তাহরীমঃ ৮]

এই আয়াতগুলো নির্দেশ করছে যে আমরা যদি আল্লাহকে ভয় করে তাঁর কাছ থেকে পুরস্কার আশা করতে চাই তাহলে আমরা যেন আন্তরিক তাওবা করি, পাপ কাজ ছেড়ে দেই, অতীতের পাপের জন্য অনুতপ্ত হই এবং পাপ কাজে আর ফিরে না যাওয়ার ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। তাহলে মহান আল্লাহ আমাদের জান্নাতে দাখিল করবেন ইনশাআল্লাহ। আর আমরা নিশ্চয় জানি আমাদের রাসূল (সঃ) দিনে শতবারেরও বেশি আল্লাহর কাছে তাওবা করতেন। আল্লাহু আকবর।

তাই পাপ কাজের তাওবা করে আবারও পাপ কাজে ফিরে যাওয়া কিংবা দ্বীন পালনের পাশাপাশি পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে গেলে আমাদের উচিত হবে তাওবার মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া। আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করা। মুসলিমের একটা হাদিস থেকে আমরা পাই রাসূল (সঃ) বলেছেন, আল্লাহ রাতে তাঁর হাত প্রসারিত করেন যারা দিনে পাপ কাজ করে তাদের তাওবা কবুল করতে। আবার দিনে তাঁর হাত প্রসারিত করেন রাতে যারা পাপ কাজ করে ফেলে তাদের তাওবা কবুল করতে। আল্লাহু আকবর।

সমাধান আরো আছে। যেমন আল্লাহ বলেছেন সূরা আহযাবে,

"হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল।" [৩৩:৭০]

"তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে।" [৩৩:৭১]

আল্লাহ বলছেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং হক্ব কথা বলো! আমরা এই কাজটা করলে কি হবে? একথা আল্লাহ বলছেন ঠিক পরের আয়াতে। আল্লাহ বলছেন, "ইয়ুছলিহ লাকুম্ আ'মালাকুম" তিনি তোমাদের আমলসমূহ সংশোধন করবেন। আমলগুলোর ইছলাহ করে দেবেন। যারা বিজ্ঞানের ছাত্র তারা নিশ্চয় ইলেকট্রোপ্লেটিং এর কথা জানেন। লোহার একটা ত্রুটি হল খোলা জায়গায় রাখলে মরিচা ধরে যায়। লোহার এই ত্রুটি দূর করার জন্য অন্য ধাতু যেমন রুপার প্রলেপ দেওয়া হয়। উদাহরণ হল ঘড়ির কাটা! আল্লাহ এই আয়াতে আমাদের আমলের ত্রুটি সংশোধন করে দেওয়ার কথা বলছেন। আমরা যদি আল্লাহকে ভয় করি আর সত্য কথা বলি তাহলে আমাদের প্রয়োজনীয় আমল আল্লাহ আমাদের দিয়ে করিয়ে নিবেন। এরপরও আমাদের ভুল ত্রুটি থাকবে, গুনাহ হবে। এই আয়াতে তাই আল্লাহ আরো বলছেন, "অইয়াগফির লা কুম যুনূবাকুম্", অর্থাৎ পাপগুলো মুছে দেওয়া হবে! আল্লাহু আকবর।

শুধু তাই নয় পাপের মূলোৎপাটন করে দ্বীনের প্রকৃত নির্যাস পেতে হলে আমাদেরকে আরো কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। জাহেল বন্ধু - যারা খারাপ, অশ্লীল, অনৈসলামিক কাজে উৎসাহ যোগায় তাদের সঙ্গ ত্যাগ করা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কেননা এসব বন্ধুর ব্যাপারে আল্লাহ বলেনঃ

"বন্ধুবর্গ সেদিন একে অপরের শত্রু হবে, তবে খোদাভীরুরা নয়।" [৪৩:৬৭]

এছাড়াও খারাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে এরকম স্থানগুলো এড়িয়ে চলা, গান বাজনা-মুভি-আবর্জনাস্বরূপ গল্প উপন্যাসের সমস্ত উৎস ধ্বংস করা এবং অবশ্যই অবশ্যই কৃত পাপকাজের বোঝা সরাতে বেশি বেশি ভালো কাজের দিকে মনোযোগ দেওয়া। এমন মানুষগুলোর সান্নিধ্যে থাকা যারা আপনাকে দ্বীনের পথে অনুপ্রাণিত করবে, যারা আপনাকে শোধরে দিবে এবং যারা আপনাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসবে।

দ্বীন ইসলাম একটা ফলদায়ক বৃক্ষের মত যা আপনাকে ক্ষুধায় ফল দিবে, ক্লান্তিতে ছায়া দান করবে। কিন্তু সেজন্য প্রয়োজন সেই বৃক্ষের পরিচর্যা। যে অন্তরে আল্লাহর দ্বীন গেঁথে যাবে সে অন্তর থেকে ফিতনা আর পাপের উপকরণগুলো আপনা থেকেই বেরিয়ে পড়বে। তারপরও আমরা ভুল করে ফেলি, প্রবৃত্তির তাড়নায় পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে যাই। একমাত্র আল্লাহর ক্ষমা আর দয়া ছাড়া এ থেকে উত্তরণের কোন পথ আমাদের নেই। ক্ষমা মানে কি? ক্ষমা মানে হল আল্লাহ আমাদের অতীতের সমস্ত পাপ মুছে তা পূণ্যে পরিণত করবেন। খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) রাসূল (সঃ) এর হাতে বাইয়াত করার সময় বলেছিলেন, আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে যত পাপ আমি করেছি তা ক্ষমার জন্য দু'য়া করুন। রাসূল (সঃ) বলেছিলেন, ইসলাম অতীতের সকল গুনাহর খাতা নিশ্চিহ্ন করে দেয়! আল্লাহু আকবর।

আমরা খুব করে চাইব আল্লাহ যেন আমাদেরকে তার দ্বীনের পথে অটল থাকার তৌফিক দেন। আমরা মনে প্রাণে আল্লাহর কাছে দোয়া করব যেন তিনি আমাদের অন্তরটাকে পাপমুক্ত করে তাঁর দ্বীনের সাথে বেঁধে নেন। একদিন আপনি নিজেই পরিবর্তনটা আচঁ করতে পারবেন। মসজিদ থেকে স্বলাত শেষ করে যখন একা একা বাসায় ফিরবেন, ঠান্ডা পানিতে ওযু করে যখন জায়নামাযে দাঁড়াবেন, কোন পাপকাজের সংস্পর্শে এলেই যখন কিছু একটার বাধা অনুভব করবেন তখন আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আপনি একা নয়। কেউ একজন আপনার সাথে আছেন। কেউ একজন আপনাকে দেখছেন। মহান আল্লাহর সাথে এই মুরাকাবাহ, আপনার তাক্বওয়া, একটু একটু করে গড়ে উঠা ঈমানই তখন শয়তান আর প্রবৃত্তির সাথে লড়াই করে আপনাকে ঠিকিয়ে রাখবে। আল্লাহ আমাদের সেই অবস্থায় মৃত্যুর তৌফিক দান করুন যে অবস্থায় আমরা আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট আর আল্লাহও আমাদের উপর সন্তুষ্ট। আমীন।