I have been thinking, why do we try to make a story of our whole life? Wouldn't it make more sense to compartmentalize and see each episode in a new light?

ছোট বেলা আমি যে মানুষটা ছিলাম, কেন ভেবে নিচ্ছি ওটাই আমি, আমাকে কোনোভাবে ওটাতে ফেরত যেতে হবে? কেন কোন একটা পরিকল্পনা ঠিক মতো সফল না হওয়ায় ভেবে নিচ্ছি ওই সময়টা ভুল ছিল? বিশেষ করে কী ছিলাম আর কী করছি—এই বোধটা ভয়ানক—ওটা আমাদের অতীতকে একটা শুদ্ধ/পবিত্র/পুরোপুরি নির্ভুল জায়গায় বসায়, আর বর্তমানটাকে ভাবায় একটা কিছু যেটা আমার সাথে হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু এমন তো হতেই পারে, কঠিন সময়টা আমার সহজ সময়ের মতোই 'আমারই!'

আমার ছেলে হওয়ার পর একবার লিখেছিলাম, "আল্লাহ আনন্দের বালতি উপুড় করে দিয়েছেন। অথচ এই ব্লেসিং-টাই উনি যদি নিজের কাছে নিয়ে যেতে চান আমি ভাববো আমার সাথেই কেন এমন হয়!" তার সাড়ে তিন বছর পর আল্লাহ যখন ওর লাইফলং ইন্সুলিন ডিপেন্ডেন্স এর মাধ্যমে খুব ছোট্ট একটা পরীক্ষার মধ্যে আমাকে ফেললেন, তখন কি একবারও আমি ভাবিনি, আমার তো এমন হওয়ার কথা ছিল না? অনেকবার ভেবেছি। অনেক অনেক বার। সত্যি বলতে, হেরে যাওয়ার দলে আমি কোনোদিন থাকবো এটা মেনে নিতে আমার কীভাবে বিঁধেছে আমি বলে বোঝাতে পারবো না। আমি কেন? অন্যদের হবে! আমার সাথে কেন এমন হবে? খুব স্বার্থপর শোনায়, কিন্তু সত্যি, ঠিক এটাই ভেবেছি দিনের পর দিন। কোন সান্ত্বনা, কোন উইজডম আমাকে কোন সত্যিকারের সোলেস দেয় নি। যতদিন না পর্যন্ত যত ধরনের ইগো, আত্ম-অভিমান ছিল সব ভালো মতো ভেঙেছে। মেধাবী হওয়ার, জ্ঞানী হওয়ার, বিজ্ঞ হওয়ার, ভালো মা হওয়ার, ভালো কর্মী হওয়ার, ভালো লেখক হওয়ার, ভালো গানের গলা থাকার, ভালো মানুষ হওয়ার—সব সব সব ভেঙেছে। আমি নিজের চোখে নিজেকে দেখেছি কোণঠাসা হলে কীভাবে নিজেরটা ছাড় না দিয়ে স্বার্থপর হয়ে যাই। কীভাবে যেটুকু মূলধন ছিল যা দিয়ে দু'একটা প্রশংসা কুঁড়িয়েছি কোনকালে, সেটাকে বারবার বারবার চোখের সামনে ঘুরিয়ে, নাচিয়ে, খুঁচিয়ে আরেকটু পাওয়ার চেষ্টা করেছি। ইগো আসলে ভাঙার দরকার আছে। সবভাবে না হারলে আসলে অন্যকে হারিয়ে নিজে জেতার এই প্রক্রিয়াটার খুঁতগুলো কখনো চোখে পড়ে না।

ফেসবুকে ছবি দেয়া বন্ধ করে দিয়েছি। কেন? কারণ সত্যি বলতে আমরা গত দেড় মাস ধরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছি। রেহান প্রায় প্রতিদিন রোদে দাঁড়াতে পারছে, আমরা এক জোড়া স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে পানির ধারে যেতে পারছি, সমুদ্রের গর্জন শুনতে পাচ্ছি। প্রতিটা মুহূর্তে আমার কেবল মনে হয় আমি কী অসম্ভব ব্লেসড, এবং কতটা সুবিধাভোগী শ্রেণীর অংশ। কত পরিবারের শ্বাস ফেলার জায়গাটা পর্যন্ত নেই, সাধ্য যদিও থাকে, উপায় নেই, হয়তো তাদের সপ্তাহে দু'দিন অফিসে যেতে হচ্ছে, পরিবারে এমন কেউ আছেন যার ২৪/৭ কেয়ার নিতে হচ্ছে।

গত বছর এই সময়টাতে লক ডাউনে তীব্র ঠান্ডার মধ্যে বের হতে পারছি না, চাকুরী চলে যাচ্ছে, নতুন চাকরি খুঁজতে হবে, বাচ্চা সারাদিন জিজ্ঞাসা করে মমি আমার সাথে খেলবে? জোঁকের মুখে নুন পড়ার মতো মুখটা করে চলে যায় যখন বলি আমি এখন খেললে ঘরের কাজগুলি করবে কে? আর যেদিন খেলি সেদিন রাত জেগে থাকি আড়াইটা তিনটা পর্যন্ত, কাজ তো শেষ করতে হবে! না একটা পেপার পড়তে পারতাম, না রিসার্চের দুটো লাইন লিখতে পারতাম। পরের দিন মিটিং এ কথা বলতে গেলে দু'টো শব্দ এক করে বলতে পারিনা—এই ছিল আমার দিন।

এখন না হয় নীল সমুদ্রের পানিতে পা ডুবাতে পারি। এখন কোনটাকে আমার রিয়েলিটি ধরবো? এটা? না ঠিক এক বছর আগের এ সময়টাকে? সারি সারি পাম গাছের মধ্য দিয়ে হাঁটা, এটা? নাকি দেশে আমার মায়ের সার্জারির সময় আমার বাবা মায়ের ভাই বোনের পাশে না থাকতে পারা—এটা?

আমি একই সাথে অসম্ভব ভাগ্যবান, আবার একই সাথে অনেকগুলো স্ট্রাগলের মধ্য দিয়ে যাই। ফেসবুকের চিত্রগল্পগুলো যে কতটা ন্যারো—অথচ প্রতিটা অভিজ্ঞতা এত তীব্র করে এখানে প্রকাশ পায় যে মাঝে মধ্যে নিজেই কনফিউজড হয়ে যাই, এই যে হাসিমুখে ছবি দেয়া মানুষটা না সেদিনই খুব কাঁদলো শরীর আর মনের এতগুলো ক্ষত নিয়ে? এই যে দুঃখী দুঃখী গল্প বলা মানুষটা না সেদিনই এত্তগুলো টাকা বেহিসেবি খরচ করে ঘুরে আসলো? অন্যদের কেন, সব ক'টা গল্প তো আমার নিজেরও! কোনটাকে ধরে থাকবো?

এজন্যই মনে হয়, এই যে সবগুলো গল্পকে করে একটা আইডেন্টিটি দাঁড় করানোর এই আগ্রহটাই বোধ হয় ভুল। বহুরূপী হওয়াটাই বোধ হয় ঠিক। এটাই হওয়ার কথা। আমি যখন রেহানের পাকা পাকা কথার গল্প বলি আমি ওর একটা ইমেজ তৈরি করি যে, ও বোধহয় ভীষণ পরিণত ওর বয়সের তুলনায়। একটু বড় হলে (বা হয়তো এখনই), ও বুঝে যাবে যে ওর থেকে এটাই আশা করা হয়, ও তখন ওভাবেই কথা বলার চেষ্টা করবে, আস্তে করে আমি কন্ডিশনিং করে ওর ছ' বছর বয়সের বাচ্চামিগুলো কেড়ে নিবো। অথচ যদি আমি একই ফ্রেমে রেহানকে পাগলা, গুফি, দুরন্ত, পড়াশুনায় কম মনোযোগী, গান কবিতা কিচ্ছু না পারা, আঁকতে লিখতে অনীহা, চঞ্চল একটা বাচ্চা হিসেবে দেখাই যে কিনা মাঝে মধ্যে কিছু পন্ডিতি কথা বলে ফেলে, যেটা সব বাচ্চাই করে—তাহলে কিন্তু এই অযাচিত/আরোপিত এক্সপেক্টেশনটা আর আসেনা!

আমাদের এই নিজেদের প্রতি, অন্যদের প্রতি একটা এক্সপেক্টেশনের বোঝা, তাকে আমার ফ্রেমে ফিট করার একগুঁয়ে ইচ্ছা—এটা আসলে ঠিক না। শেইম ট্রিগারিং পোস্টগুলি মানুষের রং বেরঙের জীবনের গল্পগুলিকে একটা বদ্ধ মলাটে আটকাতে চায়। এটা ঠিক না। মানুষের মন একটা বড় খোলা মাঠে বিচরণ করতে পারলে তার সবচেয়ে সুন্দর অংশটা বের করে আনতে পারবে। শেমিং খুব বেশি কাজ করেনা। শুধু পিঠে এত্ত বড় একটা বোঝা চাপিয়ে দেয়।

লেখাটার কোন মূল কথা টাইপ কিছু নেই। শুধু খেয়াল করলাম, লেখালেখির এক যুগে আমি খোলা দমকা হাওয়া থেকে বাঁশির সুর হওয়ার চেষ্টা করেছি। এই আবদ্ধ হওয়ার ইচ্ছেটা কি এমনিতেই হয়ে গেছে? নাহ! একটা একটা সমালোচনা অবচেতনে দেয়াল তুলতে থাকে। এই আর কী! বাঁশির সুরের প্রয়োজন আছে, কিন্তু দমকা হাওয়া কে কষে বেঁধে তা বানানোর চেষ্টা করা অনর্থক।